দশম পরিচ্ছেদ
১০.১
করোনারের সংক্ষিপ্ত বিচার আজকের মতো শেষ–পক্ষকালের জন্য মূলতুবী রাখা হয়েছে।
ডার্নলি নিচু গলায় বললো, যতটা ভেবেছিলাম সেরকম কিছু খারাপ হয়নি, কি বলল, কেন?
জনতার মধ্যে চাপা গুঞ্জন। এর কথাই তোমাকে বলেছিলাম। হ্যাঁ, ওই লোকটার বউটাকেই কে খুন করেছে। দেখতে পাচ্ছো, ওই যে যাচ্ছে…
গুঞ্জনের তীব্রতা তার কানে এলো, সেই শব্দগুচ্ছই আজকের প্রভাতী সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
ক্লিক ক্লিক…ক্যামেরা ঝলসে উঠলো ক্লান্তিহীনভাবে। রোজামন্ড বললো, ক্যাপ্টেন মার্শাল ও তার জনৈক বান্ধবী বিচারের শেষে রেড বুল থেকে বেরিলয়ে আসছেন। কেন, এড়াবার চেষ্টা করে লাভ নেই। বাস্তবের মুখোমুখি তোমাকে হতেই হবে। পুরনো যত বস্তাপচা শব্দে এর জবাব দিয়ে বাষ্পভরা কুটিল ঠোঁটে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকো।
তুমি বুঝি তাই করতে?
হ্যাঁ, কিন্তু তোমার পথ হলো বর্ণচোরা বহুরূপীয় পথ। এখানে সকলের চোখে তুমি ভীষণভাবে স্পষ্ট কারণ তুমি নিহত মহিলার স্বামী।
দোহাই তোমার, রোজামন্ড
তোমার ভালোর জন্যেই এসব বলছি, সোনা।
ক্রমে মার্শাল ও রোজামন্ড গ্রামের সীমানা ছাড়িয়ে আসতে আসতে রোজামন্ড বললো, আমাদের সেই ক্ষুদে মানুষটি পোয়ারো–তিনি কি সত্যিই এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন?
আমি কি করে জানবো, রোজামন্ড?
ভদ্রলোকের বয়সের ভীমরতি ধরেছে।
ওরা কংক্রীটের সেতুর কাছে এসে দাঁড়ালেন। রোজামন্ড হঠাৎ বললো, এই মুহূর্তে আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, ওরকম একটা নৃশংস ঘটনা এখানে ঘটতে পারে…।
কিন্তু প্রকৃতি বড় নিষ্ঠুর-প্রকৃতির কাছে এটা একরকম তুচ্ছ, তার বেশি কিছু নয়।
.
১০.২
লিন্ডা সেতুর ও-প্রান্তে এসে দাঁড়ালো, চোখের কোলে কালি, ওষ্ঠাধারে শুষ্কতা ও রুক্ষতা। ও বললো, কি হলো–কি বললো ওরা?
বিচার দু-সপ্তাহের জন্য মূলতুবী রাখা হয়েছে।
কিন্তু–ওদের মনে কি হচ্ছে?
মার্শাল হেসে, বড় অবুঝ তুমি–পুলিস যাই ভাবুক–সেটা ওরা এখন কাউকে বলছে না।
মার্শাল হোটেলে প্রবেশ করলেন। লিন্ডা ডাকলো, রোজামন্ড।
এত বেশি ভেবো না, লিন্ডা। তোমার মানসিক আঘাত–সবই জানি। ঘটনার বীভৎসতা তোমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে-তার বেশি নয়। তুমি নিজেও আর্লেনাকে একটুও পছন্দ করতে না।
তুমি কিছু বুঝতে পারছে না। আর ক্রিস্টিনও কখনও বোঝে না। তোমরা শুধু ভাবো। আমি অযথা চিন্তা করে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আসলে আমি যা জানি, তা যদি তুমি জানতে
কি জানো তুমি, লিন্ডা?
না, কিছু না।
শোনো লিন্ডা, সমস্ত ভুলে গিয়ে তুমি তোমার ভবিষ্যতের কথা ভাবো। আর সবচেয়ে প্রয়োজন, মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে থাকবে।
লিন্ডা যেন কুঁকড়ে গেলো, তুমি তাহলে সব জানো।
আমি কিছুই জানি না। আমার মতে ভবঘুরে কোনো পাগল হঠাই এই দ্বীপে এসে আর্লেনাকে খুন করেছে আর প্রকৃতপক্ষে তাই ঘটেছে।
একটা কথা আমাকে বলতেই হবে। আমার মাকে
বলো, কি হয়েছে তোমার মায়ের
মাকে-মাকে খুনের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল, তাই না?
হা।
আর তারপর, বাবা তাকে বিয়ে করে। তাতে মনে হয় না যে বাবা খুন করাটাকে সত্যি অন্যায় মনে করে না।
আর কখনও এ ধরনের কথা বলবে না। তোমার বাবার বিরুদ্ধে পুলিসের হাতে কোনো প্রমাণ নেই। তোমার বাবা সম্পূর্ণ নিরাপদ। আর এ জায়গা ছেড়ে চলে গেলেই, তুমি সব ভুলে যাবে–
আমি কোনোদিন ভুলবো না-বলেই ছুট দিলো।
.
১০.৩
একটা কথা আপনার কাছে আমি জানতে চাই, মাদাম
ক্রিস্টিন বললো, বলুন?
হ্যাঁ, বলছি। সেদিন দৈবক্রমে বলে ফেলা একটা সামান্য কথা–খুনের দিন সকালে আপনি মিস লিন্ডা মার্শালের ঘরে গিয়েছিলেন, ঘরে তাকে পাননি। তারপর কিভাবে তিনি ঘরে ফিরে আসেন। আপনি বলেছিলেন ও নাকি স্নান করতে গিয়েছিলো।
কিন্তু সে তো একই কথা।
না, মাদাম। আপনার উত্তর বিশেষ মনোভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছে, আপনার কথাতেই এ সন্দেহ স্পষ্ট। ও বললো, ও নাকি স্নান করতে গিয়েছিলো। তাকে দেখে, তিনি স্নান করতে গিয়েছিলেন শুনে আপনি যথেষ্ট অবাক হন?
সত্যি, আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়…যখন লিন্ডা বললো, ও স্নান করতে গিয়েছিলো, তখন ওর হাতে একটা প্যাকেট দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম…
তার ভেতরে কি ছিলো আপনি জানেন কি?
হা জানি। সুতোটা ছিঁড়ে যাওয়ায় প্যাকেটটা আলগা হয়ে গিয়েছিল, তাই কতকগুলো মোমবাতি মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
তার মোমবাতি কেনার কারণটা কি বলেছিলো?
না। তবে হয়তো ঘরের আলোটা কমজোরী তাই রাতে পড়াশোনা করার জন্য মোমবাতিগুলো কিনেছিলো
মিস মার্শালের বিছানার পাশে একটা চমৎকার বৈদ্যুতিক আলো আমার নজরে পড়েছে। আচ্ছা, মোমবাতিগুলো যখন পড়ে যায়, তখন তার মুখের অবস্থা কেমন ছিলো?
ওকে কেমন বিচলিত-হতবুদ্ধি মনে হয়েছিলো।
তার ঘরে একটা সবুজ ক্যালেন্ডার দেখেছেন?
একটা-সবুজ ক্যালেন্ডার-হা, ওরকম একটা ক্যালেন্ডার আমি দেখেছি কিন্তু কোথায় দেখেছি জোর দিয়ে বলতে পারবো না। কিন্তু আপনি কি বলতে চাইছেন, এ শব্দের অর্থ কি?
পোয়ারো বিবর্ণ-বাদামী চামড়ায় বাঁধানো ছোট্ট বইটা বার করে, এটা আগে কখনও দেখেছেন?
হ্যাঁ–মনে হয়, সেদিন গ্রামের লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে লিন্ডা এই বইটা দেখছিলো, কিন্তু আমাকে দেখেই সে বইটা বন্ধ করে ফেললো–একটু অবাক হয়েছিলাম।
পোয়ারো নামপত্রটি খুলে ধরলেন।
ডাকিনীবিদ্যা, মায়াবিদ্যা ও লক্ষণহীন বিষের মিশ্রণ পদ্ধতির বিস্তারিত ইতিহাস।
ক্রিস্টিন বললো, আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। এ সবের মানে কি?
খুনের দিন সকালে টেনিস খেলতে যাবার আগে আপনি কি স্নান করেছিলেন?
উহু। স্নান করবার ইচ্ছে আমার ছিলো না।
হোটেলে ফিরে স্নান ঘরে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। হাতমুখ ধোবার জন্য, ব্যস।
স্নানের জন্য কল খুলে রাখেননি তাহলে।
.
১০.৪
এরকুল পোয়ারো মিসেস গার্ডেনারের টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ালেন। ভদ্রমহিলা চমকে, আরে, মঁসিয়ে পোয়ারো, কখন এলেন, এইমাত্র বিচার সেরে ফিরলেন বুঝি? দেখুন না, এই টুকরো ছবির ধাঁধা নিয়ে মেতে আছি, এই সাদা টুকরোটা যে কোথায় লাগবে?
পোয়ারো টুকরোটা নিয়ে, এটা এইখানে বসবে, মাদাম। এটা বেড়ালটার একটা অংশ।
হতেই পারে না। এটা তো কালো বেড়াল।
কিন্তু লক্ষ্য করুন, বেড়ালটার লেজের প্রান্তভাগটা সাদা।
তাই তো, সত্যি আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। যারা এই ধাঁধাগুলো তৈরি করে তারা কত ফন্দিই না আঁটে।
আর একটা টুকরো যথাস্থানে বসিয়ে, মঁসিয়ে পোয়ারো, বেচারা মেয়েটা খুন হলো ভাবলেই আমি শিউরে উঠি। আজ সকালে মিঃ গার্ডেনারকে বলেছিলাম–যে করে থোক এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো। কিন্তু গোয়েন্দাগিরির প্রসঙ্গে বলি। আপনার কায়দাকানুনগুলো জানতে ভীষণ ইচ্ছে করে–যদি একটু বলেন
ব্যাপারটা আপনার এই ধাঁধার মতো মাদাম। সমস্ত টুকরোগুলো একজায়গায় জড়ো করতে হয়। তারপর মানানসই জায়গায় নির্ভুলভাবে বসিয়ে দিতে হয়।
আপনার হাতে কি এইরকম অনেক টুকরো রয়েছে?
হ্যাঁ মাদাম। হোটেলের প্রত্যেকেই একটি করে টুকরো দিয়েছেন ধাঁধার জন্য। আপনিও তার মধ্যে রয়েছেন। আপনার একটা মন্তব্য আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছে।
দারুণ আনন্দ হচ্ছে, একটু খুলে বলুন না।
মাপ করবেন, শেষ দৃশ্যে দেখতে পাবেন।
.
১০.৫
এরকুল পোয়ারো মার্শালের দরজায় টোকা মারলেন, ভেতরে টাইপরাইটারের শব্দ।
ভেতরে আসুন, ঘুরে তাকালেন না মার্শাল। দেওয়ালে টাঙানো আয়নায় প্রতিবম্ব পোয়ারোর চোখে চোখ রেখে বিরক্তির সুরে, বলুন মঁসিয়ে পোয়ারো, কি চান?
অনধিকার প্রবেশের জন্য ক্ষমা চাইছি। একটা প্রশ্ন।
প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়ে আমি ক্লান্ত। পুলিসের প্রশ্ন ছাড়া আর কারো প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়োজন আমার নেই।
শুধু আপনার স্ত্রীর মৃত্যুর দিন সকালে টাইপ সেরে টেনিস খেলতে যাবার আগে কি আপনি মান…
স্নান? তার ঘন্টাখানেক আগেই তো আমার মান হয়ে গেছে?
ধন্যবাদ আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই। পোয়ারো নিঃশব্দে দরজা ভেজিয়ে চলে গেলেন।
লোকটা নির্ঘাত পাগল।
.
১০.৬
মিঃ গার্ডেনারের সঙ্গে পোয়ারোর পানশালার বাইরে দেখা। তিনি দুটো ককটেল নিয়ে মিসেসের কাছে যাচ্ছিলেন?
আসবেন নাকি, মঁসিয়ে পোয়ারো?
মাথা নেড়ে বললেন, করোনারের বিচার সম্পর্কে আপনার মতামত কি গার্ডেনার?
মনে হয়, ওরা ফলাফল সম্পর্কে অনিশ্চিত। তবে আপনার পুলিস তাদের তুরুপের তাস আস্তিনে লুকিয়ে রেখেছে। মিসেস গার্ডেনারকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচি। ওর স্নায়ুর সহ্য ক্ষমতা কম।
পোয়ারো বললেন, স্পষ্ট করে বলুন তো, মিসেস মার্শাল সম্পর্কে আপনার ধারণা কী ছিলো?
নিচু পর্দায় গলার স্বর, জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, মেয়ে মহলে কতগুলো কথা আমার কানে এসেছে। সত্যি, কিন্তু মেয়েটা ছিলো এক নম্বরের বোকা।
আপনার কথাটা ভেবে দেখার মতো…
.
১০.৭
ডার্নলি বললো, এবার তাহলে আমার পালা। আগের দিন পুলিসপ্রধান তার তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আপনি ছিলেন নীরব দর্শক। আর আজ আপনি নিজে তদন্ত শুরু করেছেন। প্রথমে মিসেস রেডফার্ন, তারপর মিসেস গার্ডেনার, এখন আমার পালা।
সানি লজ-এ পোয়ারো ওর পাশে বসলেন, আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। বর্তমান দুর্ঘটনা নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে ভালোই লাগবে।
আমার তো মনে হয় ব্যাপারটা খুবই সহজ। মেয়েটার অতীত জীবনেই মূল সূত্র লুকিয়ে আছে।
অতীতে, বর্তমানে নয়!
আমার মনে হয়, হয়তো খুব তাড়াতাড়িই আলেনা মার্শাল পুরুষদের সম্পর্কে ক্লান্তি বোধ করতো। ওর অনুগামীদের মধ্যে এমন একজন ছিলো–যে এই ব্যবহারে তেমন খুশি হয়নি। আমার ধারণা সে আর্লেনার পিছু নিয়ে উপযুক্ত সুযোগে ওকে খুন করে।
আপনি বলতে চান যে বাইরের লোক, সেতু পার হয়ে দ্বীপে এসেছে?
হ্যাঁ। সম্ভবতঃ ওই গুহাটায় লুকিয়ে ছিলো।
কিন্তু খুনের পরিকল্পনা নিয়ে কোনো মানুষ প্রকাশ্য দিবালোকে সেতু পার হয়ে হোটেল অতিক্রম করার ঝুঁকি নেবে না।
সকলের চোখ এড়িয়ে আসাটা অসম্ভব নয়।
কিন্তু আবহাওয়া!
হ্যাঁ, খুনের দিনটা চমৎকার ছিলো। কিন্তু আগের দিনটা ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিলো এই দ্বীপটা। তাকে শুধু সমুদ্রতীরে রাতটা গুহায় কাটাতে হবে।
পোয়ারো নিচে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে, জানেন মাদমোয়াজেল, আমি সবসময় এই কথাটাই বিশ্বাস করি যে, সবচেয়ে সম্ভাব্য ব্যক্তিই কোনো অপরাধের নেপথ্য নায়ক। একেবারে শুরুতে একজনের প্রতি এই ইঙ্গিত স্পষ্ট। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তার পক্ষে এ খুন করা অসম্ভব। আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি।
নিশ্চয়ই।
সেদিন সকালে আপনি যখন টেনিস খেলার পোশাক পরতে আসেন, তখন কি স্নান করেছিলেন?
স্নান, কি বলতে চান আপনি!
চীনামাটির মসৃণ সুদৃশ্য আধার, কল খুলে জল ভর্তি করে শরীর ডুবিয়ে সেই জলে, শেষে বেরিলয়ে এসে হুশ-হুশ, অস্বচ্ছ জল চলে যায় পাইপ বেয়ে।
আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
বরং সম্পূর্ণ সুস্থ।
কি জানি, তবে আমি স্নান করিনি। কেউ হঠাৎ স্নান করতে যাবে কেন?
পোয়ারো হাসলেন, শান্তভাবে বাতাসের আঘ্রাণ নিলেন।
দুঃসাহসের সঙ্গে আমি বলবো যে সুগন্ধী আপনি ব্যবহার করেন তা অপূর্ব-এর একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে–আছে চমৎকার ছলনাময়ী আকর্ষণ। গ্যাব্রিয়েল, নম্বর ৮, তাই না?
হ্যাঁ, সবসময় আমি এটাই ব্যবহার করি।
মৃতা মিসেস মার্শালও এই সুগন্ধী ব্যবহার করতেন। অত্যন্ত আধুনিক ও দামী। খুনের দিন সকালে আপনি এখানে বসেছিলেন, মিস ব্রুস্টার এবং মিঃ রেডফার্ন সমুদ্রপথে যাওয়ায় আপনাকে অথবা আপনার রঙিন ছাতাটাকে দেখেছিলেন। হলফ করে বলতে পারেন যে সারা সকালে আপনি একবারের জন্যেও পিক্সির সেই গুহাতে ঢোকেননি?
জানতে চাইছেন, আমি আর্লেনাকে খুন করেছি কিনা?
না, পিক্সি গুহায় গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইছি।
ওটা কোথায় তাই আমি জানি না, তাছাড়া ওখানে যাবো কেন?
গ্যাব্রিয়েল নম্বর ৮ ব্যবহার করে এমন একজন খুনের দিন ওই গুহায় গিয়েছিলো।
আর্লেনা ওই সুগন্ধি ব্যবহার করতো। সেদিন ও পিক্সি কোভে গিয়েছিলো, গুহাতে ও গিয়ে থাকবে। আর সারা সকালে তো আমি এ জায়গা ছেড়ে কোথাও যাইনি।
শুধু একবার ক্যাপ্টেন মার্শালের ঘরে গিয়েছিলেন। টেবিলের মুখোমুখি ঝোলানো আয়নায় তিনি আপনাকে দেখেছিলেন, মাদমোয়াজেল।
পোয়ারার দৃষ্টি নিবদ্ধ রোজামন্ড ডার্নলির কোলে, ওর ভাঁজ করা হাতের দিকে, দীর্ঘ আঙুলের সমন্বয়ে সুন্দর গড়নের হাত।
আমার হাতের দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার কি ধারণা
.
১০.৮
এরকুল পেয়ারো গালকোভে যাবার রাস্তার শীর্ষদেশে নির্জন সৈকতে লাল জামা ও গাঢ় নীল প্যান্ট পরিহিত এক কৃষকায় শরীরকে দেখতে পেলেন।
পোয়ারো বেলাভূমিতে এসে লিন্ডা মার্শালকে দেখলেন। তিনি নিঃশব্দে ওর পাশে বসে অনুভব করলেন, কত অনভিজ্ঞ এবং দিশেহারা মেয়েটি।
ও বললো, কি ব্যাপার? কি চান?
সেদিন আপনি বলেছেন, আপনার সত্যাকে আপনি ভালোবাসতেন এবং তিনিও ভালো ব্যবহার করতেন। কথাটা সত্যি নয়–আপনি তাকে পছন্দ করতেন না–এটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
হয়তো সত্যি। কিন্তু মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে কথা বলা ঠিক নয়।
কোনো খুনের ঘটনায় লৌকিক ভদ্রতার চেয়ে সত্যভাষণের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ আর্লেনা মার্শালের হত্যাকারীকে খুঁজে বার করাই আমার প্রধান কাজ।
উঃ কি ভয়ঙ্কর, আমি সব ভুলে যেতে চাই।
কিন্তু ভুলতে পারছেন কি?
আপনি এমনভাবে বলছেন আপনি সব জানেন।
হয়তো জানি। যদি বলি, তোমার চুড়ান্ত অশান্তিতে আমি তোমাকে সাহায্য করবো!
ও লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমার কোনো অশান্তি নেই। আপনি কি জানতে চাইছেন?
আমি মোমবাতির কথা বলছি…।
আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলো, আমি আপনার কথা শুনবো না। কিছুতেই শুনবো না।
ও সৈকত পার হয়ে ছুটে চললো, আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে নিমেষে মিলিয়ে গেলো।