৩. হাত তুলে ইঙ্গিতে

হাত তুলে ইঙ্গিতে তাকে থামাতে চেষ্টা করলেন ইনসপেক্টর, বললেন প্লিজ

মিসেস অলিভার চুপ করে গেল বাধ্য মেয়ের মতো। ইনসপেক্টর তার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন, নিশ্চয়ই কিছু একটা অনুমান করেছে অলিভার কিন্তু প্রকাশ করতে অক্ষম।

মিসেস অলিভার আপনি কি বোঝাতে চাইছেন মধ্যাহ্নভোজের সেই লোকটি সম্পর্কে?

এটাই কি শুধুমাত্র আপনার অনুমান? বললেন ইনসপেক্টর ব্লান্ড।

মিসেস অলিভার বলল–আমাকে কে যেন জানাল মধ্যাহ্নভোজে–একজন লোক এসেছে। আমি ঠিক মনে করতে পারছি না সে কে? মনে হয় প্রাতঃরাশের সময় যে লোকটি কথা বলছিল, সেই হবে।

অনুনয়ের ভঙ্গিতে ইনসপেক্টর বললেন, প্লিজ, ইনসপেক্টরের কোনো ধারণা ছিল না গোয়েন্দা কাহিনীর লেখক-লেখিকাদের সম্বন্ধে। কণ্ঠস্বরে শ্রদ্ধা মাখিয়ে সে বলল, মিসেস অলিভার আপনি সব খুলে বলুন, তার সম্পর্কে যে লোকটিকে আপনি প্রাতঃরাশের সময় এবং মধ্যাহ্নভোজে টেবিলে দেখেছিলেন।

না কোনো সময়েই সে আসেনি, প্রাতঃরাশ কিংবা মধ্যাহ্নভোজে, বলল মিসেস অলিভার–সেটা একটা ইডিয়ট। আমি ঠিক সেরকম বলতে চাইনি। আসলে লোকটা তার প্রাতঃরাশের টেবিলে আসেনি, তার একটা চিঠি এসেছিল।

ব্লান্ড জিজ্ঞেস করল, তাহলে সেই চিঠিই বা কার, আর লেখা হয়েছিল কাকে?

উত্তর দিল মিসেস অলিভার, সেই চিঠি লেডি স্টাবসকে লেখা হয়েছিল। সেই চিঠিটা ছিলো তার এক খুড়তুতো ভাই-এর। আর লেডি স্টাবস খুব ভয় পেয়েছিলো সে এখানে আসছে শুনে।

সে ভয় পেয়েছিল, কারণটা কি?

তা জানি না, তবে সকলেই একটা ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিলো তার চোখে মুখে।

সে চায়নি যে, লোকটা এখানে আসুক। সেজন্য আমার মনে হচ্ছে স্টাবস কোথাও লুকিয়ে আছে তার ভয়ে।

ইনসপেক্টর প্রশ্ন করল, লুকিয়ে আছে?

মিসেস অলিভার জানালো, হ্যাঁ, তাকে এখনো পর্যন্ত কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বোধহয় সে কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে, যাতে তার লোকটার সঙ্গে দেখা না হয়।

ইনসপেক্টর জানতে চাইলেন, সেই লোকটি কে?

 মিসেস অলিভার উত্তর দিল, আপনি বরং জিজ্ঞাসা করুন মঁসিয়ে পোয়ারোকে।

কারণ উনি কথা বলেছিলেন তার সঙ্গে, আমি কথা বলিনি। স্টাবস তার নাম, না না ও নাম তো আমার গল্পের প্লটের।

ডি সৌউসা, তার প্রকৃত নাম, ইটিয়েন ডি সৌউসা।

মনোযোগী হয়ে উঠলেন ইনসপেক্টর, আর একটা নাম শুনে, কি বললেন, মিঃ পোয়ারোকে জিজ্ঞাসা করব?

অলিভার উত্তর দিল, এরকুল পোয়ারো তিনিও আমার সঙ্গে ছিলেন। মৃতদেহ আবিষ্কার করার সময়।

আমার আশ্চর্য লাগছে–এরকুল পোয়ারো..সেই বিখ্যাত মানুষটি, ছোটখাট চেহারার মানুষটি, বেলজিয়ান-মুখে একটা বিরাট গোঁফ?

তার কথায় সম্মতি জানিয়ে মিসেস অলিভার বলল হ্যাঁ, বিরাট গোঁফ, তাকে আপনি জানেন নাকি?

তার সঙ্গে অনেক বছর আগে একবার দেখা হয়েছিলো, আমি তখন তরুণ সার্জেন্ট ছিলাম। ইনসপেক্টর বললেন, আচ্ছা তিনি এখানে এসেছেন কেন?

মিসেস অলিভার বলল–এখানকার উৎসবে তার পুরস্কার বিতরণ করার কথা। ডেকে দেবো তাকে।

ম্যাডাম আপনি কি এর বেশি কিছু বলতে পারেন, যাতে আমাদের তদন্তের কাজে লাগবে এমন কিছু তথ্য? বললেন ব্লান্ড।

মিসেস অলিভার উত্তর দিল-না সেরকম কিছু আমি জানি না অতএব সেটা আমি বলতেও পারবো না। আপনাকে আমি জানিয়েছি যে, কেবল অনুমানের ভিত্তিতে বলেছি আর কিছু নয়।

দ্রুত বললে সে, ধন্যবাদ ম্যাডাম, পোয়ারোকে যদি এখানে আসতে বলেন, তবে অনুগ্রহীত হবো।

কৌতূহলী হয়ে হপকিন্স জিজ্ঞাসা করলো ব্লান্ডকে, অলিভার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর স্যার মঁসিয়ে পোয়ারোকে?

তার কথায় কান দিলো না ইনসপেক্টর। তখন তার মনটাকে ভীষণ চঞ্চল করে তুলেছিলো স্যার জর্জের আর্তনাদ। স্যার জর্জ উচ্চৈস্বরে বলছিলেন, আমার স্ত্রী উধাও হয়ে গেছে মনে হয়, কোথাও সে যেতে পারে কিন্তু আমি জানি না। মিস ব্রেউইস তারপর খবর দিল-খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না লেডি স্টাবসকে। আর অলিভারের যুক্তি অনুসারে কোথাও সে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছে এই উৎসবের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য।

কনস্টেবল হপকিন্স গলা খাঁকানি দিয়ে বলল, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব স্যার, যদি আপনি ভেবে থাকেন এই ঘটনার সঙ্গে ডি সৌউসা জড়িত, তাহলে সে কে? মনে মনে ভীষণ খুশী হয়েছিল কনস্টেবল হপকিন্স, অনেকগুলো বিদেশীদের পেছনে ছোটার থেকে একজন বিদেশীকে পাওয়া গেলে ভালো হয়। তখন অন্যদিকে চিন্তা করছিল ইনসপেক্টর ব্লান্ড।

ব্লান্ড মুখভঙ্গী করে বলে উঠল–যেখানে পাও, লেডি স্টাবসকে খুঁজে নিয়ে এসো। আমি তাকেই চাই।

এই সময় ঘরে এসে ঢুকলো এরকুল পোয়ারো। শ্যেন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। দরজা বন্ধ করে।

উঠে দাঁড়াল ইনসপেক্টর ব্রান্ড এবং বললো মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার আমাকে মনে আছে বলে মনে হয় না?

একটুক্ষণ চিন্তা করে পোয়ারো বলে উঠল আচ্ছা দাঁড়ান, হ্যাঁ এইবার মনে পড়েছে আমার, আজ চোদ্দো বা পনেরো বছর আগের কথা। তখন আপনি ছিলেন তরুণ সার্জেন্ট।

ব্লান্ড বললো, ঠিকই বলেছেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কি এই খুনের কেসে সাহায্য করতে এসেছেন।

হ্যাঁ, আমি এখানে সাহায্য করতে এসেছিলাম, আপনি ঠিকই ধরেছেন, তবে খুনের কেসের তদন্তের জন্য নয়, পুরস্কার বিতরণের জন্য।

আমাকে অবশ্য মিসেস অলিভার বলেছেন, বলল ব্লান্ড।

পোয়ারো বললো, তিনি আপনাকে কিছুই বলেননি। ইনসপেক্টর ব্লান্ডকে খুনের সত্যিকারের মোটিভ জানায়নি তো অলিভার, আর সে এইজন্যই ডেভনে ছুটে আসতে বাধ্য হয়েছে।

ইনসপেক্টর জানাল, তিনি আমাকে সঠিকভাবে কিছুই বলেননি। তবে সম্ভব অসম্ভব সব কিছু নিয়েই তিনি আলোচনা করেছেন মেয়েটির খুনের ব্যাপারে। আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি, ওর শক্তি সত্যিই অদ্ভুত।

শুষ্ক স্বরে পোয়ারো বললো, তিনি তার রুজি রোজগারের ব্যবস্থা করেন এই কল্পনাশক্তি দিয়ে।

আচ্ছা ডি সৌউসা নামে একজন লোকের কথা অলিভার বলছিলেন, তাহলে কি তিনি তাকেই অনুমান করছেন? জানতে চাইলো ব্লান্ড।

পোয়ারো জানালো, না, ঘটনা সেরকম নয়। তবে ঐ লোকটির চিঠি এসেছিল আজ সকালে প্রাতঃরাশের সময়, এর পরে অসুস্থতা বোধ করেন মিসেস স্টাবস। তিনি টেবিল থেকে উঠে যান মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে বলে। তিনি ভয়ঙ্কর ভীত হয়ে পড়েছেন, তার সেই খুড়তুতো ভাইয়ের আগমনে।

কিন্তু কেন? জানতে চাইলেন ব্লান্ড।

পোয়ারো কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই, তবে তিনি এটুকুই বলেছেন যে লোকটি খুব খারাপ, তার প্রকৃতিটা একটু অস্বাভাবিক।

আপনি কি সত্যি বলে মনে করেন লেডি স্টাবস-এর ভয়টা? প্রশ্ন রাখলো ব্লান্ড।

এটা যদি সত্যি না হয়, তবে বলতে হয় লেডি স্টাকস একজন অত্যন্ত চতুর মহিলা। পোয়ারো বলল শুকনো গলায়।

ব্লান্ড জানালো এই কেসের সম্বন্ধে কিছু ধারণা আমার মনে শুরু হচ্ছে, সে আবার বলল অস্থিরভাবে পায়চারী করতে করতে, ঐ অভিশপ্ত মহিলার ভুলের জন্যই এই অঘটন; এটা আমার মনে হয়।

আপনি কি মিসেস অলিভারের কথা বলছেন? জানতে চাইলো পোয়ারো।

ঠিক তাই, আমার মাথায় উনি একগাদা রোমাঞ্চকর ঘটনা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন।

আর আপনি সেগুলোকে সত্যি ভাবছেন, বললো পোয়ারো।

না, সবগুলো নয়, তবে দু-একটা সত্য ঘটনার মতো শোনায়। অবশ্য সব কিছু নির্ভর করছে–সে থেমে গেলো–পুলিশ কনস্টেবল হপকিন্সকে আসতে দেখে। 

কনস্টেবল বলল, স্যার কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না লেডি স্টাবসকে। কোথাও নেই তিনি।

ব্লান্ড বিরক্ত হয়ে বলল, সেটা জানতাম আমি। তাকে খুঁজে বার করার জন্য আমি তোমাকে বলেছিলাম। তুমি সেখানে খবর নাও যেখানে উৎসব-এর প্রবেশ ফি-র টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যে লেডি স্টাবস ওখান থেকে বেরিয়ে গেছেন কিনা? আর জেনে এসে তিনি পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেছেন অথবা গাড়ি নিয়ে।

ঠিক আছে স্যার, বললো হপকিন্স।

আর কি ভাবতে পারি বলুন এছাড়া, কোথাও যখন তাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে মনে হচ্ছে তিনি হয়তো এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

তবে আমি জানতে চাই কেন? এবার বলুন তো এই ডি সৌউসা লোকটি সম্বন্ধে কি জানেন?

পোয়ারো লোকটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিবরণ জানালো এবং বলল, মনে হয় উৎসবে মেতে আছে সে এখনো, আপনি তার সঙ্গে দেখা করতে চান, স্যার জর্জকে জানাবো?

এখন নয়, কাজগুলো আগে সেরে নিই, শেষবার কখন আপনি দেখেছিলেন লেডি স্টাবসকে?

 ব্লান্ড জানতে চাইলো।

পোয়ারো মনে করার চেষ্টা করলেন। খুবই মুশকিল সঠিক সময় মনে করা, তার উত্তরে সন্দেহ প্রকাশ পেলো, হয়তো বিকেল চারটের সামান্য কিছু পূর্বে। বাড়ির কাছেই তাকে দেখেছিলাম অনেক লোকের সঙ্গে। তিনি ছিলেন কি এখানে আসার সময় যার নাম ডি সৌউসা।

তবে তিনি ছিলেন না বলেই আমার মনে হয়, অন্তত তাকে আমি দেখিনি, স্যার জর্জ তাকে জানায় তার স্ত্রী হয়তো অন্য কোথাও আছেন। বললো পোয়ারো।

ইনসপেক্টর ব্লন্ড বললো, যাতে লোকটার সঙ্গে তার দেখা না হয় এজন্য লেডি স্টাকস হয়তো অন্য কোথাও গিয়েছেন।

পোয়ারো সম্মতি জানিয়ে বলল, সেটাই বোধহয়। একথা চিন্তা করুন, যদি তাকে খুঁজে না পাওয়া যায়?

ব্লান্ড দৃঢ়তার সঙ্গে বলে উঠল, তা হতে পারে না। কারণ, একথা কেন আপনার মনে হলো?

কারণটা কেউ জানে না, তবে সবাই জানে তিনি অন্তর্হিত হয়েছেন, বললো পোয়ারো।

 একটা অশুভ ইঙ্গিত রয়েছে আপনার কথায় মিঃ পোয়ারো, ব্লান্ড বললো।

হা, হয়তো অশুভ হতে পারে। স্বীকার করল পোয়ারো। ইনসপেক্টর ব্লান্ড বেশ জোরের সঙ্গে বললো–এখানে আমরা এসেছি মারলিন টাকারের খুনের সন্ধান করতে।

তাহলে যে কোনো কারণেই হোক, আপনার এই ডি সৌউসা লোকটির প্রতি এত কৌতূহল কেন? আপনি কি মনে করেন মারলিনকে সে খুন করতে পারে?

হঠাৎ একটা অস্বাভাবিক কথা বলে ফেলল ইনসপেক্টর ব্লান্ড। সেই ভদ্রমহিলা?

একটা সূক্ষ্ম হাসি খেলা করে গেল পোয়ারোর মুখে–তাহলে কি আপনি মিসেস অলিভারকে বোঝাতে চাইছেন?

মঁসিয়ে পোয়ারো, সত্যি কথা চিন্তা করে দেখুন–কোনো অর্থ নেই মারলিন টাকারকে হত্যা করার। হত্যা করা হয়েছে একটি অপরিণত জড়বুদ্ধি সম্পন্ন কিশোরী মেয়েকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে, মেয়েটি অপরিচিত বটে, সম্ভাব্য মোটিভের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি অকুস্থল থেকে। বলল ব্লান্ড।

আর আপনাকে একটা মোটিভের কথা বলেছে মিসেস অলিভার তাই না? প্রশ্ন করলো পোয়ারো।

তিনি শুধুমাত্র একটা কথাই বলেননি, কম করে ডজনখানেক কথা বলেছেন, কিছু কথা তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন : হয়তো মারলিন জেনে থাকবে গোপন প্রেমের কথা, অথবা হয়তো সে কাউকে হত্যা করার দৃশ্যটা দেখে থাকবে, অথবা সে জানত এ বাড়ির কোথাও ধনরত্ন লুকানো আছে : নয়তো সে ডি সৌউসা লোকটাকে মধ্যাহ্নভোজের সময় নদীর বক্ষে কোনো অপরাধমূলক কাজ করতে দেখে থাকবে, আর সে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছে বোট-হাউসের জানালা দিয়ে, সেইজন্যই হয়তো মেয়েটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে আমি জানি না, একডজন মোটিভের মধ্যে কোনটা সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। ভদ্রমহিলা তার খুড়তুতো ভাহকে ভয় করত, একথাও আমি শুনেছি। হয়তো ডি সৌউসা এমন কিছু গোপন কথা জানতে যেটা প্রকাশ হয়ে পড়লে লেডি স্টাবস-এর সমূহ ক্ষতি হতে পারে। সেই গোপন কথাটা তার, স্বামীর কানে প্রবেশ করুক এটা লেডি স্টাবস চাননি। অথবা সেই লোকটির নিজস্ব কোনো ভীতি ছিলো এমনও হতে পারে।

কোনোরকম দ্বিধা না করেই পোয়ারো বলে উঠল, অবশ্যই লোকটা নিজে ভীত ছিল।

হুম, ইনসপেক্টর ব্লান্ড বললো, তাহলে আমি এই তরুণ-যুবকটির সঙ্গে কথা বলতে চাই, যদি এখনো সে এখানে থাকে।

.

ইটিয়েন ডি সৌউসা মৃদু প্রতিবাদ করে উঠলো, এখানে কেন আপনারা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছেন। আমি এই খুনের সঙ্গে জড়িত নই কোনোমতেই। আপনারা আমার জবানবন্দী কেন চান, অবাক হয়ে আমি এটাই ভাবছি।

আপনি এখানে একজন আগন্তুক, মিঃ ডি সৌউসা-বলল ইনসপেক্টর ব্লান্ড।

আর আগন্তুক বলেই তাকে সন্দেহজনক বলে ধরে নেওয়া হবে, তাই তো? ডি সৌউসা বাধা দিয়ে বলে উঠল।

ইনসপেক্টর ব্লান্ড বলল না, সেটা নয়–আপনি আপনার ইয়টটা হেলমাউথে রেখে, এখানে চলে আসেন লঞ্চে–আর বোট-হাউসের সামনে দিয়ে আপনি এখানে এসেছিলেন, লঞ্চ থেকে ন্যাসে হাউসে আসেন।

আচ্ছা সম্মতি জানালো ইটিয়েন ডি সৌউসা।

মাথা নেড়ে বোট-হাউসে কি কাউকে নজরে পড়েছিল আপনার? তার মানে সৌউসা জানতে চাইলো, কাউকে দেখতেই হবে নাকি? না আমি দেখিনি।

দেখার সম্ভাবনা থাকতেও তো পারে, আচ্ছা শুনুন মিঃ ডি সৌউসা, নিহত মেয়েটি আজ বিকালে ঐ বোট-হাউসে ছিল। সে খুন হয়েছে সেখানেই, দুটো সময় প্রায়ই একই। আপনার লঞ্চ থেকে নামার সময় আর মেয়েটির খুন হওয়ার সময়।

সেইজন্য বলছিলাম আর কি

তাহলে আপনি বলতে চান এই খুনে আমি একজন সাক্ষী থাকতে পারি? প্রশ্ন করল ডি সৌউসা।

ব্লান্ড বলল, না, সেটা আমি বলছি না, হয়তো মেয়েটিকে আপনি দেখে থাকতে পারেন ঐ পথ দিয়ে আসার সময়, কিংবা ব্যালকনিতে অথবা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়তো দেখতে পারেন। এটা বোঝা যাবে যে, মেয়েটা আপনার আসার সময় জীবিত ছিলো।

ডি সৌউসা একটু বিদ্রূপ-এর সুরে বলল, আচ্ছা তাই বুঝি? আচ্ছা কেবল আমাকেই প্রশ্ন করছেন কেন বিশেষভাবে? আরও কত নৌকা সেখানে আরও কত লঞ্চ কত যাত্রী আসে এখানে, তারা এখানে নামে। সকলকে কেন জিজ্ঞাসা করছেন না?

অবশ্যই তাদের জিজ্ঞাসা করবো, ভয়ের কিছু নেই। তবে আপনি এখন বলুন বোট-হাউসে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন কিনা? ব্লান্ড প্রশ্ন করলো।

না, সেরকম কিছু দেখিনি, খুব একটা মন দিয়ে দেখিনি বটে এবং খুব কাছ দিয়ে আসিনি। জানালার সামনে কে যেন বাইরের দিকে তাকিয়েছিল, দূর থেকে দেখেছিলাম। আর আপনার কথা অনুযায়ী, মানুষটিকে আমার দেখাও সম্ভব নয়। ডি সৌউসা জানালো, আমি দুঃখিত যেহেতু আপনাকে সাহায্য করতে পারলাম না এই ব্যাপারে।

আচ্ছা ঠিক আছে, বলল ইন্সপেক্টর বন্ধুর মতো ভঙ্গিতে, লেডি স্টাবস আপনার খুড়তুতো বোন আমি জেনেছি।

সে আমার দূর-সম্পৰ্কর খুড়তুতো বোন। একথা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের দ্বীপপুঞ্জে নিজেদের মধ্যেই বিয়ে হয়। তাহলে সবাই আমরা খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাইবোন সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে, জানালো ডি সৌউসা, সেইরকম হ্যাটিও আমার একজন বোন, তাকে প্রায় আমি চোদ্দো পনেরো বছর দেখিনি।

তাহলে আপনি তাকে অবাক করে দিতে চেয়েছিলেন? বলল ব্লান্ড।

তা নয়, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে আমি তাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম যে, খুব শীঘ্রই তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তবে পরে তাকে জানাবো, ঠিক কোন দিন যাবো, বলল সৌউসা।

তাহলে আপনি তাকে আবার একটা চিঠি লিখেছিলেন? জিজ্ঞাসা করলো ব্লান্ড।

হ্যাঁ, আমি তাই করেছিলাম, বলল সৌউসা। ইনসপেক্টর ব্লান্ড, তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবছিলো, ইটিয়েনের ব্রেকফাস্ট টেবিলে চিঠির বক্তব্যের সঙ্গে তার জবানবন্দীর অনেক পার্থক্য। এছাড়াও লেডি স্টাবস তার চিঠি পেয়ে ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন।

ইনসপেক্টর ব্লান্ড জিজ্ঞাসা করল, প্রথম চিঠির জবাব পেয়েছিলেন লেডি স্টাবস-এর কাছ থেকে?

ঠিক মনে পড়ছে না, তবে মনে হয় সে উত্তর দেয়েনি, সৌউসা একটু ইতস্ততঃভাবে জানাল। তবে মনে রাখা দরকার ছিলো। অবশ্য তখন আমি বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। অবশ্য আমার বোন খুব একটা ভালো চিঠি লিখতে পারতো না। এতদিনে সে হয়তো অনেক বড় হয়ে গেছে এবং দেখতেও বেশ সুন্দর হয়েছে।

ব্লন্ড জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ডি সৌউসা, আপনার বোন আপনাকে এড়িয়ে যেতে পারে এরকম কোনো কারণ আপনি জানেন–

সৌউসা জবাব দিল, হ্যাটি আনন্দ উৎসব ছেড়ে এখান থেকে চলে গেছে, আমাকে এড়ানোর জন্য এটাই আপনার ধারণা? কি অসম্ভব ধারণা আপনার?

ব্লান্ড উত্তর দিল, আমি যতদূর জানি এটার অবশ্য কোনো কারণ আছে এবং আপনিও তা জানেন। আমি যদি বলি আপনার ভয়ে সে চলে গেছে? সুতরাং আমি বলছি মিঃ সৌউসা, আপনি অনেক খবর দিতে পারেন এই বোনের ব্যাপারে। তার স্বভাব, চরিত্র এবং তার মানসিক প্রতিক্রিয়া।

অবাক হয়ে সৌউসা উত্তর দিল, বোট-হাউসে খুনের সঙ্গে হ্যাটির চরিত্রের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানি না। আর মেয়েটা সত্যিই খুন হয়েছে বলে তদন্ত করার ভার আপনার ওপর পড়ে গেছে–এটা আমি জানি।

 ইনসপেক্টর ব্লান্ড উত্তর দিল, হয়তো কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে এই ব্যাপারে।

ডি সৌউসা কিছুক্ষণ ইনসপেক্টরকে নিরীক্ষণ করার পর বলল, আমি আমার বোনের সম্বন্ধে আদৌ কিছু জানি না। যদিও মানসিক দিক থেকে সে দুর্বল প্রকৃতির তবে তার মধ্যে খুনের কোনো ঝোঁক ছিল না বলেই যতদূর আমি জানি। একটু থামলো সে, তারপর বলল, এরপর আর আপনার কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না, এটাই আমার ধারণা। তবে এটাই আমি চাই আপনি খুনীকে সনাক্ত করার কাজে সফল হন।

ব্লান্ড প্রশ্ন করলো, আপনি দু-একদিনের মধ্যে হেলমাউথ ছেড়ে যাচ্ছেন না, এটাই আশা করছি।

আপনি বেশ নম্রভাবে কথা বলতে জানেন ইনসপেক্টর, এটা আমি লক্ষ্য করছি, জানালো মিঃ সৌউসা–অতএব আমি কি ধরে নিতে পারি এটা আপনার হুকুম?

স্রেফ অনুরোধ স্যার। জানালো ব্লান্ড।

ডি সৌউসা ধন্যবাদ জানিয়ে ব্লান্ডকে জানাল, মাত্র দুদিন হেলমাউথে থাকবো। তারপর থাকবো আমার ইয়ট এস্পেরান্স-এ। সেখানে আমাকে পাবেন, যদি আপনার আরও কিছু জিজ্ঞাসা থাকে।

ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সৌউসা কনস্টেবল হপকিন্স দরজা খুলে দেবার পর। ব্লান্ডকে খবর দিল সার্জেন্ট ফ্রাঙ্ক কোটেল, আমরা স্যার অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। বাড়ির বাইরে গেটে যেতে দেখা যায়নি লেডি স্টাবসকে। প্রবেশ ফি নিচ্ছিল দ্বিতীয় মালি তিনি কোথাও চলে যাননি। সে শপথ করে বলতে পারে।

আচ্ছা আরও অন্যান্য ফটক হয়তো আছে, প্রধান ফাটক ছাড়া, জানতে চাইলো ব্লান্ড।

হা স্যার, তা অবশ্য আছে, একটা রাস্তা আছে বটে ফেরির দিকে যাবার–তবে প্রায় একশো বছর বয়স্ক বৃদ্ধ মারডেল জানিয়েছে এবং তার কথা বিশ্বাসযোগ্য যে-লেডি স্টাবকে সে এই পথ দিয়ে চলে যেতে দেখেনি–জানালো ফ্রাঙ্ক কোটেল। সেই লোকটি তাকে আরও সংবাদ দিয়েছে যে, তার লঞ্চে একজন বিদেশী ভদ্রলোক আসে এবং তার কাছে ন্যাসে হাউসের খোঁজ নেয়। এই লোকটিকে বৃদ্ধটি পথ দেখিয়ে দেয়, কিন্তু এই পথে লেডি স্টাবসকে আসতে দেখেনি সে জোর দিয়ে বলেছে। তবে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঢাকা ডাইন পার্কের ভেতর দিয়ে একটা পথ আছে। তাহলে এই অনুমান থেকে ধরে নেওয়া যেতে পারে, তিনি এখনো এখানেই আছেন? জিজ্ঞাসা করলো ফ্রাঙ্ক কোটেল।

ব্লান্ড বলল, সেটা অবশ্য হতে পারে। তবে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীরা যদি ইয়ুথ হোস্টেল থেকে বেড়া ডিঙিয়ে এখানে আসতে পারে, অবশ্য এটা স্যার জর্জের অভিযোগ–তাহলে অনায়াসে বেড়া ডিঙিয়ে ওখানে চলে যেতে পারে লেডি স্টাবসও।

কোটেল বলল, তবুও স্যার মিস ব্রেউইস বলল স্যুটকেশ নেননি, এমনকি উৎসবের পোশাক পরেই গেছেন। ইনসপেক্টর ব্লান্ড চিন্তিত মুখে তাকাল, হয়তো কোনো অপ্রীতিকর সম্ভাবনা তার মনে উদয় হয়েছে। তার নামটা কি যেন, যাইহোক সেক্রেটারিকে আবার ডেকে পাঠাও ব্রুস, তীক্ষ্ণ স্বরে আদেশ দিল ব্লান্ড।

বেশ একটু অগোছালো দেখাচ্ছিল মিস ব্রেউইসকে। আপনি কি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, ইনসপেক্টর? বলল ব্রেউইস। এখন উদভ্রান্ত অবস্থা স্যার জর্জের, লেডি স্টাবস যে সত্যি সত্যি উধাও একথা তিনি এখন বুঝে গেছেন। কিছু একটা ঘটেছে এটা তার মাথায় এখন ঢুকেছে। যদিও অবাস্তব।

মিস ব্রেউইস, হয়তো বাস্তবও হতে পারে, ভুলে যাবেন না একথা, যতই হোক আজ বিকালে একজন খুন হয়েছে। জানালো ইনসপেক্টর।

আপনি লেডি স্টাবস সম্বন্ধে নিশ্চয়ই একথা ভাবছেন না–অবশ্য নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা তার আছে। জানালো ব্রেউইস।

অবিশ্বাসের সুরে মিঃ ব্লান্ড প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তাই নাকি! সব ব্যাপারেই তিনি অসহায় একথা তো আমি শুনেছি।

নির্বোধ সব। বলল ব্রেউইস। আমি কিন্তু সেভাবে মনে করি না। ওঁর স্বামী ওঁকে যতটা অসহায় বলে ভাবেন।

ব্লান্ড তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, আচ্ছা মিস ব্রেউইস, আপনি হয়তো তাকে বিশেষ পছন্দ করেন না। তাই নয় কি?

গলায় শ্লেষ মাখিয়ে বলল মিস ব্রেউইস, আমি তাকে পছন্দ করি বা না করি;এটা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাই না।

স্যার জর্জ দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করল ঠিক সেই মুহূর্তে। তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠল জর্জ, মিঃ ব্লান্ড বলতে পারেন আমার স্ত্রী কোথায়? খুঁজে বের করতেই হবে হ্যাটিকে। শুধুমাত্র আপনারা কাগজ-কলম নিয়ে লিখেই চলেছেন মাত্র, এছাড়া আর কি করছেন আপনারা এ পর্যন্ত বলুন, কিছুই করেননি! উৎসবের সব আনন্দ নিথর হয়ে আছে, আমার তো এটাই মনে হচ্ছে কোনো এক খুনী হাফ-ক্রাউন টিকিট কেটে একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছে–এখন সেইরকমই অবস্থা।

স্যার জর্জ শুনুন, আমরা এখনই ঘটনাকে এতবেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছি না, মিঃ ব্লান্ড বলল–কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই আমি আপনাকে মিঃ জর্জ, আপনার স্ত্রী কি তিন সপ্তাহ পূর্বে ডি সৌউসার কাছ থেকে কোনো চিঠি পেয়েছিলেন? সেই চিঠিতে সৌউসা এদেশে আসবে বলে জানিয়েছিল, আমাদের কাছে খবর আছে।

স্যার জর্জ এর উত্তরে বিস্মিত স্বরে বলে উঠলো, না, এরকম চিঠি সে কখনোই পায়নি। হ্যাটি ওর খুড়তুতো ভাই-এর কাছ থেকে কেবলমাত্র আজ সকালেই একটা চিঠি পায়।

ব্লান্ড বললো, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি শুনেছিলাম মিসেস স্টাবস খুব মুষড়ে পড়েছিলেন। সেই চিঠিটা পেয়ে।

স্যার জর্জ এবারেও বিস্মিত নয়নে তাকালো, আমার তো তখন তাকে দেখে কিছু মনে হয়নি, স্যার জর্জ জানালো। কেবলমাত্র ও বলেছিল, ডি সৌউসা লোকটা সুবিধার নয়। তার এখানে আসা ঠিক নয়, কারণ সে নাকি অনেক কুকর্ম করেছিল।

ব্লান্ড জানতে চাইলো, কখন সে এরকম খারাপ কাজ করেছিল।

জর্জ জানালো, সেটা ওর ছেলেবেলাকার ঘটনা, অনেকদিন আগের, কিন্তু হ্যাটি এমন ছেলেমানুষ যে, সময় সময় ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠে, অবশ্য হয়তো এটা তার অকারণ ভীতি।

ভয়ের কথাটা ঠিকমতো ব্যাখ্যা করে বলতে পারে না, যদিও হ্যাটি ওর ভাই-এর কথা বলে, এটাও একটা মজার ব্যাপার।

তাহলে আপনি বলছেন যে স্যার জর্জ, লেডি স্টাবস আপনাকে সঠিকভাবে কিছু বলেননি।

 সেটা আমি বলবো কেন, ও কি বলেছিল। স্যার জর্জ বললো।

আচ্ছা, অতএব মিসেস স্টাবস কিছু বলেছিলেন আপনাকে? তীক্ষ্ণ স্বরে ব্লান্ড এবার বলে উঠলো, তদন্তের কাজে বিশেষ সাহায্য হত স্যার, যদি আপনি পরিষ্কারভাবে জানাতেন। আর সে কথা ভেবে আপনি যদি।

আচ্ছা তাহলে বলছি আমি, বহুবার হ্যাঁ, অনেকবার আমাকে হ্যাটি বলেছিল, ডি সৌউসা মানুষ পর্যন্ত খুন করতে পারে, বুঝলেন ইনসপেক্টর?

ব্লান্ড কথাটা পুরনাবৃত্তি করল, সে মানুষ খুন করে?

স্যার জর্জ জানালো, তবে কথাটার মধ্যে এতটা গুরুত্ব দিতে হবে আমার এরকম মনে হয় না, কারণ এই ডি সৌউসা লোকটা সেরকম কিছু করতে পারে বলে আমার মনে হয়না। তবে এটাও যেন ভাববেন না, ইয়ট থেকে নেমে অরণ্যপথ দিয়ে বোট-হাউস এসে সেই খুন করেছে হতভাগিনী মেয়েটাকে। আর কেনই বা সে খুন করতে যাবে বলুন, তার কি প্রয়োজন হতে পারে?

ইনসপেক্টর ব্লান্ড বলল, না, আমি তা বলিনি যে সেরকম কিছু ঘটেছে।

তবে স্যার জর্জ একটা কথা মনে রাখবেন, সেরকম ভাবা হয়েছিল মারলিন টাকারের হত্যার আগে এখন আর সেরকম নয়, ব্যাপারটা সীমিত। এখন তার সন্দেহভাজন হত্যাকারী সীমিত। কেউ বোট-হাউসে চাবি ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না একথা শুনেছি। একটা চাবি হচ্ছে শেষ ক্ল এই মার্ডার হান্ট-এ। বাগানের মধ্যে এখনও কোথাও লুকিয়ে রাখা আছে। মিসেস অলিভার যিনি এই মার্ডার হান্টের সংগঠক। দ্বিতীয় চাবি তার কাছে আছে, স্যার জর্জ জানেন কি তৃতীয় চাবিটা কোথায়?

স্যার জর্জ বলল, যে ডেস্কের সামনে বসে আছেন আপনি তার ডানদিকের ড্রয়ারে রয়েছে। তারপর নিজেই সে ড্রয়ার খুলে বলল, দেখছি এখানেই সেটা রয়েছে।

ইন্সপেক্টর ব্লান্ড বলল, তাহলে এবার লক্ষ্য করুন, এমন একজন লোক, যে বোট-হাউসে সর্বপ্রথম প্রবেশ করতে পারে…যে কিনা চাবির সন্ধান পেয়েছিল। মার্ডার হান্ট সম্পূর্ণ করে তিনি কোনো বাড়ির সদস্যের কাছে রেখে দিতে পারেন। আর এমন একজনের কাছে ছিলো তৃতীয় চাবিটা যাকে মারলিন স্ব-ইচ্ছায় তার ঘরে ঢোকবার অনুমতি দিয়েছিলো।

যেসব লোকদের সে গ্রহণ করতে পারে, নিশ্চয়ই তারা বাইরে থেকে ডাক দিতে পারে, (মার্ডার হান্টের পরিকল্পনামতো পরিচিত কণ্ঠস্বর পেলেই, সে মাটিতে শুয় পড়ে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে কৃত্রিমভাবে মৃতের মতো শুয়ে থাকার অভিনয় করবে) সুতরাং আপনি নিজেই দেখতে পাবেন। এরা হলো, যারা আয়োজন করেছিল মার্ডার হান্ট-এর। তাহলে এটাই বলতে হয়, লেডি স্টাবস, মিস ব্রেউইস, মিসেস অলিভার সম্ভবত মঁসিয়ে পোয়ারো এবং আপনি নিজে, আজ সকালে এদের মধ্যে কেউ তার সঙ্গে দেখা করে থাকবে। তাহলে স্যার জর্জ, সে কে হতে পারে?

স্যার জর্জ সামান্য সময় কি যেন ভাবলো, তারপর সে বললো, নিশ্চয়ই লেগি দম্পতিরা। শুরু থেকেই এখানে রয়েছে আলেক আর শেলি লেগি। বাকী থাকল একজন আর্কিটেক্ট মাইকেল ওয়েম্যান, সে এখানে এসে উঠেছে টেনি প্যাভিলিয়ানের নক্সা তৈরি করার জন্য। মাস্টারটনরা ওয়ারবারটন এবং মিসেস ফোলিয়াটও আছেন সেই সঙ্গে।

জায়গাটা বিরাট কিছু বড় নয়, স্যার জর্জ। বলল ব্লান্ড। যা আমরা এখনো জানতে পারিনি সেটা হয়তো, একটা বিরাট দাও মারার পরিকল্পনা ছিলো, আমি কেবলমাত্র এটাই বলতে চাই। হয়তো মেয়েটিকে অন্য কোথাও গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয়েছে তারপর তাকে বোট-হাউসে মেঝের ওপর শুইয়ে রেখে গেছে। তবে যেই এ কাজ করুক না কেন, সে মার্ডার হান্ট-এর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জানতো। লেডি স্টাবসকে খুঁজে বার করার সবরকম চেষ্টাই আমরা চালাচ্ছি। এই আশ্বাস আপনাকে আবার আমরা দিচ্ছি। তবে এরই মধ্যে আমি একবার কথা বলতে চাই আলেক লেগি, মিসেস শেলি এবং মাইকেল ওয়েম্যানের সঙ্গে।

মিস ব্রেউইস-এর দিকে তাকিয়ে স্যার জর্জ নির্দেশ দিলো, ওদের এখানে উপস্থিত করার জন্য। মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মিস ব্রেউইস, তাকে অনুসরণ করলো স্যার জর্জ।

বুঝতে পারলো ব্লান্ড, মিঃ জর্জ একান্ত নির্ভরশীল মিস ব্রেউইসের উপর, অনেকটা শিশুর মতো। ব্লান্ড এই অবসরে হেলমাউথ পুলিশ স্টেশনে ফোন করে ইয়ট ইসপেরাল সংক্রান্ত ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বলল।

হপকিন্সকেও ব্লান্ড বলল, নিশ্চয়ই তুমি অনুমান করে থাকবে এটা আমার মনে হয়, ভদ্রমহিলার সম্ভাব্য যাওয়ার জায়গা হলো ডি সৌউসার ওই ইয়টে। হয়তো সে সেখানে গিয়েছে অরণ্যপথ দিয়ে সবার অলক্ষ্যে। হয়তো সে বোট-হাউসে মিলিত হয় তার আগে ডি সৌসার সঙ্গে হয়তো সেই লোকটি তার লঞ্চে করে তাকে ইয়টে রেখে এসে থাকবে। যদি সেখানে লেডি স্টাবস গিয়েই থাকে, এখন দেখতে হবে কারোর দৃষ্টি এড়িয়ে সে যেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে।

তারা নীরব হয়ে গেল একজন যুবককে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে। যুবকের দিকে চোখ তুলে জিজ্ঞেস করল ব্লান্ড, মিঃ আলেক লেগি আপনি?

যুবকটি উত্তর দিল,, আমি মাইকেল ওয়েম্যান। আপনি নাকি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন শুনলাম।

আজ বিকালে এখানে একটা বিয়োগান্তক নাটক ঘটে গেছে, আপনি কি জানেন মিঃ ওয়েম্যান? এক কিশোরী খুন হয়েছে, তার নাম মারলিন টাকার? প্রশ্ন করলেন ব্লান্ড।

মাইলেক চমকে উঠে বলল, তাই নাকি সে কিভাবে খুন হলো?

 তাকে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়, গলায় দড়ির ফাস লাগিয়ে। বলল ব্লান্ড।

মাইকেল শিষ দিয়ে উঠল, ঠিক একেবারে চিত্রনাট্যের মতো? তাহলে আসল কথা হল, একটা অনুমান করা যেতে পারে যে, এখন আমরা সকলেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি? অথবা কোনো স্থানীয় যুবক।

আমরা সেরকম সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না যে, কোনো স্থানীয় ছেলে যে এ কাজ করতে পারে। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল ব্লান্ড। আচ্ছা ধরুন মিঃ ওয়েম্যান, আজ বিকাল চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আপনি কোথায় ছিলেন এটাই আমি এখন জানতে চাই।

ইনসপেক্টর সঠিকভাবে আমি কিছুই বলতে পারব না কারণ, আমি তখন টেনিস কোর্টে প্যাভিলিয়ন করতে ব্যস্ত আবার কখনো বা এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি, কিভাবে উৎসব সফল করা যায়।

আর ঠিক তখনই আমি ভাবছিলাম, টেনিস নেটের ফটোগ্রাফটা কতক্ষণে কেউ সনাক্ত করতে পারবে কারণ, টেনিস নেটের একটা অংশ মার্ডার হান্টের প্রথম ক্ল। জানালো ওয়েম্যান।

আচ্ছা সেটা কি কেউ সনাক্ত করতে পেরেছিল ইনসপেক্টর জানতে চাইলেন?

অবশ্যই কেউ একজন করেছে বলেই আমার ধারণা জানালো মাইকেল। সেটা তখন আমি লক্ষ্য করিনি। তখন আমি প্যাভিলিয়ানের ব্যাপারে নতুন চিন্তায় মশগুল ছিলাম।

ব্লন্ড প্রশ্ন করলো আচ্ছা তারপর?

আমি এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিলাম, তারপর একবার ফেরিঘাট-এ যাই তখন দেখা হয় বৃদ্ধ মারডেলের সঙ্গে এবং কিছুক্ষণ কথাও বলেছিলাম। জানালো মাইকেল ওয়েম্যান। ইনসপেক্টর ব্লান্ড বললো তাই নাকি, তাহলে সেই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেই পাওয়া যাবে আপনার বক্তব্যের সমর্থন।

নিশ্চয়ই, মারডেল আমার কথার সমর্থন করবে অবশ্য বিকেল পাঁচটার পর সময়টা। আপনি তো বিকেল সোয়া চারটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আগ্রহী, খুবই অপ্রীতিকর ব্যাপার, ইনসপেক্টর তাই নয় কি?

মিঃ ওয়েম্যান, আমরা আশা করি সময়টা আরো সংক্ষিপ্ত করে নিয়ে আসতে পারে। জানালো ব্লান্ড।

মাইকেল বলল, খুবই নিশ্চিতভাবে বলছেন? আচ্ছা কে খুন করতে পারে এই মেয়েটিকে? জানতে চাইলো ওয়েম্যান।

আচ্ছা মিঃ ওয়েম্যান, এ বিষয়ে আপনার কোন ধারণা নেই?

না, বিশেষ সিদ্ধান্ত কিছু নেই, তবে অনুমানের ভিত্তিতে বলা যায়, হয়তো মেয়েটি ভেবেছিল, যদি সত্যি সত্যি মৃতদেহটা সেখানে পাওয়া যায়, তবে ব্যাপারটা অনেক বেশি সফল হবে।

ইনসপেক্টর বলল, আর একটা প্রশ্ন করব ওয়েম্যান। আপনি শেষবারের মতো কখন লেডি স্টাবসকে দেখেছিলেন?

হ্যাঁ, তা হবে সাড়ে তিনটে অথবা পৌনে চারটের সময়। জানালো ওয়েম্যান।

তার সম্পর্কে আপনি যদি কিছু বলেন?

জানতে চাইলো ব্লান্ড।

রুটির কোন দিকে মাখন লাগাতে হয় তা তিনি বেশ ভালোভাবেই জানেন। এটাই মাত্র আমার বক্তব্য বলল ওয়েম্যান।

একথা কি ঠিক মানসিকভাবে তার বেশি গভীরতা ছিল না? বলল ব্লান্ড।

আপনি মানসিকভাবে বলতে কি বোঝাতে চাইছেন, সেটা তার উপর নির্ভর করছে? মাইকেল বলল, তার স্নায়ুকোষগুলি অত্যাধিক সক্রিয় ছিলো যেটা অন্য কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় না, আমি তো সেটাই বলব। আমার সঙ্গে আপনার প্রয়োজন কি শেষ হয়েছে?

ইনসপেক্টর কিছুক্ষণ তাকে পর্যবেক্ষণ করল, মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তারপর মাইকেল ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

এবার হপকিন্স-এর উদ্দেশ্যে ব্লান্ড প্রশ্ন করলো, আচ্ছা হপকিন্স লেডি স্টাবস আর মাইকেল ওয়েম্যানের সঙ্গে কিরকম সম্পর্ক বলে তোমার ধারণা?

লেডি স্টাবস মাইকেলের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন হয়তো এটাই আমার মনের হয়। আবার বলল ব্লান্ড, স্যার জর্জ ও তার স্ত্রীর সম্বন্ধে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ধারণা কি বলে?

তিনি সহজসিধা মানসিক ভারসাম্যহীন লোক।

হতে পারেন, জনশ্রুতি আছে, হপকিন্স বংল।

তুমি কি চিন্তা করছ আমি জানি, এটা কি তোমারও বিচক্ষণ মতামত? বললেন ব্লান্ড।

 অবশ্য আমি সেটাই বলবো, জানালো হপকিন্স।

স্যার জর্জ কি পছন্দসই জানতে চাইলেন ব্লান্ড। ভালোমন্দ মিশিয়ে তিনি বেশ পছন্দ করার মতো মানুষ জানালো কনস্টেবল। তিনি ভালো স্পোর্টসম্যান, ক্ষেতখামার সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা আছে। তাকে অনেক সাহায্য করেন বৃদ্ধ লেডি।

এই বৃদ্ধ লেডি মহিলাটি কে? জানতে চাইলো ব্লান্ড।

হপকিন্স বললো মিসেস ফোলিয়াট। শুনেছি একসময় ফোলিয়াটরা এই জায়গার মালিক ছিল, এমন কি লেডি স্টাবস বিয়ের আগেই তাকে চিনতো, স্যার জর্জকে এই জায়গাটা কিনতে মিসেস ফোলিয়াটই জোর করেছিলেন। ব্লান্ড বললো, আমি মিসেস ফোলিয়াট-এর সঙ্গে কথা বলতে চাই।

ও সুন্দর বিচক্ষণ মহিলা! যদি এখানে কিছু ঘটে যায়, তা তিনি পূর্বেই জানতে পারেন। জানালো হপকিন্স।

ইনসপেক্টর জানালো, আমাকে তার সঙ্গে কথা বলতেই হবে। এখন তিনি কোথায় কে জানে-ওর সম্বন্ধে আমার অবাক লাগে।

মিসেস ফোলিয়াট কথা বলছিল পোয়ারোর সঙ্গে সেই সময় বিরাট ড্রয়িংরুমে। ফোলিয়াট আক্ষেপ জানাচ্ছিল, বেচারি মারলিন এত অল্প বয়েস, অর্থাৎসবে জীবন শুধু-পোয়ারো তাকে নিরীক্ষণ করছিল কৌতূহলের সঙ্গে। মনে হচ্ছে ভদ্রমহিলার বয়স যেন দশবছর বেড়ে গেছে, বিকালে সেই মর্মন্তুদ ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর।

সেই পৃথিবীটা বড় নিষ্ঠুর, এই কথাটা আপনি আমাকে গতকালই বলেছিলেন ম্যাডাম। মিসেস ফোলিয়েট চমকেউঠে বলল, তাই বলেছিলাম নাকি? অবশ্য খুবই নির্মম সত্য কথাটা। অবশ্য এরকম ঘটনা ঘটতে পারে আমি ভাবতে পারিনি।

আপনার তাহলে মনে হয়েছিল, কিছু একটা ঘটতে পারে বলে? এরকম আভাস লেডি স্টাবসও আজ সকালে দিয়েছিলেন, বললো পোয়ারো।

আমাকে আর ওর কথা বলবেন না, হ্যাঁ হ্যাটি বলেছিল, আমি ওর কথা আর ভাবতেই পারি না। বলল মিসেস ফোলিয়াট। আবার জানতে চাইলো সে–আচ্ছা কি যেন বলছিল ও, খারাপ-এর ব্যাপারে?

তিনি বলছিলেন ওর খুড়তুতো ভাই ইটিয়েন ডি সৌউসা সম্পর্কে। খুবই জঘন্য নাকি ছেলেটা! তিনি ভয় করেন ওকে–জানালো পোয়ারো।

ইটিয়েন ডি সৌউসা, কে এই লোকটি? ফেরিঘাটের পথ দিয়ে সে এসেছিলো, রঙ কালো কিন্তু সুদর্শন? আমার তখনই মনে হয়েছিল এই লোকটা কে?

সেই লোকটাই ডি সৌউসা ম্যাডাম, জানালো পোয়ারো।

ভীষণ বালিকা প্রকৃতির হ্যাটি, ও নিজেই জানে না ও কি বলছে, মঁসিয়ে পোয়ারো ওর কথায় কর্ণপাত করবেন না, বলল ফোলিয়াট।

লেডি স্টাবসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, একথা কি আপনি জানেন ম্যাডাম, এবং হয়তো কখনো আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জানালো পোয়ারো।

তার দোষী বিবেকের জন্যই কি সে পালিয়ে গেছে? এটা আপনি মনে করেন?

আপনার মতামত কি? জানতে চাইলো পোয়ারো।

না, সেরকম মেয়েই নয় হ্যাটি। রাগে উত্তেজনায় মিসেস ফোলিয়াট বলে উঠলো, আমি চাই না ওর সম্বন্ধে এরকম কথা কেউ শুনুক। কখনো কাউকে খুন করতে পারে না।

ভীষণভাবে অবাক হলো পোয়ারো। ইনসপেক্টর ব্লান্ড আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান, ম্যাডাম। এই সময় ড্রয়িংরুমে ঢুকে কনস্টেবল হপকিন্স জানালো মিসেস ফোলিয়াটকে, আপনি কি অনুগ্রহ করে যাবেন?

অবশ্যই যাব একথা বলে ফোলিয়াট হপকিন্সকে অনুসরণ করলো।

মিসেস ফোলিয়াট আপনাকে চিন্তায় ফেলে দেওয়ার জন্য আমি দুঃখিত, ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ব্লান্ড বিনীতভাবে ফোলিয়াটকে জানাল। এখানকার প্রতিবেশীদের সম্বন্ধে হয়তো আপনি ওয়াকিবহাল এটাই ধারণা। সেইজন্য আমি আশা করছি যে, আপনি আমাদের সাহায্য করতে পারবেন। সে আবার বলল, একটু থেমে, টাকার পরিবার অর্থাৎ সেই মেয়েটির পরিবার সম্বন্ধে আপনি কিছু জানেন নিশ্চয়ই।

হা নিশ্চয়ই জানি, ফোলিয়াট উত্তর দিল, তারা এস্টেটের ভাড়াটে সবসময়ের জন্যই। মেয়েটি ছিল বিরাট পরিবারের ছোট মেয়ে, আমাদের বড় মালি ছিল তার বড় ভাই। তার বিয়ে হয় আলফ্রেড টাকারের সঙ্গে। খামার বাড়ির শ্রমিক ছিলো আলফ্রেড। যদিও নির্বোধ তবুও খুব পছন্দসই মানুষ সে।

আপনি বেশ ভালোভাবেই জানেন বুঝতে পারছি। মেয়েটির পরিবারের সকলকে। আচ্ছা, কি কারণ থাকতে পারে মেয়েটির খুন হওয়ার পেছনে সেটা আপনি জানেন কি মিসেস ফোলিয়াট? প্রশ্ন রাখল ব্লান্ড।

ইনসপেক্টর, তা আমি বলতে পারব না। এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা, বুঝতে পারলেন? মেয়েটির বয়ফ্রেণ্ড বা ঐরকমের কিছু ছিল না, বলল ফোলিয়াট।

তাহলে এবার বলুন, কে কে অংশগ্রহণ করেছিল এই মাৰ্ডরহান্টে? প্রশ্ন করল ইনসপেক্টর ব্লান্ড। আমি আগে কখনো তার সাথে মিলিত হইনি মিসেস অলিভার যিনি। অবশ্য আমার মতে তিনি গোয়েন্দা ঔপন্যাসিক যেমন হওয়া উচিত তিনি তেমন নন। অবশ্য খুব হতাশ হয়ে সেই সাহায্যকারী ক্যাপ্টেন ওয়ারবারটন, তার খবর কি? জানতে চাইলো ব্লান্ড।

আমি অবশ্য তার পক্ষে কোনো কারণ দেখিনা, যে মারলিন টাকারকে সে খুন করবে। আর সে কেনই বা খুন করতে যাবে বলুন? অবশ্য তাকে আমি বিশেষ একটা পছন্দ করি না। খুন সে করতে পারে না। এটাই আমি বলব।

আরও একটা কথা, সে লনেই ছিলো আজ সম্পূর্ণ বিকালবেলায়, জানালো ফোলিয়াট।

ইনসপেক্টর মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। তাহলে লেগিরা? আপনি তাদের সম্পর্কে কতটুকু জানেন, মিসেস ফোলিয়াট?

আপাতদৃষ্টিতে তো মনে হয় ওরা চমৎকার দম্পতি, ওরা মিল কটেজ ভাড়া নিয়ে মাস দু-এক হলো এখানে এসেছে। খুবই প্রাণচঞ্চল মিঃ লেগি। মন্তব্য রাখলো মিসেস ফোলিয়াট।

ইনসপেক্টর বলল, আমি জানতে পেরেছি, খুবই আকর্ষণীয় এবং সুন্দরী মহিলা মিসেস লেগি। স্যার জর্জ কি কোনো সময়ে তার প্রতি দুর্বলতা বোধ করতে পারেন এটা কি আপনার মনে হয় না।

মিসেস ফোলিয়াট আশ্চর্যবোধ করল। না না, কখনোই স্যার জর্জ সেরকম লোকই নন।

সবসময় তিনি ব্যস্ত থাকেন তার কাজ নিয়ে। এছাড়াও তিনি খুবই ভালোবাসেন তার স্ত্রীকে। তিনি মোটেই অসৎ প্রকৃতির লোক নন। তিনি বললেন।

আচ্ছা আপনি কি কিছু জানাতে পারেন লেডি স্টাবস এবং মিঃ লেগির সম্পর্কে? ব্লান্ড জিজ্ঞাসা করল।

মাথা নেড়ে ফোলিয়াট জানালেন, না, স্থিরভাবে কিছু বলতে পারব না।

ইনসপেক্টর বললেন, যাক এ তো গেল স্টারস দম্পতির অন্দরমহলের খবর, এবার বাইরের কিছু খবর জানা দরকার। ধরা যাক মিস ব্রেউইস-এর কথা, খুব দক্ষ সেক্রেটারি উনি, স্যার জর্জের কাছে একথা আমি শুনেছি। উনি কি স্যার জর্জের বিয়ের আগে থেকেই সেক্রেটারি ছিলেন?

হা যদিও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না তবুও আমারও তাই মনে হয়। জানালো ফোলিয়াট।

মিস ব্রেউইস হয়তো খুব একটা পছন্দ করতেন না লেডি স্টাকসকে। তাই নয় কি? আচ্ছা মিস ব্রেউইসকে কি লেডি স্টাবস মারলিনের জন্য বোট-হাউসে কেক এবং ফল নিয়ে যেতে বলেছিলেন?

মিসেস ফোলিয়াট কিঞ্চিৎ আশ্চর্য বোধ করলো।

মিস ব্রেউইস নিজের ইচ্ছানুযায়ী কেক আর ফল সংগ্রহ করে বলেন, তিনি মারলিনের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন, আমার তো তাই মনে হয়। এবং ফোলিয়েট জানালো, তাকে কেউ বোট-হাউসে যেতে বলেনি।

আচ্ছা তাহলে এটাই? মিসেস ফোলিয়াট আপনাকে ধন্যবাদ এই সহযোগিতার জন্য, লেডি স্টাবস খুব শীঘ্রই প্রত্যাবর্তন করুক এটাই আমাদের কাম্য। বললো মিঃ ব্লান্ড। সত্যিই সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া মিসেস লেডি স্টাবস–তার লাল চুল। ঠিক এই সময় একজন দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করল। আপনি নাকি আমার খোঁজ করছেন ইনসপেক্টর মিসেস লেগি বলল। মিসেস ফোলিয়াট তার সঙ্গে রান্ড-এর পরিচয় করিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

আচ্ছা আপনার টেন্টে যারা তরুণ, ভবিষ্যৎবাণী জানার জন্য ভিড় করেছিল–আপনার এই আধঘণ্টা অনুপস্থিতিতে তাদের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো মিসেস লেগি? জানতে চাইলে ইনসপেক্টর ব্লান্ড।

হ্যাঁ, সেইজন্যই আমি একটা কার্ড ঝুলিয়ে রেখে গিয়েছিলাম টেন্টের বাইরে যে আমি আবার সাড়ে চারটেয় ফিরে আসছি। বললো মিসেস লেগি।

তার প্যাডে নোট করে রাখল ইনসপেক্টর ব্লান্ড, মিসেস লেগির বক্তব্যটা। তারপর মিসেস লেগির দিকে ফিরে তাকে ধন্যবাদ জানালো।

দরজা খুলে সঙ্গে সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মিসেস লেগির।

ইনসপেক্টর ঘরের শিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত সে নাকি টেন্টে ছিলো, একথা মিসেস লেগি বলেছে। অপরপক্ষে মিসেস ফোলিয়াট এর কাছে জানা গেছে, ফোলিয়াট বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারেট পর্যন্ত টি-টেন্টে সাহায্য করেছিলো, সেই আধঘণ্টা সময়ের মধ্যে সে মিসেস লেগিকে দেখতে পায়নি। এবার একটু থামল ইনসপেক্টর। আবার বলে যেতে লাগলো, বোট-হাউসে মারলিনের জন্য ফল আর কেক নিয়ে গিয়েছিল মিস ব্রেউইস, লেডি স্টাবস-এর নির্দেশ অনুসারে, একথা ব্রেউইস বলেছে। অথচ মিসেস ফোলিয়াটের বক্তব্য অনুযায়ী মিস ব্রেউইস স্বইচ্ছায় বোট-হাউসে গিয়েছিল ঐগুলি নিয়ে। আবার লেডি স্টাবস-এর পক্ষে একাজ করা অবিশ্বাস্য এবং স্বভাববিরুদ্ধে, মাইকেল ওয়েম্যান-এর বক্তব্য।

পোয়ারো একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে বলল, কারো সঙ্গে কারো বক্তব্যের মিল নেই। অবশ্য এটাই সবসময় হয়ে থাকে। অতএব মিঃ ব্লান্ড, আপনি কি সিদ্ধান্ত নিলেন?

গভীর স্বরে ব্লান্ড বললো, আমার এরকম মনে হয় যে, মারলিন টাকার এমন কোনো দৃশ্য দেখে ফেলেছিলো যে, সে জানতই, তাকে খুন হতেই হবে।

পোয়ারো বলল, আমি আপনার ধারাণার বিপক্ষে যাচ্ছি না। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মারলিন কি দেখেছিলো?

ইনসপেক্টর বললো, হয়তো মারলিন কোনো খুনের দৃশ্য অথবা খুনীকে দেখেছিল?

পোয়ারো প্রশ্ন করল, খুন? কাকে করা হয়েছিল?

আপনার কি মনে হয় মিঃ পোয়ারো? লেডি স্টাবস জীবিত অথবা মৃত? জানতে চাইলো ব্লান্ড।

উত্তর দেবার পূর্বে কিছু একটা চিন্তা করলো পোয়ারো। তারপর বলল, লেডি স্টাবস মৃত বলেই আমার ধারণা। তাহলে শুনুন একথা আমি বলছি কেন? লেডি স্টাবস যে মৃত একথা মিসেস ফোলিয়াট মনে করেন। তিনি ভান করেই বলুন অথবা সত্যিই বলুন, মিসেস ফোলিয়াট বিশ্বাস করে লেডি স্টাবস মৃত। হয়তো তা আমরা জানি না, সেটা মিসেস ফোলিয়াট-এর পক্ষে জানা সহজ।

এরকুল পোয়ারো পরদিন সকালবেলায় ব্রেকফাস্ট-এর টেবিলের সামনে এসে বসলো। অলিভার তখনো অনুপস্থিত ছিলো। পূর্বদিনের দুর্ঘটনার ক্ষত এখনো সে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কেবলমাত্র এক কাপ কফি পান করে মাইকেল ওয়েম্যান বাইরে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে কেবলমাত্র স্যার জর্জ এবং তার বিশ্বাসী-সহকারিণী মিস ব্রেউইসকে হাজির থাকতে দেখা গেল।

সম্ভাষণ জানালো স্যার জর্জ, সুপ্রভাত সঁসিয়ে পোয়ারো, সমস্ত ব্যাপারটা যেন কেমন অবিশ্বাস্য। কোথায় এখন আছে হ্যাটি? বললো স্যার জর্জ।

মিসেস ব্রেউইস বলল, ইনস্টিটিউটে তদন্ত হবে আগামী বৃহস্পতিবার।

পোয়ারার দিকে তাকিয়ে উত্তেজিতভাবে স্যার জর্জ বললো, তদন্ত! তার মানে? কিসের তদন্ত হবে? আচ্ছা মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কি ভাবছেন সে মৃত, তাই নাকি?

স্যার জর্জকে পোয়ারো বললো, ওসব চিন্তা মাথায় আনার এখন সময় নয়, অনেক দেরি আছে।

স্যার জর্জ বললো, ঠিকই আছে সে আপনি এরকম ভাবছেন তো, আমিও এই কথাই বলছি, বলে নিজের মনে মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেল জর্জ।

পোয়ারো ভাবতে লাগল। টোস্টে মাখন লাগাবার সময়, যদি সন্দেহজনকভাবে স্ত্রী খুন হয়, তবে স্বভাবতই স্বামীকে সন্দেহ করা হয়ে থাকে। আবার একইভাবে স্বামী খুন হলে স্ত্রীকে সন্দেহ করা হয়। অথচ এক্ষেত্রে মনেই হয় না যে তার স্ত্রীকে খুন করতে পারে স্যার জর্জ। যতটুকু সে জেনেছে এখনো পর্যন্ত, স্যার জর্জ সম্বন্ধে ভাবলো পোয়ারো–তার থেকে মনে হয় স্ত্রীকে জর্জ খুবই ভালোবাসে। খুবই মর্মাহত হয়েছে জর্জ তার স্ত্রীর নিরুদ্দেশ হওয়ার ব্যাপারে। খুনের যা ধরন এতে পোয়ারোর মনে হয় এখানে দুটি খুন হয়েছে।

অকস্মাৎ বলে উঠল মিস ব্রেউইস পোয়ারার চিন্তায় বাধা দিয়ে, ওদের বিয়েটা কি দুর্ভাগ্যজনক, একথা কি আপনার মনে হয় সঁসিয়ে পোয়ারো?

পোয়ারো উত্তর দিল, নিশ্চয়ই দুর্ভাগ্যজনক, বিশেষ খারাপ প্রভাব ছিলো স্যার জর্জ-এর উপর লেডি স্টাবস-এর। যেমন লেডি স্টাবস-এর প্রত্যাশা ছিল কেবল স্বামীর কাছ থেকে মূল্যবান উপহার পাওয়া–বেশি করে, অনেক বেশি করে।

ঠিকই, উনি যে উচ্চাকাঙ্খী স্যার জর্জকে দেখে তা মনে হয় না। বলল মিস ব্রেউইস। অতএব যদি তিনি মনে করতেন অনেক কিছু করতে পারতেন। মঁসিয়ে পোয়ারো, সত্যিই তিনি একজন উল্লেখযোগ্য মানুষ। অথচ কখনো তাকে বুঝতে পারেননি তার স্ত্রী। যে মেসিন থেকে তার কোট এবং দামী দামী অলঙ্কার বেরিয়ে আসেমিসেস স্টাব স্যার জর্জকে সেইরকম একটা মেসিন মনে করতেন। অথচ অন্য কোনো মেয়েকে যদি তিনি বিয়ে করতেন তবে অবশ্যই সেই মেয়ে তার যোগ্যতার প্রশংসা করতো।…আবেগে মিস ব্রেউইস-এর কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে গেলো। পোয়ারো মেয়েটির দিকে তাকালো, তার নিয়োগ কর্তার প্রেমে পড়ে গেছে মিস ব্রেউইস, তার আবেগ ভরা কথা, ভাব ভঙ্গীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বোঝা যাচ্ছে।

চোখের জল ফেলে বলল মিস ব্রেউইস, তিনিও ঠিক এরকম, ধূর্ত বেড়াল-এর মতো।

আপনি বললেন, তিনিও ঠিক একইরকম অর্থাৎ লেডি স্টাবস সম্পর্কে। পোয়ারো বলল, আচ্ছা তিনি এখনও আছেন অথবা না?

না না, কখনই তিনি মৃত নন। মিস ব্রেউইস তীক্ষ্ণ স্বরে বলল–তিনি অন্য কোনো লোকের সঙ্গে চলে গেছেন, এটাই আমার ধারণা, অবশ্যই তিনি এটা করেছেন, তিনি ঠিক এই ধরনেরই মেয়ে।

পোয়ারো বলল, এটা কি সম্ভব, হয়তো বা সম্ভব হতে পারে।

এটা শুধু এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়, বললো মিস ব্রেউইস। অবশ্য স্যার জর্জ সেটা ভাবেন না।

পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, অপর কোনো পুরুষের সঙ্গে কি তার সংস্রব আছে?

সর্বনাশ, তিনি অত্যন্ত চতুর মহিলা, বলল মিস ব্রেউইস। যেমন মনে করুন, তিনি সবরকম চেষ্টা করেছেন মাইকেল ওয়েম্যানকে বোকা বানানোর জন্য। তিনি ক্যামেলিয়া গার্ডেনে যান বছরের এই সময়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে, তিনি যেন টেনিস প্যাভেলিয়নে আগ্রহী এমন ভাব দেখান।

এটা শুনেছি, স্যার জর্জ অনেক কিছু করতে পারেন তার স্ত্রীকে খুশী করার জন্য, বলল পোয়ারো। অবশ্যই না, কোনো খেলা এমন কি টেনিসেও তার কোনো আগ্রহ নেই। স্রেফ বোকা বানাবার জন্য, মাইকেল ওয়েম্যানকে তার কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এই রকম আর কি। হয়তো পুরোপুরি মাইকেলকে তিনি আয়ত্ব করতেন, যদি না তার ফ্রাই বানাবার জন্য অন্য কোনো মাছ মাইকেলের থাকত–বলল ব্রেউইস।

এমন ভাব দেখালো পোয়ারো, যেন উত্তরটা মিলে গেছে। বলল, আচ্ছা তাহলে মঁসিয়ে ওয়েম্যানের ফ্রাই বানাবার অন্য মাছ আছে?

মিসেস লেগি হল তার অন্য দোসর। স্যার জর্জের কাছে এই মহিলাই তার জন্য সুপারিশ করেছিল, বলল মিস ব্রেউইস। মিসেস লেগি বিয়ের পূর্বে থেকেই তাকে চিনত। জানেন, তিনি ছবিও আঁকতেন।

আন্দাজে পোয়ারো বলল, মনে হয় মেয়েটি আকর্ষণীয়া ও বুদ্ধিমতী তরুণী। সে আজ অনেক উন্নতি করতে পারত বিয়ে না করলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাও আছে আমার মনে হয়। বলল মিস ব্রেউইস। লেডি স্টাবস বেশ ভালোরকম সময় কাটিয়েছে তার সঙ্গে, যখন থেকে মাইকেল ওয়েম্যান এখানে এসেছে। আমার ধারণা মিসেস লেগির প্রেম ছিল মাইকেল-এর সঙ্গে, আলেক লেগির সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পূর্ব। অর্থাৎ আপনার কথামতো সে কিন্তু ওয়েম্যান নন যদি লেডি স্টাবস কারো সঙ্গে চলে গিয়ে থাকেন। কারণ এখনো এখানেই আছেন ওয়েম্যান, পোয়ারো বলল।

মিস ব্রেউইস বলল, আমি নিঃসন্দেহ যে, তিনি অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এইরকমভাবে এর আগেও তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন।

পোয়ারো ভাবতে লাগল মিস ব্রেউইসের দিকে তাকিয়ে। এই মহিলার কথা বিশ্বাস করা যায় কিনা। এটাই তার আশঙ্কা। কারণ মিসেস ফোলিয়াট অনেক বেশি জানে মিস ব্রেউইস-এর থেকে।

ঘরে প্রবেশ করল এই সময় মিসেস মাস্টারটন, তাকে দেখে সুপ্রভাত জানাল মিস ব্রেউইস।

 মিসেস মাস্টারটন পোয়ারোকে দেখতে পেয়ে বলল, মঁসিয়ে পোয়ারো, সুপ্রভাত, আচ্ছা। শুনলাম তদন্ত হবে নাকি বৃহস্পতিবার? মঁসিয়ে পোয়ারো আপনার সঙ্গে সামান্য কিছু কথা বলতে চাই।

পোয়ারো উঠে দাঁড়িয়ে তাকে সাদর অর্ভ্যথনা জানিয়ে বলল, ম্যাডাম, অবশ্যই–সেটা তো খুব ভালো কথা।

মিস ব্রেউইস ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, মিসেস মাস্টারটন তখন একটা চেয়ার নিয়ে বসল।

কোনো মোটিভ ব্যতিরেকেই, বেচারী মারলিন টাকারকে কোনো বিকৃত মস্তিষ্কের লোক খুন করে থাকবে। মন্তব্য জানালো মিসেস মাস্টারটন, আর কোনো ভূমিকা না রেখেই শুরু করে দিল সে, আমার মনে হয় না মঁসিয়ে পোয়ারো, লেডি স্টাবস-এর কোনো পরিণত বুদ্ধি আছে, যদি কোনো অপরিচিত লোকও বলেন তাকে, ম্যাডাম, চলুন একটু ঘুরে আসি ঐ অরণ্যে, তাহলেই সে বেরিয়ে পড়বে তার সঙ্গে।

পোয়ারো তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এটাই মনে করেন তাহলে, মৃতদেহ এই এস্টেটেই আছে? ঠিক তাই, এটাই আমি মনে করি মঁসিয়ে পোয়ারো, জানালো মিসেস মাস্টারটন।

পোয়ারো বলল, এর সম্ভাবনা খুব বেশি, ম্যাডাম আপনি ঠিকই বলেছেন।

মিসেস মাস্টারটন বলল, অবশ্যই আমার ধারণা ঠিক। কিন্তু এটাই খুব অস্বস্তিকর লাগছে আমার কাছে যে, খুনী এখনও আমাদের মধ্যে মিশে আছে। বুঝতে পারলেন মঁসিয়ে পোয়ারো।

ম্যাডাম, এক্ষেত্রে আমার একটা বক্তব্য আছে, কি করেই বা বোট-হাউসে প্রবেশের অনুমতি পেলো একজন আগন্তুক? তার তো চাবির প্রয়োজন ছিল? বলল পোয়ারো।

ও এই কথা। সেটা তো খুবই সহজ, মেয়েটি নিশ্চয়ই বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো, বলল মিসেস মাস্টারটন। হয়তো ঘরের মধ্যে বসে থেকে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো মেয়েটি আর সেই সময় হয়তো সে হ্যাটি স্টাকসকে খুন করতে দেখে থাকবে, তার ফলে খুনী তাকে খুন করতে বাধ্য হয়েছে।

শান্তভাবে মাথা নাড়লো পোয়ারো। তর্ক করার প্রয়োজন নেই মিসেস মাস্টারটনের সঙ্গে। একটা উল্লেখযোগ্য দিকে নজর পড়েনি মিসেস মাস্টারটনের। যদি সত্যিই মারলিন টাকার বোট-হাউসের বাইরে খুন হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই খুনী মার্ডার হান্টের পরিকল্পনা জানত, তা না হলে, মেয়েটির মৃতদেহটি আবার বোট-হাউসে রেখে, তার গলায় দড়ির ফাস পরিয়ে দিয়েছিল কেন?

পোয়ারো সে কথা না বলে বলল, তার স্ত্রী এখনো বেঁচে আছেন, এটাই স্যার জর্জ বিশ্বাস করেন। তাদের স্ত্রী সত্যই মৃত, একথা সব স্বামীরাই ভেবে থাকে, তারা বিশ্বাস করতে চায় না। এছাড়াও তার স্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত আকর্ষণ ছিলো স্যার জর্জের, জানালো মিসেস মাস্টারটন।

মিসেস মাস্টারটন, এ ব্যাপারে আপনার কথা বলা দরকার চীফ কনস্টেবলের সঙ্গে। ব্লান্ড হাউন্ডের ব্যাপারে বলা প্রয়োজন, জানালো পোয়ারো।

মিসেস মাস্টারটন সঙ্গে সঙ্গে হেসে উঠলো, আমি নিজে কতকটা ব্লান্ড হাউণ্ড-এর মতো, এটা লোকে ভাবে জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো? আর আপনিও তাই ভাবছেন নিশ্চয়, আমি বাজী রেখে বলতে পারি।

পোয়ারো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো মিসেস মাস্টারটন চলে যেতেই। সে ঘুরে বেড়াতে লাগলো ঘন জঙ্গলে, অরণ্যপথে, তার যে সকল জায়গা অপ্রকাশিত সেখানেই নজর বেশি। একটা ফলির ভেতর অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে প্রবেশ করলো পোয়ারো। বড় নিস্তব্ধ, বড় নির্জন জায়গাটা, হেলমাউথের নদীর ধারে ঘাসের উপর একটা ফলি তৈরির কথা বলেছিল মাইকেল ওয়েম্যান।

ইটিয়েন ডি সৌউসা, হেলমাউথ, ইয়ট এসপেরান্স সমস্ত কিছু যেন কি রকম ধরনের, অবশ্যই পোয়ারোর কাছে সেটা স্পষ্ট নয়। হঠাৎ পোয়ারোর নজরে চকচকে একটা জিনিস দেখা দিলো, তৎক্ষণাৎ সে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিলো সেটা। ভ্রু কুঁচকে সেটার দিকে তাকাতেই তার মনে একটা ছবি ভেসে উঠলো। এটা ছিল একটা সোনার ব্রেসলেট। তার মনে পড়ল, ম্যাডাম জ্বলেকা ওরফে শেলি লেগি। আবার সে যেন টেন্টে গিয়ে বসেছে লোকের ভবিষ্যৎ বলছে সেখানে বসে, আর এই ব্রেসলেটটা শোভা পাচ্ছে তার অঙ্গে, অতএব?

তাহলে কি এখানে, এই ফলিতে এসে বসেছিল শেলি লেগি। আর এই দামী সোনার টুকরোটা তার ব্রেসলেট থেকে খুলে পড়ে গেছে? হয়তো সে লক্ষ্য করেনি। গতকাল বিকেলের ঘটনাটা বোধহয়। এইসব আলোড়ন তুলল পোয়ারোর মনে। ইতিমধ্যে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলোলা সে। একটা ছায়ামূর্তি ফলির সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো। তরুণ এক যুবক, মনটা তার অস্বাভাবিকভাবে বিক্ষিপ্ত একথা পোয়ারোর মনে হল। সে বলল, মাপ করবেন, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, যুবকটির কথায় বিদেশী টান।

পোয়ারো শান্তভাবে হেসে বলল, আপনি এখানে অনাহুত, এটাই আমার আশঙ্কা, হোস্টেল থেকে কি আসছেন আপনি?

যুবকটি বলল, হ্যাঁ, রাস্তা শর্টকাট করার জন্য বনের ভেতর দিয়ে আসছিলাম, নদীর জেটিতে যাবো বলে।

এখান দিয়ে কোনো পথ নেই, আপনি যে পথে এসেছিলেন, সেই পথ দিয়েই ফিরে যেতে হবে আপনাকে, পোয়ারো তাকে বলল।

মাথা নিচু করে চলে যাবার সময় যুবকটি বললো, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। ফিরে যেতে থাকে পোয়ারো ফলি থেকে বেরিয়ে এসে। পথ চলতে চলতে সে ভাবতে লাগলো, ভুল করলাম নাকি আমি? তবে কি আমি খুনীকে দেখলাম? স্বগতভাবেই বললো সে। গতকাল উৎসবে এই যুবকটি অবশ্যই উপস্থিত ছিলো। কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো সে মনে হয়। নিজেকেই সে প্রশ্ন করলো, কার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো আর কি জন্যই বা?