পঞ্চম পরিচ্ছেদ
৫.১
পাহাড়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ইনসপেক্টর কলগেট, আর্লেনার মৃতদেহ নিয়ে পুলিস-সার্জেনের পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। একপাশে দাঁড়িয়ে নীরবে প্যাট্রিক ও এমিলি ব্রুস্টার।
হাঁটু ভেঙে বসেছিলেন ডাঃ নিসডন, সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, অভ্যস্ত ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে বললেন, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে–এক জোড়া শক্ত সবল হাতের কাজ। মনে হচ্ছে না ওকে দেখে, বাধা দেবার খুব একটা চেষ্টা করেছিলেন। আচমকাই আক্রান্ত হয়েছেন বলতে পারেন, বড় বিশ্রী ব্যাপার, হুম…
মৃতদেহের মুখের দিকে একপলক তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলেন এমিলি স্টার। নীলাভ রক্তিম যন্ত্রণাবিকৃত মুখমণ্ডলের বীভৎসতা কল্পনা করা যায় না।
প্রশ্ন করলেন ইনসপেক্টর কলগেট, মারা গেছেন বলে আপনার কটার সময় মনে হয় ডাক্তার, অস্বস্তিভাবে নিসডন জবাব দিলেন, ওর সম্পর্কে আরও কিছু না জেনে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আমাদের বিবেচনা করতে হবে অনেকগুলো ব্যাপার। আচ্ছা, এখন বাজে পৌনে একটা, মৃতদেহ কটার সময় আপনারা অবিষ্কার করেন। শেষ প্রশ্নটা যাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে প্যাট্রিক রেডফার্ন অস্পষ্টভাবে বললো, বারোটার কিছু আগে সঠিক বোধহয়। বলতে পারছি না। এমিলি ব্রুস্টার বললেন, বুঝলাম আমরা যখন মিসেস মার্শাল মারা গেছেন, পৌনে বারোটা বাজে তখন ঠিক।
ও আচ্ছা, নৌকো করে এসেছেন তো আপনারা এখন, যখন আপনার দূর থেকে ওঁকে এখানে পড়ে থাকতে দেখেন তখন কটা বাজে। কিছুক্ষণ ভাবলেন এমিলি ব্রুস্টার।
আমরা পাথরের বাঁকটা ঘুরেছি। ধরুন তার প্রায় মিনিট পাঁচ ছয় আগে। রেডফার্নের দিকে তিনি ফিরলেন, কি মনে হয় আপনার? অনিশ্চিত সুরে বললেন প্যাট্রিক রেডফার্ন, আমার মনে হয় এরকমই হবে। ইনসপেক্টরকে প্রশ্ন করলেন নিসডন নিচু গলায় পাশে দাঁড়ানো। ইনিই কি মৃত মহিলার স্বামী, আমারই ভুল হয়েছে ও তাহলে। রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন ভদ্রলোক দেখছি। সেই জন্যেই ভাবছিলাম হয়তো স্বামী হলেও হতে পারেন। অপেক্ষাকৃত উঁচু স্বরে বললেন তিনি একবার, ধরা যাক তাহলে মোটামুটি বারোটা বাজতে কুড়ি মিনিটের সময় আপনারা ওকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। মনে হয় না আমার, খুব একটা অগে উনি মারা গেছেন :হয়তো ঐ সময় থেকে এগারোটা কিংবা খুব বেশি হলে পৌনে এগারোটার মধ্যে।
নোটবই সশব্দে বন্ধ করে মুখ তুলে তাকালেন ইনসপেক্টর। তিনি বললেন, ধন্যবাদ এতে অনেক সাহায্য হবে আমাদের বিশেষ করে খুনের সময়টাকে খুব অল্প পরিসরে বাঁধা গেছে এক ঘন্টারও কম বলতে গেলে।
মিস ব্রুস্টারের দিকে তিনি ফিরলেন এবার। যাক, সবকিছুই এ পর্যন্ত তাহলে পরিষ্কার। মিস এমিলি ব্রুস্টার আপনি হলেন এবং ইনি ইমঃ প্যাট্রিক রেডফার্ন। বর্তমানে দুজনেই আপনারা জলি রজার হোটেলে রয়েছেন। এই মৃত মহিলাকে আপনারা সেই হোটেলেরই অতিথি এবং জনৈক ক্যাপ্টেন মার্শালের স্ত্রী বলে সনাক্ত করছেন? নিঃশব্দে এমিলি ব্রুস্টার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। আমার মনে হয় তাহলে..ইনসপেক্টর কলটে বললেন, আমাদের এখন হোটেলে ফিরে যাওয়াই ভালো। ইশারায় তিনি একজন কনস্টেবলকে ডাকলেন। তুমি এখানে থাকো হক্স আর কাউকে আসতে দেবে না এখানে। আমি একটু পরেই ফিলিপসকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
.
৫.২
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, সত্যি বলছি। আশা করিনি আপনাকে এখানে দেখবো বলে। পুলিশ প্রধানের অভিবাদনের উত্তরে যথাযোগ্য ভঙ্গিতে প্রত্যাভিবাদন জানালেন এরকুল পোয়রো। মৃদুস্বরে বললেন, হুঁ, সেন্টলুর সেই ঘটনার পর বহু বছর কেটে গেছে। তা হলেও আমার এখনও মনে আছে সে ঘটনা! ওয়েস্টন বললেন, আমার জীবনের সে এক বিরাট বিস্ময়। আজও ভুলতে পারিনি যে জিনিসটা তা হলো সেই অন্তোষ্টি ক্রিয়ার ব্যাপারটার আপনি যেভাবে আমাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। বেনিয়মী পুরোপুরি অদ্ভুত আপনার পদ্ধতি। এক কথায় অবিশ্বাস্য।
তার ফল কি ভালে হয়নি? কর্নেল বললেন, হয়ত হয়েছে। তবে আমার ধারণা নিয়মাফিক শেখা পথেই পৌঁছাতে পারতাম আমরা। পারতেন হয়তো। পোয়ারো অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদের মতো সমর্থন জানালেন।
এখানে এসে আর একটা খুনের জটিল পরিবেশ আপনাকে আবিস্কার করলাম। বললেন, পুলিস-প্রধান। কিছু ভেবেছেন, এটা নিয়ে? ধীরে ধীরে জবাব দিলেন, কিছু ভাবিনি এখানও–কিন্তু ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। একটু-আধটু আমাদের সাহায্য করছেন তো? সে অনুমতি দিচ্ছেন আপনি?
আপনাকে আমাদের সঙ্গে পেলে ভীষণ খুশি হবো মঁসিয়ে পোয়ারো। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে ব্যাপারটা তুলে দেবো কিনা এখনও আমার পাইনি সে সিদ্ধান্ত নেবার মতো যথেষ্ট খবর। এমনিতে দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের খুনীকে খুঁজে পাওয়া যাবে, একটা সীমিত এলাকার মধ্যে। এদিকে দেখুন আবার যাঁরা হোটেলে উপস্থিত রয়েছেন, কেউই তাদের স্থানীয় বাসিন্দা নন। সুতরাং তাদের সম্বন্ধে খোঁজ খবর করতে গেলে এবং খুন করার পেছনে তাদের উদ্দেশ্যের সন্ধান করতে গেলে লন্ডনে যেতেই হবে আপনাকে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, পোয়ারো বললেন।
আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে মৃত মহিলাটিকে শেষ কে দেখেছেন। ওয়েস্টন বললেন, পরিচারিকা সকাল নটায় মিসেস মার্শালকে প্রাতঃরাশ পৌঁছে দেয়। দশটা নাগাদ প্রায় একতলার দপ্তরে বসে থাকা হোটেল ছেড়ে বেরিলয়ে যেতে দেখে মেয়েটি।
ওয়েস্টন, পোয়ারো বললেন, বন্ধু সম্ভবত আমিই আপনার প্রার্থিত ব্যক্তি।
কটার সময়? আপনি তাকে আজ সকালে দেখেছেন? দশটা বেজে পাঁচ মিনিটে। ভেলা ভাসাতে সাহায্য করেছিলাম আমি তখন সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে তাকে। ভেলায় চড়ে চলে গেলেন তিনি। হ্যাঁ একা। একা? সেটা কি আপনি খেয়াল করেছেন কোনোদিকে গেলেন? তিনি পাহাড়ের আড়ালে চলে যান ডানদিকে মোড় ঘুরে। তার মানে পিক্সি কোভের দিকে, তাই না? হা সময় কত ছিলো তখন? তিনি সমুদ্রতীর ছেড়ে রওনা হন ঠিক সওয়া দশটায় আমি বলবো। ওয়েস্টন কিছুক্ষণ ভাবলেন। সব মিলে যাচ্ছে মোটামুটি। ভেলায় চড়ে পিক্সি কোভে পৌঁছাতে তার কতক্ষণ লাগতে পারে বলে মনে হয় আপনার? আমি সম্পূর্ণ এ ব্যাপারে অনভিজ্ঞ। আমি ঘোর বিরোধী নৌকো বা ভেলা চড়ায়। তবুও মনে হয়, আধ ঘণ্টার বেশি লাগা উচিত নয়।
তাই ধারণা আমারও, কর্নেল বললেন, অবশ্য যদি তিনি স্বাভাবিক ভাবে তাড়াহুড়ো না করে ভেলা চালিয়ে থাকেন। তাই যদি হয় তিনি পিক্সি কোভে পৌঁছেছেন পৌনে এগারোটা। মোটামুটি খাপ খেয়ে যাচ্ছে। সবই। তিনি মারা গেছেন কটার সময় আপনাদের ডাক্তার মনে করেন?
নিসডন কখনও নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব বা ঝুঁকি নেয় না। সাবধানী লোক সে বড়। পৌনে এগারোটা নাগাদ তার মতে, খুনটা খুব বেশিক্ষণ হয়নি। নীরবে মাথা নাড়লেন পোয়ারো। তারপর বললেন, আরও একটা ছোট্ট ঘটনাটা আমার উল্লেখ করা হয়নি। মিসেস মার্শাল চলে যাওয়ার সময় আমাকে অনুরোধ করেন, আমি যে তাকে দেখেছি কাউকে যেন না বলি সে কথা। কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন ওয়েস্টন একদৃষ্টে। ব্যাপারটা ভাবার মতো, তাই না তারপর।
অস্পষ্ট স্বরে পোয়ারো বললেন, হ্যাঁ, মনে হয়েছিলো আমারও তাই। ওয়েস্টন বার কয়েক গোঁফে মোচড় দিলেন। আচ্ছা মঁসিয়ে পোয়ারা, একটা কথা। আপনার অভিজ্ঞতা সাধারণের চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। বলতে পারেন মিসেস মার্শাল, ঠিক কি ধরনের মহিলা ছিলেন?
পোয়ারোর ঠোঁটে একটা হালকা হাসির ছোঁয়া দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেলো। প্রশ্ন করলেন তিনি, এখন কিছু শোনেনি আপনি কি?
নীরস কণ্ঠে জবাব দিলেন পুলিস প্রধান, শুনেছি। তার সবটাই অন্যান্য মহিলাদের বক্তব্য। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সে সব বক্তব্যের কতটুকু সত্যি তাই আমি জানতে চাই। রেডফার্নের সঙ্গে মিসেস মার্শালের সত্যি কি কোনো ইয়ে চলছিলো? আমি অন্তত নিঃসন্দেহ এ ব্যাপারে।
.
৫.৩
মিসেস ক্যাসল-এর সঙ্গে পুলিশ প্রধান ওয়েস্টন তার স্বভাবসিদ্ধ কুশলী পদ্ধতিতে কথা বলছিলেন।
মিসেস ক্যাসল জনি রজার হোটেলের একমাত্র স্বত্বাধিকারিণী, চল্লিশোর্ধ বয়সেও উজ্জ্বল, মাথায় একরাশ লাল চুল, কথা বলার ভঙ্গী অপ্রত্যাশিত রকম পরিমার্জিত।
তিনি বলছিলেন, এইরকম একটা ঘটনা আমার হোটেলে ঘটতে পারে, আশ্চর্য ব্যাপার। এরকম একটা শান্ত জায়গায় সাধারণতঃ ভদ্র এবং চমৎকার অতিথিরাই এখানে আসে। সেন্ট লু-এর বড় বড় হোটেলগুলোর মতো এখানে কোনো জঘন্য ব্যাপার হয় না।
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, মিসেস ক্যাসল অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত–গৃহস্থ বাড়িতেও দুর্ঘটনা ঘটে
কিন্তু ব্যবসার অনুমতিপত্রের ব্যাপারে আমি খুব সাবধানী এবং মনোযোগী।
আমরা আপনাকে কোনো দোষ দিচ্ছি না।
কিন্তু তবুও নিঃসন্দেহ এটা নিন্দের ব্যাপার। একমাত্র হোটেলের অতিথিরা ছাড়া বাইরের কোনো লোককে দ্বীপে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওরা আমার হোটেলের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে নোংরা আলোচনা করবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
ইনসপেক্টর কলগেট বললেন, দ্বীপটাকে আপনি আয়ত্তে রাখেন কী করে? আপনি বাইরের লোকেদের বাধা দেন কি করে?
ও ব্যাপারে আমি খুব সাবধানী থাকি।
হ্যাঁ, কিন্তু কি দিয়ে তাদের আটকান? কারণ গ্রীষ্মকালে ভ্রমণকারীরা এখানে মাছির মতো ছেয়ে ফেলে।
শিউরে উঠলেন ক্যাসল। এসব দোষই হলো বেড়াবার জন্যে তৈরি ওই আ-ঢাকা ল্যারাব্যাং গাড়িগুলোর। একসঙ্গে আঠারোটা গাড়ি লেদারকোম্ব উপসাগরের নৌকাঘাটার কাছে রয়েছে।
অধৈর্যভাবে কলগেট বললেন, কিন্তু এই দ্বীপে আসতে তাদের বাধা দেন কি করে?
সে জন্যে অনেকগুলো নোটিশ লাগানো আছে। তাছাড়া জোয়ারের সময় এমনিতেই আলাদা হয়ে পড়ি। সেতুটা দ্বীপের যে প্রান্তে এসে মিশেছে সেখানে এটা বড় দরজায় লেখা আছে জলি রজার হোটেল। নিজস্ব এলাকা। হোটেল ব্যতীত অন্য কোথাও বহিরাগতের প্রবেশ নিষেধ। দরজার দুপাশে পাহাড়ের পথ খাড়া সমুদ্রে নেমে গেছে, সে প্রাচীর বেয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
কিন্তু যে কেউ তো নৌকো বেয়ে দ্বীপের পাশ দিয়ে পিক্সি অথবা গানকোভে সহজেই। পৌঁছতে পারে? তারা সমুদ্রতীরে জোয়ার-ভাটার সময়ে জলের দুইপ্রান্তের মাঝখানে বেলাভূমির যে অংশ, সেখানে বাইরের লোকেদের প্রবেশের অধিকারে আপনি হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।
গানকোভ এবং পিক্সি কোভে আমার লোহার মইয়ের পক্ষেও যথারীতি বিজ্ঞপ্তি লাগানো … আছে। জর্জ এবং উইলিয়াম, মূল ভূখণ্ডের বেলাভূমিতে সর্বক্ষণ নজর রাখে। জর্জ সারাদিন বেলাভূমির তদারকিতে থাকে আর উইলিয়াম এখানকার মালি। রাস্তাঘাটের দেখাশোনা, টেনিস কোর্ট ঝাট দেওয়ার কাজ করে।
আমরা জর্জ এবং উইলিয়ামের সঙ্গে এ বিষয়ে এখুনি একবার কথা বলতে চাই।
মিসেস ক্যাসল বললেন, মিসেস মার্শালের মতো একজন ভদ্রমহিলা কিনা খুন হলে? আর সেও আবার ইয়ে, মানে-গলা টিপে…। আর খবরের কাগজগুলো হয়েছে আর এক উৎপাত। আমার হোটেলের সুনাম নিয়ে ওরা কিরকম ছিনিমিনি খেলে।
তবে একদিক দিয়ে সেটা আপনার হোটেলের বিজ্ঞাপনের কাজ করবে।
এবার কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, আচ্ছা, মিসেস ক্যাসল, বর্তমানে হোটেলের অতিথিদের নামের তালিকাটি দিন। এখানে আপনি আমাদের হয়তো সাহায্য করতে পারবেন, মিসেস ক্যাসেল।
মিসেস ক্যাসেল অতিথিদের এবং হোটেলের চাকর-বাকরদের একটা তালিকা দিলেন।
পরিচারকরা কিরকম লোক?
ওদের মধ্যে অ্যালবার্ট প্লিমাউথের ভিনসেন্ট হোটেল ছেড়ে এখানে কাজ নেয়। ওর তদারকিতে তিনজন কাজ করে। আর হেনরি তো হোটেলের শুরু থেকেই-বলতে গেলে ও নিজেই এখন প্রতিষ্ঠান।
ওয়েস্টন মাথা নেড়ে বললেন, কলগেট, সন্দেহজনক না হলেও তুমি তোমার নিয়মমাফিক খোঁজ চালিয়ে যাবে। আচ্ছা, ধন্যবাদ মিসেস ক্যাসল।
মিসেস ক্যাসল চলে গেলে ওয়েস্টন বললেন, আমাদের প্রথম কাজ হবে ক্যাপ্টেন মার্শালের সঙ্গে কথা বলা।
.
৫.৪
কর্ণেল ওয়েস্টন বলছিলেন, এ ঘটনা যে আপনাকে কতখানি আঘাত করেছে তা আমি বুঝি, ক্যাপ্টেন মার্শাল। কিন্তু এই খুন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জোগাড় করলে আমাদের তদন্তের সুবিধে হবে।
হা, কর্তব্য তো আপনাদের করতেই হবে। বলুন কি জানতে চান?
মিসেস মার্শাল আপনার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। আপনাদের কিতদিন বিয়ে হয়েছে? এবং আপনার স্ত্রীর বিয়ের আগের নাম কি ছিল?
চার বছরের সামান্য বেশি আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। হেলেন স্টার্ট নাম ছিলো। তবে অভিনয় জগতে ওর নাম ছিলো আর্ণেনা স্টুয়ার্ট।
বিয়ের পর তিনি অভিনয় ছেড়ে দেন?
না। বছর দেড়েক হলো অভিনয় জগৎ থেকে অবসর নিয়েছিলো।
বিয়ের পরে তার অভিনয় করাটাকে তাহলে আপনি মেনেই নিয়েছিলেন?
আমি অখুশী হলেও তা নিয়ে আমি কখনও উচ্চবাচ্য করিনি।
এই বিয়েতে আপনারা সুখী ছিলেন?
নিশ্চয় ছিলাম।
ক্যাপ্টেন মার্শাল, আপনার স্ত্রীর খুনের ব্যাপারে কারো প্রতি কোনো সন্দেহ আছে? তার কি কোনো শত্রু ছিলো?
হয়তো ছিলো। আমাকে ভুল বুঝবেন না স্যার। আমার স্ত্রী একজন অভিনেত্রী এবং অত্যন্ত সুন্দরী ছিলো। এই দুটো কারণেই অন্যান্য মহিলারা ওর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কিন্তু এই ঈর্ষার মানে এই নয় যে, তাদের মধ্যে কারো পক্ষে এরকম নৃশংসভাবে খুন করা সম্ভব।
এরকুল পোয়ারো বললেন, আপনি তাহলে বলতে চান যে, আপনার স্ত্রীর শত্রুরা প্রধানতঃ মহিলা ছিলেন।
হ্যাঁ, তাই।
পুলিসপ্রধান বললেন, এমন কোন পুরুষের কথা জানেন না যার সঙ্গে আপনার স্ত্রীর শত্রুতা ছিলো কিংবা এ হোটেলের কারো সঙ্গে তার পুরনো আলাপ ছিলো?
যতদূর জানি, মিঃ রেডফার্নের সঙ্গে কোনো এক ককটেল পার্টিতে আলাপ হয়েছিলো। এছাড়া আর কিছু জানি না।
ওয়েস্টন বললেন, এবার আজ সকালের কথায় আসা যাক। আপনার স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কখন দেখা হয়?
নিচে প্রাতঃরাশ সারতে যাওয়ার সময় একবার ওর ঘরে গিয়েছিলাম–নটার কাছাকাছি হবে।
তখন তিনি কি করছিলেন? ও আপনারা কি আলদা ঘরে থাকতেন?
হা। ও চিঠিপত্রগুলো খুলে দেখছিলো। বিশেষ কোনো কথা হয়নি। শুধু সুপ্রভাত জানানো।
তার চালচলনে, কথাবার্তায় কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেননি?
বরং স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে।
পোয়ারো বললেন, তিনি কি চিঠিপত্রের বিষয়বস্তুর কথা কিছু বলেছিলেন?
মার্শালের ঠোঁটে হাল্কা হাসি, ও বলেছিলো, সব কটা চিঠিই নাকি রশিদ সংক্রান্ত।
আপনার স্ত্রী কি বিছানায় বসেই প্রাতঃরাশ সারেন?
হ্যাঁ, ওটা ওর বরাবরের অভ্যেস। সাধারণতঃ এগারটার মধ্যে নিচে নামেন।
পোয়ারো বললেন, সেক্ষেত্রে তিনি যদি ঠিক দশটায় নিচে নামেন তাহলে কি অস্বাভাবিক হবে?
হা। কারণ অত সকালে আর্লেনা নামে না।
কিন্তু, আজ তিনি নিয়ম ভঙ্গ করে দশটায় নিচে নেমেছিলেন।
হয়তো আজকের সুন্দর আবহাওয়াই তার কারণ
আপনি তাকে ঘরে না পেয়ে অবাক হয়েছিলেন?
প্রাতঃরাশের পর ওর ঘরে গিয়ে ওকে দেখতে না পেয়ে একটু তো অবাক হয়েছিলাম।
আর তারপরেই আপনি সমুদ্রতীরে এসে আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনার স্ত্রীকে দেখেছি কি না?
হ্যাঁ, আপনি বলেন যে ওকে দেখেন নি…।
ওয়েস্টন বললেন, আপনার স্ত্রীর খোঁজ করার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ ছিলো?
না, শুধু ভেবেছিলাম এত সকালে ও কোথায় যেতে পারে–তার বেশি কিছু নয়।
ক্যাপ্টেন মার্শাল, আপনি বলেছেন যে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে মিঃ প্যাট্রিক রেডফার্নের পূর্বপরিচয় ছিলো। কিন্তু আপনার স্ত্রী মিঃ রেডফার্নকে কতখানি জানতেন?
সামান্য ধূমপানে নিশ্চয়ই আপনার আপত্তি হবে না। মার্শাল পকেট হাতড়াতে হাতড়াতে, এই যাঃ। নিশ্চয়ই পাইপটা কোথাও ফেলে এসেছি।
পোয়ারো একটা সিগারেট এগিয়ে দিলেন। মার্শাল সেটা অগ্নিসংযোগ করে, আপনি রেডফার্নের কথা বললেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে এক ককটেল পার্টিতে আলাপ হয়েছিলো।
পুলিশ প্রধান বললেন, কিন্তু তারপর–সেই পরিচয় ক্রমশ অন্তরঙ্গতায় পরিণত হয়
তীক্ষ্ণস্বরে, একথা আপনাকে কে বলেছে?
এটাই তো হোটেলের গুজব।
হোটেলের গুজব একরাশ মিথ্যে ছাড়া কিছু নয়।
হয়তো তাই, কিন্তু মিঃ রেডফার্ন ও আপনার স্ত্রী বেশিরভাগ সময়ই একসঙ্গে থাকতেন।
হতে পারে, তবে তেমনভাবে আমার চোখে কখন পড়েনি।
আপনি মিঃ রেডফার্নের সঙ্গে আপনার স্ত্রীর বন্ধুত্বে বাধা দেননি?
নিশ্চয় না। স্ত্রীর সমার্লোচনা করা ঠিক নয়।
ব্যাপারটা কেলেঙ্কারীর পর্যায়ে যাচ্ছে দেখেও আপনি চুপচাপ ছিলেন।
গুজব অথবা পরচর্চামূলক খবরে আমার তেমন আগ্রহ নেই।
মিঃ রেডফার্ন আপনার স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত ছিলেন; এটা নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না?
হয়তো ছিলো। আমার স্ত্রী সুন্দরী ছিলো তাই বেশিরভাগ পুরুষই ওর প্রতি আকৃষ্ট হতো।
কিন্তু এমন কোনা সাক্ষী যদি আমাদের হাতে থাকে যে, তাদের সম্পর্ক সীমানা ছাড়িয়ে চরম অন্তরঙ্গে পৌঁছিয়েছিলো।
দেখুন, আমার স্ত্রী মৃতা। ওর পক্ষে নিজেকে নির্দোষ প্রতিপন্ন করা আর সম্ভব নয়। এ ধরনের গালগল্পে বিশ্বাস করা আমার ইচ্ছে নয়। তাছাড়া আপনার প্রয়োজনীয় প্রসঙ্গ থেকে সরে যাচ্ছেন না?
এরকুল পোয়ারো বললেন, আপনি ব্যাপারটা ঠিক উপলব্ধি করতে পারছেন না ক্যাপ্টেন মার্শাল। দশটার মধ্যে অন্ততঃ নটা ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিহত ব্যক্তির চরিত্র এবং তার পারিপার্শ্বিকের মধ্যেই খুনের প্রথম এবং প্রধান কারণ নিহিত রয়েছে। সুতরাং যতক্ষণ না আমরা সম্পূর্ণভাবে জানতে পারছি–আর্লেন মার্শাল ঠিক কি ধরনের মহিলা ছিলেন, ততক্ষণ বুঝতেই পারবো না কি ধরনের লোকে তাকে খুন করতে পারে।
ওয়েস্টন বললেন, আমারও একই মত।
মার্শাল হেসে বললেন, ভেবেছিলাম চরিত্র সংক্রান্ত ব্যাপারে মঁসিয়ে পোয়ারোরই শুধু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।
পোয়ারো সহাস্যে বললেন, ক্যাপ্টেন মার্শাল। আমাকে সাহায্য করার মতো কিছুই এখনো বলেননি।
তার মান?
আপনার স্ত্রী সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ছিলেন এর চেয়ে বেশি কিছু আপনি আমাদের বলেছেন কি?
আপনি আমার কাছে আর কিছু জানতে চান?
হা–আজ সকালে আপনার গতিবিধির কথা।
রোজকার মতো সকাল নটায় আমি প্রাতঃরাশ সারতে নিচে যাই। পরে আমার স্ত্রীর ঘরে গিয়ে দেখি ও ঘরে নেই। সমুদ্রতীরে এসে মঁসিয়ে পোয়ারোকে দেখে আমার স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করি। তারপর সংক্ষেপে স্নান সেরে আবার হোটেলে ফিরে যাই। তখন এগারোটা বাজতে কুড়ি হবে। ওপরে গিয়ে দেখি পরিচারিকা কাজ করছে। ওকে তাড়াতাড়ি সারতে বলে নিচে বারে এসে হেনরির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার এগারোটা বাজতে দশ মিনিটে ঘরে ফিরে যাই। আমার কতগুলো জরুরী চিঠি সকালের ডাকেই পোস্ট করবো বলে টাইপরাইটার নিয়ে বসি। বারোটা বাজতে দশে কাজ শেষ; টেনিস খেলার পোশাক পরি কারণ বারোটায় আমাদের টেনিস খেলার কোর্ট আগে দিন বুক করেছিলাম–
কারা ছিল এই খেলায়?
মিসেস রেডফার্ন, মিস ডার্নলি, মিঃ গার্ডেনার এবং আমি। প্রায় ঘন্টাখানেক খেলে হোটেলে ফিরতেই–আমি খবরটা পাই।
ধন্যবাদ, ক্যাপ্টেন মার্শাল। আপনি যে এগারোটা বাজতে দশ থেকে বারোটা বাজতে দশ পর্যন্ত টাইপ করছিলেন। এ বক্তব্যকে সমর্থন করার মতো কেউ আছে?
ক্ষীণ হেসে তিনি বললেন, আপনি কি সন্দেহ করছেন যে আমিই আমার স্ত্রীকে খুন করেছি। পরিচারিকাটি অন্যান্য ঘর পরিষ্কার করার সময় নিশ্চয়ই টাইপরাইটারের শব্দ শুনে থাকবে। এত সব ঘটনার পর সেগুলো ডাকে দেওয়া হয়নি। মনে হয়, আমার বক্তব্যের সমর্থনে ওই চিঠিগুলোই পর্যাপ্ত প্রমাণ। চিঠিগুলো পকেট থেকে বের করে বললেন, এই চিঠিগুলোর বিষয়বস্তু একান্ত গোপনীয়। কিন্তু খুনের মামলায় এগুলো আপনাদের হাতে তুলে দিতে আমি বাধ্য। এগুলোয় আমার বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিবৃতি ও সঠিক অঙ্ক লেখা রয়েছে। আশা করি এবারে আপনারা সন্তুষ্ট হয়েছেন।
ওয়েস্টন বললেন, এটা কোনো সন্দেহের প্রশ্ন নয়। ক্যাপ্টেন মার্শাল এ দ্বীপে উপস্থিত প্রত্যেকেই সকাল পৌনে এগারোটা থেকে এগারোটা চল্লিশ পর্যন্ত গতিবিধির জবাবদিহি দিতে হবে। আর আপনার স্ত্রীর নিজস্ব কোনো বিষয় সম্পত্তি থাকলে সেগুলো সম্পর্কে আপনি কি কিছু জানেন?
আপনি কি কোনো উইলের কথা বলছেন? একবার ও আমাকে বলেছিলো, এইসব উইল-টুইল করার কথা শুনলে ওর জ্বর আসে।
সেক্ষেত্রে স্বামী হিসাবে তার সমস্ত-সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব আপনার ওপরেই বর্তাচ্ছে। তার কাছাকাছি কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিলো।
সম্ভবত না। শুনেছি ছোটবেলাতেই ওর মা-বাবা দুজনেই মারা গেছে–ওর কেনো ভাই বোন নেই।
তাহলে রেখে যাওয়ার মতো তেমন বিষয় সম্পত্তি তার ছিলো না।
বরং তার উল্টো। বছর দুয়েক আগে ওর এ পুরনো বন্ধু, স্যার রবার্ট আরস্কিন মারা যান। তার প্রায় পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড তিনি আর্লেনাকেই উইল করে দিয়ে যান।
ইনসপেক্টর কলগেট এবারে মুখ খুললেন। তাহলে আপনার স্ত্রী একজন ধনী মহিলা ছিলেন। আর তা সত্ত্বেও আপনি বলতে চান তিনি কোনো উইল করে যাননি?
ওর সলিসিটার–বার্কেট, মার্কেট অ্যান্ড অ্যাপলগুড রেডফোর্ড স্কোয়ার। ওর কাছে জানতে পারেন। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে জানি ও কোনো উইল করেনি, এটাকে ও অমঙ্গলসূচক মনে করতো।
ওয়েস্টন বললেন, আপাততঃ প্রশ্নের পালা শেষ ক্যাপ্টেন মার্শাল। আপনার এই আকস্মিক ক্ষতিতে আবার আপনাকে সমবেদনা জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ বলে মার্শাল বেরিলয়ে গেলেন।
.
৫.৫
তিনজনেই পরস্পরের দিকে তাকালেন। ওয়েস্টন, ঠান্ডা মাথার মক্কেল। সহজে ধরা দেবার পাত্র নয় তাই না?
ইনসপেক্টর বললেন, বলা শক্ত। এ ধরনের লোকেরা সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও জুরিদের সহানুভূতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। সোজা কথায়, অভিব্যক্তি প্রকাশে তারা সম্পূর্ণ অক্ষম। ঠিক এই ধরনের স্বভাবের জন্যেই ওয়ালেসের বিরুদ্ধে জুরিরা অপরাধী রায় দিতে বাধ্য হয়। আপনি কি বলেন মঁসিয়ে পোয়ারো।
কিই বা বলা সম্ভব। ক্যাপ্টেন মার্শাল হলেন অবরুদ্ধ সিন্দুক। তিনি কিছুই শোনেননি, দেখেননি। কিছুই জানেন না। তবে খুনের কতগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমতঃ ঈর্ষা, আর রয়েছে মিসেস মার্শালের রেখে যাওয়া প্রচুর অর্থ। অবশ্য এমনিতেই স্ত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্বামীই প্রথম সন্দেহভাজন ব্যক্তি। আমার মনে হয় স্ত্রীর কথা তিনি সবই জানতেন, পোয়ারো বললেন।
আপনার এ ধারণার কারণ?
কারণ, গতরাত্রে আমি সানি লজে মিসেস রেডফার্নের সঙ্গে কথা বলে হোটেলে ফেরার পথে মিসেস মার্শাল ও রেডফার্নকে দেখতে পাই। কয়েক সেকেন্ড পরেই ক্যাপ্টেন মার্শালের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার অভিব্যক্তিহীন কঠিন মুখ দেখেই বোঝা গেলো যে, তিনিও ওদের দেখতে পেয়েছেন।
কর্নেল ওয়েস্টন বললেন, স্ত্রীর মৃত্যুকে তিনি বড় সহজেই মেনে নিয়েছেন।
ইনসপেক্টর বললেন, এইসব শান্ত লোকেরা ভেতরে ভেতরে ভীষণ উগ্র হয়। ক্যাপ্টেন হয়তো তার স্ত্রীকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন–কিন্তু সেই অনুভূতি বাইরে প্রকাশ করার মত লোক তিনি নন।
পোয়ারো বললেন, ক্যাপ্টেন মার্শাল বড় অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। তার প্রতি আমার যথেষ্ট কৌতূহল হয়েছে যেমন রয়েছে তার অ্যালিবাই সম্পর্কে।
টাইপরাইটার অ্যালিবাই। এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি কলগেট?
স্যার, অ্যালিবাইটা আমাকে সন্তুষ্ট করেছে কারণ ওটা নিখুঁত তো নয়ই বরং স্বাভাবিক।
কর্নেল বললেন, তাহলে কোনদিকে নজর দেবে?
.
৫.৬
নীরবতা ভঙ্গ করে কলগেট বললেন, কাজটা কি কোনো বাইরের লোকের না হোটেলের কোনো অতিথির? তাছাড়া প্রথমে আসে খুনের উদ্দেশ্য। এখানে সেটা আর্থিক লাভ। এই আকস্মিক মৃত্যুতে লাভবান হচ্ছেন তার স্বামী।
পোয়ারো বললেন, মানুষের মনের অসংখ্য আবেগের প্রকৃত চরিত্র কজন জানে–
ইনসপেক্টর ও পোয়ারোর একই মত যে মিসেস মার্শালের মতো মহিলার প্রচুর শত্রু থাকাটাই স্বাভাবিক।
কর্নেল সম্মতিসূচক একটা শব্দ করে বললেন, এই দ্বীপে মার্শালের একমাত্র শত্রু মহিলারা
পোয়রো বললেন, মনে হয় না যে, এই খুনটা কোনো মহিলার পক্ষে করা সম্ভব। আপনাদের ডাক্তারী সাক্ষ্য কী বলছে?
ওয়েস্টন বললেন, মিসেস মার্শাল যে কোনো পুরুষের হাতে শাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন, নিসডনের ওতে কোনো সন্দেহ নেই, বিশাল শক্তিশালী একজোড়া হাতের কঠিন নিষ্পেষণ।
তিনি বললেন, আর্লেনা মার্শালকে অপসারিত করে নিজের পথ নিষ্কণ্টক করতে চেয়েছেন এই হোটেলেরই দুজন মহিলা।
কর্নেল বললেন, তার মধ্যে একজন নিশ্চয়ই মিসেস রেডফার্ন।
হ্যাঁ, অবশ্য তার কারণও ছিলো। কিন্তু এই বিশেষ হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ তার চরিত্র বিরোধী। তবে মানসিক অশান্তি ও ঈর্ষার কথা ভেবেও বলবো তিনি আবেগ তাড়িত মহিলা নন। চায়ের কাপে আর্সেনিক হয়তো সম্ভব–কিন্তু শ্বাসরোধ করে হত্যা, সম্পূর্ণ অসম্ভব।
ওয়েস্টন বললেন, না, এ কোনো মহিলার কর্ম নয়। আসামী নিঃসন্দেহে পুরুষ।
ইনসপেক্টর কেশে বললেন, ধরে নেওয়া যাক, এই, মিঃ রেডফার্নের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে জনৈক পুরুষের সঙ্গে মিসেস মার্শালের একটু ইয়ে ছিলো, ধরা যাক, তার নাম এক্স। মিঃ রেডফার্ন রঙ্গমঞ্চে ঢোকা মাত্রই মিসেস মার্শাল এক্স-কে বিদায় দিলেন। তাই এক্স ঈর্ষায় অপমানের জ্বালায় উন্মাদ হয়ে উঠলো। সে তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে অনুসরণ করে এই দ্বীপে এসে তার অপমানের প্রতিশোধ নিল।
ওয়েস্টন বললেন, তোমার অনুমান যদি সত্যি হয় তাহলে কোনো অসুবিধে হবে না। এই এক্স পায়ে হেঁটে না নৌকায় এই দ্বীপে এলো সেটা জানতে হবে। হয়তো কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে নৌকা ভাড়া নিয়েছে, সেটা জানতে হবে।
পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে ওয়েস্টন বললেন, কলগেটের এই ধারণা সম্পর্কে আপনার কী মত?
এতে হত্যাকারীকে সুযোগ ও সম্ভাবনার উপর বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে। আর তাছাড়া এই ঈর্ষা ও অপমানের জ্বালায় উন্মত্ত লোকটিকে আমি ঠিক কল্পনায় আনতে পারছি না।
কলগেট বললেন, কিন্তু স্যার, মিসেস মার্শালের জন্যে পাগল হওয়া লোকের অভাব নেই, যেমন রেডফার্ন।
পোয়ারোর কপালে চিন্তার ভাঁজ, হা, মানছি..কিন্তু তবুও–কোথাও এমন কিছু একটা রয়েছে যেটা আমাদের এড়িয়ে গেছে…