১১.
পরের দিন আমি বোধহয় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার মাসান্তিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যে লন্ডনে মার্কাস কেন্টের কাছে যাবার কথা। ট্রেনেই যাবো। জোয়ানা গাড়িটা নিয়ে স্টেশনে পার্ক করিয়ে রাখতে বলল। ফেরার পথে নিয়ে চলে আসতে বলল, কারণ তার এখন গাড়ির দরকার নেই।
গাড়ি চালিয়ে অর্ধেক রাস্তা যেতে দেখি মেগান উদ্দেশ্যহীনভাবে কোথাও চলেছে। গাড়ি থামাই।
-হ্যালো, তুমি এখানে কী করছ?
–এই একটু বেড়াতে বেরিয়েছি। ঠিক বিশেষ কোথাও যাচ্ছি না।
আমি ওকে গাড়িতে তুলে নিয়ে বললাম, তাহলে চলো, আমাকে স্টেশন অবধি পৌঁছে দেবে। আমি ডাক্তার দেখাতে লন্ডন যাচ্ছি। গাড়িটা পার্ক করিয়ে টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে ঢুকলাম।
দেখলাম মেগান একজোড়া ভোতা ওভারসু পায়ে দিয়েছে। মোটা মোজা দিয়ে আকারহীন জায়পার স্কার্ট পরেছে। আমার বিরক্ত লাগল, গাড়ি এল, ফাস্টক্লাস কামরায় উঠে জানলা নামিয়ে মেগানের সঙ্গে কথা বলতে থাকলাম। ট্রেন চলতে শুরু করলে, মেগানের উঁচুতে ভোলা মুখখানার দিকে তাকালাম।
হঠাৎ মাথায় পাগলামী চেপে বসল, দরজা খুলেই মেগানকে এক হাতে মাল তোলার মতো করে টেনে নিলাম।
–এমন কাণ্ড কেন করলেন?
–তুমি আমার সঙ্গে লন্ডন যাবে। একটু চেষ্টা করলে তোমাকে কেমন দেখাতে পারে, সেটা তোমাকে দেখিয়ে দিতে চাই।
টিকিট কালেক্টর এলে আমি ওর জন্যে একটা রিটার্ন টিকিট কাটলাম।
লন্ডনে পৌঁছে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা জোয়ানার পোশাক নির্মাতার দোকান মিরোটিনে।
দোকানের আসল মালিক মেরী গ্রে বছর পঁয়তাল্লিশ বয়স। তাকে বললাম, আমি মামাতো বোনকে এনেছি (মিথ্যে বললাম)। ওর আপাদমস্তক যেমনটি হওয়া প্রয়োজন, তেমনি করে দিন। মোজা, জুতো, অন্তর্বাস সবকিছু। আর জোয়ানার চুলের সজ্জা করে যে মহিলা, তার কাছে নিয়ে গিয়ে ওর চুলটাও ঠিক করে দেবেন। খরচ যত হয় হবে। আমি ছটা নাগাদ এসে ওকে নিয়ে যাবো।
.
মাকার্স কেন্ট আমায় পরীক্ষা করে বললেন, আমি নাকি তার চরম প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছি।
ছটায় মিরাটিনে পৌঁছালাম। মেরী গ্রে আমাকে বড়ো শোরুমটার ভেতরে নিয়ে গেলেন। মেগান একটা লম্বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। হলপ করে বলছি, তাকে চিনতেই পারিনি। দীর্ঘাঙ্গী, সুচারু পদসন্ধি, তাতে রেশমের মোজা, সুনির্বাচিত পাদুকা ওকে যেন খানদানি আর স্বতন্ত্র করেছে। এর মধ্যে সদ্য ফুটে ওঠা নিষ্কলুষ গর্ব ফুটে উঠেছে।
আমি ওকে নিয়ে রেস্তরাঁয় ডিনারে ঢুকলাম। ওকে পাশে নিয়ে চলতে তখন বেশ গর্ব অনুভব হচ্ছিল।
প্রথমে হালকা পানীয় নিয়ে অনেকক্ষণ সময় কাটালাম দুজনে। তারপর খেয়ে নিলাম। এরপর দুজনে নাচতে শুরু করলাম। ভালোই নাচল ও–আমার বাহুর মধ্যে ও যেন পালকের মতো হালকা, নাচের প্রত্যেকটা ছন্দ ওর চরণ আর দেহ স্পর্শ করেছে।
আমার মাথায় তখন পাগলামির সুর দোলা খাচ্ছে। সেই সুরের তাল ভঙ্গ করে মেগান বলল, আমাদের এখন ঘরে ফেরার সময় হয়েছে। তাই না?
আমি তখন খেয়াল করলাম শেষ ট্রেনটা বেরিয়ে যাবার সময় পেরিয়ে গেছে। মোটর গাড়ি ভাড়ার কোম্পানি লিউয়েলিম-কে ফোন করে সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়িটা শীঘ্র পাঠিয়ে দিতে বললাম।
এসেও গেল। আমি তাতে মেগানকে চড়িয়ে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিলাম। ওর কথামতো রোজ-এর জানলায় ঢিল ছুঁড়লাম।
রোজ বেরিয়ে এল। সে জানাল, সে নাকি মনিবকে বলেছে, মেগান বিছানায় ঘুমচ্ছে। সে জানতো না যে মেগান বেরিয়েছে।
যাই হোক, মেগানকে শুভরাত্রি জানিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। শোফারকে বকশিস দিয়ে শুভরাত্রি জানালাম।
জোয়ানা দরজা খুলে দিল। ওকে প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত সবকিছু জানালাম। সব শুনে জোয়ানা হেসে বলল, হে ভগবান, আমি বেশ বুঝছি মেয়েটাকে তোমায় বিয়ে করতে হবে।
বলি বিয়ে করতে হয় করব। আপত্তি কিসের? সত্যি বলতে কি, হলে ভালোই হয়।
–হ্যাঁ সেটা আমি অনেকদিন আগেই বুঝেছি। জোয়ানা হেসে বলল।
.
১২.
এরপর একদিন মিঃ সিমিংটনের বাড়িতে গেলাম মেগান-এর সঙ্গে দেখা করে ওকে বিয়ের প্রস্তাব দেব বলে।
রোজ আমাকে বৈঠকখানায় বসতে দিয়ে ভেতরে গিয়ে মেগানকে ডেকে দিলো। ওকে দেখে প্রথমে আমি কি বলে সম্বোধন করব বুঝতে পারছি না।
মেগানই হেসে বলল, হ্যালো।
আমি তাকে বললাম, তোমার কাছে এলাম কারণ আমার কিছু বলার আছে।
-বলো, মেগান বলল।
–তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে, আমার ধারণা আমাকেও তোমার ভালো লাগে।
–ভীষণ রকম!
–তাই মনে হয়, ভালো বুদ্ধি হবে যদি আমরা বিয়ে করে ফেলি।
–ওহ! অবাক দেখায় ওকে। বলল, তাহলে তুমি বলতে চাও সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চাও। মানে তুমি আমার প্রেমে পড়েছ?
-হ্যাঁ, আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।
–কিন্তু আমি তো তোমার প্রেমে পড়িনি।
–আমি ভালোবাসতে শেখাব তোমাকে।
–ভালোবাসতে কেউ আমাকে শেখাবে, তা আমি চাই না। এরপর ও একটু থেমে বলল, আমি তোমার পছন্দের স্ত্রী হতে পারব না। ভালোবাসার চেয়ে ঘেন্নাটাই আমার বেশি আসে।
-ঘেন্না বেশিদিন টেকে না, ভালোবাসা স্থায়ী হয়।
–ওটাই কি সত্যি? বলে মেগান স্থির হয়ে গেল।
–তাহলে তুমি আমাকে কোনো আশাও দিচ্ছে না।
–তাতে লাভ কি?
–হয়তো কিছুই নয়, তবে আমি আশা করে যাবো।
.
একটা আচ্ছন্ন ভাব নিয়ে বাড়িটা থেকে বের হলাম।
আমি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সিমিংটনের সঙ্গে দেখা করবো–এই কথা ভেবে আমি ওঁর অফিসে গেলাম।
তাকে জানালাম, সুপ্রভাত, মিঃ সিমিংটন। আজ আমি কোনো পেশাদারী কাজে আসিনি, এসেছি একটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলতে। আপনি হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছেন যে আমি মেগানের প্রেমাসক্ত। আমি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম, কিন্তু সে অস্বীকার করছে। আমি অবশ্য সেটাকে চূড়ান্ত বলে মনে করি না।
দেখলাম সিমিংটন আমার প্রস্তাবটাকে হাস্যকর, সহজভাবেই নিলেন। তার পরিবারের উটকো ঝামেলা মেগানের বিয়ে হয়ে গেলে তিনি পরম স্বস্তি পাবেন।
সিমিংটন বললেন, প্রস্তাবটা ভালোই। আমি রাজীও। তবে সবকিছু মেগানের ওপরই নির্ভর করছে।
আমি পরম সৌহার্দ্যের মধ্যেই তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
.
বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ এমিলি বারটনের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
সুপ্রভাত, মিঃ বার্টন, শুনলাম কাল লন্ডনে গিয়েছিলেন।
–হ্যাঁ, আমাকে ডাক্তার দেখাতে যেতে হয়েছিল।
চাপা গলায় এমিলি বললেন, শুনলাম আরেকটু হলেই মেগান ট্রেন মিস করত। সে নাকি চলন্ত ট্রেনে লাফিয়ে ওঠে।
আমি তাকে টেনে তুলতে সাহায্য করি। আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তার কাছে বিদায় প্রার্থনা করলাম।
.
বাড়ি ফিরে প্যারট্রিজের মুখে শুনলাম জোয়ানা বেরিয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার বোনটি আজকাল বড়ো রসহ্যময় হয়ে উঠেছে।
বেলা সাড়ে তিনটের সময় জোয়ানা হুড়মুড় করে বিধ্বস্ত অবস্থায় ঘরে ঢুকল। মুখখানা লাল টকটকে। জিজ্ঞেস করি, কী ব্যাপার।
-ওঃ কী একটা ভয়ানক দিন গেল।
–কেন, কী হয়েছে?
-টিলার ওপর দিয়ে একটু এমনিই বেড়াতে বেরিয়েছিলাম। মাইলের পর মাইল হেঁটে চললাম। ওখানে নিচু মতো একটা জায়গায় খামার বাড়ি রয়েছে দেখে আমি তেষ্টা মেটাতে ওখানে দুধ কিংবা কোনো পানীয় পাওয়া যায় কিনা দেখতে বাড়িটার উঠোনে ঢুকে পড়লাম। দেখি দরজা খুলে বেরিয়ে এল আওয়েন।
সে নার্সের অপেক্ষা করছিল। কারণ ঘরের ভেতর একজন মহিলার তখন প্রসব হচ্ছে। মানে বাচ্চা হতে ঝামেলা হচ্ছিল।
আমাকে দেখে আওয়েন নার্সের কাজটা আমাকে দিয়ে নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো বিবেচনা করে করাতে চাইল। আমি বললাম, ওসব আমার কিছুই জানা নেই।
আওয়েন ভয়ানক চটে বলল, একজন মেয়ে হয়ে আর একজন মেয়েকে সাহায্য করতে পারছে না। আগে তো এমন ভাব দেখাতে যেন কতই ডাক্তারিতে আগ্রহ আর নার্স হবার কতই না ইচ্ছে। কিন্তু বাস্তব কাজের সময়ে তুমি অকেজো, অপদার্থ সাজগোজ করা পুতুল।
ওর কথায় আমি অবিশ্বাস্য কাজটা করে ফেললাম জেরী। একে একে ওর হাতে আমি গরম জলে ফোঁটানো ছুরি, কাঁচি, নানা জিনিস দিলাম। বলতে কী ভালো কাজই একখানা করলাম। মা এবং বাচ্চাটা এখন সুস্থ। ওঃ ভগবান!
আমি তখন জোয়ানাকে পলের লেখা খামটা দিলাম। ও একবার চোখ বুলিয়ে চিঠিটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। আমি পরিষ্কার বুঝলাম, পলের লেখা অবহেলিত চিঠিটা ওর মন থেকে পল নামক ব্যাধিটা মুছে দিয়েছে।
.
১৩.
প্রত্যাশার বিষয়গুলো কখনো সময়মতো আসে না। পরদিন সকালে হঠাৎই টেলিফোনে ন্যাসের গলা, আমরা মহিলাটিকে ধরেছি, মিঃ বার্টন! একবার থানায় আসতে যদি আপত্তি না থাকে, চলে আসুন।
থানায় গেলাম। ন্যাস জানালেন, অনেক দৌড়ঝাঁপ করে শেষ লক্ষ্যে পৌঁছালাম। টেবিলের ওপর একখানা চিঠি ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, পড়ে দেখুন। পড়লাম।
একটি মৃত স্ত্রীলোকের জায়গা দখল করার ভাবনায় তোমার কোনো ফায়দা হবে না। এই মুহূর্তে কেটে পড়ো। এটা আমার সতর্কবাণী। অন্য মেয়েটির কি হয়েছিল মনে আছে? শেষের দিকে অশ্লীল গালিগালাজ।
ন্যাস বললেন, আজ সকালে এটা মিস হল্যান্ডের কাছে এসেছিল।
-কে লিখেছে এটা? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ন্যাসকে বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তার মুখ থেকে উল্লাসের ভাবটা খানিকটা উবে গেছে। বললেন, মিস এইমি গ্রিফিথ।
.
সেদিন ন্যাস, সার্জেন্ট পারকিন্স ওয়ারেন্ট নিয়ে গ্রিফিথের বাড়িতে গেলেন। সঙ্গে আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাড়িতে ঢুকে ড্রয়িংরুমে আমাদের বসানো হলো। এলসি হল্যান্ড, মেগান আর সিমিংটন ওখানে চা পান করছেন।
এইমিকে ন্যাস আড়ালে ডেকে নিলো কথাবার্তা বলার জন্যে। এইমিকে আমাদের ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে স্টাডিরুমে নিয়ে গেল। ড্রয়িংরুমের দরজাটা ভেজিয়ে দেবার সময় লক্ষ্য করলাম সিমিংটনের মাথাটা ঝট করে খাড়া হয়ে উঠল আর তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন।
ন্যাস তার বক্তব্য রাখলেন এবং এইমিকে আর হল্যান্ডকে লেখা চিঠিটা বার করে দেখালেন। ওর গ্রেপ্তারী পরোয়ানাটায় অভিযোগটা পড়ে শোনালেন।
এইমি হো হো করে হেসে উঠে সব কিছু অস্বীকার করে। তখন ন্যাস নিচুস্বরে বলে, মিস গ্রিফিথ, পরশু রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে এই চিঠিখানা আপনাকে টাইপ করতে দেখে গেছে।
-আমি কখনো ওটা পোস্ট করিনি।
–ডাকটিকিটের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে ছল করে ওটা মেঝেতে ফেলে দেয়, যাতে কেউ ওটা ডাকবাক্সে ফেলে দেয়।
এইসময় সিমিংটন দরজা খুলে ঢোকেন। তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলেন, এসব কী হচ্ছে? তোমার আইনত প্রতিনিধি রাখা উচিত এইমি। আমাকে সে কাজে
এইমি এবার ভেঙে পড়ে, দুহাতে মুখ ঢেকে বলতে থাকে, যাও তুমি, আমি চাই না তুমি এসব ব্যাপার জানতে পারো। চলে যাও ডিক।
সিমিংটন বেরিয়ে যাবার সময় আওয়েন গ্রিফিথ ঘরে ঢোকে। সে চেঁচিয়ে ওঠে, কী ব্যাপার! আমার বোন-ন্যাস বলেন, আমরা দুঃখিত। মিস গ্রিফিথ আসুন, একজন সলিসিটর নিয়োগের সুবিধা আপনি পাবেন।
এইমি, আওয়েনকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় আওয়েন তাকে কিছু বলতে গেলে, ও বলে, আমার সঙ্গে কথা বলো না। দোহাই
এইমি চলে যেতে আওয়েন হতবাক হয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। জোয়ানা ঘরে ঢোকে। আমি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম, জোয়ানা তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসেছে।
.
জোয়ানা যখন ঘরে ফিরল, দেখলাম ওর মুখখানা ফ্যাকাসে। আমার কাছে আসতে আমি কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালে ও করুণ হেসে বলে, ডাঃ গ্রিফিথ কড়া মেজাজ দেখাচ্ছে, ও আমাকে গ্রহণ করবে না জেরি।
আমিও বললাম, আমার মেয়েটাও আমাকে চাইছে না।….মন খারাপ করিসনি সোনা। আমরা দুজনে তো রইলাম।
.
পরদিন আওয়েন জোয়ানার এমন গুণকীর্তন করতে লাগল যে অবাক হবার মতো। সে জোয়ানার কাছে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করল। কিন্তু সে এতে রাজি হতে পারছে না কারণ, জোয়ানাকে তার নোংরা কলঙ্কিত পরিবারের সঙ্গে সে জড়াতে চায় না। আমি বিরক্তভরে আওয়েনকে বললাম, অতো মহৎ হবার তার প্রয়োজন নেই।
এইমির বিরুদ্ধে অভিযোগ এখন পাকাঁপোক্ত। কারণ তার বাড়ির কাবার্ড থেকে এমিলির বইখানির পাতাগুলো পাওয়া গেছে। ন্যাসের মুখে এইরকমই শুনলাম।
লোহার শিকটা পাননি?
–ওটা তো সামান্য কাজ। ধুয়ে মুছে রান্নাঘরের দেরাজে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে।
বুড়ি মিস মারপলের সঙ্গে আবার দেখা হয়েছিল। মিসেস ক্লিটের কুটিরের কাছে ছোটো সাঁকোটার কাছে। তিনি কথা বলছিলেন মেগানের সঙ্গে। মেগান আমাকে দেখে হাঁটা শুরু করে দিল। ওকে আমি অনুসরণ করতে যেতে মারপল আমার পথ রুখে দাঁড়িয়ে বললেন, আপনার সঙ্গে কথা আছে। ওর পেছনে যাওয়া বৃদ্ধির কাজ হবে না। এখন ওর সাহস বজায় রাখা খুবই দরকার। মহিলার কথা বলার ভঙ্গিমাতে এমন কিছু ছিল যাতে আমি ওঁকে ভয় পেয়ে গেলাম। বাড়ির দিকে ফিরলাম না। গেলাম হাইস্ক্রিটে, পথে কর্নেল অ্যাপলটনের সঙ্গে দেখা। কোনোরকমে লোকটার হাত থেকে রেহাই পেয়ে এগোতেই, তৃতীয়বার মারপলকে পুলিশ থানা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখলাম।
.
আমার মগজে যে ঝড় উঠেছে, তা শান্ত হতে পারে একমাত্র মেগানের সঙ্গে একবার দেখা হওয়ার পর।
সেদিন রাত সাড়ে নটার সময় সিমিংটনদের বাড়ি গেলাম। গেট পেরিয়ে মৃদু আলোক রেখাময় বৈঠকখানার জানলাটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
পর্দাগুলো পুরো টানা নেই, খুব সহজেই একটা ঝোঁপের পাশ কাটিয়ে আমি উঁকি মেরে দেখলাম, মিঃ সিমিংটন একটা আরাম কেদারায় বসে আছেন আর এলসি মাথা নিচু করে বাচ্চার জামায় তালি সেলাই করছে এবং পারিবারিক কথাবার্তা বলছে। যেন, তারা ঠিক করছে সামনের সিজনে ব্রায়ানকে উইনহেতে বোর্ডিং-এ পাঠিয়ে দেবে। অদ্ভুত রকম শান্তিময় একটা পারিবারিক দৃশ্য।
তারপর দরজাটা খুলে গেল। ভেতরে এল মেগান। টানটান রুদ্ধ উত্তেজনা তার মুখে।
-আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। একা।
সিমিংটন বিস্মিত হয়ে এলসি হল্যান্ডকে চলে যেতে অনুরোধ জানালেন। এলসি চলে গেল।
সিমিংটন বললেন, মেগান, এবার বলল, কী বলছে? কী চাই তোমার?
-আমি কিছু টাকা চাই।
সিমিংটন একটু কড়া গলায় বলল, কাল সকাল অবধি সবুর করতে পারলে না? তুমি কি মাসোহারা কম পাচ্ছো? আর কটি মাস পরে তুমি সাবালিকা হলে আমি তোমার ঠাকুমার রেখে যাওয়া টাকা, সরকারী ট্রাস্টি তোমার হাতে তুলে দেব।
–আমি যথেষ্ট পরিমাণে টাকা চাই। আমার বাবা জেলে গিয়েছিলেন ব্ল্যাকমেলের অপরাধে আমি তো তারই মেয়ে, তার সঙ্গেই আমার মিল। সেদিন আমার মার ঘরে ওষুধের পুরিয়াগুলো নিয়ে আপনাকে যা করতে দেখেছি, তা প্রকাশ করে দেব।
সিমিংটন ভাবহীন, বিস্মিত হয়ে পড়লেন। তিনি একটু ফ্যাকাসে হেসে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে চেক লিখে মেগানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, তুমি কিসের কথা বললে ঠিক বুঝতে পারিনি। এই তোমার চেক।
আমি ওঁর মুখখানা দেখে একটু বেসামাল হয়ে পড়তে শুনলাম কানের কাছে ন্যাসের ফিসফিস আওয়াজ, চুপ বার্টন, ঈশ্বরের দোহাই। আমাকে জোর করে বাড়ির পেছনে টেনে নিয়ে গেলেন নিজের সঙ্গে। আমি তাগিদের সুরে বলতে থাকি, মেয়েটা নিরাপদ নয়। ওকে এখান থেকে বের করে আনতেই হবে।
.
ন্যাসের কথামতো আমাকে চলতে হবে। আমার মোটেই ভালো লাগেনি…তবু হার মানলাম। আমি শপথ নিয়েছি, ওঁদের কথামতো সব হুকুম মেনে চলব।
সেই শর্তেই আমি, ন্যাস আর পারকিন্সের সঙ্গে পেছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। সিঁড়ির চাতালে জানলার কুলুঙ্গিতে ভেলভেটের পর্দার আড়ালে আমি আর ন্যাস লুকিয়ে রইলাম।
সিমিংটন চাতাল পেরিয়ে মেগানের ঘরে ঢুকলেন। আমি জানতাম পারকিন্স আগে থেকেই ভিতরে খোলা দরজার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে, তাই ভরসা পেলাম কিছুটা।
দেখলাম, সিমিংটন মেগানকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসছেন আর রান্নাঘরের দিকে নিচের তলায় যাচ্ছেন। আমরাও অনুসরণ করলাম দূরত্ব বজায় রেখে।
সিমিংটন ওকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে গ্যাস চুল্লির মধ্যে ওর মাথাটা রেখে সবে ওকে শুইয়েছেন। আর গ্যাসটা চালু করে দিয়েছেন এমন সময় ন্যাস আর আমি আলো জ্বালালাম।
সিমিংটন ধ্বসে পড়লেন। অমি গ্যাসটা বন্ধ করে মেগানকে টেনে তুললাম।
.
উপর তলায় আমি মেগানের জ্ঞান ফেরাবার চেষ্টা করছি আর বড়ো বেশি ঝুঁকি নেওয়ার জন্যে ন্যাসকে গালমন্দ করেছি।
ন্যাস বলতে লাগল, বিছানার পাশে দুধের বাটিটায় সামান্য ঘুমের ওষুধ। ওকে বিষ দিয়েও মারতে পারত সিমিংটন কিন্তু এখন আর ওঁর দ্বারা কোনো রহস্যময় মৃত্যু ঘটাতে চাননি। যেন মায়ের মৃত্যুকে মেনে নিতে না পেরে অস্বাভাবিক ধরনের মেয়েটা গ্যাসচুল্লিতে মাথা রেখেছে এটাই সকলে বিশ্বাস করবে।
মেগানের জ্ঞান ফিরল। সে আমাকে তার আমার উদ্দেশ্যে লেখা অসমাপ্ত প্রেমের চিঠিটা দেখাল। যেটা লিখতে লিখতে সে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঢলে পড়েছে।
.
১৪.
তাহলেই দেখেছেন মিঃ বাটন, বললেন মিসেস কলপ–একজন বিশেষজ্ঞ ডেকে এনে আমি ভুল করিনি কিছু।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আমরা সবাই জুটেছি ওঁর বাড়িতে।
-কিন্তু আপনার বিশেষজ্ঞ ভদ্রলোকটি কে? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি।
-ভদ্রলোক নয় হে, হাত ঘুরিয়ে দেখালেন মিস মারপলের দিকে, বললেন, ইনি। এ পর্যন্ত যত মানুষকে জেনেছি তাদের সকলের চেয়ে উনি নানা মানব চরিত্রের নিচ প্রবৃত্তি সম্পর্কে বেশি খবর রাখেন। মিস মারপল লক্ষিতভাবে বললেন, এভাবে বলো না ডিয়ার। মিসেস কলপ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, কিন্তু ওটাই তো সত্যি?
আমরা সবাই কিছু জানতে প্রত্যাশা করছি বুঝে মারপল খুন সম্পর্কে একটা বিনীত বিবৃতি দিলেন।
ঘটনাটা ধীরবুদ্ধির সিদেসাধা কেস…যদিও একটু অপ্রীতিকর। অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়াই খুনীর একমাত্র উদ্দেশ্য, বুঝলেন…সকলেই ভুল মিনিস্টার দিকে তাকাচ্ছে–বেনামী চিঠি। আসলে তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না। চিঠির ব্যাপারটা কিন্তু বাস্তব মোটেই নয়।
চিঠির ব্যাপারটা ঘটনা হিসেবে দেখলে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগবে, তাহলে মিসেস সিমিংটনের খুনী কে? এসব ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিটির ওপর প্রথম সন্দেহ জাগে সে হল স্বামী। আর যদি শুনি তার বাড়িতে একজন অতি আকর্ষণীয় যুবতী গভর্নের্স রয়েছে। মিঃ সিমিংটন অবদমিত ভাবাবেগশূন্য মানুষ…একজন ঝগড়াটে উকট স্নায়ুরোগী স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করতে করতে হঠাৎ-ই আসে যৌবনময়ী প্রাণীটি। আর ঐ বিশেষ বয়সে ভদ্রলোক সেই মহিলার প্রেমে পড়ে তাকে বিবাহ করতে চাইলে, একমাত্র সমাধানের উপায় পথের কাঁটা স্ত্রীকে খতম করা।
ফৌজদারী অপরাধের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি চালাকি করে এক অস্তিত্বহীন বেনামী পত্রলেখককের সৃষ্টি করলেন, যাতে পুলিশের সন্দেহ কোনো মহিলার ওপর পড়ে। প্রত্যেকটা চিঠিই মেয়েমানুষের মতো করে লেখা, গত বছরের মামলায় ব্যবহৃত চিঠিগুলোর নকল করে লেখা হল।
পুলিশের কৌশলগুলোর (যেমন–হাতের ছাপ, টাইপের অক্ষর) হাত থেকে বাঁচতে তিনি টাইপ মেশিনটা মহিলা ইনস্টিটিউশনে দান করার আগেই সমস্ত খামগুলো টাইপ করে রেখেছিলেন। হয়তো কোনো একদিন লিটল ফার্জে গিয়ে সুযোগ বুঝে ঐ বইটার পাতাগুলো কেটে এনেছিলেন।
অবশেষে বিষকলম প্রতিষ্ঠা পেল। তবে তিনি আন্দাজ করতে পারেননি যে আগনেস তার বয়ফ্রেণ্ডের সঙ্গে ঝগড়া করে ফিরে আসবে।
-ঐ অ্যাগনেস মেয়েটি আক্ষরিক অর্থে কিছুই দেখেনি। সে তার ছেলেবন্ধুটির ক্ষমা চাওয়ার জন্যে ফিরে আসার অপেক্ষায় রান্নাঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়েছিল। আর একটা ব্যাপার, ঐ বাড়িতে কেউই আসেনি, ডাকপিয়ন বা অন্য কেউ। ঢিমে বুদ্ধির জন্যেই ওর বুঝতে একটু সময় লেগে যায়। কারণ সে চোখের সামনে মিসেস সিমিংটনকে চিঠি পেতে দেখেছে।
আমি জিজ্ঞেস করি, উনি আসলে চিঠি পাননি?
নিশ্চয়ই নয়। তিনি লাঞ্চের পর সায়াটিকার ব্যথা উপশমের জন্যে পুরিয়া খেতেন, মিঃ সিমিংটন তার ওপরেরটায় সায়ানাইড মিশিয়ে রাখলেন। তার একমাত্র কাজ বাকি রইল, এলসি বাড়ি ফেরার আগে বউয়ের নাম ধরে ডেকে সোজা তার ঘরে চলে গিয়ে স্ত্রী যে গ্লাসে জল খেতেন, ঐ গ্লাসে একদানা সায়ানাইড ফেলে বেনামী চিঠিটা পকেট থেকে বের করে দলা পাকিয়ে চুল্লির দিকে ছুঁড়ে ফেলা।
আর মিসেস সিমিংটনের লিখে যাওয়া কাগজটা একেবারে ধাপ্পা। মিঃ সিমিংটন কোনো এক সময় তার স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো বার্তা পেয়েছিলেন যে বার্তায় ঐ কথাটা ছিল, আর পারছি না–তিনি প্রয়োজনীয় কথাগুলো চিঠি থেকে ছিঁড়ে নিলেন।
জোয়ানা বলল, অ্যাগনেসকে খুন করার প্রয়োজনটা নিশ্চয় ছিল না?
–মিঃ সিমিংটন নিঃসন্দেহেই শুনেছিলেন মেয়েটা প্যারট্রিজকে ফোনে বলছে, মনিব গিন্নির মৃত্যুর পর থেকে সে বিভ্রান্তবোধ করছে। সিমিংটন কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি।
-কিন্তু আপাত নজরে তো তিনি সারা বিকেলটা অফিসে ছিলেন।
–আমার ধারণা অফিস যাওয়ার আগেই তিনি মেয়েটাকে খুন করেন। মিস হল্যান্ডকে দেখিয়ে তিনি হলঘরে ঢুকেই সামনের দরজা খুলে আবার বন্ধ করে চট করে ঢুকে পড়েন ছোটো কামরাটায়। যেন তিনি বেরিয়ে গেলেন। অ্যাগনেস সামনের দরজা খুলতে গেলে পেছন থেকে নোড়া দিয়ে আঘাত করে, নিকি ঢুকিয়ে খুন করে মেয়েটাকে কাবার্ডে ঢুকিয়ে রেখে হনহন্ করে অফিসে চলে যান।
জোয়ানা জানালো, পুলিশ আওয়েনের ডিসপেনসারি থেকে হারানো নোড়া আর শিকটাও পেয়েছে। ওগুলো সিমিংটনের দফতরের একটা পুরানো জংধরা দলিলের বাক্সের মধ্যে পেয়েছে।
এদিকে এইনি গ্রিফিথের গ্রেপ্তারের দিন সিমিংটনের হাতে অ্যাটাচির মধ্যে বইয়ের কাটা পাতাগুলো আর নোড়াটা নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আগের ঘটনা একটু বলি, মিস হল্যান্ড তাকে লেখা চিঠিটা মিঃ সিমিংটনকে দেখালে তিনি বুঝলেন ওটা কে লিখেছে। এরপর তিনি চিঠিটা থানায় নিয়ে গেলে আরো নিঃসন্দেহ হন এই শুনে যে, পুলিশ মিস গ্রিফিথকে ঐ চিঠিটা টাইপ করতে দেখেছে। এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া করলেন না।
–তিনি সেদিন সপরিবারে এইমির বাড়িতে চা খেতে গেলেন। হলঘর দিয়ে হেঁটে এইমি আর পুলিশের পেছনে আসার সময় দু-এক মিনিটের মধ্যে তিনি ঐ ছেঁড়া পাতা আর নোড়া এইমির কাবার্ডে লুকিয়ে দিলেন।
-কিন্তু মিস মারপল, আপনি এ ব্যাপারটায় মেগানকে জড়ালেন কেন? আমি বললাম।
–লোকটার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছিল না। তাই চেয়েছিলাম এমন কাউকে যে আমাকে সাহায্য করতে পারে, যার সাহস ধূর্ততা আর প্রচণ্ড বুকের পাটা আছে। ঐ মেগানই ছিল আমার হাতিয়ার।
-বুঝলাম মিস মারপল।
.
১৫.
হাইস্ট্রিটের সকালবেলা।
–মিস এমিলি বারটন মুদির দোকান থেকে বাজারের থলি হাতে বেরিয়ে আসছেন। চোখজোড়া উত্তেজনায় ভরা।
-ওঃ মিঃ বার্টন, এখন বড়ো ব্যস্ত আছি ভাই। ভাবুন তো শেষ অবধি সত্যি সত্যি আমি সাগর পাড়ি দিতে চলেছি।
আশা করি বেড়ানোটা খুব উপভোগ করবেন।
-একলা বেরুতে কি সাহস হত! কিন্তু সৌভাগ্য আমার কিভাবে সব কিছু হয়ে গেল নিজেই জানি না। অনেক দিনের চিন্তা ছিল, লিটল ফার্জ বেচে দেবার, আমার তো তেমন সঙ্গতি ছিল না। কিন্তু অচেনা উটকো লোক সেটা কিনে থাকবে এটা বরদাস্ত করতে পারতাম না। এখন আপনিই যখন ও বাড়িটা কিনে নিলেন আর মেগানের সঙ্গেই ওখানে থাকবেন–ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে গেল। তারপর এইমি…এতসব ভয়ানক ঝামেলার পর নিজেকে নিয়ে কি করবে তা ভাবতে না পেরে আমার সঙ্গে বেড়াতে যেতে রাজী হয়ে গেল। ওর ভাইটিও আপনার বোনকে বিয়ে করে আমাদের এই লিমস্টকে যে আপনারা দুজনে থাকতে মনস্থির করেছেন ভাবতে আনন্দ হয়। আমার সত্যিই ধারণা সব কিছু একসময় পরম মঙ্গলের মধ্যে শেষ হয়।
হাইস্ট্রিট ধরে হেঁটে যাই। সিমিংটনদের বাড়ির ফটক দিয়ে ভেতরে যাই। মেগান আমার সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে আসে।
খুব রোমান্টিক কিছু হলো না আমাদের, কারণ ওর সঙ্গে ছিল পেল্লায় আকারের একটা বুড়ো ইংলিশ শীপডগ।
-দরুণ কুকুর না? মেগান বলল।
–ওটা বুঝি আমাদের?
-হ্যাঁ, জোয়ানা আমাদের বিয়ের উপহার হিসেবে দিয়েছে। কত মজার্দার সব উপহার পেয়েছি জানো? ঐ যে নোমওয়ালা উলের জিনিসটা, ওটা পেয়েছি মিস মারপলের কাছ থেকে। আর চমৎকার ঐ ক্রাউন-ডার্টি চায়ের সেট, ওটা পাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া। আর এলসি আমাকে একটা রুটি সেঁকা টোস্টার
-যে যেমন তেমনি, বলে উঠি আমি। বিয়ের উপহার তো আগেভাগে পেলে এখন যদি মন বদল করো, তাহলে যার যার জিনিস ফেরৎ পাঠাতে হবে।
–আমি মন বদলাবো না। আরো কি এসেছে শুনবে? মিস কলপ পাঠিয়েছেন একটা মিশরীয় পাথরের ভ্রমণ।
–মৌলিক চিন্তা করেন তো! আমি বললাম।
–ওঃ হো! আসলটাই শোননি। প্যারট্রিজ একটা ছুঁচের কাজ করা চায়ের টেবিলের ঢাকা পাঠিয়েছে। আচ্ছা, একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, জোয়ানা কুকুরের নিজের বগলেশ আর শেকল ছাড়াও একজোড়া বকলেশ-শেকল পাঠিয়েছে। কেন? বললাম, ওটা ওর ছোট্ট রসিকতা।