২৬. আধময়লা জামাকাপড়

২৬.

পোয়ারোর পরনে আধময়লা জামাকাপড়। মাথার চুল উস্কোখুস্কো, মুখে আট-দশ দিনের দাড়ি তাও কাঁচা-পাকা। পায়ে একটা তাপ্পি দেওয়া জুতো। পোয়ারো সন্ধেবেলা ইচ্ছে করে বেছে নিয়েছে যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে।

চাদরটা ভালোভাবে মুড়ি দিয়ে পোয়ারো রেল স্টেশনে প্রবেশ করে। বেন্ট উডের একটা দ্বিতীয় শ্রেণীর নির্দিষ্ট ট্রেনের দিকে যেতে যেতে ভালোভাবে চারিধারে দেখে নেয় কেউ তাকে লক্ষ্য করছে কি না।

তারপর ভিড়ের মাঝে একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে। বসার ভঙ্গীটা দেখার মতো। অন্য আর পাঁচজনের মতো সে পা তুলে গুটি মেরে বসেছে। তারপর আর সকলের মতো নিতান্ত সস্তা একটা বিড়ি ধরাল। বিড়ির উগ্র গন্ধে পোয়ারো কয়েকবার খকখক করে কাশল।

বেন্ট উড চলেছে পোয়ারো। থানায় লেখা আছে ওখানে নাকি জোন্স আছে। তবে তার সন্দেহ আছে জোন্সের দেখা পাবে কি না, কারণ এমিট বলেছে জোন্স নামে ঐ গ্রামে কেউ নেই।

তবু পোয়ারো নিজে গিয়ে তদন্ত করতে চায় আর জোন্সকে পেলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাই তাকে প্রয়োজন। এবারে পোয়ারো বিড়িতে কিছুটা অভ্যস্ত হয়েছে। পাশের লোকটাকে জিজ্ঞাসা করে–বেন্ট উড়ে যাবার গাড়ি কটায়?

নটা চল্লিশে।

–তা বেন্ট উডে পৌঁছাবে কখন?

সাড়ে পাঁচটার আগে তো নয়ই। তুমি বুঝি প্রথম ওখানে যাচ্ছ?

 –হ্যাঁ, বোকার মতো হাসে পোয়ারো।

–ওখানে তোমার কে আছে?

–এক খুড়তুতো ভাই।

তারপর ট্রেন আসতে পোয়ারো ভিড়ের মধ্যে গিয়ে বসল আর দেখে নিল কোনো চেনামুখ আছে কি না। না নেই। ইতিমধ্যে গাড়ি গতি নিয়েছে। এইভাবে ছটা নাগাদ গাড়ি বেন্ট উডে পৌঁছালো।

ছোট্ট স্টেশন, গাড়ি বেশিক্ষণ থামে না। পোয়ারোর মতো দু-একজন নামল, আরও কয়েকজন উঠল।

যে দুজন যাত্রী নেমেছে তারা স্টেশনে টিকিট জমা দিয়ে গেট দিয়ে হনহ করে বেরিয়ে চলে গেল। পোয়ারো স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের দোকানে চা আর জলখাবার খেয়ে নেয়।

ঝকঝকে রোদ উঠেছে। জলখাবার খেয়ে পোয়ারো গ্রামের রাস্তা ধরে। সারি সারি মাটির বাড়ি। কোথাও বা একতলা পাকা বাড়ি। দূরে চাষের জমিতে কৃষকেরা চাষ করছে। একটা বাড়ির সামনে কয়েকজন লোক গোল হয়ে কাজের কথা বলছে। তাদের কাছে গিয়ে পোয়ারো বলল, ভাই-জোন্স কোথায় থাকে জানো? এই তার ছবি।

-না ভাই, এ ছবি চিনতে পারছি না। তাই গ্রামের নাম কী বলেছে?

 –বেন্ট উড।

–তুমি এই গ্রামে প্রথম এলে?

–হ্যাঁ, আসলে বাইরে চাকরি করি তো।

–ও! আর একটু এগিয়ে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করো।

–আচ্ছা বলে, পোয়ারা চলে গেল। অনেকের কাছে জানতে চাইল কেউ বলতে পারল না। শেষ পর্যন্ত থানায় গিয়েও লাভ হল না।

পাশের গ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ফল পাওয়া গেল না। হঠাৎ পোয়ায়োর মাথায় এল বেন্ট উডের পাশের স্টেশনে গেলে কেমন হয়? কিন্তু এখানেও আশাপ্রদ ফল পাওয়া গেল না। অবশেষে একজন লোক বলল–আমি চিনতাম।

পঞ্চাশের কাছে বয়স লোকটির, মজবুত স্বাস্থ্য, গায়ের রং কালো।

–চিনতাম কেন বলছেন? পোয়ারো লোকটার কাছে একটা সস্তা দামের সিগারেট এগিয়ে দেয়।

–লোকটি খুশী হয়–আসলে অনেক আগের কথা তো আর ও তো বেঁচে নেই।

বেঁচে নেই?

–না।

কবে মারা গেছে?

–বছর পনেরো।

–ও কি এই গ্রামের লোক?

-না, পাশের গ্রামের। ও আমায় বলেছে আর গ্রামে যাবো না–আপনার জমির সন্ধান পেলাম, এখানেই কাজ করব।

-জোন্স আপনার জমি নিল?

দুবিঘা নিল। দামও বেশ ভালোই দিল। ঐ যে সামনে একটা একতলা পাকাবাড়ি দেখছ, তারপরই খানিকটা ফাঁকা জায়গা তারপরই ওর জমি।

-এখন ওর জমি কে দেখাশোনা করে?

–ওর এক ভাই।

–ওর সঙ্গে কী একটা মেয়ে আছে?

–হ্যাঁ আছে, ওটা কী ওর মেয়ে? আমার তো বিশ্বাস হয় না।

–বোধ হয় ওর। তা সে মেয়ে কোথায়?

–ও আসার পরে তো আর দেখি না।

–জোন্স কীভাবে মারা গেল?

–হার্ট অ্যাটাক।

–তোমায় অনেক ধন্যবাদ।

.

সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানায় গিয়ে পোয়ারো নিজের পরিচয় দেয়। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বলে ওঠে–বসুন স্যার, আপনার জন্য কী করতে পারি?

-আপনি ফোর্স নিয়ে এক্ষুনি আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুন।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওরা বেরিয়ে পড়ে। তরুণ অফিসার বলে–স্যার আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।

–আরে না না, যার কাছে যাচ্ছি, আমরা সেখানে অতীতের অনেক কিছু টেনে বার করতে পারবো আশা করি। আর এ ব্যাপারে আপনার সাহায্য প্রয়োজন।

–নিশ্চয়ই স্যার। আমায় যেমনটি বলবেন আমি তেমনটি করব। 

-ওখানে গিয়ে আপনার প্রধান কাজ লোকটার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলবেন যে, লোকটা যাতে ভয় পায়।

–কেন স্যার?

কারণ ঘটনাটা দীর্ঘ পনেরো বছর আগের। তথ্য বলতে কিছুই নেই। জেরায় জেরায়, ভয় দেখিয়ে যদি কিছু বের করা যায়।

ইতিমধ্যে ওরা বাড়ির সামনে উপস্থিত হয় এবং বাড়িটা চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে। বাড়িটার একতলায় দুখানা ঘর। বাড়ির সামনে বাগান মতোন।

ঘরের দরজা বন্ধ, ঘরের লাইট জ্বলছে। সম্ভবত ঘরে কেউ আছে।

পুলিশ অফিসার জন আর পোয়ারো চোখাচোখি হলে অনেক কথা হয়ে যায়। তারপর জন দরজায় টোকা দেয়।

–কে? এক পুরুষ কণ্ঠস্বর।

 –আমরা এই বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

-কে আপনারা, বলে একজন দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। পুলিশ দেখে এতটুকুও বিচলিত হয় না।

পোয়ারো বার্টের দিকে তাকায়, বয়স পঁয়ত্রিশ, বেশ মজবুত স্বাস্থ্য, গায়ের রং তামাটে।

বার্ট বেশ ক্রুদ্ধভাবে–আপনার কাকে প্রয়োজন?

–তোমাকে। জন দৃঢ়ভাবে জানায়।

–আমাকে? কিন্তু…

–জোন্স কোথায়?

–জোন্স, সে কে?

–তুমি তাকে চেনো না?

 –না।

 –আচ্ছা, তুমি কী বরাবর এই গ্রামেই থাকো?

–হ্যাঁ।

–তার কোনো প্রমাণ আছে?

 –আছে। এই জমি-বাড়ি সব আমার।

–এটা কী আপনার পৈত্রিক সম্পত্তি?

–হুঁ।

-না, পোয়ারো বেরিয়ে আসে। জোন্স যার কাছ থেকে জমি কিনেছিল তাকে দেখিয়ে বলে–একে চেনো?

-হ্যাঁ। বার্টের মুখটা কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আবার ভাবে ভয়ের কী আছে?

–এবার বল, জোন্স কোথায়?

মারা গেছে; আমি একটু আসছি।

 –পালাবে? বাড়ির চারপাশে পুলিশ আছে।

–কিন্তু আপনারা এসেছেন কেন? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।

–তুমি সব স্বীকার করো, নইলে পুলিশের সাহায্য নিতে বাধ্য হবো।

–আমি কিছু জানলে তো স্বীকার করবো। বেশ জোর গলায় বলে।

–স্যার, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।

–তাই তো দেখছি। এখান থেকে ভিড় সরাতে হুকুম দিন।

 সঙ্গে সঙ্গে জনের নির্দেশে ভিড় পাতলা হয়ে গেল। কিছু কৌতূহলী জনতা অদূরে আগ্রহ ভরে দাঁড়িয়ে রইল।

বার্টকে জিজ্ঞাসা করেও যখন সে মুখ খুলল না তখন তাকে থানায় নিয়ে গেল। তারপর সার্চ করা হল, পাওয়া গেল–কিছু টাকা, কয়েক বোতল ব্র্যান্ডি লিকার আর রবার্টের পরিবারের একটা ছবি। পোয়ারো যার সাথে মেরী বা শার্লটের কোনো মিল পাওয়া গেল না।

স্থানীয় থানা, কনফেসন রুম, এ ঘরে চারজন লোক রয়েছে–পোয়ারো, বার্ট, জন এবং সহকারী এলবার্ট। বার্ট এখন রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। তার উপর কয়েকদিন ধরে বেশ অত্যাচারে দারুণ কাহিল হয়ে পড়েছে।

হঠাৎ পোয়ারোর মনে হয় বার্টকে কোথায় যেন দেখেছে। অনেক চেষ্টার পর মনে পড়ল খবরের কাগজে ও ছবি দেখেছে। এক উত্তেজিত জনতার সামনে দিয়ে পুলিশ ওকে গাড়িতে তুলছে। পরে জেনেছিল–ছেলেটা কয়েকটা খুনের ব্যাপারে জড়িত। কিন্তু জোন্সের সাথে বার্টের সম্পর্ক হলো কী করে? বার্ট হলো শহরের একজন উঠতি মস্তান। আর জোন্স হল গিয়ে… একেই বলে পৃথিবীর বিচিত্র নজির। যা আগে কিছুই বোঝা যায় না। পোয়ারো আবার ভাবে সেদিনের সেই ছবির সেই তো নায়ক? নাকি সে চিনতে ভুল করেছে। মনকে নাড়া দিতে থাকে। হা এই সেই ছেলে। ওদিকে নির্যাতনে বার্ট হাঁফাতে থাকে এবং বলে-স্যার সব বলছি, আগে একটু জল। মরে যাচ্ছি।

-জল দেবো, তার আগে সব বলবে বল?

 পোয়ারো গ্লাসটা তুলে ধরে-নইলে গ্লাসের জল বাইরে ফেলে দেবো।

-না না! জল ফেলে দেবেন না; সব বলছি।

–এই নাও জল।

 জল খেয়ে চাঙ্গা হয়ে বার্ট বলে–না না, আমি কিছু জানি না, ওরা আমায় এমনি ধরে এনেছে। আমি মানহানির মামলা করবো।

–তাহলে আবার তোমার উপর অকথ্য অত্যাচার করা শুরু হবে। পোয়ারো বেল বাজায়।

 দৈত্যের মতো মেক্সিকান লোকটার মারের কথা চিন্তা করে বার্ট বলে ওঠে-না না! বলছি, সব বলছি।

তারপর সে সব স্বীকার করতে বাধ্য হল।

.

২৭.

 ডিনসমেড একটু আগে অফিসে এসেছে। বাচ্চা মেয়েটার জন্য সত্যিই সে বিচলিত। জোন্স যে এভাবে তাকে ফাঁকি দেবে সে আদৌ কল্পনা করতে পারেনি। জোন্সের হাতে পড়ে মেয়েটার ইহকাল পরকাল ঝরঝরে হয়ে যাবে। রবার্ট তার অন্তরঙ্গ বন্ধু, সে মারা যায়। তার মেয়েটা ভেসে গেল। অথচ আপদে-বিপদে সে রবার্টের কাছ থেকে কত সাহায্য পেয়েছে। যা করে হোক জোন্সকে খুঁজে বার করতে হবে নইলে সারা জীবন মরমে মরে থাকবে।

কিন্তু আবার খুঁজবে বললেই তো হবে না, তাকে কোথায় আর খুঁজবে? আবার পিছিয়ে পড়লেও তো চলবে না। এই ভাবে ডিনসমেড ঐ গ্রামের উদ্দেশ্যে আবার বেরিয়ে পড়ে। আশেপাশের গ্রাম খুঁজতে খুঁজতে জোন্সের দেখা হয়ে যায়। কিন্তু ডিনসমেড না রেগে শান্তভাবেই তাকে জিজ্ঞাসা করে–আরে জোন্স। তুমি?

-আপনি আমার খোঁজে এখানেও এসেছেন?

-আরে এসব কথা পরে হবেখন। আগে আমায় একটু বসতে দাও, আমায় অনেক ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে।

–ঘরে বসুন।

বাচ্চা মেয়ে ডিনসমেডকে কয়েকবার দেখেও চিনতে পারে না। কয়েকবার দেখে তারপর টলতে টলতে জোন্সের কোলে মুখ লুকোয়।

-ওকে দেখে কে? হাসিমুখে বলে ডিনসমেড।

–কে আবার দেখবে? আমিই।

–তুমি কখনো পারো?

–না পারার কি আছে? আগে থেকে ওর চেহারা ফিরেছে সেটা তো দেখতেই পাচ্ছেন।

–চেহারা? না না ও তোমার চোখের ভুল। যাক সেকথা, এ দু-কামরার বাড়িটা তোমার, এখানে কী করছো?

–জমি কিনে চাষবাস করছি।

–তা মেয়েকে নিয়ে কেমন করে চাষবাস করছ?

–একটা লোক রেখেছি। সেটা যেমন চোর তেমন ফাঁকিবাজ।

–চাষবাস করা আর মেয়েকে দেখাশোনা করা একভাবে চলতে পারে? এখানে একটা ভালো স্কুল পর্যন্ত নেই। তারপর রবার্টের মেয়ে বলে কথা।

–মোটকথা এ মেয়েকে আমি দেবো না। একদিন বয়স থেকে দেখে আসছি।

–অস্বীকার করছি না। কিন্তু বাচ্চা তো বাবা মার কত আদর চায়। আমার সংসারে গেলে ও সব পাবে আর মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে। রবার্টের বন্ধু হিসেবেও তো আমার কিছু কর্তব্য আছে।

–ওসব তথ্য বুঝি না। আমি মেয়েকে দেবো না।

–তাহলে আমি পুলিশের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।

–পুলিশের কাছে যাবেন যান। বারণ করছি না তো।

–তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছ? ডিনসমেড জানে থানায় গেলে সে বাচ্চাকে পাবে না, কারণ বাচ্চা তাকে দেখে ভয়ে কাঁদতে থাকে।

-বলতে বাধ্য হচ্ছি। আপনি ঐ অনুরোধ করবেন না।

–তোমাকে আমি পাঁচ হাজার টাকা দেবো।

–পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে আমি মেয়েকে দিতে পারব না। আমি অতটা পিশাচ নই।

–আরো পাঁচ হাজার দিচ্ছি।

–আমি এক পয়সাও চাই না।

–জোন্স প্লিজ।

-আমি আপনার কথা রাখতে পারব না এবং আপনি এখান থেকে চলে গেলে আমি খুশী হবো।

–ঠিক আছে, দেখি কেমন করে ও মেয়ে তোমার কাছে থাকে। ডিনসমেড জানে এটা একটা বৃথা আস্ফালন।

ডিনসমেড চলে আসে। মেয়ের জন্য সে দারুণভাবে উতলা হয়, দিশেহারা হয়ে অফিস ঘরে পায়চারী করতে থাকে। হঠাৎ দেখে দরজার সামনে বার্ট এসে দাঁড়ায়।

বার্ট এ পাড়ার উঠতি মস্তান। হিপিদের সঙ্গে মিশে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একবার তার কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে একশো টাকা নিয়ে গেছে। কুড়ি বছর বয়স হবে বার্টের, মজবুত স্বাস্থ্য, লম্বা লম্বা দাড়ি, গোঁফ, চুল।

–আপনার সঙ্গে দরকার ছিল। আমার একটা চাকরি চাই।

চাকরি? ডিনসমেডের মাথায় হাত।

–হ্যাঁ।

–ব্যাবসা লাটে উঠতে চলেছে।

–যে কোনো কাজ করতে রাজী। পুলিশ এসে আমায় টানা-হ্যাচড়া করে, এ আর ভালো লাগে না। এছাড়া, কয়েকবার জেলও খেটেছি।

তবু ডিনসমেড না না করতে করতে হঠাৎ জোন্সের কথা মনে পড়ে যায়। তাই বলে একটা লোককে শায়েস্তা করতে পারবে?

–পিরবো। কত টাকা দেবেন?

 –পাঁচশো টাকা দেবো।

–আমি রাজী। কাজটা কী?

তারপর সত্যি মিথ্যে দিয়ে সাজিয়ে একটা ঘটনা তাকে বুঝিয়ে বলে, ঐ মেয়েকে আমার চাই।

–ঐ মেয়েকে চান? তাহলে তো পাঁচশো টাকায় হয় না।

–তা কত লাগবে?

দশ হাজার দিতে হবে। আর মনে হচ্ছে ওর মধ্যে আর কিছু ঘটনা লুকোনো আছে।

–আবার কী থাকবে?

 –আছে নইলে…। থাক কত দেবেন বলুন?

–হাজার টাকার বেশি দিতে পারব না।

শেষে দুহাজারে রফা হল। জোন্সের পূর্ণ বিবরণ দিয়ে বার্ট বেরিয়ে পড়ল।

একদিন বার্ট সেখানে গিয়ে দেখে আসে কোথা দিয়ে ঢুকবে আর কোথা দিয়ে পালাবে।

 তিন দিন পরে একদিন বার্ট সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে। বেশ একটা কালো ভাব চারদিকে ছেয়ে আছে।

ওদিকে জোন্স ভাবে ডিনসমেড নিশ্চয়ই আবার আসবে। শুধু কী মেয়ের প্রতি কর্তব্য না অন্য কোনো রহস্য। হয়তো মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছে।

কিন্তু এই মেয়েকে ছেড়ে তো সে বাঁচবে না। এই মেয়ে তো তার ধ্যানধারণা।

ডিনসমেডের চিন্তা করতে করতে জোন্স একটা শব্দ শোনে। শব্দটা কোথা থেকে এলো? আশেপাশে কোনো বাড়ি নেই। বাড়ির একদিকে বুনো লতা আর অন্যদিকে কাটা ঝোঁপঝাড়ে ভর্তি।

আবার একটা পায়ের শব্দ। কে যেন বাড়ির পেছনের দিকে উঠল। ওখানে একটা ছোট্ট লোহার সিঁড়ি আছে–ছাদে ওঠা যায়।

সেদিকে তাকাতেই একজনের অস্তিত্ব টের পায়। সে বোঝে হয় চোর না হলে ডিনসমেডের দূত। চোর না, তার কাছে কীই বা আছে? তাই যে চোর আসবে? নিশ্চয়ই ডিনসমেডের লোক। মেয়েকে আঁকড়ে ধরে একটা পাথর ছুঁড়ে মারল জোন্স। পাথর বার্টের মাথায় না লেগে হাতে লাগল। সে বেশ আঘাত পেল এবং আঁ শব্দ করে ছাদ থেকে নেমে দৌড়ে পালায়, ভাবে লোকটা ডাকাত নয়তো খুনে। কাজটা কৌশলে করতে হবে। বার্ট এসে ডিনসমেডকে জানায় চিন্তার কিছু নেই একটা উপায় নিশ্চয় বের হবে। দরকার হলে লাসও ফেলে দেবে।

-লাস ফেলে দেবে? না না ওকাজ করো না।

আপনি কিছু ভাববেন না। ও আমার বাঁ হাতের কাজ। সঙ্গে আমার এক বন্ধুকে নেবো।

-সে বিশ্বাসী? সে কী করে?

–হ্যাঁ বিশ্বাসী। ওর বাবা মরে যেতে একটা ল্যাবোরেটরিতে কাজ পেয়েছে।

ল্যাবোরেটরিতে? ওর কাছ থেকে আর্সেনিক জোগাড় করতে পারবে? সেটা বিষ।

ডিনসমেড বার্টকে বলে–এখন থেকে দাড়ি গোঁফ কাটবে না। তারপর কিছুদিন গেলে জোন্সের কাছে হাতে পায়ে ধরে কাজ চাইবে। বলবে সব কাজ করতে পারো। ওর একটা কাজের লোকের দরকার। ওর কাছে থেকে ওর খুব তোয়াজ করবে আর প্রতিবার মদের সঙ্গে কিছুটা করে আর্সেনিক মিশিয়ে মিশিয়ে স্লো পয়জন করে মেরে ফেলবে। এতে কোনো সন্দেহ হবে না। সাপ মরবে অথচ লাঠি ভাঙবে না।

বার্ট আরো তিন হাজার টাকা চায়। ডিনসমেড তাতেই রাজী, তবে সে কাজ চায়। বার্ট তাকে আশ্বস্ত করে।

মাসখানেক পর বার্ট জোন্সের কাছে যায়। দেখে সে ক্ষেতে কাজ করছে আর মেয়েটা পাশে বসে মাটি নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। বার্ট জোন্সের কাছে গিয়ে করুণভাবে বলে–আমায় একটা কাজ দেবেন?

–এ বাজারে কাজ কী অত সহজে পাওয়া যায়?

 –আমায় একটু জল দেবেন। বলেই মাটিতে পড়ে যায়।

-কী হল? পাশের ক্ষেত থেকে সকলে ছুটে আসে–কী হয়েছে। কী হয়েছে। বেঁচে আছে। তো?

-দেখ না ভাই, কাজের কথা বলতে বলতে একটু জল চাইল তারপরই অজ্ঞান হয়ে গেল।

তারপর একজন ডাক্তার এসে বলল যে অনাহারে এমন হয়েছে, এতে ভয়ের কিছু নেই। খাবার দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। সবাই তাকে ধরাধরি করে জোন্সের বাড়ি নিয়ে গেল। আর তখন থেকেই সে ওখানে রইল।

প্রথমটা জোন্স বার্টকে বিশ্বাস করেনি। মেয়েকে ওর কাছে একা রাখত না এবং সন্দেহের চোখে দেখত।

কিন্তু মাসখানেকের মধ্যে বার্ট মেয়ের মন জয় করে নেয় এবং মধুর ব্যবহারের জন্য জোন্সও তাকে আর সন্দেহ করে না। এটাই হল চরম একটা ভুল।

এখন তো সংসারে বার্ট না হলে কোনো কাজই হয় না। ফলে জোন্স বিশ্রাম নিতেও পারছে, আবার আগের তুলনায় জমির আয়ও বেড়েছে। এতে জোন্স মহাখুশী। এখন সন্ধ্যে হলেই ঘরে মদের আসর বসে। জোন্সের একগ্লাসের বন্ধু এখন বার্ট। সারাদিন পরিশ্রমের পর মদ না হলে যেন চলেই না। বার্ট সঙ্গে যে আর্সেনিক নিয়ে এসেছিল তা একটু একটু করে মদের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে লাগল। দুপুরে যে খাবার নিয়ে যেত তাতেও মেশাতে লাগল।

একদিন মাঠে কাজ করতে করতে জোন্স যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল। চটজলদি ডাক্তার নিয়ে এল বার্ট। ডাক্তার জানালো হার্ট অ্যাটাক, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তাই করা হল। সকলে বার্টকে ধন্য ধন্য করতে লাগল। সাপে বর হল। তাকে আর কেউ সন্দেহ করবে না। দিন কুড়ি পর জোন্স হাসপাতাল থেকে ফিরে এল তবে তার আর আগের সেই শক্তি নেই।

জোন্স বাড়ি ফিরতে বার্ট নিশ্চিন্ত কারণ তার ভয় আর্সেনিকের কথাটা যদি বেরিয়ে পড়ে।

তবে এভাবে জোন্সকে মেরে ফেলার পেছনে বার্টের স্বার্থ আছে। একদিকে সে যেমন টাকা পাবে তেমনই অন্যদিকে জোন্সের অবর্তমানে এই জায়গা জমির মালিক সেই হবে। মিঃ ডিনসমেডের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে এসব জিনিসে হাত বাড়াবে না, বাড়ালেই খতম। গুণ্ডামী, বদমায়েশী, থানা, পুলিশ এ জীবন বার্টের আর সহ্য হচ্ছে না।

তারপরেই একদিন সকালে উঠে বার্ট দেখল জোন্স কথা বলছে না। গা ঠেলতে গিয়ে দেখল গা বরফের মতো ঠান্ডা।

সঙ্গে সঙ্গে বার্ট আশেপাশের দু-একজনকে ডেকে ডাক্তারের কাছে ছোটে। বৃদ্ধ ডাক্তার, চোখে তেমন ভালো দেখে না। কিন্তু গ্রামের সেই ভরসা।

বার্ট আসতে আসতে ডাক্তারকে বলল যে, সে যদি জোন্সকে বাঁচিয়ে তোলে তাহলে তাকে বার্ট পুষিয়ে দেবে। শুনে ডাক্তার খুবই খুশী। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলে আমার আর কিছু করার নেই ও মারা গেছে।

বার্ট কাঁদো কাঁদো গলায় মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে, ডাক্তার বলল–হার্টফেল করেছে।

–আপনি আর কী করবেন! বলে বার্ট ডাক্তারকে একটা একশো টাকার নোট দিয়ে বলল –আমি এখন কী করব?

সবাই সান্ত্বনা দেয়–এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না। মেয়েটাকে তো দেখতে হবে।

.

২৮.

 বার্টের জবানবন্দী শেষ হলে পোয়ারো বলে–মিঃ জন, টেপটা বন্ধ করে দিন। ডিনসমেডকে অ্যারস্ট করতে হবে।

-হা কিন্তু এতোদিনের পুরোনো ঘটনা টেনে বার করলেন কিভাবে?

–এখনো পুরোটা হয়নি, আরো বাকি আছে। এখন বলব না, কারণ, অনুমান ভুলও হতে পারে।

তারপর জন তার সহকারীদের জরুরী নির্দেশ দিয়ে পোয়ারোকে নিয়ে তার অফিসে যায়। পোয়ারোকে বসতে বলে জন রিসিভার তুলে নেয়।

-হ্যালো!

–আমায় একটু গ্রীন উড থানার লাইনটা দিন না। এক্ষুনি ভীষণ দরকার।

একটু পরেই লাইন বেজে ওঠে। জন রিসিভার তোলে।

-হ্যালো।

–স্যার অনেকবার ট্রাই করলাম, কোনো রেসপন্স নেই?

বারবার ট্রাই করে যাও।

 ইতিমধ্যে ওদের কফি এসে গেছে। পোয়োরো কফিতে চুমুক দিয়ে বলে–মিঃ জন, বার্টের দিকে একটু বিশেষ নজর দেবেন। কারণ ও আমার প্রধান সাক্ষী হিসাবে কাজ করবে। আর টেপটাও সাবধান।

কিন্তু পোয়ারো নিজেও কথাগুলো একটা ছোটো টেপ রেকর্ডারে টেপ করে নিয়েছে। পুলিশের লাইন। টাকা পেলে দিনকে রাত বানানো খুবই সহজ ব্যাপার। অবশ্য কয়েকটা দুষ্টু লোকের জন্য এই কথা বললাম। বার্ট দাগী আসামী, ছলচাতুরীতে পারদর্শী। তাই জনের উপর পোয়ারোর পুরোপুরি ভরসা নেই তার ওপর পাড়া গ্রামের থানা। একবার পালালে ধরা মুশকিল।

ইতিমধ্যে ফোন বেজে ওঠে। জন রিসিভার তুলে নেয়–হ্যালো!

–স্যার লাইনটা পেয়েছি। স্পিক হিয়ার প্লিজ।

-থ্যাঙ্ক ইউ। হ্যালো! গ্রীন উড থানা? আমি অফিসারের সাথে কথা বলতে চাই। আমি থিয়েটো থানা থেকে বলছি।

ধরুন।

–হ্যালো! অফিসার বলছেন?

–হ্যাঁ।

–আপনি গ্রীন উডের মিঃ ডিনসমেডকে চেনেন?

 –ডিনসমেড? হা হা, চিনতে পেরেছি। একটা বাংলো বাড়ির মালিক।

তাকে অ্যারেস্ট করুন।

–অ্যারেস্ট করবো? কিন্তু তার বিরুদ্ধে চার্জ কী?

–অনেক চার্জ আছে। নিশ্চয়ই এরকুল পোয়ারোর নাম শুনেছেন?

–তা নিশ্চয়ই।

 –তিনি এ বাপারে ইনভেস্টিগেশন করছেন।

–তাহলে তো এক্ষুনি মিঃ ডিনসমেডকে অ্যারেস্ট করতে হয়।

–হ্যাঁ, তাই করুন।

–আপনার নামটা?

–জন। আর আপনার?

–স্টিফেন।

–আর শুনুন, অ্যারেস্ট করেই আমায় খবর দেবেন। মিঃ পোয়ারো খুব চিন্তায় আছেন।

-স্যারকে চিন্তা করতে বারণ করুন। মিঃ ডিনসমেড এ চত্বরে থাকলে নিশ্চয় অ্যারেস্ট হবেন।

–ঠিক আছে ছাড়ছি।

–পোয়ারো এখান থেকে বেরিয়ে চারদিক ভালো করে দেখে একটা বুথে ঢুকে ডায়াল করে।

–হ্যালো মিঃ এমিট।

–হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?

–আমি পোয়ারো।

 –গুড মর্নিং স্যার।

–গুড মর্নিং, আপনাকে আমার এখন ভীষণ দরকার।

–বলুন স্যার, কী কাজে লাগতে পারি?

–আপনি এক্ষুনি একবার থিয়েটা থানায় আসবেন?

–থিয়েটো মানে….

–হ্যাঁ, ট্রেনে কয়েক ঘণ্টার পথ।

–স্যার, আপনি ওখান থেকে কথা বলছেন?

-হ্যাঁ, এখানে এসে আমার দেখা পাবেন না। ছদ্মবেশে আসবেন, ভালো করে শুনুন, আপনার কী করতে হবে।

-বলুন স্যার।

বার্টের বিবরণ দিয়ে পোয়ারো বলে–এ থানায় আছে। দারুণ একটা চীজ। কাল ওকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনাকে দেখতে হবে ও যাতে পালাতে না পারে আর পালালে কোথায় যায় সেদিকে নজর রাখবেন। সুতরাং সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।

-ইয়েস স্যার।

–আর পালালে স্থানীয় থানায় যেমন জানাবেন আমাকেও জানাতে ভুলবেন না।

 –ঠিক আছে স্যার, ছাড়ছি।

–আচ্ছা।

.

২৯.

–হ্যালো।

–হ্যালো। চার্লস, আমি পোয়ারো!

–সেটা বলতে হবে না। কিন্তু তুমি এখন কোথা থেকে বলছে?

–থিয়েটা। শোনো তোমার কী আজ অফিস যাবার খুব দরকার?

–কেন বলো তো?

-তোমায় এক্ষুনি একবার মিঃ ডিনসমেডের বাড়ি যেতে হবে। গিয়ে দেখবে মিঃ ডিনসমেড অ্যারেস্ট হয়েছে কী না?

–অ্যারেস্ট? মিঃ ডিনসমেড?

–হ্যাঁ।

–কিন্তু কেন?

–মিঃ রবার্টের মেয়েকে নিজের হেফাজতে রাখার জন্য।

–তাতে কী হয়েছে? বন্ধুর নিঃস্ব মেয়েকে..

 –সে যে জোন্সকে হত্যা করে…

–মিঃ ডিনসমেড?

–না, সে নয়, লোক লাগিয়ে কাজ করিয়েছে।

কাকে দিয়ে?

–তাকে তুমি চিনবে না। শোনো তোমার এখন অনেক কাজ।

তার আগে আমায় একটু ধাতস্থ হতে দাও। তোমাদের ডিটেকটিভের ধাঁধা যে বড়ো জটিল।

–তোমার ধারণাই ঠিক। মেরী আর শার্লট দুই বোন নয়।

–কে ডিনসমেডের মেয়ে?

-সেটা এখন ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে মিস জুলিয়েট, মিসেস ম্যাকডোনাল্ড আর মিঃ হেনেসের কথায় মেরী নামের কিছু মিল পাওয়া গেছে। তবে…। আমার মন অন্য কথা বলছে।

-কী বলছে?

 –সম্ভবত শার্ট ডিনসমেডের মেয়ে নয়।

কারণ ওঁর মাথায় পরচুল আছে, তাই?

-তা ঠিক নয়। ঐ মেয়েকে নিয়ে ডিনসমেড গ্রীন উড়ে পালিয়ে এসেছে, যাতে কেউ সন্দেহ না করে।

–যেই রবার্টের মেয়ে তোক ও নাম তাদের আসল নাম নয়।

–হঠাৎ একথা বলছ?

–সব সন্দেহের অবসান মিঃ ডিনসমেড ঘটাতে চেয়েছে। আর এস. ও এস.-এর মধ্যে অনেক কিছু লুকানো আছে।

-যেমন?

–দুবোন কিছু একটা আঁচ করেছিল অনেকদিন ধরে ওদের বাবা-মার কথায়। নইলে তাদের অজান্তে এস. ও. এস. লিখত না। এক্ষেত্রে তাদের অবচেতন মন খেলা করেছে।

–আর আমার মনে হয় ওখানে সত্যি কোনো বিপদ ঘটতে চলেছে।

–তুমি কোন বিপদের কথা ইঙ্গিত করছ?

—মৃত্যুর।

-কার মৃত্যু?

–তা সঠিক বলতে পারছি না। মেরী নয় শার্লট।

–নিজের মেয়ের কথা ছেড়ে দাও, বন্ধুর মেয়ে ও তো। আর সেখানে বলছ কী না…

-হ্যাঁ বন্ধু সেটাই রহস্য। বড়ো বিচিত্র এ জগৎ। কেন ডিনসমেড বন্ধুর মেয়েকে পাবার জন্য এত লালায়িত হয়ে উঠেছিল? শুধু কী বন্ধুর মেয়েকে কাছে পাবার জন্য? আমার মন কিন্তু অন্য কথা বলছে।

–সেটা কী?

—লোভ, সম্ভবত অর্থ, সেটা প্রায় সময়ই অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন না পারে গিলতে পারে ওগরাতে। ফলে নিজের বেছানো জালে নিজেই জড়িয়ে পড়ে। সেটাই ক্ল খেলে যায়।

-হ্যাঁ। সত্যিই তো মেয়ে পাবার জন্য অত কাঠখড় পোড়াতে যাবে কেন?

–শোন তুমি যদি ওখানে গিয়ে দেখ মেরী আর শার্লট ঠিক আছে তাহলে কিছু করার নেই।, তবু একজন ডাক্তার দেখিয়ে ওদের চেকআপ করিয়ে নিও।

-চেকআপ করাবো? একথা বলছ কেন? এদের মধ্যে কে অসুস্থ হতে পারে?

–এদের দুজনের মধ্যে একজন এবং সত্যিই তার বিপদ।

–কে?

–ডিনসমেড নিজের মেয়েকে রবার্টের মেয়ে বলে চালাতে চাইবে। ফলে অন্য জনের ঘটবে বিপদ।

–রবার্টের মেয়ে? তাতে ডিনসমেডের লাভ?

–লাভ তো বটেই হয়তো টাকা পয়সার প্রশ্ন জড়িতে আছে। আর রবার্টের মেয়ে নিশ্চয়ই অতগুলো টাকার লোভ ছাড়তে পারবে না। সেদিক দিয়ে নিজের মেয়ে হলে স্বস্তি।

–হয়তো তাই।

–তোমার মনে আছে, ডিনসমেউ কয়েক মাস অন্তর মেরীকে নিয়ে কোথায় যেন যেত। সেই ব্যাপারে মেরীকে প্রশ্ন করলে সে বলত রাস্তাটা সে গুলিয়ে ফেলেছে। প্রথমবার বাবা একই রাস্তায় অনেকবার ঘুরিয়েছে, তারপর এক বৃদ্ধ ভদ্রলোকের সাথে আলাপ করিয়ে তাকে পাশের ঘরে যেতে বলেছে। আবার ফেরার সময় ঘুরপথে বাড়ি ফিরেছে। এখন প্রশ্ন সেই বৃদ্ধ লোকটি কে যার জন্য মিঃ ডিনসমেডের এত লুকোচুরি খেলা। আর মেরী বলেছিল বৃদ্ধ লোকটি হয়ত লইয়ার কারণ তার বাড়িতে অনেক মোটা বই সে দেখেছে।

-সলিসিটারও হতে পারে।

-হা, ওখানে রবার্ট হয়তো টাকা গচ্ছিত রেখেছে যেটা ডিনসমেড জানত। আর শোন ওখানে গিয়ে দেখবে টম নাম একটা ছেলে কাজ করছে। তুমি ঘন্টা চারেক পর ওকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবে।

–ঠিক আছে।

 পোয়ারো ঘণ্টা তিনেক পর বাড়ি ফিরে ডিনসমেডের স্থানীয় থানায় ডায়াল করে–হ্যালো।

–গ্রীন উড থানা?

–হ্যাঁ।

মিঃ ডিনসমেড অ্যারেস্ট হয়েছে?

–গুড মর্নিং স্যার, মিঃ ডিনসমেডকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।

–ঠিক আছে তাদের বাড়ির সবাই ভালো?

 –হ্যাঁ স্যার, তবে ওদের বাড়িতে একটা ছেলে কাজ করতো, সে মিসিং।

–মিসিং? পোয়ারো বুঝল তবু অবাক হবার ভান করল।

–হ্যাঁ স্যার, আর মিঃ ডিনসমেড অ্যারেস্ট হবার পেছনে কী চার্জ আছে তা যদি জানতাম…।

–এখন একটু অসুবিধে আছে তবে লোকটি মোটেই সুবিধের নয়।

অথচ স্যার, দেখলে বোঝাই যায় না।

–আপনি তাকে চেনেন নাকি?

 –আমার কাছে মাঝেমধ্যেই আসতেন।

–একা?

–না স্যার, তার সঙ্গে তার মেয়ে শার্লট আসত।

–মেরী নয়তো?

–না স্যার, আমি চিনি।

–আপনার কাছে মিস শার্লটকে নিয়ে আসত কেন?

–যাতে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

—শার্লট এসেছিল কী?

–না স্যার।

–আপনি কী শার্টকে ভালোবাসেন?

–ওর মনের কথা জানতে পারি না।

 –শার্লটের কোনো প্রেমিক আছে? একটু খোঁজ নেবেন?

প্রয়োজন আছে?

–কথাটা এমনই বললাম। সে ভাবে, শার্লট রবার্টের মেয়ে। বিয়ে হয়ে গেলে ল্যাটা চুকে যেত। তার পর পুলিশের চাকরি। একটা তোফা চাল চেলেছিল ডিনসমেড। আর শার্লটকে কেন্দ্র করেই অফিসারকে হাত করেছিল। তবু শেষ রক্ষা করতে পারল না। পাপ কাউকে ছাড়ে না। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

–আর স্যার, আমাকে মিঃ ডিনসমেড মাঝেমধ্যেই নিমন্ত্রণ করতেন। তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম। তখন মিস শার্লট ছাড়া বড়ো একটা কেউ কাছে আসতেন না।

পোয়ারো ভাবে একেবারে শেষ সময় তাকে হার স্বীকার করতে হল। ওর মধ্যে হয়তো টাকার ব্যাপার রয়েছে। ইস্ তার বাড়া ভাতে এভাবে ছাই পড়লো। আর যত গণ্ডগোল বাঁধাল চার্লস। সে ঝড় জলের রাতে গ্রীন উড থেকে মেরী শার্লট সংবাদ পরিবেশন করে আমার মনে সন্দেহের জাল বুনে দিল। যার মূলে রয়েছে–এস. ও. এস.।