২. পরের দিন হেনরী

পরের দিন হেনরী কিছু ছেলে এবং ক্লারেন্সকে নিয়ে হাজির হল। ওদের সঙ্গে বাগানে এসে ঘুরতে ঘুরতে অনেক কথা হল। হেনরী বলল, আপনি কি যেতে পারেন সেখানে পিপিসিতে যেখানে অনেক বৃদ্ধলোক আছে যারা আপনাকে সেই সময়কার নানা ঘটনার কথা বলতে পারে।

ট্রুপেন্স পিপিসি শব্দটি কি জানতে চাইল। তখন সেটির পুরো অর্থ করে বুঝিয়ে দিল। অর্থাৎ-পেনসনার্স; প্যালেস ক্লাব। ট্রুপেন্স বিশ্বাস করতে পারল না যে, এইরকম একটা ক্লাব থাকতে পারে। তবুও তাদের বলে দিল সেদিনই বিকেলে নিয়ে যাবার জন্য। ট্রুপেন্স অ্যালবার্টকে ক্লাবটির কোন অস্তিত্ব আছে কি না সেটা জিজ্ঞাসা করল।

ওখানে বুড়ো পেনসনাররা থাকে। জায়গাটা খুব একটা বেশী দূর নয়, গ্রামেরই প্রান্তে।

সেই দিনই বিকেলে ট্রুপেন্স ছেলেগুলোকে সঙ্গে নিয়ে পেনসনের প্যালেস ক্লাবে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে তেমন কোন সুবিধা হল না। সেখানকার বৃদ্ধ মানুষদের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা হল কিন্তু কাজের কথা হল না। সবই প্রায় অপ্রাসঙ্গিক।

বাড়ি ফিরে আসতেই টমি বলল, তোমাকে প্রচণ্ড ক্লান্ত মনে হচ্ছে। কি করছিলে যার জন্য এই রকম লাগছে? তোমাকে তো বিধ্বস্তও মনে হচ্ছে?

কোন রকম কায়দা বা ভণিতা না করে ট্রুপেন্স বলল, পিপিসি কি জানো?

টমি বলল, এটার নাম তো আমি কোনদিন শুনিনি। তখন ট্রুপেন্স হেনরীদের সঙ্গে সেদিন বিকেলে যে পেনসনার্স প্যালেস ক্লাবে গিয়েছিল সেটি বলল।

ট্রুপেন্স বলল, সেখানে একই সঙ্গে ছজন বুড়ো কথা বলছিল। ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না তারা কি বলতে চাইছে। বেশীরভাগ লোকই ঠিকমত কথা বলতে পারছিল না। তারা এক এক জন এক এক ধরনের কথা বলছিল। তবে মনে হচ্ছে ওদের কথা শুনে, কোন একটা ব্যাপারে অনেক গল্পকথা প্রচলিত আছে। এখন কোন ঘটনা যেটির গোপনীয়তা ১৯১৪ সালের যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিংবা ধরা যাক তারও আগে।

এর অনেককিছু আমরা আগেই জেনেছি। কিন্তু এত সব গল্পকথার মধ্যে কোনটা সঠিক বলে তুমি ধরে নেবে?

হ্যাঁ, সত্য তো একটা থাকবেই। তার মধ্যে থেকেই আমাদের খুঁজে বার করতে হবে।

 আমরা জানি না আমরা কি করব। তবে আমরা আজ একটু সাহায্য পেয়েছি।

 সেটা কি? সেটা হল আদমসুমারি।

কি বললে, আদমসুমারি।

বিশেষ একটা বছরে জনসংখ্যার একটা হিসাব আছে। সেটার একটা লিখিত হিসাব ছিল। আমি সেটা পেয়েছি। আর এই বাড়িটাতে অনেক লোক বাস করে গেছে, পারকিনসন পরিবার সমেত।

তুমি কিভাবে সমস্ত কিছু খুঁজে পেলে। মিস কলডনের সাহায্যে সন্ধানের নানা পদ্ধতিতে, ট্রুপেন্স বলল। একজন কেউ লিখে রেখে গিয়েছিল। তবে মনে হয় এই বাড়িতে বসবাস করত তাদের মধ্যে কেউ একজন। সেইজন্য আদমসুমারির রেজিস্ট্রারে একটু চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম, এই বাড়িতে কেউ রাত কাটালে এই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমার ঠিক চেনা নেই। কিন্তু আমার জানাশোনা লোকজনের মাধ্যমেই তাদের চিনে নিতে পারি। সেইজন্য শব্দটা যতটা সম্ভব নামের তালিকা তৈরী করে ফেলি। পরিকল্পনা ভালোই, ট্রুপেন্স জানালো।

***

ট্রুপেন্স কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে রাখল।

টমি বলল কি বার করার চেষ্টা করছ। মনে হচ্ছে কাপড় কাঁচার বিলের মত কিছু।

ট্রুপেন্স বলল, এটা একটা ছোট নোটবই। এই বইটাতে আমাদের ব্যাপারটা লিখে রাখা হয়েছে। এটাতে আমাদের কাজের সবকিছু নোট করা আছে। কিন্তু কে এটা অন্য কাজে লাগিয়েছে। এটাতে মিসেস আণ্ডারসন কে?

মিসেস গ্রিফিন এর নাম উল্লেখ করেছিল। তাছাড়া এতে একটা বার্তা বা নোটস বলতে পার যা এতে লেখা আছে। অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ সম্বন্ধে। এবং কয়েকদিন আগে পুরানো বইগুলো ঘাটতে ঘাটতে আর একটা ব্যাপার আমার নজরে পড়ল।

টমি বলল, কি ব্যাপার? অক্সফোর্ড আর কেমব্রিজ।

টমির কথার কোন ভ্রূক্ষেপ না করে ট্রুপেন্স বলল, ভালো কথা মনে পড়েছে, ওপরের ঘরে একটা পুরানো বইতে গুঁজে রাখা একটুকরো কাগজ পেয়েছি। তাতে কি এমন লেখা আছে? টমি বলল।

ট্রুপেন্স বলল, তাতে পেনসিলে লেখা তিনটি শব্দ আছে। তিনটি ইংরেজী শব্দ হল Green, hen এবং lo৷ কিন্তু এগুলো যে কি এগুলোর যথাযথ অর্থই আমি বুঝে উঠতে পারি না। তাহলে এখন আমরা কোন অবস্থায় আছি। মিসেস গ্রিফিন, অক্সফোর্ড না কেমব্রিজ, বাইচ প্রতিযোগিতা, আদমসুমারি, স্থানীয় কিছু ঘটনা নিয়ে গল্প ইত্যাদি ইত্যাদি।

অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ শব্দ দুটো আমাকে কিছু একটা মনে করিয়ে দিতে চাইছে। আমার খুব চিন্তা লাগছে এই ব্যাপারটা নিয়ে। সেটা এখন কি হতে পারে?

ম্যাথিণ্ড?

ট্রুপেন্স বলল, ম্যাথিণ্ড নয়। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ বলে উঠল। আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা কাজ করছে। অবশ্য

অবশ্য কি টমি বলল।

তখন ট্রুপেন্স বলল, লল, গ্রীন এইগুলো আমার ভাবনার মধ্যে থাকছে, গ্রিন, হেন এবং লো। যে ভাবেই হোক এটাই হবে।

তুমি কি ব্যাপারে বলতে চাইছ, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং নৌ-প্রতিযোগিতা। গ্রিন, লো, হেন এই তিনটি শব্দের সাথে কেন তোমাকে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের নৌকা প্রতিযোগিতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে?

ট্রুপেন্স বলল, আমি তো এইগুলোর কোন অর্থ হয় বলে ভাবতে পারছি না। টমি নৌ প্রতিযোগিতার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। মনে হয় রং-এর সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে। ট্রুপেন্স বলল, আমার মনে হয় আমরা ঠিক ভাবে পড়তে পারছি না বলে এর কোন অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না। অন্যভাবে বা ঠিক ঠিক ভাবে পড়লে এর অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে।

কিরকম? শুধু তিনটি শব্দ যদি নেওয়া যায় এবং পড়া যায় যেমন–লো, হেন-গ্রিন। ট্রুপেন্স টমির চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে গেছে যে টমি বুঝতে পারছে না। বলল, কি হল বুঝতে পারছ না? অবশ্যই এটা হল লো-হেন গ্রিন। বাগানে কাজ করার দুটি চীনা যন্ত্র। পোর্সেলিনের।

কিন্তু অক্সফোর্ডটি তো ভেঙ্গে গেছে? কেমব্রিজটিতে কিন্তু এখনও রয়েছে? এই দুটি যন্ত্রের মধ্যে একটি তো লুকানো রয়েছে। আমাদের পরের কাজ হল ওটাকে পরীক্ষা করা।

পরের দিন হেনরীর বন্ধু ক্লারেন্স ট্রুপেন্সের কাছে এসে বলল, যদি সে তার কোন কাজে লাগতে পারে, তাই সে তার কাছে এসেছে। ট্রপেন্সে তাকে বলল, তোমাকে একটু খোঁজাখুঁজি করতে হবে গ্রীনরুমের জন্য।

তুমি কি কাঁচের ঘরটার কথা বলছ? কে.কে.তো?

ট্রুপেন্স বলল, ঠিক বলেছো তো। তুমি ওর নামটাও জেনে গেছে। তারপর তারা সবাই  মিলে ট্রুপেন্স, টমি, ক্লারেন্স আক কুকুর হ্যানিবলকে নিয়ে বাগানে গিয়ে হাজির হল। ট্রুপেন্স বলল কে কের চাবিটা কোথায়।

ক্লারেন্স তার কথার উত্তরে জানালো যে আমি তো জানি। যেখানে ফুলের টবগুলো থাকে। সেইখানে গোলাপ আছে। এই কথা বলে সে চাবিটা আনতে চলে গেল। এবং একটা মরচে ধরা চাবি নিয়ে ফিরে এল। চাবিটাতে মনে হয় তেল দিয়ে রাখা হয়েছে, আইজ্যাক চাবিটা নিয়ে থাকবে।

টমি বলল, এই চাবিটা আগে সহজে ঘুরত না সেই জন্য তালাটা খোলাও যেত না।

দরজাটা খোলা হল। চিনা যন্ত্রটি সেখানে রাখা ছিল। যন্ত্রটিকে দেখতে ফুলকর, আইজ্যাক বোয়া মোছা করাতে বেশ চকচকে দেখাচ্ছিল। ঘন নীল রঙের টিরও থাকা উচিৎ, ক্লারেন্স বলল। আইজ্যাক দুটোর দুটো নাম দিয়েছিল। অক্সফোর্ড আর কেমব্রিজ।

এই ব্যাপারটি কি সত্য? হ্যাঁ, ঘন নীল রং-এর অক্সফোর্ড এবং হাল্কা নীল কেমব্রীজ আর এর মধ্যে অক্সফোর্ড ভেঙ্গে গেছে।

এটার ভেতরে কি আছে? তা জানাবার জন্য ট্রুপেন্সের খুব উৎসুক। টমি বলল, তা তোমার জানার ইচ্ছা থাকলে তুমি ঘন নীল অক্সফোর্ডটির মত এটাও ভেঙ্গে ফেল।

হ্যাঁ, এটার অন্য কোন উপায় নেই। ওপর দিকে ইংরাজী বর্ণের এস ধরনের বেরিয়ে থাকা বস্তুটি দারুণ। তুমি পোষ্টবক্সের খাতে যে কোন জিনিষ লুকিয়ে রাখতে পার।

টুগেন্সের কথা শুনে টমি বলল, ব্যাপারটা তো খুব মজা। দারুণ পরিকল্পনা। এমন সুন্দর পরিকল্পনা তো হয় না। খুব সুন্দর পরিকল্পনা।

টমি জানে এটার গুলি খুলে ফেলা যায়, সেটা সবাইকে টমি জানিয়ে দিয়েছে। ট্রুপেন্স শুনে আশ্চর্য হয়ে বলল, খুলে ফেলা যায়? এই রকম কথা কে তোমাকে বলেছে।

আইজ্যাককে আমি দেখেছি খুলতে, সেই জন্যই জানি, টমি জানাল। এরপর অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করার পর যন্ত্রটি খোলা হল। যন্ত্রটির ভেতরটা ভীষণভাবে নোংরা ভেতরটা ভৰ্ত্তি জঞ্জাল। দেখলে যে ঘৃণা করছে, ক্লারেন্স বলল।

ভেতরে একটা কি যেন ঝুলছিল পেরেকের মধ্যে, সেটা খুঁজে পেয়েছে ক্লারেন্স। জিনিষটা ধরতে গিয়ে ক্লারেন্সের হাত থেকে হড়কে যাচ্ছে। আর বলছে পেয়েছি। তারপর ক্লারেন্স একটা কালো রং-এর টারপোলিনের মোড়ক তুলে ধরল।

এই রকম অবস্থায় হ্যানিবল তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে ট্রুপেন্সের কাছে বসল তারপর গর গর শব্দ করতে লাগল। কুকুরটা ওদের এতই আদরের যে ট্রুপেন্স যখন বলল, কি ব্যাপার তখন কুকুরটা আবার গর গর করতে লাগল। ট্রুপেন্স কোলে নিয়ে কুকুরটাকে আদর করতে লাগল। কুকুরটাকে লক্ষ্য করে টমি আর ট্রুপেন্সের মধ্যে অনেক কথাবার্তা চলতে লাগল। কুকুরটা এর মধ্যে ট্রুপেন্সের কাছ থেকে নেমে টমির কাছে এলো। আদরের চোটে ল্যাজ নাড়তে লাগল।

হ্যানিবল এগিয়ে এসে টারপোলিনের মোড়কটা শুকল, তারপর ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে লাগল। কুকুরের শব্দ শুনে ট্রুপেন্স বলল, দেখছো বাড়ির হয়ত কেউ এসেছে। মালিক হতে পারে। মনে হয় মিসেস্ ফেরিং। ও নাকি খুব ভালো বাগান দেখাশুনা করতে পারে। টমি দরজাটা খুলে ভেতরে গেল। কুকুরটাও ওর সঙ্গে গেল। হ্যানিবল খুব জোরে জোরে ডাকতে লাগল। প্রথমে গর গর করে ডাকতে লাগল। তারপর রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে ডাকতে লাগল।

টমি বলল, আমার মনে হয় কুকুরটা হয়তো ভেবেছে দোকানটার পেছনে কেউ বা কোন কিছু রয়েছে সেইজন্য চীৎকার করছে। হয়তো কোন ষাঁড় বা খরগোস। খরগোস দেখলে হ্যানিবল ভয় পায়। তাই খুব একটা উৎসাহ না পেলে চট করে খরগোসের পেছনে ধাওয়া করে না।

অনেক খোঁজখুঁজি করল দোকানটার চারপাশ। পাচ্ছে না বলে ঘেউ ঘেউ করে চীৎকার করতে লাগল। মাঝে মাঝে কুকুরটা টমির দিকে পেছন ফিরে তাকাতে লাগল। টমি এতসব কাণ্ডকারখানা দেখে বলল, আমার মনে হয় দোকানটার মধ্যে কোন বেড়াল আছে। এই বেড়াল মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে ঢোকে। এই কথাটা বলে ট্রুপেন্স হ্যানিবলের দিকে তাকিয়ে বলল, আয় চলে আয়।

খুঁজে পাচ্ছে না বলে হ্যানিবলকে যেন হিংস্র দেখাচ্ছিল। সে একবার ট্রুপেন্সের দিকে তাকিয়ে তারপর কেউ পেছনে সরে দাঁড়াল। তার পরক্ষণেই আবার সেইগুলোর দিকে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে ডাকতে লাগল। কিছুতেই যেন ওর রাগ কমছে না।

ওকে কিছু একটা ব্যতিব্যস্ত করছে বা বিব্রত করছে। যার জন্য কুকুরটা এতই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। হ্যানিবল ট্রুপেন্সের আর টমির দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন বলতে চাইছে তোমরা ফিরে যেও না। একটু অপেক্ষা কর তবে আমার আশঙ্কা দূর হবে।

ঠিক সেই সময় একটা শব্দ হল। দুটো তীক্ষ্ণ শব্দ। সবাই ভয় পেয়ে গেল। ট্রুপেন্স বিস্মিত কণ্ঠস্বরে বলল, হে ভগবান কেউ মনে হয় খরগোস স্বীকার করছে।

চল, চল, ভেতরে ঢুকে পড় ট্রুপেন্স, টমি বলল। কিছু একটা যেন তার কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেল। এতে হ্যানিবল যেন পুরোপুরি সতর্ক। কুকুরটা ঝোঁপটাতে পর পর পাক খাচ্ছিল। কুকুরটা যেন পাগল হয়ে গেছে। টমি ওর দিকে দৌড়ে গেল। ও মনে হয় কাউকে তাড়া করছে। টমি বলল, নীচের কাউকে তাড়া করছে। ট্রুপেন্স বার বার জিজ্ঞাসা করল কি ওটা? কি ওটা?

টমি ট্রুপেন্সকে জিজ্ঞাসা করল তুমি পুরোপুরি ঠিক আছে তো?

ট্রুপেন্স বলল, আমি একদমই ঠিক নেই। আমার কাঁধের ঠিক নীচে খুব জোরে লাগল। মনে হয় কেউ যেন আঘাত করল।

মনে হয় কেউ গুলি করছে আমাদের লক্ষ্য করে। লোকটা মনে হয় আমাদের চোখের আড়ালে ঐ ঝোঁপটার মধ্যে লুকিয়ে আছে।

এমন কেউ হয়ত হবে, যে ঐ ঝোঁপটার মধ্যে থেকে আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে, ট্রুপেন্স বলল।

কিন্তু ক্লারেন্স বলল, আমার মনে হয় আইরিশরা আই অর এ তারা কেউ জায়গাটাকে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছে ট্রুপেন্স বলল, আমার মনে হয় না এটা কোন রাজনৈতিক ব্যাপার।

টমি সবাইকে বাড়ির মধ্যে চলে আসার জন্য বলতে লাগল। এমনকি ক্লারেন্সকে বলল, তুমিও চলে এসো।

হ্যানিবলকে বাগানের দরজার কাছে আবার দেখা গেল। হ্যানিবল দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে টমিকে সে যেন কিছু বলতে চাইল। টমির প্যান্টের কাপড় ধরে টানতে লাগল এবং সে যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল।

ট্রুপেন্স হ্যানিবলের ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিল। টমি বলল, নোকটা যেই হোক না কেন হ্যানিবল তাকে তাড়া করবার জন্যই বলছে।

টমি ভয় পেয়ে গেল। সে ট্রুপেন্সকে বলল, না তোমার কাছে যাবার দরকার নেই। লোকটা কিন্তু সাংঘাতিক। লোকটার হাত কিন্তু খালি না। হাতে নিশ্চয় কোন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র আছে। সামনে সাংঘাতিক বিপদ। আমি তোমাকে ঐ বিপদের মধ্যে ঠেলে দিতে পারি না। এই রকম একটা ঝুঁকি তোমার এই বয়সে নেওয়া ঠিক হবে না। বাড়ির ভেতরে তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়ল।

টমি হলঘরে ঢুকে টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করল। ট্রুপেন্স বলল, তুমি কি করছ? আমি পুলিসকে ফোন করছি। এই রকম ভাবে কোন ব্যাপার তো চলতে পারে না। ওরা আমাদের ক্ষতি করার জন্যই এসেছে। এবং নিশ্চয় ক্ষতি করতে পারত।

ট্রুপেন্সের কাঁধ থেকে তখনও রক্ত বেরোচ্ছে। আমার মনে হয় কাঁধটার মধ্যে কিছু লাগান দরকার। তাড়াতাড়ি অ্যালবার্ট ফাস্ট-এড বক্স নিয়ে হাজির হল। সে বলল, কোন শয়তান আপনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল।

টমি জানালো তোমার অতি অবশ্যই হাসপাতালে যাওয়া দরকার। না আমার যাওয়ার দরকার নেই, আমি ঠিক আছি। আমার কাঁধটা ঠিক করে বেঁধে দাও ব্যাণ্ডেজ দিয়ে। তাহলেই ভালো হয়ে যাবে। না অন্য কিছু যদি ভালো জিনিষ থাকে সেটা লাগিয়ে দাও।

এইরকম চলতে চলতে ট্রুপেন্সকে হঠাৎ টমি জিজ্ঞাসা করল। তুমি জিনিষ ঠিক রেখেছে তো? টমি জিজ্ঞাসা করল কোন জিনিষটা ট্রুপেন্স, তুমি কি বলতে চাইছো? টমি জিজ্ঞাসা করল।

এই একটু কেম্ব্রিজ লো হেনগ্রিন থেকে যেটা আমরা পেয়েছি। যেটা পেরেকে ঝোলান ছিল। সম্ভবত ওটা একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ ছিল। সেইটাই ওরা দেখেছে। সেই কারণেই আমাদের খুন করার চেষ্টা করেছে। আর একটা জিনিষ যেটা করছে সেটা পেতে। এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা নিশ্চয় কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ।

***

 টমি পুলিস ইনসপেক্টরের সঙ্গে তার অফিসে বসে কথা বলছিল। টমি তাকে বলল যে, আপনি যদি খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে চান তাহলে আসতে পারেন, তখন বলল, না, না আমার খুঁটিনাটি কিছু জানার দরকার নেই। আমি যা বলছি তা আপনি মন দিয়ে শুনুন, তাহলে, আপনারা বেশী বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। যতদূর সম্ভব বাড়িতে থাকুন। আর আপনার স্ত্রীর ওপর ভালোভাবে নজর রাখুন।

এই ধরনের সাক্ষাৎ এড়াবার এটা একটা ভালো পন্থা। পুলিস ইনসপেক্টর জানাতে চাইছে টমি বাগানটা ঠিকঠাক করতে চায় কি না। টমি তখন জানালো বাগানের মালি ছিল আইজ্যাক সে খুন হয়েছে। তা নিশ্চয় আপনি জানেন।

ইনসপেক্টর জানালো হ্যাঁ, আমি সমস্ত ব্যাপারটা জানি। লোকটার নাম নিশ্চয় আইজ্যাক বডিকট। লোকটা খুব ভালো লোক ছিল, ওর সময়ের অনেক গল্প ও জানতত। মাঝে মাঝে বলে শোনাত, মাঝে মাঝে লোকজনের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত। লোকটা সত্যি সত্যিই খুব বিশ্বাসী ছিল।

টমি বলল, এটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, এই রকম একটা লোক খুন হতে পারে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কেনই বা ওকে খুন করল, কেই-ই বা ওকে খুন করল। কোথাও কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ইনসপেক্টর বলল, আপনি বলতে চাইছেন আমরা কিছু খুঁজে পাইনি। এত তাড়াতাড়ি এটা সম্ভব না খোঁজা। আমি এখন একটা নোক দিচ্ছি। বাগানে কাজ করবার জন্য। সে তোমার কাছে একদিন আসবে দেখা করতে। সে হয়ত একা আসবে। সে হয়ত বলতে পারে যে, সে সপ্তাহে দুদিন বা তিনদিন তোমার বাগানে কাজ করবে। সে হয়তো বলতে পারে যে, সে ফলমনালের কাছে কিছুদিন কাজ করেছে। এই নামটা ও যখন বলবে তুমি অতি অবশ্যই মনে রাখবে।

টমি বলল, মিঃ ফলমন। এই কথা শোনাতেই মনে হয় কয়েক মুহূর্তের জন্য ইনসপেক্টরের নুরিসের চোখদুটো চকচক করে উঠল।

হা নিশ্চয় সে মারা গেছে। লোকটা এখানে বসবাস করত। বিভিন্ন বাগানের মালিকে সে কাজ দিত। ইনসপেক্টর বলছেন, আমি ঠিক নিশ্চিত নই যে লোকটা আসবে সে নিজের নাম কি বলবে। তবে মনে হয় ক্রিসপিন বলবে। যদি সে ফলমনের নাম উল্লেখ না করে তা হলে সে ক্ষেত্রে তাকে নিও না। একটু সাবধান করে দিলাম তোমাকে, বুঝেছো? টমি আর কি করবে? সে ঘাড় নেড়ে বুঝিয়ে দিল যে, সে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।

টমি ট্রুপেন্সকে জিজ্ঞাসা করল, পুলিস তোমাকে ঠিক কি বলল? আমি ঠিক যা যা ভেবেছি তাই। ওরা বলল, এটা ঠিক স্থানীয় ব্যাপার নয়। পরক্ষণেই টমি লণ্ডনে ফোন করল। দু-একদিন ওখানে যেতে পারব না। তুমি যেতে পার ট্রুপেন্স বলল, আমি এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ আছি। তোমার কোন চিন্তার কারণ নেই। অ্যালবার্ট আছে আমাকে দেখবার জন্য। আর আছেন ডঃ ক্রসনীল্ড। ভীষণ রকম দয়ালু চরিত্রের, সেও আমাকে দেখবে।

টমি লণ্ডনে ফোন করল। কর্নেল পাইকঅ্যাজন?

 হ্যাঁ, আরে তুমি। টমাস বেরেসফোর্ড না? দেখছি আমার গলা তুমি চিনতে পেরেছে। আমি তোমাকে বলতে চাই যে…।

ট্রুপেন্স সম্পর্কে আমি সব শুনেছি। কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল। টমিকে বলল, তোমার এখানে আসার দরকার নেই। তুমি যেখানে আছে সেখানেই থাকো। লণ্ডনে আসার দরকার নেই। যা যা করবে তা আমাকে জানাবে। আমি শুনলাম ভয়ে কুকুরটা যাকে তাড়া করেছিল সে নাকি তোমাদের দুজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ছিল।

টমি বলল, মনে হচ্ছে তো সবই জানো, আমাদের সবই জানতে হয়। কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল।

কুকুরটা সেই অজ্ঞাত লোকটাকে একটা কামড় মেরেছিল। সে তার প্যান্টের এক টুকরো কাপড় মুখে করে নিয়ে ফিরে এসেছিল।

কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলে ধন্যবাদ, ধোঁয়া ছাড়ল সিগারেটের তোমাকে জরুরী তলব করার জন্য আমি খুব দুঃখিত। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমার সঙ্গে আমার দেখা হওয়াটা খুবই জরুরী। আমি প্রত্যাশা করি তুমি জানো।

টমি বলল, কিছুদিন ধরে আমরা এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি যা সত্যিই অপ্রত্যাশিত, তুমি কেন বললে আমার জানা উচিত কারণ, তুমি এখানে বসে বসেই সব জানো।

এই জন্য পাইকঅ্যাজন আবার হেসে উঠল, টমি বলল, আমার স্ত্রী অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। তবে যে কোন সময় আরো অনেক কিছু হতে পারে। আমার মনে হচ্ছে তুমি সমস্ত কিছু জানো। আমি আবার তোমাকে সব বলব এটা তুমি চাও। সেই জন্য টমি একটানা সব বলে গেলে। তারপর আস্তে আস্তে বলল। সেসব ব্যাপার লিখে রেখেছি তার একটা তালিকা তোমার জন্য নিয়ে এসেছি। আমরা দুজন মিলে করেছি, ট্রুপেন্স আর আমি করেছি। আমাদের কথা প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে তাই উল্লিখিত হয়েছে।

নাম? নাম আছে। টমি বলল, হ্যাঁ, তিনটি কি চারটি নাম আছে। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ আর ওখানে থাকত এমন অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজ গ্র্যাজুয়েটরের উল্লেখ আছে। মনে হচ্ছে এ লো হেনগ্রিন পেসিলিনের যন্ত্রগুলোকে বোঝাতেই ওই দুটি নাম ব্যবহার হয়েছে। কয়েকটা ব্যাপার খুবই উৎসাহব্যঞ্জক বটে।

অজানা একটা লোক আমাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি করার চেষ্টা করলে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই মুহূর্তেই পুলিসকে রিপোর্ট করি।

রিপোর্ট করাতে পরের দিন আমাকে থানায় যেতে বলা হয়। আমি সেখানে গিয়ে ইনসপেক্টর নুরিসের সঙ্গে দেখা করি। আমি আগে কখনও এই ইনসপেক্টর সাহেবকে দেখিনি। আমার যতদূর মনে হচ্ছে এই ইনসপেক্টর সাহেব এখানে নতুন এসেছে।

পাইকঅ্যাজন বলল, সিগারেট খেয়ে গলগল করে মুখ দিয়ে ধোঁয়া বার করতে করতে বলল, এটা সম্ভবত নতুন চুক্তি। টমি বলল, আমি আশা করছি তুমি ওর সম্বন্ধে সবই জানো।

কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল, হ্যাঁ আমি ওর সম্বন্ধে সব জানি এবং এখানকার যা কিছু সবই আমার জানা কারণ কর্নেল পাইকঅ্যাজন এখানে বহুদিন ধরে আছেন। তোমাদের পেছনে যারা এইরকম করছে তাদের সম্বন্ধে স্থানীয় লোক ভালো সনাক্ত করতে পারবে।

কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল, তুমি কিছু দিনের জন্য তোমার স্ত্রীকে নিয়ে সরে আসতে পারবে? মনে হয় সম্ভব হবে না, টমি জানাল।

কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল, তাহলে তোমার স্ত্রী ওখান থেকে সরে আসবে না। তাছাড়া তোমার পক্ষেও সম্ভব নয় ওকে ওখান থেকে সরিয়ে আনা। তোমার স্ত্রী তেমন কোন গুরুতর আহত হয়নি বা অসুস্থও নয়। আমার মনে হচ্ছে একবার আমরা পেছনে ধাওয়া করে দেখি। কি হয়? ব্যাপারটা তো বোঝা যাচ্ছে না। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না যে কিছু আমরা কি খুঁজে বার করব কিংবা কি করব।

এসব ক্ষেত্রে কিছু জানতে গেলে স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে কিছু কথা বলে কিছু বের করে নেওয়া কথাটা বলে পাইকঅ্যাজন একটা ধাতব বাক্সে নখ দিয়ে ঠুকল, এবং বলল, এই বাক্সটা আমাদের কিছু বলবে, আমরা সবসময় যেটা জানার জন্য উৎসুক সেই সম্বন্ধে কিছু বলবে। বহু বহু বছর আগে দৃশ্যের আড়াল করা শয়তানি কাজে লিপ্ত ছিল।

যারা এইসব করেছে, তাদের কে বা কারা সাহায্য করেছিল। কেই বা তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। কারা যে এই ব্যাপারগুলি করে চলেছে কেন বা কারা এই কাজগুলো একনাগাড়ে করে চলেছে। অনেক মানুষকে আমরা হিসাবের মধ্যে রাখি না। অথচ তারাই হয়ত এই ব্যাপারটাতে জড়িত। যা আমরা কখনও ভাবতে পারি না।

পাইকঅ্যাজন আসতে টমি বলল, ফলমন নামটা কি আপনার কাছে অর্থ বহন করে? মিঃ ফলমন? ভ্রূ কুঁচকে তাকালো এবং বলল, তুমি কোথা থেকে এই নামটা শুনলে বা জানতে পারলে?

ইনসপেক্টর নরিস এই নামটার উল্লেখ করেছে। ও তাই বল। ভালো কথা, ফলমনকে ব্যক্তিগতভাবে জেনে কোন লাভ নেই, তুমি হয়ত কিছু মনে করবে না, লোকটা মারা গেছে। টমি শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল।

আমরা প্রয়োজনে ওনার নামটা ব্যবহার করি, প্রয়োজনে এই নামটা ভালো কাজে লাগান যায়। লোকটা খুবই ভালো ছিল। এই রকম একটা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন নোক সাবধানে চলা উচিত। আমরা চাই-না তোমরা কখনও বিপদে পড়ো। তোমরা সব সময় সাবধানে থাকবে। সব কিছুতেই তোমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা দরকার, সবকিছুতেই তোমাদের সন্দেহ করা উচিত।

সেটাই সঠিক পথ।

আমার মাত্র দুটি লোককে বিশ্বাস হয় টমি বলল। তাদের একজন হল অ্যালবার্ট। সে অনেকদিন ধরে আমাদের কাছে এবং আমাদের কাছে কাজ করছে আর অন্য একজন হল আমার বাড়ির কুকুর হ্যানিবল।

***

বাগানের রাস্তাটা ধরে বাড়ি ফেরার মুখে ট্রুপেন্সের সঙ্গে অ্যালবার্টের দেখা হয়ে গেল। অ্যালবার্টও বাড়ির দিক থেকে আসছিল। অ্যালবার্ট বলল, একজন মহিলা তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে ম্যাডাম! মহিলাটি কে? মিস সুলেমন। সেরকমই বলল। মহিলাটি গ্রামে তোমার পরিচিত একজন মহিলার সুপারিশ নিয়েই এসেছে।

বাগানের ব্যাপারে এসেছে মহিলাটি, ট্রুপেন্স বলল, অ্যালবার্ট হ্যাঁ মহিলাটি বাগানে সম্বন্ধে যেন বলছিল। একটু পরেই বাড়িতে গিয়ে দেখে মহিলাটি তার জন্য অপেক্ষা করছে।

মহিলাটি বলল, আমার ইরিস মুন্সি। মিসেস গ্রিফিন পাঠিয়েছে আমাকে আপনার সঙ্গে দেখা করতে। আপনি বাগানের কাজের জন্য তোক চাইছেন কাজের সাহায্যের জন্য। কি তাই

ট্রুপেন্স বলল, হ্যাঁ আমার যে লোকটি ছিল, সে খুব একটা ভালোভাবে কাজ করত না, এবং সব সময় মন দিয়ে কাজ করত না, আমার মনে হয়।

মহিলাটি কথা প্রসঙ্গে কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় থাকে তা জানালো। তারপর ওরা দুজনে বাগান নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে লাগল।

ওদের কথার মাঝখানে অ্যালবার্ট এসে জানালো যে, মিসেস রেডক্লিফ তাকে ফোন করেছে। অ্যালবার্ট এও মহিলাটি বলছিল তুমি তার সঙ্গে কাল লাঞ্চ করতে পারবে কি না।

ট্রুপেন্সের কাছে একটা ছোট ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগ থেকে একটা ছোট প্যাড বার করল। তার মধ্যে কয়েকটা কথা লিখে প্যাডটা থেকে কাগজটা ছিঁড়ে অ্যালবার্টের হাতে দিল। এবং বলল, মিঃ বেরেসফোর্ডকে বল আমি একটু ব্যস্ত আছি কারণ আমি মিস মুলিন্সের সঙ্গে বাগানে গিয়ে কথাবার্তা বলছি এবং বাগানটাকে আবার কি ভাবে সুন্দর করা যায় এবং বাগানের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। এবং বলবে ও আমাকে যা বলেছিল তা করতে আমার একাজেই মনে নেই একেবারেই ভুলে গেছি। আমি কাগজটার মধ্যে একটা নাম ও ঠিকানা লিখেছিলাম মিঃ বেরেসফোর্ড এই নাম ঠিকানায় যেন চিঠি লেখে।

অ্যালবার্ট কাগজটা নিয়ে চলে যেতে, আবার ট্রুপেন্সও মিস মুলিন্সের সঙ্গে শাক সবজি, বাগান নিয়ে আলোচনা শুরু হল। কিছুক্ষণ পর টমি যখন এখানে এসে হাজির হল, ওকে দেখে ট্রুপেন্স বলল, টমি এই হল মিস মুলিন্স। মিসেস গ্রিফিন ওকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। আমরা বাগানের জন্য একটা ভালো লোক চাইছি।

টমি বলল, মনে হয় এই কাজটা সহজ নয়। তোমার পক্ষে যথেষ্ট ভারী কাজ হয়ে দাঁড়াবে। মুলিন্স তাতে আপত্তি জানালো। এবং বলল, এই সব কাজ করা আমার কাছে কোন ব্যাপার নয়। বাগান পরিচর্চা করা এবং গাছপালা লাগানো আমার কোন ব্যাপার নয়।

কুকুর হ্যানিবলটা সেই সময় বিরক্ত করছিল এইখানে হাজির হওয়া পর্যন্ত। ট্রুপেন্স টমিকে বলল, কুকুরটাকে সরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। হ্যানিবলকে সরিয়ে রান্নাঘরে আটকে রাখা হল। মিস মুলিন্সকে এক গ্লাস শোর দেওয়া হল। মিস মুলিন্সের মনে হয় তাড়া ছিল। সেই জন্য সে কথা বলতে বলতেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ালো।

সে বলল, আমার একজনের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপার আছে, আমার অবশ্যই দেরী হয়ে যাবে। কথাটা বলে ওদের বিদায় জানিয়ে সে চলে গেল। ট্রুপেন্স বলল, ওকে তো উপযুক্ত বলেই মনে হল। কিন্তু টমি বলল, আমি জানি কেউ বিবেচ্য হতে পারে না।

তুমি বোস অ্যালবার্ট, টমি বলল। অ্যালবার্ট কলতলায় ছিল, সেখানে অ্যালবার্ট ট্রুপেন্সের ঘর থেকে সদ্য আনা টী ট্রেটা পরিষ্কার করছিল। টমি বলল, অ্যালবার্ট তুমি আমাদের কুকুর হ্যানিবলের কাছ থেকে একটু সতর্ক থাকবে। ও কিন্তু সবার কাছে তেড়েফুঁড়ে যায় না। এমনিতে কুকুরটা খুব ভালো। তোমার কাছে বললাম কেন জানো? ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। আজ আমি ওকে বিছানায় আশ্রয় দিতে বলেছি।

অ্যালবার্ট দরজাটা খুলল, খোলর পর দেখতে পেল একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। অ্যালবার্ট ওর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। যুবকটি ভেতরে ঢুকে এলো। যুবকটির মুখে বন্ধুসুলভ সুন্দর হাসি দেখা গেল।

লোকটি বলল, মিঃ বেরেসফোর্ড শুনেছি আপনার বাগানের জন্য একজন লোক রাখবেন। আমার একটু দেরী হয়ে গেল। আমাকে নেবেন তো! কথাগুলো বলার পর লোকটা থামল। একটু পরে আবার বলল, আসবার সময় দেখলাম রাস্তাটার চারপাশে আগাছা জন্মে নোংরা হয়ে আছে। আমি বেশ কয়েকবছর আগে স্থায়ীভাবে কিছু কাজকর্ম করেছি। মিঃ ফলমন নামে একজনের কাছে। আপনি হয়তো তার নাম জানেন বা চিনে থাকতে পারেন।

লোকটি বলল, আমার নাম ক্রিসপিন, সঙ্গাকে ক্রিসপিন। আমায় বাগানের কাজ কি করতে হবে। আমায় দেখে নিতে হবে। সেই জন্য টমি ওকে নিয়ে বাগানে গেল এবং বাগানটা ভালো করে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল।

এবং বলতে লাগল, এখানে পালং শাক চাষ করতে। এই সজি বাগানের পথটা ধরে। ওটার পেছনে কিছু জায়গা আছে। তারা তরমুজও চাষ করত। তরমুজগুলো খুব ভালো হত। খেতে খুব ভালো ছিল।

তুমি দেখছি সব জানো। জানাটাই তো স্বাভাবিক পুরানো দিনের ঘটনা। বয়স্ক মহিলারা আমাকে সেসব দিনের ফুল চাষের অনেক কথাই নিশ্চয় বলেছে। আলেকজাণ্ডার পারকিনের মনের কথা নিশ্চয় শুনেছ। সে নিশ্চয় ফক্স গ্লিভ পাতা সম্বন্ধে বলেছে।

ও নিশ্চয় একজন উল্লেখযোগ্য ছেলে। ছেলেটার কিছু এই ব্যাপারে ধারণা ছিল। তার অপরাধ বিষয়ের জানার দারুণ আগ্রহ ছিল। সে স্টিভেনসনের বইতে সাংকেতিক ভাষায় একটা বার্তা লিখে ছিল।

আমি নিজে বছর পাঁচেক আগে পড়েছি। আমি যখন কাজ করতাম…কথাটা অসমাপ্ত রেখে ও ইতস্তত করতে লাগল। মিঃ ফলমনের কাছে?

টমি ওকে বলল, হা হা, ঐ নামটাই আমি বুড়ো আইজ্যাকের কাছে অনেক ব্যাপার শুনেছিলাম। আমি যদি ভুল শুনে না থাকতাম। তাহলে আমার অনুমানও একশো বছর বাঁচত এবং তোমার এখানে কাজ করত। ওর এ বয়সে নোকটা সবকিছু স্মরণ করতে পারত। সবকিছু আমাদের কাছে বলত। অনেক ব্যাপার ওর জানা ছিল।

টমি বলল, আমাদের নামের তালিকাটি ঠিকমত করা হয়েছিল বলে ঠিকমত কাজ করেছে। অনেক নাম যেগুলো স্বাভাবিক ভাবে অর্থহীন আমার কাছে। টমি বলল, আমার স্ত্রী ট্রুপেন্স অনেক অনেক নাম শুনেছে। এবং সেই নামগুলো দিয়ে একটি নামের তালিকা তৈরী করেছে। এইসব নামের তালিকা করার মনে হয় না কোন অর্থ হয়। আমি নিজেও একটা নামের তালিকা করেছি।

ও তাই, তোমার তালিকাটি কি?

আমার তালিকাটি আদমসুমারি, টমি বলল। তখন একটা আদমসুমারি করা হয়েছিল। তাই এটা করা সম্ভব হয়েছে। আমি সেই তারিখটা পেয়েছিলাম। সেটা আজ তোমাকে জানাতে পারি। সেদিন এখানে অনেক ব্যক্তি এসেছিল। বড় সড় একটা পার্টি হয়েছিল। এখানে এসে রাত কাটিয়ে ছিল। বলতে পার সেটি একটি ডিনার পার্টি।

তাহলে তুমি জানো একটি নির্দিষ্ট দিনে এবং সম্ভবত একটা তাৎপর্যপূর্ণ তারিখে কারা কারা এখানে ছিল?

হ্যাঁ, টমি বলল। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হতে পারে। এটা হয়ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। টমি বলল, আমরা হয়ত এখান থেকে চলে যেতে পারি। তুমি কি এটা পছন্দ কর না। ও বলল, এটা একটা সুন্দর চমৎকার বাড়ি, এই বাগানটাকে যে কত সুন্দরভাবে তৈরী করে নেওয়া যায়। চারিধারে গাছ লাগিয়ে, লতান গাছ লাগিয়ে এমনভাবে সুন্দর করা যায় যে, লোকে দেখলে অবাক হয়ে যাওয়ার মত।

ক্রিসপিন বলল, সে যা হোক আমি জানি না তোমরা এখান থেকে চলে যেতে চাও কেন?

অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা জায়গা ভয়ঙ্কর ভাবে মানায় না। টমি বলল, মিঃ ক্রিসপিন বলল, অতীত কি ভাবে বর্তমানের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে?

কেউ কেউ এসবকে ভ্রূক্ষেপ করে না। এমন কোন কথা নেই যে, অতীতের মৃত কোন ব্যক্তির কথা বললেই সে জীবিত হয়ে ওঠে।

হ্যাঁ, আমি বাগানের কাজ করতে চাই। এই বাগান করা আমার একটা হবি। এই কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। বাগানকে সুন্দর করে গড়ে তোলা তাতে সুন্দর সুন্দর ফুল ফোঁটান। যে ঋতুতে যে ফুল ফোটে সেই ধরনের গাছ লাগিয়ে। কত ধরনের পাতা বাহার আছে তাই লাগিয়ে বাগানকে সুন্দর করে তুলতে আমার খুব ভালো লাগে।

টমি বলল, গত কাল মিস মুলিন্স নামে একজন মহিলা আমার কাছে এসেছিল।

মুলিন্স, মুলিন্স! সে কি মালি। সেই কথাটাই আমি অনুমান করেছি, মিসেস গ্রিফিন তাকে নাকি পাঠিয়েছে। তার সঙ্গে তুমি কথাবার্তা পাকা করে ফেলেছো নাকি?

এখনো পারনি। টমি বলল, আমার এখানে একটা সত্যিই ভলো কুকুর আছে, ম্যাঞ্চেস্টার টেরিয়ার।

হ্যাঁ পাহারা দিতে এইসব কুকুর খুব ভালো। মিঃ ক্রিপসিন বলল, আমার মনে হয় তোমার স্ত্রীকে সেই পাহারা দিতে পারবে। এখন কোথাও যেতে হবে না।

ঠিক বলেছো টমি বলল, কোন ব্যক্তিই আমার স্ত্রীর দেহ স্পর্শ করতে পারবে না। কেউ যদি স্পর্শ করে তাহলে তাকে কুকুরটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খাবে।

মহিলাটির ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে মিঃ ক্রিসপিন এবং মিঃ মুলিন্স কথাটা উচ্চারণ করল। বলল, হা হা, এটা খুব উৎসাহব্যঞ্জক। টমি বলল, কেন তোমরা এই রকম বলছ।

সে বলল, ঐ নামে কোন মহিলাকে আমরা চিনি না। একটু থেমে ক্রিসপিন বলল, আচ্ছা মহিলাটির বয়স কি পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে? হ্যাঁ, কেমন খসখসে, আচার আচরণে গেঁয়ো।

মহিলাটির সঙ্গে কিছু লোকের যোগাযোগ আছে। আইজ্যাক তার সম্বন্ধে কিছু বলেছে। মনে হয় ও হয়তো এখানে কাজ করার জন্য এসেছে। খুব বেশী দিন আগে আসেনি। সমস্ত ব্যাপারগুলোর মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। বুঝতে পারছ নিশ্চয়।

টমি বলল, আমার মনে হয়, এই জায়গাটার ব্যাপারগুলি তোমার জানা যা আমার নেই। আইজ্যাক তোমাকে অনেক কিছু বলে থাকবে। ও অনেক কিছু জানত। ওর স্মৃতিশক্তি প্রখর ছিল। পুরানো দিনের লোক তো। তারা সব সময় বলাবলি করত। বৃদ্ধ লোকেদের ক্লাবগুলিতে অনেক অনেক বড় বড় গল্প ছিল। ওই সব গল্পের মধ্যে অনেক কিছু সত্যিই ছিল না। আবার এমন অনেক গল্প এমন ছিল যে যা ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ভিত্তি করে তৈরী। হ্যাঁ, এই সবই উৎসাহব্যঞ্জক। আইজ্যাক সবটাই জানত বা জানা ছিল।

সত্যিই আইজ্যাকের ব্যাপারটা একটা লজ্জার টমি বলল, ওকে যে খুন করল তাকে আমি একবার দেখতে চাই। আইজ্যাক একজন চমৎকার বুড়ো মানুষ ছিল। আমাদের কাছে খুব ভালো লোক ছিল। যতটা পারত ও আমাদের সাহায্য করত এসে, ঘুরে ফিরে দেখা যাক।

***

অ্যালবার্ট ট্রুপেন্সের শোবার দরজায় টোকা মারল। ট্রুপেন্স ভেতরে আসতে বলল।

তখন অ্যালবার্ট বলল, কয়েকদিন আগে যে মহিলাটি তোমার কাছে এসেছিল সে আবার এসেছে। সে দুএক মিনিট তোমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। মনে হয় বাগানের ব্যাপারে তোমার সাথে কথা বলবে। আমি তাকে বলে দিয়েছি তুমি এখন ঘুমাচ্ছো। তুমি ওর সঙ্গে দেখা করবে কি না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম না।

ট্রুপেন্স ওকে জানিয়ে দিল মিস মুলিন্সকে বসতে। সে তার সঙ্গে দেখা করবে।

অ্যালবার্ট বলল, আমি তোমার সকালের চা এনে দিচ্ছি। ট্রুপেন্স বলল, ভালো কথা, তুমি এর সঙ্গে আর এক কাপ চা নিয়ে এসো, ব্যস। তাতেই হবে, কি তাই তো? হ্যাঁ ম্যাডাম।

ব্যস, তুমি ওটা ওপরে নিয়ে এসো ঐ টেবিলটায় রাখো তারপর মিস মুলিকে ডেকে নিয়ে এসো।

হ্যানিবল কি করবে? অ্যালবার্ট বলল। ওকে কি আমি নিচে নামিয়ে নিয়ে যাবে এবং রান্নাঘরের মধ্যে আটকে রাখব?

ও রান্নাঘরে আটকে থাকা পছন্দ করে না। না, ওকে কলতলায় ঠেলে ঢুকিয়ে দাও। আর সেটা করার সময় দরজাটা বন্ধ করে দিও।

অ্যালবার্ট ওকে নিয়ে চলে গেল। ও অপমানিত হয়ে হিংস্র ডাক ডাকতে লাগল। সেই ডাক ট্রুপেন্সের কানে আসতে লাগল। তারপর সেই ডাকটা ক্রমশ বন্ধ হয়ে গেল। কারণ ও বুঝতে পেরেছে। আমাকে এটা ওরা করবেই। আমার কোন উপায় নেই। সম্ভবত অ্যালবার্ট ওকে কলতলার ভেতর পুরে রেখেছে।

একটু পরেই মিস মুলিন্স এলো। ওহো মিসেস বেরেসফোর্ড, উচ্চস্বরে বলল, মিস মুন্সি আমার আশঙ্কা আমি না বলেই ঢুকেছি। আমি ভেবেছি বাগানের ওপর এই বইগুলো দেখে খুশী হবেন।

এরপর গাছপালা চাষের ব্যাপারে অনেক কথা বলে গেল সে। নিজেরই ইচ্ছা হল বুঝি, তাই সে নিজেই ট্রুপেন্সের কাপে কফি ঢেলে দিল। তারপর তার অ্যালবার্টের দিকে চোখ পড়তেই থেমে গেল। অ্যালবার্ট তখন তাকে একটা চেয়ার এনে দিল।

নিচের তলায় একটা ঘন্টাধ্বনি শোনা গেল। দুধ মনে হয়। অ্যালবার্ট বলল, কিংবা মুদি হতে পারে। আমি নিচে গিয়ে দেখে আসি। কথাটা বলে অ্যালবার্ট চলে গেল। যাবার সময় ঠিকমত দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেল। হ্যানিবল যে তখনও ডাকছে। সেটা শোনা গেল।

ওটা আমার কুকুর। ট্রুপেন্স বলল, অচেনা লোককে দেখলে ও খুব একটা পছন্দ করে না। সেই রকম কাউকে দেখলে এত গোলমাল বাধায় না।

তুমি কি চিনি নেবে? মিসেস বেরেসফোর্ড? একটুখানি ট্রুপেন্স বলল। মিস মুলিন্স একটা কাপে কফি ঢালল। ট্রুপেন্স বলল, তাই না হলে কালো।

 মিস্ মুলিন্স ট্রুপেন্সের পাশে কাপটা রাখল। তারপরে নিজের কাপে কফি ঢালার জন্য এগোল। আচমকাই সে হোঁচট খেল। হোঁচট খেয়ে একটা টেবিল ধরে নিল। এত জোরে ব্যথা পেল যে সে টেবিল ধরে বসে পড়ল।

তোমার কি লেগেছে? ট্রুপেন্স জিজ্ঞাসা করল।

না না, লাগেনি তবে আমি তোমার কফি কাপটা খানিকটা ভেঙ্গে ফেলেছি। আমার প্যান্টা মনে হয় কিসে যেন আটকে গিয়েছিল। আর ছাড়াতে গিয়ে তোমার কফি খাওয়ার সেটটা পড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। প্রিয় মিসেস বেরেসফোর্ড তুমি আমাকে যে কি ভাবছ?

সত্যিই ওটা খুব প্রাচীন বস্তু ছিল।

অবশ্যই তাই ছিল। ট্রুপেন্স বলল নরম গলায় আমি দেখছি। দেখে মনে হচ্ছে এটা খারাপ কিছু হতে পারে। এটা ভেঙ্গে দুটুকরো হয়ে গেছে। এটা মনে হয় আঠা দিয়ে জুড়ে দিতে সক্ষম হবে। আমার মনে হয় জোড় মুখটা দেখাই যাবে না।

আমার এখনো খারাপ লাগছে। মিস্ মুলি বলল। আমি জানি তুমি অসুস্থ আর আজকের দিনেই কিনা আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম। আমি এসেছি এই কারণেই যে আমি তোমাকে বলতে চাই…।

হ্যানিবল তখনও ডেকে চলেছে। ওহো, হতভাগা কুকুর, মিস্ মুন্সি বলল, ওকে আমি, কলতলা থেকে বের করে দেবো।

না করাই ভালো ট্রুপেন্স বলল, মাঝেমাঝে ও বিশ্বস্ত থাকে না। ওহো ভাই, নিচে আবার একটা আওয়াজ পেলাম।

না ট্রুপেন্স বলল, অ্যালবার্ট এবার উত্তর দিল। প্রয়োজন হলে ও সবটাই খবরাখবর দিয়ে আসতে পারে।

টমি এই দিকে টেলিফোনে কথা বলছিল। হ্যালো ও বলল, বল, ওহো তাই না কি, কি? তাই নাকি আচ্ছা। ওঃ, শত্রু। হা হা, ঠিক আছে। আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নেবো। হ্যাঁ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, ও রিসিভারটা নামিয়ে রাখল। মিঃ ক্রিসপিনের দিকে তাকাল।

শব্দগুলো সতর্ক করার। মি. ক্রিসপিন বলল, হা, টমি সংক্ষেপে উত্তর দিল কিন্তু ও একভাবে ক্রিসপিনের দিকে তাকিয়ে রইল।

বোঝা খুব শক্ত। তাই না? মানে আমি বলছি কে তোমার শত্রু।

কখনও কখনও তুমি যখন সেটা জানতে পার তখন সেটা খুব দেরী হয়ে যায়। নিয়তির পরিহাস। টমি বলল, ক্রিসপিন বিস্ময়ের দৃষ্টিতে টমির দিকে তাকাল।

টমি বলল, সে যা হোক ট্রুপেন্স কেবল বিশ্রাম নিচ্ছে। ও কোন অদ্ভুত রোগে কিংবা কোন কিছুতেই ও ভুগছে না। সর্দি কাশিতেও না।

আমি কফি নিয়ে এসেছি। অ্যালবার্ট জানালো, হঠাৎ সেখানে আবির্ভূত হয়ে। সেই সঙ্গে মিসেস মুলিন্সের জন্য অতিরিক্ত একটা কাপড় নিয়েছি। মহিলাটি কিসব বাগানের বইপত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছে।

তাই নাকি, টমি বলল, ভালো কথা। বেশ ভালোই চলছে কি বল? তা হ্যানিবল কোথায়?

ওঁকে কলতলায় আটকে রাখতে হয়েছে। তুমি কি দরজাটায় ভালো করে খিল দিয়ে দিয়েছো? কেন ঐ রকম আটকে থাকাটা ও কিনা পছন্দ করে না।

না স্যার, আপনি যা বললেন, কেবল তাই করেছি। টমি এবার ওপর তলায় গেল মিঃ ক্রিসপিনও পেছন পেছন এল। টমি আস্তে আস্তে শোবার ঘরের দরজায় মৃদু টোকা মারল। তারপর আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকল। তলায় হ্যানিবল তখনও ডাকছে। ডাকটা শুনে মনে হচ্ছে একেবারে হিংস্র হয়ে আছে। হ্যানিবল দরজার মধ্যে বার বার লাফিয়ে পরছে সেটা শোনা গেল। তারপর সে ছুটে এসে ঘরে ঢুকল। এসেই মিঃ ক্রিসপিনকে সে একবার ভালো করে দেখে নিল। পরক্ষণেই আবার মিস মুলিন্সের দিকে এগিয়ে গিয়ে হিংস্র ভাবে গর গর শব্দ করতে লাগল।

ট্রুপেন্স আদর করে কুকুরটাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। টমি কুকুরটার খুব প্রশংসা করতে লাগল। তারপর ক্রিসপিনের দিকে মাথা ঘোরালো।

ওর শত্রুদের ও খুব চেনে, কি তাই না? আর তোমার শত্রুদেরও ভাই। ট্রুপেন্স বলল, হ্যানিবল কি তোমাকে কামড়েছে?

খুবই জঘন্য ওটা মিস মুলি বলল। উঠে দাঁড়ালো কুকুরটিকে ভীত স্বন্ত্রস্ত হয়ে তাকিয়ে রইল। তোমায় ঐ ঝোঁপটা থেকে তাড়া করে বার করে এনেছিল না? টমি বলল।

ক্রিসপিন বলল, কি তাই না, দাদা ডোডো? আমি তোমাকে অনেকদিন ধরেই দেখছি ডোডো; কি তাই নয় কি?

মিস মুন্সি উঠে দাঁড়িয়ে ছিল। মুন্সি–মিঃ ক্রিসপিন বলল, দুঃখিত আমি অধুনা নই। তোমার ওটা কি বিবাহিত নাম কিংবা তুমি এখন মিস মুলিন্স নামে পরিচিত?

আমি ইরিস মুলিন্স। মিস মুন্সি, আর চিরদিনই আমি এই নামেই ছিলাম।

আহা আমি তোমাকে ভোলো ভেবেছিলাম। সে যাই হোক তোমার সঙ্গে আলাপ হয়ে। আমার ভালোই লাগল। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। তোমার কফিটা শেষ করে নাও। কথাগুলি একটানা বলে ক্রিসপিন ট্রুপেন্সের দিকে তাকাল। বলল, মিসেস বেরেসফোর্ড তোমার সাথে সাক্ষাৎ করে বিশেষ প্রীতি হলাম। আমায় যদি অধিকার দাও তো বল তোমার কফিটা আমি পান করব।

ওহো, আমাকে কাপটা নিয়ে নিতে দাও, মিস মলিন্স বলল। এগিয়ে এলো কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে ক্রিসপিন ট্রুপেন্স আর মুলিন্সের মাঝখানে এসে দাঁড়াল।

না ডোভো, দাদা, আমি তা করতে দেব না। সে বলল, বাড়ির কাপ, তুমি এটা জানো, কাপের বস্তুটিকে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে যে কাপের বস্তুটিতে কী ছিল। মিঃ ক্রিসপিন কোনমতে দৃঢ়কণ্ঠ স্বরে বলল, একটু থেমে সে বলল আবার, সম্ভবত সঙ্গে করেই এক ডোজ নিয়ে এসেছিলে তাই না? আর তা খুব সহজেই কাপের কফিতে মিশিয়ে দেওয়া যায় কাউকে অক্ষম করে দিতে। আমি তোমাকে নিশ্চিত করতে পারি এই বলে যে ওরকম কিছু আমি করি না। ওহো তোমার কুকুরটাকে তুমি ডেকে নাও।

হ্যানিবল ওকে তাড়া করে বাড়ির বাইরে বার করে দিতে চাইছিল।

ও তোমাকে বাড়ির বাইরে উঠোনে বিদায় জানাতে চায়। টমি বলল, ঐ বিষয়ে ও বড় অদ্ভুত। যারা বাজে লোক এবং সদর দরজা সেই সব লোকেদের কামড়ানো ও পছন্দ করে। অ্যাঃ অ্যালবার্ট তুমি এখানে এসো। আমি ভেবেছিলাম অন্য বাইরে তুমি থাকবে। দেখতে পাচ্ছো তো যে কোন মুহূর্তে কি ঘটতে পারে?

অ্যালবার্ট ঘাড় ঘুরিয়ে পোষাক পরার ঘরের দরজাটার দিকে তাকাল।

আমি সব ঠিক দেখেছি। ফাঁকের মধ্যে দিয়ে আমি মহিলাটিকে লক্ষ্য করছিলাম। হা ও ম্যাডামের কাপে কি যেন দিল। খুবই কৌশলে।

মিস মুলিন্স বলল, তুমি কি বলছ বুঝতে পারছি না। আমি অবশ্যই চলে যাবো? আমার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা।

ও দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। হ্যানিবল কেবল একবার দেখে নিল। পরক্ষণেই তার পেছন পেছন দৌড়াল। ক্রিসপিন তখন কুকুরটার পেছন পেছন দ্রুত পায়ে নেমে গেল।

আশাকরি মহিলাটি একজন ভালো দৌড়বীর, ট্রুপেন্স বলল। কেননা তা না হলে হ্যানিবল ওকে ধরে ফেলত। আমার মনে হল ও একজন ভালো পাকা রাস্তার কুকুর।

ট্রুপেন্স এই হল মিঃ ক্রিসপিন। মিঃ ফলমন আমাদের কাছে পাঠিয়েছে, সঠিক সময়েতেই ও আমাদের কাছে এসেছে। কি তাই আসেনি কি? আমার মনে হয় কি ঘটতে পারে তা দেখার জন্য ও অপেক্ষা করছে। ঐ কাপটা ভাঙ্গা না কিংবা ঐ কফির কোন অংশই তুলে ফেলো না। অন্তত যতক্ষণ না আমরা একটা এনে ওগুলো না জুড়িয়ে দিচ্ছি। ওটা বিশ্লেষণ করা হবে, দেখা যাবে কাপের মধ্যে যে বস্তুটি দেওয়া হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে সেটি কি? সবথেকে ভালো তুমি ড্রেসিং গাউনটা পরে নিচে নেমে এসো। লানচ করার আগে আমরা সেখানে বসে একপ্রস্থ কফি পান করব।

ট্রুপেন্স বলল, এসবের অর্থ আমরা কখনই জানতে পারব না। বুঝতে পারছি না আমাদের চারপাশে কি সব ঘটছে।

কথাটা বলে ট্রুপেন্স বিষণ্ণভাবে মাথা নাড়ল। কিছুই যেন ভালো লাগছে না। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না, চেয়ার থেকে অগ্নিকুণ্ডের দিকে এগিয়ে গেল।

ট্রুপেন্সকে বেশি নড়াচড়া করতে বারণ করা হয়েছে। টমি বলল, ওতে কাঠ দিতে হবে। বলেই বলল দাঁড়াও দাঁড়াও। আমাকে করতে দাও। তোমাকে না বলা হয়েছে বেশী চলাফেরা করো না।

আমার কাপটা এখন পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে। ট্রুপেন্স বলল, যে কেউ ভাববে এটা আমি ভেঙ্গেছি। কিংবা সে রকম কিছু বল একটা জঘন্য লাগল।

হ্যানিবল, একটা ভালো কুকুর ট্রুপেন্স বলল, হ্যাঁ ও আমাদের ইঙ্গিত দিয়েছিল। ও নিশ্চিত ভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ওর ঘ্রাণশক্তি প্রবল। ও ঠিক চিনতে পেরেছে।

কিন্তু আমি বলতে পারি না যে আমার ওরকম কোনো ঘ্রাণ শক্তি আছে। আমি মিস মুন্সিকে সরল মনে এখানে এনেছিলাম। একমাত্র ফলমনের নাম উল্লেখ করা ব্যক্তিদেরই আমরা কাজে নেব ভেবেছিলাম। সে যাই হোক মিঃ ক্রিসপিন কি আর কিছু তোমায় বলেছে? আমার সন্দেহ হচ্ছে। যে ওর নাম ঠিক মিঃ ক্রিসপিন না।

সম্ভবত নয়? টমি বলল ও কি কিছু গোয়েন্দাগিরি করতে এখানে এসেছে? এখানে আমরা অনেকেই আছি।

না, টমি বলল, ঠিক গোয়েন্দাগিরি নয়। আমার মনে হয় নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে ওকে পাঠানো হয়েছে। তোমাকে দেখাশোনা করার জন্য।

ট্রুপেন্স বলল, আমাকে দেখাশোনার জন্য। আর তুমি? এখন নোকটা কোথায়?

মনে হচ্ছে মিস মুলিন্সের সঙ্গে হিসাব মেটাচ্ছে। সত্যিই কি অদ্ভুত ব্যাপার। বিস্মিত কণ্ঠে বলল ট্রুপেন্স। একটু থেকে পরক্ষণে সে যাবার ব্যাপার দু-একটা মন্তব্য করল। টমি জানালো যে তার এই যাবার ব্যাপারে এই উৎসাহ দেখে সে খুব খুশী। তখন ট্রুপেন্স বলল। আমি আজ অবধি কখনও অসুস্থ হয়নি। আমি আহত হয়েছি। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।

ভালোকথা টমি বলল। সে যা হোক। আমি যেমনটা বুঝতে পেরেছিলাম তোমারও বুঝতে পারা উচিৎ ছিল যে হ্যানিবল চীৎকার করেই সেদিন আমাদের জানিয়ে দিয়েছিল যে, শত্রু আমাদের কাছেই রয়েছে। ঝোঁপের ভেতরে তোমার অবশ্যই দেখা উচিৎ। মিস মুন্সি হল সেই ব্যক্তি যে পুরুষ সেজে ঝোঁপের আড়াল থেকে তোমাকে গুলি করে ছিল।

একটু চুপ থেকে টমি বলল, আমার ধারণাই ঠিক। আমি ভেবেছিলাম সম্ভবত বেশী দিন মহিলাটি ঘটনাস্থল থেকে সরে থাকতে পারবে না। তাকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত দিয়ে যেতে হবে এই কারণে যে সে দেখতে গিয়েছিল যে গুলিটা ছুঁড়েছে সেটা কতটা কার্যকরী হয়েছে। সে দেখতে চেয়েছিল তুমি বিছানায় শয্যাশয়ী হয়েছে কিনা?

আর সেইজন্য ও ফিরে এলো। ট্রুপেন্স বলল, আমাদের ব্যবস্থাটাও সুন্দর করা হয়েছিল। টমি বলল, অ্যালবার্ট মহিলাটির প্রতিটি পদক্ষেপ ও নজরে রাখছিল ভালো করে। মহিলাটির, যা যা করার ছিল। অ্যালবার্ট তার সামান্যটুকুও কাজকর্ম সে নিজের চোখ দেয়নি।

এবং তার সঙ্গে ট্রুপেন্স বলল, আমার এখানে একটা ট্রেতে করে এক কাপ চা এনে দিল মহিলাটি। সঙ্গে আর একটা কাপ দিয়ে দিয়েছিল।

তুমি কি মুলিন্সকে অথবা ডোডো যেমনটা ক্রিসপিন ডাকছিল ওকে দেখেছো কি তোমার কাপে কিছু মিশিয়ে দিতে?

না, ট্রুপেন্স বলল। আমি অবশ্যই স্বীকার করব যে আমি তো দেখিনি। শোন, দেখলাম পায়ে কি যেন বেধে গিয়ে ও পড়ে গেল ঐ টেবিলটার ওপর। আমাদের কফি খানিকটা সমেত। বারবার আমার কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগল। অবশ্যই আমার মাথাটা তখন ছিল সেই ভাঙ্গা কফি কাপটার ওপর। দেখছিলাম ওটাকে জোড়া দেওয়া যায় কিনা। ফলে ওর দিকে আমি লক্ষ রাখিনি।

অ্যালবার্ট দেখেছিল, টমি বলল, ড্রেসিং রুমের দরজার ফাঁক দিয়েও তা দেখেছিল। কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ট্রুপেন্স বলল আর সেই সঙ্গে ও হ্যানিবলকে নিয়ে গিয়ে কল ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা খুব আলগা করে দিয়ে রেখেছিল। আর তুমি তো জানো দরজা খোলায় আমাদের হ্যানিবল খুবই ভালো পারে। অবশ্য অ্যালবার্ট যদি দরজাটায় পুরোপুরি খিল লাগিয়ে দিত তাহলে তা খোলা সম্ভব হত না। তা সে যা হোক ধাক্কা দিয়ে খিল খুলে আমাদের হ্যানিবল বাঙলার বাঘের মতই দৌড়ে এসেছিল।

হ্যাঁ, টমি বলল হ্যানিবলের খুব চমৎকার একটা বর্ণনা দিয়েছে। আর এখন আমার মনে হয় ঐ মিঃ ক্রিসপিন না কি যেন নাম ও ওর তদন্ত শেষ করেছে। তবে মিস মুলিন্সের মেরী জর্ডনের ঘটনার কি সম্পর্ক থাকতে পারে অথবা ঐ বিপজ্জনক কেসের সঙ্গেই বা কি রকম সম্পর্ক থাকতে পারে সে সম্বন্ধে ও কি ভাবে কে জানে।

আমার মনে হয় না ওর অস্তিত্ব কেবল অতীতেই ছিল আমার মনে হয় ওর একটা নতুন সংকলন হতে পারে বা পুনর্জন্ম, তুমি কেমন ভাবে বলবে।

আমি এই কদিন হল কান্ট্রি হ্যানিবল নামে একটা বই পড়েছি। ট্রুপেন্স বলল, ওটা ওপর-তলার আলেকজাণ্ডারের বইগুলির মধ্যে ছিল?

টমি জানতে চাইল বইটা কি বিষয়ে। জবাবে ট্রুপেন্স সংক্ষেপে বইটির বিষয়বস্তু জানালো। আরও দু-একটা কথা বলার পর ট্রুপেন্স বলল, তুমি কি সত্যি ভালো গোপন জায়গা থেকেও বেশী কিছু আবিষ্কার করবে। কোন চৌবাচ্চা নিশ্চয়। জানো নিশ্চয় ব্যাঙ্ক ডাকাতরা লুঠের দ্রব্য প্রায়ই চৌবাচ্চায় লুকিয়ে রাখে। এটা খুবই আদর্শ জায়গা। কোন কিছু লুকিয়ে রাখার আদর্শ জায়গা। তোমার কি মনে হয় তদন্ত হয়ে গেলে মিঃ ক্রিসপিন এখানে ফিরে আসবে। আর আমাকে এবং তোমাকে দেখে ভালো করার কাজটা চালিয়ে যাবে।

আমাকে তার আর দেখাশোনা করার দরকার নেই। টমি বলল, আমার মনে হয় ও আমাদের আসবে বিদায় জানাতে।

ওহো হা। কেননা ওর আচরণটা চমৎকার। তাই না? ও নিশ্চিত হতে চাইবে ঠিক আছে কিনা? ট্রুপেন্স বলল, আমি মাত্র আহত হয়েছি, ডাক্তারও দেখছে।

লোকটা সত্যিই বাগানের ব্যাপারে দারুণ আগ্রহী টমি বলল, আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। ও প্রকৃতই ওর এক বন্ধুর কাছে বাগানের কাজ করত। আর ঘটনাক্রমে সে মিঃ ফলমন নামে পরিচিত। কিছু বছর আগে লোকটা মারা গেছে। ৩৫০ আমার মনে হয় এটা একটা ভালো আচরণ ও বলতে পারবে যে ও তার হয়ে কাজ করেছে আর লোকে তা সত্যিই বিশ্বাস করবে।

ওদের কথাবার্তা চলছিল। এমন সময় হঠাৎ কথাবার্তার মাঝখানে দরজার বেলটা বেজে উঠল। আর তখনই হ্যানিবল দৌড়ে বেরিয়ে গেল সদর দরজার উদ্দেশ্যে। ওকে দেখে হ্যানিবল খেপে গেল। অনুপ্রবেশকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে ও সবসময় তৈরী।

একটু পরে টমি একটা খাম নিয়ে ফিরে এল। আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যে লেখা। টমি বলল, খুলবো কি? ট্রুপেন্স বলল, খোল। টমি খামটা খুলে ফেলল। ভালো কথা, ও বলল, ভবিষ্যতের জন্য এই সম্ভাবনাগুলি তুলে ধরেছে। কিছুটা মিঃ রবিনসনের নিমন্ত্রণ তোমাকে এবং আমাকে এই সপ্তাহের পরের সপ্তাহ নির্দিষ্ট একটি তারিখে ও আশা করছে। নিমন্ত্রণটা করেছে ওর দেশের বাড়িতে। মনে হয় সাসেলের কোন এক জায়গায়।

ট্রুপেন্স জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি মনে কর তখন ও আমাদের কিছু বলবে? মনে হয় বলতে পারে, টমি বলল। ট্রুপেন্স বলল, আমি কি সঙ্গে করে নামের তালিকাটি নেব? তবে ওটা এখন আমার মুখস্থ।

কথাটা বলে একটু থেমে তারপর ও পড়ে গেল সেটা। ব্ল্যাক অ্যারো, আলেকজাণ্ডার পারকিনসন, অকসফোর্ড এবং কেমব্রিজ নামে পোর্সিলিনের ভিক্টোরিয়া যুগের আসন। গ্রেন বললো কে কে, ম্যাথিলভের নোট, কেউন, আবেল আর ট্রলভ।

যথেষ্ট টমি বলল, শুনে পাগল…হ্যাঁ এটা পাগলের মতই বটে। তুমি কি মনে কর মিঃ রবিনসনের কাছে আরো কেউ থাকবে। সম্ভবত কর্নেল পাইকঅ্যাজন থাকবে।

সেক্ষেত্রে আমার সঙ্গে একটা কিসের লজেন্স নেওয়া উচিত। কি তাই না? ট্রুপেন্স বলল। সে যা হোক আমি মিঃ রবিনসনের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

***

ট্রুপেন্স গাড়ী আমার রাস্তার ফাঁকে উঁকি মেরে কৌতূহলোদ্দীপক স্বরে বলল। ঐ গাড়িটাই কি? আসলে ও ওর মেয়ে ডেবোররা এবং তার তিন ছেলে মেয়ের জন্য সে অপেক্ষা করছিল। পাশের দরজাটা দিয়ে বেরিয়ে এসে অ্যালবার্ট বলল, না ওরা এখনো এসে পৌঁছায়নি। ওটা মুসির ম্যাডাম।

ট্রুপেন্স সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করল অ্যালবার্টকে, তারপর হাঁফ ছাড়ল।

একটু পরে ডেবোরো তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ওখানে পৌঁছে গেল। ওদের পরস্পরের মধ্যে কুশল বিনিময় হল। ব্যাপারটা দেখতে ভালো লাগছিল।

পরে একসময় ওরা সবাই ছাদে গেল। বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে তারা চারিদিক দেখছিল। তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল পাখীরা মাথার ওপর দিয়ে অনেক অনেক দূরে উড়ে চলে যাচ্ছে। ট্রুপেন্সের এক নাতনি সেগুলি কি পাখি জিজ্ঞাসা করল।

সোয়ালো পাখি। দক্ষিণে উড়ে যাচ্ছে। ট্রুপেন্স বলল। ওরা কি আর ফিরবে না নাতনিটি জিজ্ঞাসা করল।

হা, ওরা পরের গ্রীষ্মে আবার ফিরে আসবে, কথাটা বলে একটু থেমে নাতনির দিকে ফিরে বলল। এক সময় এই বাড়িটার নাম ছিল সোয়ালোর বাসা। কিন্তু তুমি এখানে আর বাস করবে না; কি তাই তো? মেয়ে ডেবোরো জিজ্ঞাসা করল। বাবা আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিল যে তোমরা নাকি অন্য একটা বাড়ির সন্ধান করছো?

কয়েকটা কারণ বলছি, টমি বলল, তারপর ট্রুপেন্সের তালিকাটা ওকে দেখালো। চেঁচিয়ে পড়তে লাগল।

তুমি চুপ কর টমি–ওটা আমার তালিকা, ওটার ব্যাপারে তোমার কিছু করার নেই। ট্রুপেন্স বলল। কিন্তু এটার অর্থ কি? ট্রুপেন্সের এক নাতনি জিজ্ঞাসা করল। মনে হচ্ছে যেন কোন গোয়েন্দা গল্পের সূত্রের তালিকা। তুমি তো এ নিয়ে একটা গল্প লিখতে পারো ঠাকুমা।

অনেক নাম অনেক জটিলতা মেয়ে ডেবোরা বলল, অতবড় গল্পের বই কে পড়বে। তুমি শুনলে অবাক হবে। টমি বলল। লোকে পড়বে এবং উপভোগ করবে। টমি আর ট্রুপেন্স পরস্পরের দিকে তাকালো।

***

কি চমৎকার একটা খাদ্য তালিকা। ট্রুপেন্স বলল। ঘরে সমবেত মানুষগুলির দিকে একবার তাকিয়ে নিল। খাওয়াদাওয়া সেরে ওরা একটু আগে গ্রন্থাগারে কফিটেবিল ঘিরে বসেছে।

হ্যানিবল ট্রুপেন্সের পায়ের কাছে বসেছিল। মাঝে মাঝে কুকুরটা ল্যাজটা নাড়ছিল। এটা আদরের লক্ষণ।

একসময় মিঃ রবিনসন বলল, তুমি এবং তোমার স্বামী একটা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। তোমাদের কাছে আমি ঋণী। কর্নেল পাইকঅ্যাজন আমাকে বলল যে ব্যাপারটায় তোমরা উৎসাহী। ট্রুপেন্স সাংকেতিক স্বরে বলল, ঘটনাক্রমে হয়ে গেছে। আমি খুবই কৌতূহলী। আমি খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম। বিশেষ কতকগুলি ব্যাপার।

হ্যাঁ, তা আমি অনুমান করতে পারি। আর এখন নিশ্চয় তুমি এসবরে শেষ পরিণতিটা আসতেও তুমি সমানভাবে আগ্রহী।

ট্রুপেন্স আরো সংকোচিত হল। বলল ওহো..অবশ্যই আমি বলছি এসবই সম্পূর্ণ গোপন ব্যাপার মানে সবই চুপচাপ আর তাই আমি কোন প্রশ্ন করতে চাই না। কেন না আমি ব্যাপারটা আমাদের তুমি বলতে পারো না। আমি সেটা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি। বরং উল্টে আমি হলাম সেই ব্যক্তি যে তোমাকে একটা প্রশ্ন করবে। তথ্য নিয়ে তুমি যদি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আমি দারুণ ভাবে খুশী হব।

ট্রুপেন্স বিস্মিত বড় বড় চোখে মিঃ রবিনসনের দিকে তাকাল। তার কণ্ঠস্বরে তারই এভাব পড়ল আমি কল্পনা করতে পারছি না যে…। কথাটাও শেষ করতে পারল না।

তোমার একটা তালিকা রয়েছে। সেরকমটাই তোমার স্বামী আমাকে বলছে। তবে বলেনি তালিকাটি কি? ঠিকই করেছে। তালিকাটি তোমার গোপন সম্পত্তি। ওটার ব্যাপারে আমি কৌতূহলী।

ট্রুপেন্সের চোখ দুটি আবার চকচক করে উঠল হঠাৎ ওর মনে হল মিঃ রবিনসনকে ও বড় বেশী এখন পছন্দ করছে।

কয়েকমুহূর্ত ও নীরব রইল। একটু থামল। ভাবল। ও ব্যাগটায় হাত ঢুকিয়ে হাতড়ালো।

অপ্রত্যাশিত ভাবে মিঃ রবিনসন বলল, পাগল, পাগল সমস্ত পৃথিবীটাই পাগল, আমার প্রিয় নাটকে একটা বুড়ো গাছের নীচে বসে হ্যাঁন্স ম্যাচ এই কথাই বলেছিল।

ট্রুপেন্সের থেকে মিঃ রবিনসন তালিকাটি নিল। তুমি এটা চেঁচিয়ে পড় ট্রুপেন্স বলল। আমি সত্যি কিছু মনে করব না।

মিঃ রবিনসন তালিকাটি একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর সেটা ক্রিসপিনের হাতে দিল। অ্যাঙ্গাস আমার থেকেও তোমার কণ্ঠস্বর বেশী পরিষ্কার।

মিঃ ক্রিসপিন তালিকাটি ওর হাত থেকে নিয়ে পরিষ্কার উচ্চারণে পড়তে লাগল।

 ব্ল্যাক অ্যারো।

আলেকজাণ্ডার পারকিনসন,

মেরি জর্ডন স্বাভাবিক ভাবে মরেনি।

অক্সফোর্ড কেমব্রীজ

 গ্রিন হেন বললো

কে কে

মেথিলডের গেট

কেইন এবং হাবেল

ট্রুলভ।

পড়া শেষ হলে মিঃ ক্রিসপিন মিঃ রবিনসনের দিকে তাকালো। সে তখন ট্রুপেন্সের দিকে তাকিয়েছিলেন।

প্রিয় ট্রুপেন্স মিঃ রবিনসন বলল। তোমাকে আমি অভিবাদন জানাই। তোমাদের নির্ঘাত একটা অসাধারণ মন রয়েছে। তোমার বই তালিকাটি নতুন আবিষ্কারের ব্যাপারে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

খুব ভালো অনুসন্ধানের কাজ করেছে টমি। পাশ থেকে পাইকঅ্যাজন বলল। ওর দেওয়া আদমসুমারী আমাদের তদন্তে দারুণ ভাবে সাহায্য করেছে।

তোমরা উপহৃত দুটি রবিনসন বলল। কথাটা বলে সে আবার পেন্সের দিকে তাকাল মৃদু হাসল। আমি এখন অনুমান করছি যে তোমরা কৌতূহল না দেখালেও ব্যাপারগুলি সকলকে জানাতে চেয়েছে।

ওহো। বিস্মিত কণ্ঠস্বরে ট্রুপেন্স বলল সত্যিই তুমি আমি কিছু বলতে চলেছি? কি চমৎকার।

তুমি যে ভাবে দেখেছো সেই ভাবেই শুরু করতে হয়। পারিকিনসন পরিবার নিয়ে মিঃ রবিনসন বলল। অর্থাৎ বলতে হয় দূর অতীতের কথা। আমার নিজের প্রপিতামহ একজন পারিকিনসন ছিল তার কাছে থেকেই আমি কিছু জেনে ছিলাম।

কথাগুলি বলে মিঃ রবিনসন একটু থামলেন পরক্ষণে আবার বলতে শুরু করলেন। মেরি জর্ডন নামে মেয়েটি আমাদের গোয়েন্দা বিভাগে ছিল। এবং কাজ করত। নৌবাহিনীর সঙ্গে ওর যোগাযোগ ছিল। ওর মা ছিলেন একজন অস্ত্রীয়। আর সেই কারণেই ও জার্মান ভাষায় অনর্গল কথা বলে যেতে পারত।

রাজনৈতিক চিন্তার সাম্প্রতিক ঝোঁক হল বিশেষ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোন গোপন ব্যাপার চেপে রাখার। তবে তা চিরদিনের মত সংরক্ষিত রাখা উচিত নয়। নথিপত্র সক্ষম কিছু ব্যাপার আছে যা দেশের বিশেষ একটা যুগের ইতিহাস হিসাবে প্রকাশিত হওয়া উচিত। কয়েক বছরের মধ্যে নথিপত্রের সাক্ষ্যের সাহায্যে তিন থেকে চারখণ্ড বই প্রকাশ হতে চলেছে।

সোয়ালো বাসায় কি হত (বর্তমান বাড়িটার নাম সেই সময় ওটাই ছিল) বিষয়টির তাতে যুক্ত হবে।

ফাঁস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ছিল। যুদ্ধের সময় কিছু না কিছু ফাস হয়ে যেতো। তখন এমন কিছু রাজনীতিবিদ ছিলো যাদের আত্মমর্যাদা ছিল। তারা খুবই উচ্চ চিন্তা পোষণ করত। কয়েকজন প্রথম সারির সাংবাদিক সেইসব মানুষকে প্রভাবিত করত। তাদের আকাটের মত ব্যবহার করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এমন কিছু মানুষ ছিল যারা নিজের দেশের বিরুদ্ধে কাজ করত। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে কিছু বুঝে কিছু না বুঝে শুনেই কমুনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হয়েছিল। এবং এমন কি তার থেকেও বিপদজনক ফ্যাসিবাদ হিটলারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পূর্ণ উদ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল শান্তির প্রেমিকের কাজ করে।

কথাগুলি একটানা বলে গিয়ে মিঃ রবিনসন একটু থামলেন। একটু কেশে নিয়ে আবার শুরু করলেন। সম্পূর্ণ আস্থাই প্রতারণা করা। বাণিজ্যিক পৃথিবীতে গোয়েন্দা নিজে রাজনৈতিক জীবনে অহরহ এটাই ঘটে। একজন সৎ ভালোভাবে মূর্তির মানুষ সর্বদাই সন্দেহের উর্ধে থাকে। সেই মানুষটিই কিন্তু দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কাজে সামিল হোন। তাকে কেউই সন্দেহ করতে পারে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে তোমার গ্রাম এরকমই একটা দলের প্রধান কার্যালয় হয়ে উঠেছিল। মিঃ বেরেসফোর্ড খুব চমৎকার গ্রাম সেটা। অনেক চমৎকার ব্যক্তি ওখানে বাস করত সেই সমস্ত ব্যক্তি প্রত্যেকেই দেশপ্রেমিক। তারা কোন না কোনভাবে যুদ্ধে কাজ করেছে। নৌবাহিনীর একজন চমৎকার দেখতে কমাণ্ডার ছিলো। ভালো পরিবারের তিনি সদস্য ছিলেন। তার বাবা ওকে দারুণ ভালোবাসতেন। অনেকে জানত না যে রাসায়নিক যুদ্ধে তার ট্রেনিং রয়েছে যাকে বলে বিষয় গ্যাসযুদ্ধ।

আর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে মিঃ কেন বন্দরের কাছে একটা থাকত।

এসব হয়তো তুমি জানতে চাও না মিসেস বেরেসফোর্ড। তবে তোমাকে আগে ঘটনার প্রেক্ষাপটটা জানাতে হবে। মেরি জর্ডনকে ওখানে পাঠানো হয়েছিল কিছু খুঁজে বের করার জন্য।

আমার সময়ের আগে তার জন্ম। আমি যখন আমাদের জন্য ওর কাজের গল্প শুনলাম আমি ওর প্রতি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মেরি ছিল ওর খৃস্টান নাম যদিও সর্বদাই মলি নামে পরিচিত ছিল। ও খুব ভালোই কাজ করত। তবে ওর অত অল্পবয়েসে মারা যাওয়াটা একটা মর্মান্তিক ঘটনা। পেছনের দেওয়ালে একটা বাচ্চা ছেলের ছবি টাঙানো ছিল। ওটা দেখিয়ে মিঃ রবিনসন বললে, হা, তুমি ঠিকই চিনতে পেরেছে। ঐ হল আলেকজাণ্ডার পারকিনসন। যখন মারা যায় তখন ওর বয়স মাত্র এগাররা। মলি ওরই নার্সারি গভর্নের্স হিসাবে ঐ পরিবারে যায়। এটা ছিল মলির পক্ষে পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে সবথেকে সুবিধাজনক অবস্থান, তবে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো যে এসব ব্যাপারে পারকিনসন পরিবার একেবারে জড়িত ছিল না। কিন্তু এ বাড়িতে অন্যান্য কিছু অতিথি এবং বন্ধু ঐ দিন উপস্থিত ছিল। তোমার স্বাক্ষর কাছে আদমসুমারিটি কিন্তু ঐ দিনটিরই। ঐ দিন যারা ঐ বাড়িতে রাত কাটিয়েছিল তাদের প্রত্যেকেরই নাম ওতে রয়েছে সেই নামগুলির মধ্যে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জড়িত স্থানীয় ডাক্তারের মেয়ে এসেছিল তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে। তোমাকে বলা এই কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জড়িত ব্যক্তিটিই ছিল ওই ডাক্তার তা ডাক্তারের সেই মেয়েটি দুজন বন্ধুকে সঙ্গে করে এনেছিলেন পারকিনসন পরিবারকে বলে সেদিন ওরা সেখানে থেকে গিয়েছিল। ঐ বন্ধুগুলির সবই ঠিক ছিল। কিন্তু মেয়েটির বাবা পরে বুঝতে পেরেছিল যে অঞ্চলে সেসব ঘটছে তাতে ভীষণভাবে জড়িত ওরা সবাই। মেয়েটি নিজে পারকিনসন পরিবারকে কয়েক সপ্তাহ আগে বাগানের কাজে সাহায্য করেছিল। এবং পালং শাক এবং ফক্সগ্লোভ কাছাকাছি চাষ করার জন্য সেই দায়ী ছিল।

এই দুর্ঘটনার দিনে মেয়েটিই বিষাক্ত গাছটি সমেত পালং শাক তুলে নিয়ে এসে রান্না ঘরে রেখেছিল।

ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। মিসেস বেরেসফোর্ড। ঝোঁপের অন্তরাল থেকে তোমায় গুলি করা হল। পরে সেই আততায়ী মিস মুলিন্সের পরিচয়ে তোমার কাছে বসে তোমার কফির কাপে বিষ মিশিয়ে দিল। আমার মনে হয় মেয়েটি সেই অপরাধী ডাক্তারের নাতনি গোছের কেউ হবে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরর আগে সে মোনথানকেনের শিষ্য বলে মনে হয়। তোমার কুকুরটি কিন্তু শত্রুকে শনাক্ত করতে পেরেছিল। আর সম্ভাব্য ঐ মেয়েটিই আইজ্যাককে মাথায় মুগুর মেরে খুন করেছে।

ট্রুপেন্স জিজ্ঞাসা করল, যে ডাক্তারটি কি জানতে পেরেছে মেরি জর্ডন কি করেছে?

জবাবে মিঃ রবিনসন জানালো যে, না ডাক্তার তা জানত না কিন্তু কেউ একজন জানত। নৌবাহিনীর কমাণ্ডারটি পরিকল্পনা অনুযায়ী মেরির সঙ্গে কাজ করত। গুরুত্বপূর্ণ খবর সরবরাহ করার জন্য সপ্তাহে একদিন ছুটির নাম করে লণ্ডনে যেত।

কথাগুলি বলে মিঃ রবিনসন থামলেন। মিঃ পাইকঅ্যাজনের দিকে তাকালেন। মিঃ পাইকজন একটু কেশে তারপর শুরু করলেন।

কিন্তু ইতিহাস তার পুনরাবৃত্তি ঘটায় মিসেস বেরেসফোর্ড। প্রত্যেকেই তা আগেই হোক বা পরেই হোক জানতে পারে। হলকোয়ে সম্প্রতি একটা নিউক্লিয়াস সংস্কার করা হচ্ছে আর সম্ভবত সেই কারণেই মিস মুলিন্সকে ফিরে আসতে হল। আবার নির্দিষ্ট লুকানোর জায়গাটি ব্যবহৃত হতে লাগল। গোপন সভা হতে লাগল। আবার একবার অর্থ তাৎপর্যময় হয়ে উঠল-তা কোথা থেকে আসে কোথায় যায়। এখানে মিঃ রবিনসনকে ডাকা হল। এবং আমাদের পুরানো বন্ধু বেরেসফোর্ড আমাদের সব গুরুত্বপূর্ণ খবর দিল। আমরা যা সন্দেহ করেছিলাম। তার সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। বুঝলাম ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে আবার দেশের কিছু রাজনীতিবি? সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

তুমি কি বলতে চাও ব্যাপারটা এখনো ঘটে চলেছে? ট্রুপেন্সের চোখদুটি বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল।

ভাল কথা তোমাদের জানানো দরকার যে এ ব্যাপারে তোমাদের অবস্থান রয়েছে। হা ঐ কাঠের ঘোড়াটিই অর্থাৎ লেখার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল।

চমঙ্কার জিনিষ এই ঘোড়াটা কর্নেল পাইকঅ্যাজন বলল। এমন কি টুলভও সাহায্য করেছে। আমার মনে হয় ট্রুপেন্স বলল। কিন্তু আমি বলতে চাই যদি এসব এখন চলে। তুমি নিশ্চিত থাকো ইংল্যাণ্ডের ঐ অঞ্চলটির সংশোধিত ঘুঘুর বাসা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।