৪-৬. চারজন যুবক যুবতী

০৪.

চারজন যুবক যুবতীকে নিয়ে পোয়ারো চলে গেলে ইনসপেক্টর তার দুই সঙ্গী কনস্টেবল এবং ডিভিশনাল সার্জেনকে নিয়ে তাদের তদন্তে কাজে লেগে গেলেন।

ডিভিশনাল সার্জেনকে নির্দেশ দিলেন ভদ্রমহিলার মৃত্যুর কারণের সময় নির্ধারণ করতে। সে হাঁটু মুড়ে মৃতদেহের পাশে বসে মৃতার একটা হাত ধরে নাড়ী দেখতে লাগলেন। যদিও তিনি মৃত তবুও পুলিশী নিয়মানুযায়ী মৃতার নাড়ী টিপে দেখতেই হয়। সত্যি সে মৃত কিনা। অনেক সময় দেখা গেছে ডাক্তার মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট দেবার তিন ঘণ্টা পরে তার প্রাণ আবার ফিরে আসতে দেখা গেছে। নাড়ী টিপে দেখল যে, ভদ্রমহিলা যে মৃত তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার মৃত্যুর কারণ হলো খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে মারা হয়েছে। গুলিটা ফুসফুস বিদ্ধ হয়েছে।

ডিভিশনাল সার্জেন তার পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট লিখে নেয়।

এবার পুলিশ ইনসপেক্টর স্বয়ং তার দেহ পরীক্ষা করতে ব্যস্ত হলেন। একটা ছবিও তোলা হলো। ছবিটা হলো মৃতব্যক্তির ঘরের আসবাবপত্রের বিশেষতঃ সেন্টার টেবিলের। টেবিলে পাতা রক্তমাখা টেবিল ক্লথ তিনি চালান করলেন তার ব্রীফকেসে। সেটিকে ফরেনসিক বিভাগে পাঠাতে হবে যদি সেটার ওপর আততায়ীর কোন হাতের ছাপ পাওয়া যায়। তার অনুমান খুন করার পর রক্ত মোছর জন্য এই টেবিল ক্লথটি খুনী ব্যবহার করেছে। এই টেবিল ক্লথের কাছে গুলি করার পরে মৃতদেহটিকে জানালার ধার সরিয়ে ফেলা হয়।

অন্যদিকে প্যাটের ফ্ল্যাটে তখন জোর কদমে মিঃ পোয়ারোর সঙ্গে আলোচনা চলছিল। পোয়ারো তাদের একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। নিজের কার্য সিদ্ধির কখনও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন আবার প্রয়োজন মতো নিজের প্রশ্ন রাখছিলেন। তারা তাদের সাধ্যমতো উত্তর দিয়ে চলছিল।

মঁসিয়ে পোয়ারো, প্যাটের মনে হলো, তিনি একজন নিখাদ ভালো মানুষ, তাদের অতি আপনজন। তার মধ্যে নেই কোন ভড়ং, নেই কারচুপি বা শঠতা, যখন যা মনে আসে তখন তা বলে ফেলেন। এই ধরনের মানুষজন তার খুব পছন্দ। তার মতো মানুষের জন্য সব কিছু করা যায়। তাই সে মঁসিয়ে পোয়োররাকে একটা চমৎকার ওমলেট উপহার হিসাবে খাওয়াল।

অনেকক্ষণ প্যাটের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন পোয়ারো। প্যাট লজ্জায় মাথা নত করল।

তার লজ্জায় নত মুখ দেখে হাসি পেল পোয়ারোর। মনে মনে ভাবলেন, সব মেয়েদেরই এক রূপ পুরুষদের দৃষ্টির পড়লে সে যত সুন্দরী বা যত স্মার্ট হোক না কেন লজ্জা ঢেকে রাখতে পারে না।

ঠিক আসে সেই ভালো বলে পোয়ারো একটু গলা কেশে বললেন, জানেন মাদমোয়াজেল, ঠিক তার মতো একজন সুন্দরী ইংরাজি তরুণীকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য যে, সে প্যাটের মতো রন্ধন পটিয়সী ছিল না। তাই মনে ভাবলেন যা কিছু ঘটেছে তা ভালোর জন্য ঘটেছে।

কৌতূহলী হয়ে তার দিকে তাকায় জিমি ফকনার। হাসি এবং ঠাট্টা করে সে পোয়ারোর কথাটা হালকা করতে চাইল। পরে সবাই দুঃখ ভুলে গেল।

প্যাটের পরিবেশন করা ওমলেট খেয়ে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তখন পুলিশ ইনসপেক্টরের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। কনস্টেবলকে মৃতদেহের সামনে রেখে ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ইনসপেক্টর উপরে এলেন।

পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন, মঁসিয়ে রাইস, কি রকম মনে হলো কেসটা?

উত্তম প্রস্তাব মঁসিয়ে পোয়ারো। খুব পরিষ্কার কে বলেই মনে হচ্ছে। খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হবে না। তবে খুনীকে ধরতে খুব বেগ পেতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো যে কি ভাবে মৃতদেহটা আবিষ্কৃত হলো?

ভদ্রমহিলার মৃতদেহ আবিষ্কারের ঘটনার কথা জানতে চাইলে ভেনোডেন ও জিমি পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। বুঝতে পারল পুলিশের কাছে কিছুই গোপন করা যাবে না। আবার বোস কোন কিছু বলা যাবে না। এই জবানবন্দী দেবার ব্যাপরে খুব সতর্ক এবং সংগঠিত হতে হবে তাদের।

অন্যদিকে ইনসপেক্টর তখন ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে তাকালেন প্যাটের দিকে। বললেন, মিস তার লিফটের দরজা খুলে রাখা উচিত কাজ হয়নি।

প্যাট ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গীতে বলল, সে মিঃ রাইসকে কথা দিচ্ছে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল আর কখনো করবে না। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, নীচে ফ্ল্যাটে মিসেস গ্রান্টের মতো কেউ তার ফ্ল্যাটে ঢুকে তাকে খুন করে যেতে পারে।

কিন্তু তারা লিফটে আসেনি। প্যাটের হয়ে জবাব দিলেন মিঃ পোয়ারো। তাই নাকি? এটা কি তার আবিষ্কার মঁসিয়ে রাইস। তিনি যদি তার মূল্যবান আবিষ্কারের কথা খুলে বলেন সবাইকে তবে খুব উপকার হবে।

আমার যতটুকু জানা উচিত ছিল। বলতে হবে তিনি তা জানতে ব্যর্থ। কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি এই ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারবেন মঁসিয়ে পোয়ারো।

সেটাই হবে যথাযথ-উত্তরে বলেন পোয়ারো। অবার এইসব যুবক যুবতীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবার জন্য তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে।

ইনসপেক্টর রাইস বললেন, সংবাদপত্রগুলি মিসেস গ্রান্টের মৃত্যুর সংবাদটা ঠিক পেয়ে যাবে। এই কেসের ব্যাপারে কোন গোপনীয়তা নেই। নিশ্চিত হবার জন্য পোর্টরাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। পোর্টার মিসেস গ্রান্টের শনাক্ত করেছে। ভদ্রমহিলার বয়স বছর পঁয়ত্রিশ হবে।

ভদ্রমহিলাকে কোথায় কি ভাবে খুন করা হলো তার কি কোন হদিস পেয়েছেন ইনসপেক্টর রাইস। জিজ্ঞাসা করেন পোয়ারো।

সহজ ভঙ্গিতে ইনসপেক্টর রাইস বলেন, ঘটনাটা ওইরকম–টেবিলের সামনে বসেছিলেন ভদ্রমহিলা। তার বিপরীত দিকে যিনি বসেছিলেন সেই একটা ছোট ক্যাসিবারের পিস্তল দিয়ে তাকে গুলিবিদ্ধ করে। টেবিলের এপার আর ওপার। দূরত্ব খুবই কম। তাই নিশানা ছিল অব্যর্থ। গুলিবিদ্ধ হওয়া মাত্র তিনি টেবিলের উপর উপুড় হয়ে পড়েন। তাতেই টেবিল ক্লথের উপর রক্তের দাগ লাগে।

মিলড্রেড জিজ্ঞাসা করল, তাই যদি হয় তবে গুলির আওয়াজ কেউ কেন শুনতে পেল না?

সেই পিস্তলে সাইলেনসার লাগানো ছিল। তাই কেউ গুলির আওয়াজ শুনতে পায়নি। যখন তারা তার পরিচারিকাকে বললেন তার গৃহকত্রী মারা গেছেন তখন সে বাইরে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে ছিল। পরিচারিকা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাবার সময় কোন কর্কশ আওয়াজ সে কি শুনতে পেয়েছিল?

সম্ভবতঃ না। তিনি আগেই বলেছিলেন যদি পিস্তলের আওয়াজ শোনা না যায় তবে দরজা বন্ধ করার সময় কোন আওয়াজ শোনা যেতে পারে না।

পরিচারিকার কথা উঠতেই পোয়ারোর মনে পড়ে যায় প্যাস্ট্রিতে শুয়ে থাকা মেয়েটির কথা। যাকে তিনি পুলিশ আসার আগে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে চান নি।

তার মনের কথাটা হঠাৎ প্রকাশ করলেন পোয়ারো-মিঃ রাইস, পরিচারিকা মেয়েটি কোন কথা বলেনি তাকে?

উত্তর দিলেন মিঃ রাইস-সন্ধ্যার সময় তার বাজার যাবার কথা। সেইমতো মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাট থেকে সে বেরিয়ে যায়। তার একটা নিজস্ব চাবি ছিল। রাত প্রায় দশটার সময় সে ফিরে এসে দেখে তার গৃহকত্রীর ফ্ল্যাট নিঃঝুম। তাই সে ভাবলো তার গৃহকত্রী শুয়ে পড়েছেন।

তাহলে বসার ঘরের দিকে সে তাকিয়ে দেখেনি।

হ্যাঁ, দেখেছিল নিশ্চয়ই। সান্ধ্য ডাকে আসা চিঠিগুলো সংগ্রহ করে সেখান থেকে। কিন্তু কোন অস্বাভাবিকতা সে দেখতে পায়নি। তার মনে হয় খুনী অত্যন্ত চতুর। পর্দার আড়ালে মৃতদেহ লুকিয়ে রাখে। যাতে কোন খুঁত না থাকে।

কিন্তু তার কি মনে হয় না এটা খুবই রহস্যজনক? পোয়ারো জিজ্ঞেস করল। এই কাজের পিছনে কোন গুঢ় অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে। অভিসন্ধিটা জানতে পারলেই খুনীকে ধরা সম্ভব হবে।

শান্ত মার্জিত সংযত হয়ে পোয়ারোর কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা ইনসপেক্টরকে ভাবিয়ে তুলেছিল।

সে তার পালাবার রাস্তা ঠিক না হওয়ার পর্যন্ত মৃতদেহ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল। হ্যাঁ, সেটাই হবে। সম্মতি সূচক উত্তর দিলেন পোয়ারো। পরিচারিকার জবানীতে শোনা যায় বিকেল পাঁচটায় মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাট থেকে সে বেরিয়ে যায়। ডাক্তারের মতে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা আগে।

কম কথার মানুষ ডাক্তার ঘন ঘন মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল।

তারপর ঘড়ির তাকিয়ে দেখল পৌন বারটা বাজে। তারপর পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করল।

মৃত ভদ্রমহিলার পোশাকের পকেট থেকে সেটা পাওয়া গেছে। সেটা হাতে নিয়ে দেখতে কোন বাধা নেই পোয়ারোর। তার উপর হাতের কোন ছাপ নেই।

চিরকুটটা হাতে নিয়ে মেলে ধরলেন পোয়ারো। ছোট ছোট গোটা গোটা অক্ষরে ছাপানো আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসব।

.

০৫.

 বেশ কয়েকবার চিরকুটের লেখাটা দেখলেন। নীচে প্রেরকের নামের আদ্যক্ষর জে.এফ.। চারজনেই শুনতে পারে এমন ভাবে বলেন তিনি–জে.অফ.। সবার দৃষ্টি গিয়ে জিমি ফকনারের উপর পড়লো। জে. এফ. অর্থাৎ জিমি ফকনারই কি তাহলে পত্রপ্রেরক।

হঠাৎ জিমির মুখটা কেমন পাংশু হয়ে গেল। অপর তিনজন যুবক তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। দুচোখে তাদের ঘৃণা আর সন্দেহ। জিমির অবস্থা ফাঁসীর আসামীর মতোন। বিচারের আগেই সে খুনী চিহ্নিত হয়েছে।

ছিঃ ছিঃ, জিমি। মনে মনে তারা এই বলছিল। সে ঘৃণা, সমাজের কলঙ্ক, সে তোদের বন্ধু হবার অনুপযুক্ত।

ফুঁসে উঠে প্যাট বলল, কেন, যে মিসেস গ্রান্টকে খুন করল, তিনি তার কি করেছিলেন?

কৈফিয়ত চেয়ে মিলড্রেড বলে–তার সঙ্গে তো জিমির কোন পরিচয় ছিল না। তবুও কেন অপরিচিতাকে খুন করতে গেল।

তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হাসলেন পোয়ারো। দীর্ঘদিনের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তারা চিনতে পারেনি কিন্তু আজকে একটা সূত্র হাতে পেয়েই কেমন সোচ্চার হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এই নামের আদ্যাক্ষর দুটি–জে.এফ., জিমি ফকনার না অন্য কিছু? কিন্তু তার অনুমানও মিথ্যে হয় না।

এই চিরকুটের প্রেরক জানত না, মিসেস গ্রান্ট তার পোশাকের তলায় চিরকুটটা রেখে দিয়েছিলেন। বললেন, হয়তো খুনী ভেবেছিলো সেটা সে নষ্ট করে থাকবে। তবে দেহটা পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাবার সময় পিস্তলটা পাওয়া যায়। একটা সিল্কের রুমাল দিয়ে সেটার উপর থেকে হাতের ছাপ মুছে ফেলা হয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে মঁসিয়ে পোয়ারো, খুনী কত সাবধানী। সে সম্ভবত তার মৃতদেহটাও সরিয়ে ফেলত। যদি না বেইলার এবং ফকনার মিসেস প্রান্টের ফ্ল্যাটে এসে পড়ায় তার মৃতদেহটাকে সরিয়ে ফেলতে পারেনি।

তা না হয় মেনে নেওয়া হোক মঁসিয়ে রাইস কিন্তু কি করে বুঝলেন খুনী সিল্কের রুমাল নিয়ে হাতের ছাপ মুছে ফেলেছে।

কারণ সেই রুমালটার সন্ধান তারা পেয়েছেন। বিজয়ীর মতো উল্লসিত হয়ে বললেন তিনি। যখন খুনী পর্দার আড়ালে মৃতদেহ ঢাকার চেষ্টা করছিল তখন অন্যমনস্ক ভাবে তার দৃষ্টি এড়িয়ে পড়ে যায়।

একটা বড় আকারের সিল্কের রুমাল। রুমালের মাঝখানে একটি চিহ্ন ছিল, যেটা সহজেই পড়া যায় এবং পরিষ্কার বোঝা যায়। রুমালের মাঝখানে একটা নাম পড়লেন পোয়ারো–জন ফ্রেজার।

ইনসপেক্টর বলেন, ঠিক তাই। এই নামের লোকটিকে তাদের খুঁজে বার করতে হবে। লোকটিকে বার করা গেলে বোঝা যাবে মৃত মহিলার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক।

সন্দেহ নিয়ে পোয়ারো বলেন, ব্যাপারটা তাই কি? তার আশঙ্কা তিনি যা ভাবছেন তা সত্যি নয়। আপাতদৃষ্টিতে যে রুমালের ওপর নাম লিখেছে সেই রুমালটা দিয়ে পিস্তলের ওপর তার নামের ছাপ মুছে দিয়ে অপরাধের চিহ্ন লুপ্ত করতে পারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও খুনীকে চতুর সতর্ক ব্যক্তি হিসাবে ধরা যায় না। যেহেতু তার নাম লেখা রুমালটা সে হারিয়ে ফেলেছে এবং সেটা পরবর্তী হাতে না পৌঁছায় চেষ্টা করা, তার একবারও মনে হয়নি। সেই চিরকুটটা পুলিশের হাতে পড়লে সে অপরাধী সাব্যস্ত হবে।

তালগোল পাকানো ব্যাপার, বললেন, ইনপেক্টর রাইস। খুনীর সম্পর্কে তার মত পাল্টাতে হচ্ছে। ধন্যবাদ মঁসিয়ে তিনি তার চোখ খুলে নিয়েছেন।

এখনও পুরোপুরি চোখ খুলতে পারিনি। কেবল চোখের পাতা উল্টে দিয়েছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে মঁসিয়ে রাইস তার কাছ থেকে তাঁর একটা ধন্যবাদ পাওনা রইল।

পোয়ারোর কথার উত্তরে ইনসপেক্টর বলেন, তিনি প্রতিমুহূর্তে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। একটু থেমে আবার বলেন–সব কিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তা পাকিয়ে দিচ্ছে খুনীটা।

ইনসপেক্টর আর ভাবতে পারছেন না। হতাশ হয়ে বললেন, এখন থেকে পোয়ারো যা বলবেন তাই তিনি শিরোধার্য করে রাখবেন।

পোয়ারো বললেন, আপনাদের ব্যাপার হলো, এই বিল্ডিংয়ে খুনীকে কেউ ঢুকতে বা বেরোতে দেখেনি। তবে কি নোকটা হাওয়ার মিলিয়ে গেল?

এই ব্লিডিং-এ অত বড় বড় সব ব্লক। কত লোক আসছে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কি দেখেনি খুনীকে? মিস গারনেট, মিস মিলড্রেড, মিঃ ফকনার, মিঃ বেইলি? কেউ তাকে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেনি। আশ্চর্য ব্যাপার।

কৈফিয়ত দেবার সুরে প্যাট বলল, এতে আশ্চর্য হবার কোন কারণ নেই। আজ তারা একটু তাড়াতাড়ি প্রায় সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে যায়।

অন্য দিকে জিমিকে বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল। চিরকুটে লেখা নামের আদ্যাক্ষর জে. এফ. দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েছিল সে। এই শব্দ দুটি তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে বিরাট ফাটল ধরিয়েছিল। তারা তার প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। এখন আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ খুনীর ব্যবহৃত রুমাল থেকে জানা গেছে তার নাম জন ফ্রেজার। এখন পুলিশ জন ফ্রেজারকে সন্দেহ করবে তাকে নয়। বন্ধুরা তার দিকে খুনী বলে আঙুল তুলবে না। আবার গলা জড়িয়ে ধরে তারা মনের আনন্দে গান গেয়ে বেড়াবে শুধু।

প্যাটের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে পোয়ারো বললেন, একবার তিনি নীচের ফ্ল্যাটটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন?

কেন পারবেন না মঁসিয়ে পোয়ারো। আর এটাকে তিনি কেন অনুগ্রহ বলছেন? তার যে কোন সাহায্য তাদের কাছে অনুপ্রেরণা হিসাবে চিহ্নিত হয়। তার প্রতিটি কর্মধারা বিশ্লেষণকে তারা তাদের আদর্শ বলে মনে করেন। তাই মঁসিয়ে পোয়ারো যদি কিছু চেয়ে অনুগ্রহ বলে মনে করেন তাহলে তাদের ছোট করা হবে।

এটা তার মহানুভবতার পরিচয়। মঁসিয়ে পোয়ারো, তারা প্রত্যেকেই তাঁর সাহায্যপ্রার্থী ইনসপেক্টর বলেন, তাদের হয়ে তিনি কাজ করতে চাইছেন তাতে তাদেরই উপকার হবে। শুরুতে তিনি বলেছিলেন, এই কেসে মিঃ পোয়ারোর খুব একটা লাভ হবে না। কিন্তু ইনসপেক্টর এখন মনে হচ্ছে, এ কেস শুধু তার হাতে শোভা পায়। তিনি একমাত্র সমাধানের সূত্র খুঁজে বের করতে পারেন। এই বলে ফ্ল্যাটের একটা চাবি গোয়েন্দা পোয়ারোর হাতে দিলেন।

ফ্ল্যাট একেবারে কঁকা। কোন পরিচারিকা নেই? জিজ্ঞাসা করেন পোয়ারো।

 অতবড় দুর্ঘটনা ঘটায় মেয়েটি চলে যায়। ওখানে একা থাকতে তার ভয়।

অসংখ্য ধন্যবাদ, চাবিটা হাতে নিয়ে বলেন পোয়ারো, বোকার মতো কিচেনের দরজা দিয়ে মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাটে নয় বুক চিতিয়ে সামনের দরজা দিয়ে প্রকাশ্য দরজা দিয়ে ঢোকা ভুল করে। এত রাতে সব বাসিন্দাই ঘুমে অচেতন। সেই সময় এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মিসেস গ্রান্ট খুন হয়। এবং পুলিশ দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল তখন অন্য বাসিন্দারা কেউ হয়ত ঘুমোবার আয়োজন করছিল। কেউ বা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল। শুধু একমাত্র জেগে ছিল ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার। পুলিশ ইনসপেক্টর তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল যদি পুলিশের উপস্থিতিটা কেউ জানতে পারে তবে তার এবং তার মালিকের সমূহ বিপদ ঘটবে। কারণ এই বিল্ডিং-এ কেউ খুন হয়েছে খবরটা প্রচার হলে কেউ ভবিষ্যতে ভাড়া নিতে আসবে না। যারা আছে তারাও নিরাপদ জায়গায় চলে যাবে। বিল্ডিং যদি ভাড়াটে শূন্য হয়ে পড়ে তবে ভবিষ্যতে তার চাকরি চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থেকে যাবে। তাই ভয়ে মুখ খুলল না কেয়াটেকার। মিসেস গ্রান্টের খুনটা বেমালুম চেপে যায়।

পোয়ারো নিঃশব্দে মিসেস গ্রান্টের ঘরে ঢুকলেন। পুলিশ কনস্টেবল রাইসের নির্দেশে ডিউটি দিচ্ছেন। সে পোয়ারোকে চিনতো, তাই তাকে বিনা বাধায় ভেতরে যেতে দিল।

ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল পোয়ারো। ঘরের সব আসবাবপত্র যেখানে পড়েছিল সেখানেই পড়ে রইল। নেই কেবল ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। হতভাগিনী মিসেস গ্রান্ট। তার মৃত্যু সম্পর্কে তাদের ভাসা ভাসা অনুমান। ডিভিশনাল সার্জেনের ডেথ সার্টিফিকেট কিংবা মৃত্যু সম্পর্কে ডাক্তারের রির্পোট এই সব যথেষ্ট নয়। তাঁর কাছে মৃত্যুর কারণটা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে না পারলে কেস টিকবে না। আসামী বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে। তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অত্যন্ত জরুরী।

গোয়েন্দা টেবিলটার সামনে এসে দাঁড়ালেন। একগুচ্ছ চিঠি পড়ে রয়েছে টেবিলের ওপর। যেগুলি সান্ধ্য ডাকে এসেছিল এবং মেয়েটি টেবিলের ওপর রেখেছিল আলো না জ্বালিয়েই। এই অভ্যাস তার বহুদিনের। এখন চিঠিগুলি দেখতে দেখতে নিরাশ হলেন তিনি যে চিঠিটির খোঁজে তিনি এখানে এসেছেন সেটি নেই। একটা চিঠি নেই। প্রথমবার এসে তিনি চিঠিগুলি গুনে দেখেছিলেন। কিন্তু পুলিশ না আসা পর্যন্ত তিনি চিঠিগুলি নিতে পারেন নি। কিন্তু কে সরাবে? মিসেস গ্রান্টের পরিচারিকা কি? সে যদি সরাবার চেষ্টা করে তাহলে আগেই সরাতে পারত। তাছাড়া মিসেস গ্রান্টের চিঠি তার কি কাজে লাগতে পারে? উত্তর হলো অপ্রয়োজন। সুতরাং তালিকা থেকে সে বাদ।

এবার প্রথম হলো কি এমন ছিল যেটা কারোর কাছে জরুরী হয়ে পড়ল? তাও আজ রাতেই। অতএব মিসেস গ্রান্টের চিঠির সঙ্গে তার কাজ জড়িয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তার প্রথমে মনে পড়ল স্বামীর কথা। তিনি যে বিবাহিতা ছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু তার স্বামী কে, প্যাট সে কথা জানে না। কয়েকজন পুরুষ তার ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত করতো। কেউ কখনো স্থায়ী ভাবে তার সঙ্গে বাস করে নি। যদি কাউকে চোখে পড়ত তবে অবশ্যই ধরে নেওয়া যেত তিনি তার স্বামী। এছাড়া আর কোন সম্পর্কের কথা তারা ভাবত না।

যদি ভদ্রমহিলা স্বামী পরিত্যক্ত হবেন তবে ধরে নেওয়া যায় তার স্বামী বিচ্ছেদে রাজী থাকলেও তিনি মানসিক ভাবে তা মেনে নিতে পারেন নি। যদি স্বামী অন্য কোন নারীর প্রতি আসক্ত হন তাহলে প্রথমে সে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজী করাতে চাইবে। যদি স্ত্রী রাজী না হয় তবে তাকে পথ থেকে সারানো জন্য অন্য পথ অবলম্বন করবে।

খুন হয়েছেন মিসেস গ্রান্ট। স্বামী জীবিত কিনা কেউ জানে না। কি তার পরিচয়? স্বামী যদি পলাতক হয় তাহলে পুলিশ তাকে খুঁজে বের করবে। এইসব কথা ভেবে পোয়ারো নিজেকে অসহায় মনে করল।

এখন সবথেকে বড় কাজ হলো, সেই হারানো চিঠিটা খুঁজে বের করা। তার দৃঢ় বিশ্বাস, হারানো চিঠিটার মধ্যে এমন কিছু আছে যাতে মিসেস গ্রান্টের বিবাহিত জীবনের কোন জরুরী নথিপত্র থাকতে পারে বা সেটা একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে খুনীর কাছে। সে তার স্বামীই তোক বা অন্য কেউ থোক।

এখন প্রথম কাজ হলো চিঠিটার সন্ধান করা। তারপর মিসেস গ্রান্টের স্বামীর সন্ধানে বেরোনো। আরও একটা জিনিসের সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরী মনে করেন এরকুল পোয়ারো। গোয়েন্দা লাইনে তার অভিজ্ঞতা প্রচুর। কোন সম্ভাবনাকে জড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেমন প্যাটের ফ্ল্যাটের চাবি উধাও হয়ে যাবার ঘটনা। প্যাটের অভিমত হচ্ছে, তার পরিষ্কার মনে আছে ফ্ল্যাটে থেকে বেরোবার সময় প্রবেশ পথে তালা লাগিয়ে চাবিটা হাতব্যাগে রেখেছিল। কিন্তু তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পায়নি।

আপাতদৃষ্টিতে প্যাটের ফোর্থ ফ্লোরের সঙ্গে নীচের থার্ড ফ্লোরের মিসেস গ্রান্টের খুন হবার সঙ্গে কোন সম্পর্ক না থাকারই কথা। কিন্তু কোন মানে না পোয়ারোর মনে হলো প্যাটের ফ্ল্যাটের চাবি চুরি করা মিসেস গ্রান্টের হত্যাকারীর একান্ত প্রয়োজন ছিল। খুনী অত্যন্ত চতুর এবং সচেতন। প্যাটের চাবি চুরিটা তার চাতুর্যের একটা নিদর্শন মনে হতেই বেরিয়ে এলেন। তিনি। চিঠিটার কথা ভুলে গেলেন তিনি।

প্যাটের ফ্ল্যাটে ফিরে যাবার আগে গ্রাউণ্ড ফ্লোরে নেমে এলেন পোয়ারো। ডে এণ্ড নাইট সার্ভিসে একটা ওষুধের দোকানে ঢুকলেন। সেখানে থেকে এবিন ফ্লোরাডের বোতল কিনে যখন প্যাটের ফ্ল্যাটে ফিরে এলেন তখন সে অন্য মানুষ।

.

০৬.

 জিমি যেন অন্য এক পোয়ারোকে দেখছে। তার ফ্ল্যাটে থেকে যখন নীচের ফ্ল্যাটে যাচ্ছিল তখন ছিল উজ্জ্বল ঝলমলে মনে হচ্ছিল। আর এখন ফিরে এলেন একেবারে কালো মুখ। হতাশার চিহ্ন চোখে মুখে।

জিমি প্রশ্ন করে, মঁসিয়ে পোয়ারো কি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি?

না, উত্তরে তিনি বলেন, তিনি সন্তুষ্ট নন।

কৌতূহলী হয়ে ভেনোডেন জিজ্ঞাসা করে, কিসের এত দুশ্চিন্তা তার?

তার কথায় উত্তর না দিয়ে এক মিনিট নীরব থাকা পর হঠাৎ ভ্রুকুটি করে কি যেন ভেবে কাঁধ ঝাঁকালো।

প্যাটের দিকে তাকিয়ে বলেন, মাদমোয়াজেল, শুভরাত্রি। তিনি খুব ক্লান্ত। অনেক রান্না বান্না তিনি করেছেন।

হেসে উত্তর দিয়ে প্যাট বলল-রান্না বলতে কেবল ওমলেট। নৈশভোজের রান্না সে করেনি। ভেনোডেন জিমি সকলে মিলে একটা ছোট্ট জায়গায় যায়।

তারপর থিয়েটার?

হ্যাঁ, দি ব্রাউন আইজ অব কেরোসিন।

একটা শব্দ করে বলেন যে মাদমোয়াজেলের নীল চোখ। তারপর শুভরাত্রি জানালো প্যাট। এবং মিলড্রেডের বিশেষ অনুরোধে সে আজ প্যাটের ফ্ল্যাটে থেকে যাচ্ছে। প্যাট যদি তার ফ্ল্যাটে একা থাকে তবে সে খুব ভয় পাবে।

সিঁড়ির মুখে দুজন যুবক তার সাথী হলো। তারা যখন তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে যাবে তখন তাদের প্রভাবিত করেন তিনি।

তরুণ বন্ধুরা, তারা নিশ্চয় জেনেছেন, জিমি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। সত্যি কথাটা হলো তিনি সন্তুষ্ট নন। এখন আবার ফিরে গিয়ে নিজের মতো করে তদন্ত করে দেখতে চান। তাদের কে তার সাথী হবে?

তার সেই প্রস্তাবে দুটি যুবক রাজী হয়ে গেল। তারপর কিছুমাত্র দেরী না করে নীচের ফ্ল্যাটে নেমে এলেন। ইনসপেক্টরের দেওয়া চাবি নিয়ে খুললেন মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাটের তালা। ফ্ল্যাটে ঢুকে প্রত্যাশা মতো বসার ঘরে না গিয়ে, কিচেনে প্রবেশ করলেন।

একটা ছোট্ট লোহার জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কভরটা সরিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে লোহার জানালাটা খুলে ফেললেন জিমি।

জিমি এবং ভেনোডেন বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। পোয়ারোর হাবভাব ক্রমশঃ তাদের অবাক করে তুলেছিল।

হঠাৎ জয়ের আনন্দে চীৎকার করে ভাবলেন তিনি। তারপরেই দেখা গেল তার হাতে ছিপি আঁটা একটা বোল।

ইউরেকা, আনন্দে চীৎকার করে ওঠেন তিনি। আমি যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি। ভয়ঙ্কর উল্লাসে বোতলের ছিপির উপর নাক রেখে শুকলেন তিনি। হায়! হায় ভাগ্য? আমার মাথায় ঠাণ্ডা লেগেছে।

তার হাত থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে পোয়ারোর মতোন নাক ঠেকাল কিন্তু গন্ধে পেল না। চিৎকার করে পোয়ারো তাকে সতর্ক করে দেবার আগে দ্রুত হাতে ছিপি খুলে নাক লাগল।

চীৎকার করে বললেন–মূর্খ, ছিঃ ছিঃ, ঐ রকম বোকার মতোন তাড়াহুড়ো করে কেউ বোতলের ছিপি খোলে? সে কি দেখেনি, কিরকম সাবধানে তিনি বোতল ধরে ছিলেন? দয়া করে যদি একটু ব্রাণ্ডির ব্যবস্থা করা যায়। বেশী দূরে যেতে হবে না। এই ফ্ল্যাটেরই বসার ঘরে একটা সুরাপাত্র তিনি দেখেছেন।

এটাকে কোন কঠিন কাজ বলেই মনে করল না সে। বন্ধুর জন্য যত দূরেই হোক ছুটে যেতে পারবে সে। এত হাতের কাছেই রয়েছে। এই বলে বসার ঘরে ঢুকে গেল সে। ফিরে এসে অবাক হয়ে দেখল ভেনোডেন সুস্থ হয়ে উঠে বসেছে।

উদ্বিগ্ন স্বরে জিমি জিজ্ঞেস করলো, ভেনোডেনের কষ্ট হয়নি তো? কেমন বোধ করছে?

কৈ কিছু সে বুঝতে পারছে না। সে আগের মতোই সুস্থ বোধ করেছে। পোয়ারোর উপদেশ শুনতে হলো। তাকে বিষাক্ত জিনিসের গন্ধ নিতে হলে অতি সাবধানতা প্রয়োজন।

লজ্জায় নত হয়ে ভেনোডেন বলল, এখুনি সে বাড়ি ফিরে যাবে। কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল সে। যদি মঁসিয়ে পোয়ারো তাকে অনুমতি দেন এবং যদি তার প্রয়োজন আর না থাকে। সে খুব দুর্বল বোধ করছে। অসহায় হয়ে তার অনুমতির অপেক্ষায় রইল।

অনুমতি দিয়ে পোয়ারো বলেন, বাড়ি ফিরে যাওয়াই হবে তার এখন সবচেয়ে ভালো দিক।

তারপর জিমির দিকে ফিরে বললেন, মসিয়ে ফকনার, তিনি যেন এক্ষুনি চলে না যায়, তার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। তার বন্ধুকে এগিয়ে দিয়ে তিনি যেন এক্ষুনি ফিরে আসেন।

ঘাড় নেড়ে বাধ্য ছেলের মতো সম্মতি জানাল জিমি। দরজার বাইরে পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দিতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে অনেকক্ষণ আলোচনা করল। শেষে ফ্ল্যাটে ঢুকে পোয়ারো দেখলেন, বসার ঘরে দাঁড়িয়ে রয়েছে জিমি। তাকে ফিরে আসতে দেখে তাকিয়ে রইল পোয়ারোর দিকে। স্তব্ধ বিমূঢ় হতবাক। মুখে কথা নেই। চোখে যেন সরষে ফুল দেখছে।

অনেক পরে অস্ফুট স্বরে বলল–সে কি এখন যেতে পারে?

নিশ্চয়, বলে জিমিকে এগিয়ে দিতে গেলেন পোয়ারো। ভেনোডেনের জন্যে দরজা খুলে দিয়েছিল কেয়ারটেকার। এবার পোয়ারোকে নীচে নামতে দেখে কেয়ারটেকার বলল তিনিও কি বাইরে যাবেন মঁসিয়ে পোয়ারো? উত্তরে পোয়ারো জনালেন, তার বন্ধু মঁসিয়ে ফকনার যাবেন।

ফটক পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে পোয়োরা বললেন, কাজের কথাটাই বলা হয়নি। কাল সন্ধ্যায় তাকে একবার পুলিশ স্টেশনে আসতে হবে। এই সময়ে মধ্যে মিসেস গ্রান্টের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা পাওয়া যাবে। তারপর যা করণীয় করা যবে।

তার কি কোন প্রয়োজন আছে? জিজ্ঞাসা করে জিমি।

সবিস্ময়ে পোয়ারো বলেন, প্রয়োজন অবশ্যই আছে। মঁসিয়ে, ভুলে যাবেন না যেন যে মিসেস গ্রান্টের খুনী এখনও ধরা পড়েনি।

তবে কি তাকে সম্ভাব্য খুনী হিসেবে চিহ্নিত করছে পোয়ারো। তাকে তার জন্য পুলিশ স্টেশনে যাবার নির্দেশ দিচ্ছেন। ভেনোডেনকে বললেন না। প্যাট আর মিলড্রেডের সঙ্গে মধুর ব্যবহার করলেন। তাদের সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন পোয়ারো। যাই হোক তিনি যদি পুলিশ স্টেশনে না যান তবে ইনসপেক্টর রাইস তার ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হবেন।

ভাবতে গিয়ে মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল তার। অতএব বাধ্য ছেলের মতো তার প্রস্তাবে রাজী হয়। পোয়ারোকে শুভরাত্রি জানিয়ে রাস্তায় নামল জিমি।

পরদিন সন্ধ্যায় সময়মতো হাজির হয় জিমি। নানা চিন্তায় সে বিভোর ছিল। যদি হত্যাকারী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে তবে প্যাটকে ফোন করবে তার জামিনের ব্যবস্থা করার জন্য। যদিও মিথ্যা অভিযোগ তাকে গ্রেফতার করেছে। তবুও প্যাট মিথ্যে অভিযোগটা সত্যি ধরে নেবে আর এতদিনের বন্ধুত্ব প্রেম ভালোবাসা সব মিথ্যে হয়ে যাবে।

এইভাবে আশা নিরাশায় দুলতে দুলতে পুলিশ স্টেশনে হাজির হলো। আগেই হাজির ছিলেন গোয়েন্দা পোয়ারো। পুলিশ ইনসপেক্টর রাইসের সঙ্গে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তাকে দেখে গম্ভীর স্বরে বললেন, আসুন মঁসিয়ে ফকনার। তিনি না এলে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে আনা হত। এবার মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাটে রওনা হওয়া যাক। ভয়ে বুক কাঁপছিল তার। তারা কি তাকেই মিসেস গ্রান্টের হত্যাকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছে?

পুলিশ ইনসপেক্টরের হাতের দিকে ভয়ার্ত চোখে দেখল। মিসেস গ্রান্টের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা স্থির চোখে দেখছিলেন পোয়ারো। জিমি পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটার দিকে তাকিয়ে আছে।

কয়েক মিনিটের জন্য অদ্ভুত নীরবতা। মুখে কোন কথা নেই। পোয়ারো জিমির মনের প্রতিক্রিয়া বুঝবার চেষ্টা করছিল।

নীরবতা ভঙ্গ করে পোয়ারো বললেন, মঁসিয়ে ফকনার। মিসেস গ্রান্টের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেছে। মৃত্যুর কারণ, খুব কাজ থেকে তাকে গুলিবিদ্ধ করা হয়।

তা তো জানতাম।

তীক্ষ্ণ স্বরে পোয়ারো বললেন, জানতেন তিনি?

গতকালই ইনসপেক্টর রাইসের সঙ্গে তার আলোচনার সময় সে শুনেছে। এবং ইনসপেক্টর রাইসকে জিজ্ঞাসা করল, তাই না ইনসপেক্টর রাইস।

হুঁ বলে মাথা নেড়ে উত্তর দিলেন রাইস।

হত্যাকারী কে? জিজ্ঞস করলো জিমি। মঁসিয়ে, এরপর কি হতে পারে?

এরপর আর কিছু নেই। কেস খতম।

 কেস খতম? কি বললেন তিনি?

 হ্যাঁ, আমি সব জেনে গেছি।

কি জেনেছেন? ছোট্ট বোতলটার মাধ্যমেই তিনি কি সব জেনেছেন?

ঠিক তাই, বলে পোয়ারো বলেন, খবর সংগ্রহ করতে এই বোতলটাই তাকে সাহায্য করেছে।

ঘন ঘন মাথা নেড়ে জিমি বলল, তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। ফ্রেজারের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাবার পরে তিনি অসন্তষ্ট ছিলেন। তার মনে হয়েছিল, তার অস্তিত্ব পোয়ারো স্বীকার করছেন না।

নরম সুরে পোয়ারো বললেন, যদি যে কেউ হয় তিনি খুব বিস্মিত হবেন।

তার কথা জিমি কিছুতেই বুঝতে পারছে না।

যে একটা নাম। সতর্কতার সঙ্গে রুমালে চিহ্নিত করা একটা নাম। আর চিঠিটা। যদি ফ্রেজার নামে কোন ব্যক্তি চিঠিটা লিখত তবে চিঠিটা বেনামে লেখার কোন প্রয়োজন ছিল না। দ্বিতীয়তঃ এমন ভাবে মৃত মহিলার পকেটে রাখতেন না যাতে পুলিশের নজরে পড়ে যায়। সুতরাং ফ্রেজারের কোন অস্তিত্বই নেই।

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল জিমি। প্রথম যে পয়েন্ট সেটা হলো তিনি একবার বলেছিলেন ফ্ল্যাট বাড়িতে কিছু কিছু জিনিস যা প্রত্যেকেরই ফ্ল্যাটে থাকে। এই ব্যাপারে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন। চতুর্থ উদাহরণ হলো, লাইটের সুইচ। তার বন্ধু বলেছিল যে জানালার ধারে যায় নি। টেবিলের ওপর হাত রেখেছিল আর হাত রক্তে ভরে যায়। তখনই তার প্রশ্ন মনে জাগল। কেন টেবিলের ওপর সে হাত রাখতে গেল। আর কি বা খুঁজছিল। দরজার পাশে সুইচ থাকে। তাছাড়া কেন সে আলো জ্বালাবার প্রয়োজন বোধ করেনি। অন্ধকারে কোন অস্বাভাবিক কাজ করা যায় না। আর যারা অন্ধকার জগতের মানুষ তারা আলোয় আসতে ভয় পায়। তার বন্ধুর বক্তব্য অনুযায়ী টেবিলের আলো জ্বালাবার চেষ্টা সে করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। কিন্তু সে সুইচ দেওয়া মাত্র আলো জ্বলে ওঠে। তার মানে এই কি, সে আলো জ্বালাতে অনিচ্ছুক ছিল। যদি আলো জ্বালতো তাহলে বুঝত যে তারা ভুল ফ্ল্যাটে এসে পড়েছে। তাহলে এই ফ্ল্যাটে ঢোকার কোন প্রয়োজন থাকতে পারে না।

জিমি বলল, আর একটু খোলসা করে না বললে সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

ঠিক আছে বলে মঁসিয়ে পোয়ারো ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা চাবি বের করে তার সামনে তুলে ধরলেন। দেখুন তো মঁসিয়ে, এটা কোথাকার চাবি?

এই ফ্ল্যাটের চাবি। উত্তর দেয় জিমি।

না, উপরের ফ্ল্যাটের। মাদমোয়াজেল প্যাট্রিসিয়ার ফ্ল্যাটের চাবি। যেটা ভেনোডেন হাত ব্যাগ থেকে তুলে নেয়।

কেন, প্যাটের ফ্ল্যাটের চাবি সরাতে গেল?

সে জানতো, সেদিন সন্ধ্যায় লিফটের দরজা খোলা ছিল।

কিন্তু হারানো চাবিটা মঁসিয়ে পেলেন কিভাবে?

এক গাল হাসি হেসে পোয়ারো বললেন, এটা তিনি পান গভীর রাত্রে। চাবিটার খোঁজ তিনি পান তার বিশ্বস্ত বন্ধু মঁসিয়ে ভেনোডেনের পকেটে। তার মনে আছে ছোট্ট বোতলটার কথা। এই লাইনে কাজ করতে করতে তার প্রচুর অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই জাতীয় বোতল যেখানে, প্রত্যেকে চাইবে ঘ্রাণ নিতে এবং পরে বোতলের বস্তটির দিকে। মঁসিয়ে ভেনোডেনের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি। একরকম নোটিশেই সে বোতলটা ছিনিয়ে নেয়। প্রথমে ছিপি সমেত বোতলটার ঘ্রাণ নেয়। তারপর ছিপি খুলে ঘ্রাণ নিতে চেষ্টা করে। এই ভাবে তার পাতা জালে সে ধরা পড়ল। তার সব চালাকির ছন্দপতন ঘটল। তার সাময়িক চেতনাহীন দেহটা পোয়ারো ধরে ফেললেন। বোতলের ভেতরে এথিল ক্লোরইড নামে শক্তিশালী এ্যানসেথটিক ছিল যা শুকলে মানুষ সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায়। এই সুযোগ নেবার জন্য গভীর রাতে তিনি ওষুধটা কিনে আনলেন। সেই অ্যানাসথেটিকের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী হয় এক কি দুই মিনিট। এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। সেই অবসরে তার পকেট থেকে দুটো জিনিস সংগ্রহ করেন। তিনি জানতেন, এই দুটি জিনিস তার পকেটে থাকতে বাধ্য। একটি চাবি আর অপরটি

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলেন, তার মনে আছে। ইনসপেক্টর রাইস মৃত দেহ পর্দার আড়ালে লুকোবার কারণ দেখান হাতে সময় পাবার জন্য খুনী এই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। সেই কথা ভেবে একটা কথা তার মনে এসেছে। সেটা হলো সন্ধ্যা ডাকের চিঠিগুলি। সান্ধ্য ডাক আসে সাড়ে নটার কিছু পরে। খুনী যা আশা করেছিল তা হয়নি। তার সেই না পাওয়া জিনিসটা ডাকযোগে পরে আসতে পারে। তাই সে আবার ফিরে আসে। কিন্তু মিসেস গ্রান্টকে খুন করার পর তার মতোকেই যেন পরিচারিকা না দেখতে পায় এবং সন্ধ্যা ডাক না আসা পর্যন্ত পুলিশ যেন ফ্ল্যাটের দখল নিতে না পারে সেইজন্য পর্দার আড়ালে মৃতদেহ লুকিয়ে রেখেছিল। পরিচারিকা বাড়ি ফিরে গৃহকত্রীকে দেখতে না পেয়ে ভাবল তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন এবং রোজকার অভ্যাস মতো চিঠিগুলি টেবিলের ওপর রেখে দেয়।

পোয়ারো তার পকেট থেকে কিছু একটা যেন বের করলো। দেখা সেল টাইপ করা মিসেস আর্নেস্টিন গ্রান্টের ঠিকানার একটা খাম। তিনি খুলে ধরলেন জিমির সামনে। কিন্তু মঁসিয়ে ফকনার তিনি যেন বুঝতে পারছেন তিনি পড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারণ তার উত্তরটা জিমির কাজ থেকে পাওয়া খুবই জরুরী। এটা তার সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব বটে।

হাসতে হাসতে জিমি বলে, মঁসিয়ে পোয়ারো কে জানে তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন গোয়েন্দার কথা যার মগজে শুধু খুন খারাপি এবং অপরাধী ধরার কৌশল আঁটা ফাঁদ পাতা। এইসব ছাড়া অন্য চিন্তার স্থান নেই। অথচ তার মুখ থেকে নৈতিক সামাজিক দায়িত্ব প্রভৃতি গুরুগম্ভীর কথা শুনি কিভাবে বেরোয়।

তবে কি মঁসিয়ে ফকনার। বলতে চান আমি সবসময় অসামাজিক কাজ করি।

বিনীত ভাবে জিমি বলল, সে কথাগুলো ওভাবে বলছে চায়নি।

পোয়ারো বলে চলেন, তিনি কি ঠাণ্ডা ইয়ার্কিও বোঝেন না। তিরস্কার করার দৃষ্টিতে বলেন, এবার কাজের কথায় আসা যাক।

মাদমোয়াজেল প্যাট্রিয়াকে তিনি ভালোবাসেন কিনা, ঠিক করে বলুন?

প্যাটের জন্য তার দারুণ চিন্তা হয়। রাত্রে ঘুমোতে পারে না সে। কিন্তু কখনও ভাবেনি তাকে পাওয়া সম্ভব।

জিমি ভেবেছিলেন, প্যাট্রিসিয়া ভেনোডেনের, ভালোবাসে, হয়তো গোড়ায় উনি তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। তারপর তাল কেটে যায়। এখন তার বক্তব্য হলো জীবনের সেই অনুচ্ছেদ ভুলে গিয়ে তার বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো।

বিপদ? প্যাটের বিপদের পুলিশী তদন্ত অনুযায়ী গ্রান্টকে খুন করেছে ভেনোডেন। কিন্তু প্যাটের বিপদ হতে যাবে কেন?

হ্যাঁ, খুব বিপদ ওর। ভেনোডেনের জন্য প্যাট্রিসিয়াকে বিপদে পড়তে হয়েছে?

ঠিক তাই। এই খুনের কেস থেকে তাকে বাইরে রাখার চেষ্টা করবে কিন্তু সার্বিকভাবে সেটা অসম্ভব।

এবার পোয়ারো হাতের খামটা মেলে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে একটা চিঠি, তার সঙ্গে সার্টিফিকেট জাতীয় একটা কাগজ বেরিয়ে এল। সলিসিটারের কাছে থেকে এসেছে। চিঠিটার বিষয়বস্তু এইরকম–

প্রিয় মাদাম,
আপনার চিঠির সঙ্গে গাঁধা নথিপত্রটি পুরোপুরি সঠিক এবং বিবাহের ঘটনা বিদেশে ঘটলেও কোন কারণেই সেই বিয়ে কখনওই বাতিলযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
আপনার বিশ্বস্ত।

সেই নথিপত্রটা একটা সার্টিফিকেট। ভেনোডেন বেইলি আর্নেস্টিন গ্রান্টের বিয়ের সার্টিফিকেট। আট বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল।

এসব শুনে জিমি বলে, প্যাট বলেছিল ভদ্রমহিলার কাছ থেকে ও একটা চিঠি পায়। গতকাল সন্ধ্যায় ওর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সেটা এত জরুরী স্বপ্নেও ভাবিনি।

মাথা নাড়ালেন পোয়ারো। ভেনোডেন, মাদমোয়াজেল প্যাটের ফ্ল্যাটে যাবার আগে আজ সন্ধ্যায় তার পূর্বতন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যায়। মিসেস গ্রান্ট প্যাট্রিসিয়া তাদের দুজনের সম্পর্ক ফাঁস করে দেবার আগে তাকে সরিয়ে ফেলে। হতভাগ্য মহিলা। একই বিল্ডিং-এ বাস করত যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বীও বাস করত।

ঠাণ্ডা মাত্রায় খুন করা হয় তাকে। তার স্ত্রী নিশ্চয় তাকে বলে ছিল, তার সলিসিটার বিয়ের সার্টিফিকেট পাঠিয়েছে এবং গত সন্ধ্যায় তাদের কাছ থেকে উত্তরের অপেক্ষায় আবার চেষ্টা করছিল যে তাদের বিয়েটা আইনসিদ্ধ নয়।

গতকাল সারা সন্ধ্যাটা ভেনোডেনকে দেখেছেন, দারুণ মেজাজে ছিলেন তিনি। বোঝাই যাইনি যে তিনি স্ত্রীকে খুন করতে পারেন।

কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি এই বিল্ডিং-এ থাকায় তাকে পালিয়ে যেতে দেওয়া উচিত হয়নি। কাঁপা গলায় বলল জিমি।

এখন তার পালাবার সব রাস্তা বন্ধ। গম্ভীর গলায় বললেন পোয়ারো। তার ভয়ের কোন কারণ নেই।

না, সে এখন শুধু প্যাটের কথাই চিন্তা করছে। তার বিশ্বাস, প্যাট ভেনোডেনকে খুব ভালোবাসত।

 নম্র সংযতভাবে পোয়ারো বললেন, তিনি এসব আদৌ ভাবছেন না। তিনি শুধু বলতে চান, আপনার কাজ হলো আপনার দিকে ওকে টেনে আনা। ভেনোডেনের সঙ্গে যাই হোক না কেন ওসব ওকে ভুলিয়ে দেওয়া।

সে কি আর সম্ভব? পাল্টা প্রশ্ন করে জিমি। এত সব ঘটে যাবার পরেও।

আমার তো মনে হয় না কাজটা খুব দুরূহ। সেটা করতে খুব বেশী বেগ পেতে হবে।