দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
২.১
পোয়ারোর পাশে বসলো রোজামন্ড ডার্নলি এসে। তিনি গোপন করার চেষ্টা করলেন না, তার মনের খুশিকে।
পোয়ারো কখনোও অস্বীকার করেননি, মহিলাদের মতো রোজামন্ড ডার্নলিকেও আন্তরিক শ্রদ্ধা করেন। ওর শরীরের কমনীয় সৌষ্ঠব, চলার গর্বিত ভঙ্গী তার ভালো লাগে। ঠোঁটের হাসিতে ছোট্টশ্লেষের আভাস। তার ভালো লাগে মেঘ-কালো চুলের সাবলীল ঝর্ণা।
তার মাঝে ইতস্ততঃ শুভ্রতার ছোঁয়া পরনে গাঢ় নীল পোশাক। পোয়ারোর নজর এড়ালো না। প্রথম দৃষ্টিতে পোশাকটা সাধারণ মনে হলেও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রোজামন্ড লিমিটেড, লন্ডনের শ্রেষ্ঠ পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান।
এখানে আমার একদম ভালো লাগছে না, রোজামন্ড বললো, ভাবছি কেন বেড়াতে এলাম, এতো জায়গা থাকতে।
আসেননি, আপনি এখানে আগে।
ইস্টারের ছুটিতে এসেছিলাম, বছর দুয়েরক আগে, এখানে তখন এত লোক ছিল না।
চোখ ফেরালেন এরকুল পোয়ারো ওর দিকে। আপনাকে ভাবিয়ে তোলার মতো কিছু একটা হয়েছে, শান্ত স্বরে বললেন, তাই না?
ধীরে ধীরে পা দোলাতে দোলাতে সম্মতি জানালো। চঞ্চল্ল পায়ের দিকে চোখ নামিয়ে তাকালো। আমি একটা প্রেতাত্মার মুখোমুখি হয়েছি, তারপর বললো, আমার চিন্তার কারণ প্রেতাত্মা মাদমোয়াজেল। হ্যাঁ কিসের কার প্রেতাত্মা, ওহো! নিজেরই আমার। শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন, প্রেতাত্মা দুঃখ দিয়েছে আপনাকে। ভীষণ দুঃখ দিয়েছে, জান সে আমাকে নিয়ে গেছে অতীতে। তারপর বললো–ছেলেবেলাকার কথা একবার ভাবুন তো আমার, আপনি তো আর ইংরেজ নন। আপনি পারবেন না, পোয়ারো প্রশ্ন করলেন, আপনার ছেলেবেলা পুরোপুরি ইংরেজ পরিবেশে কেটেছে? সম্পূর্ণ ইংরেজ পরিবেশে, সবুজ গ্রাম, বিশাল জীর্ণ বাড়ি, কুকুর ঘোড়া, পথ হাঁটা বৃষ্টিতে, বাগানে আপেল গাছ। ছেঁড়া সান্ধ্য পোশাক, যা বছর বছর চলছে। একটা অবহেলিত বাগান। শরৎকাল, মাইকেল ম্যাস ডেইজিরা চোখ-ধাঁধানো নিশানের মতো হাজির হতো।
পোয়ারো প্রশ্ন করলেন, আপনি অতীতে ফিরে যেচে চান?
মাথা নাড়লো রোজামন্ড, বললো, ফিরে যেতে কেউ পারবে না, কখনও হয় না। কোনো ভাবে ফিরে যেতে পারলে খুশি হতাম, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে পোয়ারো বললেন। সশব্দে হাসলো রোজামন্ড। সে তো আমারও আছে। পোয়ারো বললেন, যখন ছোট ছিলাম, একটা খেলা ছিল তখন, তার নাম, তুমি যদি না হতে চাও–তুমি কি হতে চাও তবে। এর উত্তর ছোট ছোট মেয়েলি অ্যালবাম রাখা হতো লিখে। নীল চামড়ায় বাঁধানো অ্যালবামগুলো ছিলো, সোনালি পাতে মোড়া ধারগুলো। মাদমোয়াজেল এর উত্তরটা কিন্তু সহজ নয়।
হ্যাঁ, আমারও তাই ধারণা, রোজামন্ড বললো। কেউই বোধহয় রানি এলিজাবেথ হতে চাইবে না। সেটা একটা বিরাট ঝুঁকি। বন্ধু-বান্ধবের কথা যদি বলেন, তাদের ব্যাপারে আমরা বড্ড বেশি জানি। একবার-এক চমৎকার দম্পতির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। পরস্পরের প্রতি ব্যবহার এত উচ্ছল, এত সুন্দর, নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক এত ভালো ছিলো। বিয়ের বহু বছর পরেও আমি মাহিলাটিকে রীতিমতো ঈর্ষা করতাম, ওঁর সঙ্গে জায়গা বদল করতে স্ব-ইচ্ছায় রাজি ছিলাম। কে যেন বললো, আমাকে, পরে ওরা নাকি এগার বছর ধরে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেন না।
ও হাসলো সশব্দে।
বোঝা যায় কারো সম্পর্কে কেউ বলতে পারে না, তাই না?
কয়েক মুহূর্তে নীরবতার পরে পোয়ারো বললেন, অনেকেই আপনাকে কিন্তু ঈর্ষা করবে, মাদমোয়াজেল।
শীতল স্বরে জবাব দিলো রোজামন্ড ডার্নলি, ওহ, হ্যাঁ। স্বাভাবিক ভাবেই। কপালে ভাঁজ পড়লো চিন্তায় ওর, শ্লেষের হাসির ফুটে উঠলো ঠোঁটের বক্রতায়।
আমি সার্থক সত্যিই কোনো মহিলার নিখুঁত প্রতিচ্ছবি। আমি কোনো শিল্পীর মতো সফল সৃজনশীল আনন্দ পাই (ভালোবাসি জামা-কাপড়ে নকশা করতে সত্যি আমি), সেই সঙ্গে পাই সফল কোনো ব্যবসায়ীর আর্থিক পরিতৃপ্তি। অবস্থা ভালো আমার, ভালো স্বাস্থ্য, মুখশ্রী মোটামুটি, আর তেমন বেশি নয় জিভের ধার। বিস্তৃত হলো ওর হাসি, একটু থামলো ও। আমার কোনো স্বামী নেই অবশ্য। মঁসিয়ে পোয়ারো একটা জায়গায় আমি হেরে গেছি, তাই না?
মনে রাখা সুরে জবাব দিলেন পোয়ারো, আপনি যদি অবিবাহিতা হয়ে থাকেন তার কারণ আমাদের পুরুষদের কেউই আপনাকে তেমনভাবে আকর্ষণ করেনি। নিজস্ব পছন্দ থেকেই আপনি নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নিয়েছেন, প্রয়োজনের জন্য নয়।
আপনিও হয়তো মনে মনে বিশ্বাস করেন, অন্য সব পুরুষদের মতো স্বামী-পুত্র ছাড়া কোনো স্ত্রীলোকাই পূর্ণতা পায় না, রোজামন্ড ডার্নলি বললো।
কাঁধ ঝাঁকালেন পোয়ারো। সাধারণ স্ত্রীলোকের জন্য বিয়ে করা এত সন্তানের মা হওয়া আপনার মতো খ্যাতি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এমন মহিলা শয়ে একটা বেশি আরও একটা দেখা যায় হাজারে।
বিস্তৃত হাসলো রোজামন্ড, আমি একটা বিচ্ছিরি আইবুড়ি ছাড়া কিছু নয়, কিন্তু তবুও আজকাল একটা কথাই সব সময় মনে হয়, একটা ছাপোষা শান্ত জোয়ান স্বামী আর এক পাল বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আমি হয়তো বেশি সুখী হতাম, কথাটা সত্যি তাই না। কাঁধ ঝাঁকালেন পোয়ারো, আপনি যখন বলছেন মাদমোয়াজেল, তখন সত্যি।
রোজামন্ড হেসে উঠলো, একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখলো, ওর ভারসাম্য যেন আবার ফিরে এলো।
মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, আপনি ভালোভাবেই জানেন কিভাবে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।
আপনাদের সঙ্গে আবার তর্ক জুড়ে দিই। মহিলাদের প্রতিষ্ঠার পক্ষে আমি এখন যেভাবে আছি তা আপনি বেশ ভলোভাবেই জানেন বেশ সুখেই আছি। বাগানের নাকি বলবো এই সৈকতের সমস্ত খুবই সুন্দর, মাদমায়াজেল, ঠিক বলেছেন।
সিগারেট কেস বের করলেন পোয়ারো, সন্তর্পণে তুলে নিলেন ছোট্ট সিগারেট। নিতান্তই ধূমপানের প্রতি করুণা বশে। ক্যাপ্টেন মার্শাল একজন পুরনো বন্ধু মাদমোয়াজেল, পোয়ারো উচ্চারণ করলেন মৃদু স্বরে।
রোজামন্ড সোজা হয়ে বসলো। বললো, ওহ কেউ হয়তো বলে থাকবে, মাথা নাড়লেন পোয়ারো। আমি একজন গোয়েন্দা আমাকে কেউ কোনো কথা বলেনি। শত হলেও মাদমোয়াজেল একটু ভেবে দেখুন আমি তো বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা বোঝাতে চাইলেন ক্ষুদে মানুষটি হাত নেড়ে। এখানে এসেছেন এক সপ্তাহের বেশি। আপনি হাসিখুশি মানুষ আজ হঠাৎ বলছেন প্রেতাত্মার কথা। গত কয়েকদিনে কেউ এখানে আসেননি, কাল রাত্রে এসেছেন ক্যাপ্টেন মার্শাল, স্ত্রী ও মেয়ে। আজ এই পরিবর্তন একটা অত্যন্ত স্পষ্ট।
রোজামন্ড ডার্নলি বললো, কথাটা সত্যি। মার্শালরা আমাদের বাড়ির পাশেই থাকতো। মার্শাল আমাদের ছেলেবেলাকার বন্ধু। ভালো ব্যবহার করতো আমার সঙ্গে। কম করে পনেরো বছরের বেশি আমার সঙ্গে দেখা নেই। ও, আমার চেয়ে পাঁচ বছরের বড় হলেও সমবয়েসির মতো মিশতে। গভীর চিন্তার সুর ভেসে উঠলো কণ্ঠে, পনেরো বছর ছিল সুদীর্ঘ সময়। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো রোজামন্ড।
এরকুল পোয়ারো বললেন, কিছুক্ষণ নীরবতার পর, দরদী মানুষ কি বলেন ক্যাপ্টেন মার্শাল উষ্ণ স্বরে রোজামন্ড বললো, খুব ভালো লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো একজন। ভীষণ শান্ত ও চাপা স্বভাবের মানুষ ও। আজেবাজে বিয়ে করানো ঝোঁক ওর একমাত্র বড় দোষ।
গভীর সমব্যাথীর সুরে বললেন পোয়ারো, হু।
মেয়েদের ব্যাপারে একদম বোকা রোজামন্ড ডার্নলি বলে চললল, আপনার মনে আছে মার্টিংড়োল মামলাটা।
ভুরু জোড়া কুঁচকে উঠলো পোয়ারোর, মার্টিংডেল! মার্টিংডেল! আর্সেনিক, তাই না।
মহিলাটিকে স্বামীকে খুন করার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সতেরো আঠারো বছর আগেকার ঘটনা। ভদ্রলোক নিয়মিত আর্সেনিক খেতেন এ কথা প্রমাণিত হওয়ার পর তার স্ত্রীকে মুক্তি দেওয়া হয়, মেয়েটিকে বিয়ে করে বসলো। তার ছাড়া পাবার পর সাধারণত এই ধরণের বোকার মতো কাজ করে থাকে ও।
মৃদু স্বরে বললেন, এরকুল পোয়ারো, মেয়েটি নির্দোষ হয়ে থাকে যদি। আমার ধারণা মেয়েটি নির্দোষ ছিলো। তার কোনো মানে নেই কাঠগড়ার মেয়েটিকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করার মতো মেয়ে অনেক আছে, পোয়ারো নীরব রইলেন। নীরব থাকলে জানতেন রোজামন্ড ডার্নলি ওর কথা বলে যাবে। তাই করলো ও, অবশ্য তখন কেনের বয়স ছিল কম। সবে একুশ, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো ও। বউ মারা গেল লিন্ডার জন্মের সময়। বিয়ের ঠিক এক বছর পর ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলো। স্ত্রীর মৃত্যুতে সে দুঃখকে ভুলবার জন্য কিছুদিন হৈ-চৈ করে কাটিয়ে দেয়।
থামলো ও একটু। এই আর্লেনা স্টুয়ার্টের ব্যাপারটা তারপরেই ঘটলো। আর্লেনা বিভূতে ছিলো তখন। সেখানে কডরিংটন বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। লেডি কডরিংটন তার স্বামীকে ডিভোর্স করেন আর্লেনা স্টুয়ার্টের জন্যই। লোকে বলে একেবারে মজে গিয়েছিলেন লর্ডকডরিংটনের জন্য। সবাই ভেবেছিল ও বিয়ে করবে আদালতের চুড়ান্ত রায় বেরেলেই। কিন্তু তা হল না কার্যক্ষেত্রে। সরাসরি ওকে পাশ কাটালেন লর্ড কডরিংটন। যদুর মনে পড়ে তার নামে মামলা ঠুকছিলো আর্লেনা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অপরাধে। যাই হোক তখন এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রচুর হৈ চৈ হয়েছিলো। তার একটা ঘটনা ঘটলো, কেন গিয়ে ওকে বিয়ে করে বসলো। বোকা এক নম্বরের। মিস স্টুয়ার্ট এ ধরনের বোকামির জন্য ক্ষমা করা যায় কোনো পুরুষকে? মৃদু স্বরে বললেন এরকুল পোয়ারো। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই বছর তিনেক আগে ওকে নিয়ে হলো আর এক কেলেঙ্কারি। স্যার রজার আরস্কিন মারা যাবার সময় তার সম্পত্তি আর্লেনাকে দিয়ে গেলেন। এই ব্যাপারটাই কেনের চোখ খুলে দেবে। আর কিছু না থোক। তাই কি হয়নি, কাঁধ ঝাঁকালো রোজামন্ড ডার্নলি। বহুদিন দেখা হয়নি ওর সাথে। অবশ্য লোকে বলে–ব্যাপারটা ও ঠান্ডা মেজাজে নিয়েছিলো। সেটাই আমার জানতে ইচ্ছে করে। কেনই বা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে ও ওর স্ত্রীকে। হয়তো অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।
সব ব্যাপারেই নির্বিকার থাকা, নিজের সম্পর্কে সত্যি সত্যি ও কি ধরাণা করে, জানি না। কেউই জানে না। শুধু আমি কেন মিসেস মার্শাল, নিজের স্বামীর সম্পর্কে কি ধারণা তার। পোয়োরোর দিকে রোজামন্ড স্থির চোখে চেয়ে রইল। ও বললো, আর্লেনা? সেরা স্বর্ণসন্ধানী ও পৃথিবীর একটা নরখাদক বাঘিনী। সেই সঙ্গে নতুন খেলা তখন শুধু হতো, যখন কোনো বস্তু ওর একশো গজের মধ্যে আসে। ও ওই ধরনের মেয়ে। ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন পোয়ারো পূর্ণ সম্মতি জানিয়ে। মিসেস মার্শালের চোখ শুধু একটা জিনিসই খুঁজে বেড়ায়, পুরুষ। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনার কথা মিথ্যে নয়। প্যাট্রিক রেডফানের উপর নজর পড়েছে রোজামন্ড বললো, একটা সোজা ধরনের নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসেন তিনি এবং তথাকথিত কলির কেষ্ট নয় আর্নেলার পুরুষরাই এই ধরনের প্রিয় খাদ্য। আমার ভালো লাগে তার বিবর্ণ চেহারায় সৌন্দর্য আছে একটা নিজস্ব প্রতিযোগিতায় তিনি পেরে উঠবেন নরখাদক বাঘিনী আর্লেনার সঙ্গে আমার মনে হয় না। আপনি ঠিক বলেছেন না, পোয়ারো বললেন, যন্ত্রণার ছায়া মুখমণ্ডলে তার।
যতদূর জানি, ক্রিস্টিন রেডফার্ন ইস্কুলের দিদিমণি ছিলেন, রোজামন্ড বললো। যারা বিশ্বাস করেন, সেই ধরনের মহিলা তিনি। ঘটনার প্রভাব থাকে মনের উপর। তিনি এক কঠিন আঘাত পাবেন খুব শিগগীরই।
বিহ্বলভাবে মাথা নাড়লেন পোয়ারো। রোজামন্ড উঠে দাঁড়ালো, বললো, পরিস্থিতি বলুন তো কি বিশ্রী। তারপর অনিশ্চিত সুরে যোগ করলো, কারো অত্যন্ত কিছু করা উচিত এ ব্যাপারে।
.
২.২
লিন্ডা মার্শাল শোবার ঘরের আয়নায় নিজের মুখমণ্ডল শান্তভাবে জরিপ করছিলো। ভীষণ অপছন্দ হলো ওর নিজের মুখ ওর কাছে। এই মুহূর্তে সে মুখের অধিকাংশ হাড় ও বিন্দু বিন্দু দাগের উপস্থিতি প্রকট বলে মনে হলো। ওর একরাশ নরম বাদামী চুল, ধূসর সবুজ চোখ, উঁচু হাড় ও গালের চিবুকের দীর্ঘ উদ্ধত রেখা। ততটা খারাপ নয় মুখ, দাঁতও বিরক্তভাবে লক্ষ্য করলো। দাঁতের সৌন্দর্যে কি আসে যায় নাকের পাশে ওটা কি কোনো দাগ? নিশ্চিত হলাম ওটা কোনো দাগ নয়। ও আপন মনে ভাবছে ভীষণ বিচ্ছিরি ষোলো বছরে পা দেওয়া।
কেউ বুঝতে পারে না এ সময় তার সত্যিকারের অবস্থাটা। লিন্ডা ছোট অশ্বশাবকের মতো হতবুদ্ধি, কোনো শজারুর মতো স্পর্শবিরূপ। প্রতিটি মুহূর্তে সচেতন, নিজের অগোছালো অবস্থা সম্পর্কে প্রতিটি মুহূর্তে ও জানে, দ্বীধাগ্রস্ত ওর মন, খারাপ ছিলো না স্কুলের দিনগুলো। স্কুল ছেড়ে এসেছে এখন ওর ঠিক কেউ জানে বলে মনে হয় না, এরপর ও কি করবে। ওকে প্যারিসে পাঠিয়ে দেবার কথা ওর বাবা ভাসা ভাসা ভাবে বলেছিলেন সামনের শীতে। লিন্ডা প্যারিসে যেতে চায় না, ভালো লাগছে না বাড়িতে থাকতেও। কোনোদিনও স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেনি, ওকি এর আগে ভীষণ অপছন্দ করে আর্লেনাকে। লিন্ডার সবুজ চোখজোড়া হয়ে উঠলো কঠিন, মুখ টান টান হলো উত্তেজনায়।
আর্লেনা, আপন মনেই ভাবলো ও একটা পশু, সবাই বলে সৎমা থাকাটাই ভীষণ বিচ্ছিরি, কথাটা সত্যি। আর্লেনা ওর সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহার করে তা নয়। বেশির ভাগ সময় খেয়ালই করে না লিন্ডাকে। যখন করে ওর চোখে থাকে এত অবজ্ঞাভরা কৌতুক। আরো বেশি প্রকট করে তোলে, লিন্ডার কিশোরীসুলভ বিশৃঙ্খল অবস্থাকে। আর্লেনার আশেপাশে কেউই নিজেকে ভীষণ অপরিণত অমার্জিত ভেবে লজ্জা পায়…। হাতড়ে চললো লিন্ডা আনাচে-কানাচে খাপছাড়াভাবে। মনের ভাবকে আলাদা করে বেছে নিয়ে নামকরণে অভ্যস্ত নয় ও। মানুষগুলোকে, বাড়িটাকে আর্লেনা কি যেন একটা করে।
লিন্ডা সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবলো ও ভীষণ ভীষণ খারাপ। কিন্তু এখানেই থাকলে চলবে না। নৈতিক উন্নাসিকতায় নাক সিটকে ওকে মনে থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। কি যেন করে মানুষগুলোকে, অবাক হয়ে ভাবলো ও এখন সম্পূর্ণ অন্যরকম। ওকে বাবা স্কুল থেকে ফিরিয়ে নিতে আসছেন। জাহাজে করে বেড়াতে যাচ্ছেন বাবা ওকে নিয়ে আর্লেনার সঙ্গে বাবার বাড়িতে। তার মন সেখানে থাকে না। যেন নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন।
আমার কাছে অসহ্য দিনের পর দিন মাসের পর মাস এইভাবে চলবে, লিন্ডা ভাবলো। ওর সামনে জীবন দীর্ঘায়িত হলো। আর্লেনার উপস্থিতিতে অন্ধকার ও বিষাক্ত একরাশ দিনের মিছিলে শিশুসুলভ মনে সময় সম্পর্কে এখনও কোনো স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠেনি। এক একটা বছর যেন অনন্তকাল মনে হয় লিন্ডার কাছে। আর্লেনার প্রতি ঘৃণার এক বিশাল জলন্ত কালো
দূর সমুদ্রের দিকে তাকালো আয়নার উপর চোখ তুলে, সত্যি এ জায়গাটা চমৎকার। সমুদ্রতীর মনোরম, নির্জন উপকূল আর পায়ে চলার আঁকাবাঁকা পথ বিচিত্র। অজানা জায়গা আবিষ্কারের আনন্দ। একা একা খুশিমতো হুল্লোড় করার জায়গা। ছেলেরা তাই ওকে বলেছিলো, গুহাও আছে। লিন্ডা ভাবলো, আর্লেনা যদি এখান থেকে চলে যেত আমি আনন্দ করতে পারতাম তাহলে। এখানে এসে উপস্থিত হয়েছিলো মন ফিরে গেলো সেই বিকেলে। বেশ মজা হয়েছিল মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপে আসাটা। তখন জোয়ারের জলে ডুবে ছিল কংক্রিটের সেতুটা। ওরা আসে নৌকা করে। অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল। হোটেলটাকে দেখে, সামনে বসে থাকা একজন লম্বা তামাটে চোহারার মহিলা ওদের দেখে লাফিয়ে উঠেছেন, আরে কেনেথ বললেন। ওর বাবা বিস্মিতভাবে বলে উঠেছেন ভীষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রোজামন্ড।
রোজামন্ড তারুণ্যের চুল চেরা বিচার করলো, লিন্ডা সিদ্ধান্ত নিলেও মেনে নিতে পেরেছে রোজামন্ডকে বেশ বুদ্ধিমতী। রোজামন্ড ভাবলো চোহারার সঙ্গে মানিয়ে তৈরি ওর চুলটা। বেশিরভাগ লোকের চোহারার সঙ্গে চুল মানায় না। এছাড়া ওর পোষাক ছিল সুন্দর, ওর মুখে যেন এ অদ্ভুত খুশি। এই খুশির লক্ষ্য রোজামন্ড নিজে অন্য আর কেউ নয়। রোজামন্ড লিন্ডার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করেছে। আজেবাজে কথা বলেনি কখনও। যাতে মনে হয় লিন্ডাকে ও বোকা ভাবছে। রোজামন্ড কখনো এমন ভাবে করেনি। সত্যি কথা বলতে কি, লিন্ডাকে সত্যিকারের মানুষ মনে করেই ওর সঙ্গে কথা বলছে রোজামন্ড। লিন্ডার নিজেকে কম সময় সত্যিকারের মানুষ বলে মনে হয়, কেউ ওকে মর্যাদা দিলে তার প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।
বাবা খুশি হয়েছে মিস ডার্নলিকে দেখে। আশ্চর্য, মুহূর্তে বদলে গেছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ। ওকে দেখে মনে হচ্ছে লিন্ডা। হ্যাঁ অনেক ভেবে ঠিক করলো কমে গেছে বয়স। তিনি হেসে উঠলেন। এক অদ্ভুত বালকসুলভ হাসি। বাবাকে সে খুব কম সময়ে হাসতে দেখেছে। লিন্ডার হঠাৎ মনে পড়লো।
অন্য এক মানুষের ঝলক দেখতে সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ। ও কেমন বিহ্বল হয়ে পড়ল। ও ভাবলো আমার বয়েসের সময় বাবা কেমন ছিল।
ও হাল ছেড়ে দিলো ও ভাবা অনেক শক্ত। ওর মনে একটা নতুন চিন্তা ঝলসে উঠলো। এখানে এসে মিস ডার্নলির সঙ্গে দেখা পেতো শুধু ও আর ওর বাবা, কি মজাই না হতো।
ফুটে উঠলো এক কল্প-দৃশ্য, কিছুক্ষণের জন্য খুলে গেলো কল্পনার দরজা। ছোট ছেলের মতো হাসছে বাবা, মিস ডার্নলি, আর ও নিজে এই দ্বীপের সমস্ত মজা, গুহা, আনন্দ অন্ধকারের ঢেউয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। কেন সম্ভব নয়, আর্লেনার সঙ্গে থাকলে কে জানে ওর পক্ষে সম্ভব, কিন্তু লিন্ডারের পক্ষে সম্ভব নয়। কাছাকাছি থাকে এমন কেউ কে সুখী হতে পারে। ঘৃণা করে আর্লেনাকে, ও ঘৃণা করে।
অত্যন্ত ধীর ঘৃণায় জ্বলন্ত ঢেউ আবার উথলে উঠলো। ফ্যাকাসে হয়ে গেলো লিন্ডার মুখ। সামান্য ফাঁক হলো ঠোঁট দুটো চোখের তারা তীক্ষ্ণ হয়ে এলো। বাতাস আঁকড়ে ধরলো আঙুলগুলো ক্রমশ।
.
২.৩
কেনেথ মার্শাল স্ত্রীর ঘরের দরজায় টোকা মারলেন। ওর সাড়া পেতেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। আর্লেনা তখন শেষবারের মতো সাজগোজ দেখে নিচ্ছিলো। ওর পরনে মৎসকন্যার মতো চোখ ধাঁধানো সবুজ পোশাক। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ম্যাস্কারা লাগাচ্ছিল চোখের পাতায়। ও, তুমি। হ্যাঁ, তোমার হলো কিনা দেখতে এলাম। কেনেথ মার্শাল এগিয়ে গেল ধীর পায় জানলার কাছে, সমুদ্রের দিকে তাকালেন। তার মুখমণ্ডল বরাবরের মতোই অভিব্যক্তিহীন। সেই সঙ্গে শান্ত ও স্বাভাবিক। আর্লেনা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল।
তুমি চিনতে না রেডফার্নকে আগে। হ্যাঁ সোনা, আর্লেনা সহজ ভাবেই উত্তর দিলেন। কোনো এক পার্টিতে দেখা হয়েছিল। ওকে আমার বেশ ভালো লেগেছিলো।
তুমি কি জানতে সে এবং তার স্ত্রী বেড়াতে আসছে। আর্লেনা গভীর আয়তন চোখ মেলে ধরলো। ভীষণ অবাক হয়ে গেছো না সোনা।
শান্ত স্বরে কেনেথ মার্শাল বললেন, ভাবছিলাম আমি এ জায়গার কথা তোমার মাথায় এসেছে, কারণ সেটা তুমি জানতে। আমরা যাতে এখানে আসি তুমি বরাবরই একটু বেশি আগ্রহ দেখিয়েছো, আর্লেনা স্বামীর দিকে ঘুরে তাকাল, ম্যাস্কারা নামিয়ে রাখল। নেশা ধরানো নরম হাসি হাসলো। বললো, এ জায়গাটার কথা কে যেন আমাকে বলেছিলো। মনে হয় রাইল্যান্ডরা! ওরা বলেছিলো জায়গাটা খুব সুন্দর চমৎকার। কেন তোমার ভালো লাগছে না।
কি জানি, জানি না, কেনেথ মার্শাল বললেন। কেন তুমি তো ভালোবাসো সমুদ্রে স্নান করতে ঘুরে বেড়াতে। তোমার নিশ্চয় ভালো লাগবে এখানে। জায়গাটা তোমার অত্যন্ত ভালোই লাগবে, বেশ বুঝতে পারছি।
আর্লেনার চোখের আয়ত আরও বিস্তৃত হলো। কেনেথ মার্শালের দিকে তাকালো অনিশ্চিত দৃষ্টিতে। কেনেথ মার্শাল বললেন, আসল ব্যাপারটা হলো, তুমি রেডফার্নকে জানিয়েছে আগেই, তুমি এখানে এসেছে।
আর্লেনা বললো, তুমি এরকম কথা বলছ কেন কেনেথ সোনা?
শোনো আর্লেনা, কেনেথ মার্শাল বললেন, তুমি কি ধরনের মেয়ে আমি জানি। তাই বলছি মোটামুটি সুখী স্বামী-স্ত্রী রেডফার্নরা। ওর বউকে ভালোবাসে ছেলেটা সত্যি। ওদের সুখের সম্পর্কে চিড় ধরুক তুমি কি চাও?
আর্লেনা বললো, দোষ দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? কেন আমি তো কিছু করিনি। আমি কি করতে পারি, কিছুই করিনি। চোখের পাতায় কাঁপন ধরলো আর্লেনার।
আমি অবশ্য জানি; পুরুষরা আমাকে দেখে পাগল হয়ে যায়। ওদের অমনি হয়, কিন্তু সে আমার দোষ নয়।
রেডফার্ন তোমার জন্য পাগল তুমি তাহলে স্বীকার করছে। নিছকই ওর বোকামি, আর্লেনা অস্পষ্ট স্বরে জবাব দিলো। এক পা এগিয়ে গেল স্বামীর দিকে।
তুমি ছাড়া আর কারো কথা আমি ভাবি না, তুমি তো জানো।
কৃষ্ণাভ চোখের পাতার ফাঁকে কেনেথ মার্শালের চোখে তাকালো আর্লেনা। সে দৃষ্টি এক কথায় বিস্ময়কর… যা খুব কম পুরুষই প্রতিরোধ করতে পারে। কেনেথ মার্শাল গম্ভীরভাবে চোখ নামালেন আর্লেনার চোখে। তার মুখ অভিব্যক্তিহীন। শান্ত কণ্ঠে আর্লেনা বললেন, আমার ধারণা আমি বেশ ভালোভাবেই চিনি।
.
২.৪
দক্ষিণ দিকে বেরোলেই আপনার চোখে পড়বে হোটেলের বিস্তৃত বাঁধানো উঠোন। সমুদ্রতীর তার নিচেই। পাহাড়টার কোল ঘেঁষে আরও একটা দ্বীপকে ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গেছে। কিছুটা গেলে কয়েক ধাপ সিঁড়ি সেই পথ ধরে আপনাকে নামিয়ে নিয়ে যাবে পাহাড়র পাথর কেটে তৈরি কতকগুলো কৃত্রিম কুঠুরির দিকে। সানি লজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে হোটেল থেকে প্রচারিত দ্বীপের মানচিত্রের এই জায়গাটাকেই। কতকগুলি বেদি বসাবার জন্য কৃত্রিম গুহাগুলোর ভেতর পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। প্যাট্রিক রেডফার্ন ও তার স্ত্রী এসে বসলো নৈশভোজের ঠিক পরেই এই রকমের একটা গুহায়। রাতের উজ্জ্বল চাঁদ স্পষ্ট চোখে পড়ছে। চুপচাপ রইল কিছুক্ষণ ওরা। ক্রিস্টিন আজকের রাতটা খুব সুন্দর তাই না, মুখ খুললো প্যাট্রিক রেডফার্ন। হু–
প্যাট্রিক অস্বস্তি বোধ করলো, কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত সুরের আভাস পেল। চুপচাপ বসে রইলো ওর দিকে না তাকিয়ে। ক্রিস্টিন শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো, তুমি কি জানতে যে, ওই মেয়েটি এখানে আসছে?
বললো, তার মানে, প্যাট্রিক চমকে ঘুরে তাকালো।
মানেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছো আমার মনে হয়। ক্রিস্টিন হঠাৎ তোমার কি হয়েছে জানি না।
ক্রিস্টিন বাধা দিলো, ওর স্বরে আবেগের স্পর্শ। শরীর কাঁপছে ওর।
কি হয়েছে আমার? কিছু হয়নি আমার; হলে তোমার হয়েছে। কিছু একটা হয়েছে প্যাট্রিক। তুমি প্রথম থেকেই জোর করছিলে, এখানে আসার জন্য। আমাদের টিণ্টাজেলে হানিমুন কেটেছিলো, আমি ওখানেই যেতে চেয়েছিলাম, আমার কোনো কথা কানে তোলনি তুমি, গোঁ ধরেছিলে এখানে আসার জন্য। জায়গাটা অত্যন্ত চমৎকার তাতে কি হয়েছে, তুমি যেহেতু এখানে আসতে চেয়েছিলে সেহেতু ও এখানেই আসছে। ও মানে তুমি যার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে, মিসেস মার্শাল।
ক্রিস্টিন, ভগবানের দোহাই বোকার মতো কথা বলো না, কাউকে ঈর্ষা করা তো স্বভাব নয় তোমার। প্যাট্রিকের স্বরে উন্মত্ত ক্রোধের অনিশ্চিত সুর এবং তার তীব্রতা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।
আমরা কত সুখী ছিলাম, ক্রিস্টিন বললো। সুখী, নিশ্চয় সুখী তো ছিলাম। হ্যাঁ এখনও আছি। তুমি যদি কোনো মেয়ের সঙ্গে দুটো কথা বলতে আমাকে দেখ, তাহলে অমনি খুঁচিয়ে ঝগড়া করো। এরকম করতে থাকলে আর বেশি দিন সুখে থাকা সম্ভব নয়।
না, তা নয়?
হ্যাঁ তাই। বিয়ের পর কোনো পুরুষের অন্য লোকেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়াটা নেহাই। স্বাভাবিক। এ ধরনের সন্দেহজনক মনোভাব মোটেই ঠিক নয়। তোমার এই ধারণা কোনো সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে কথা বললে তার আমি প্রেমে পড়েছি। সে থামলো তারপর কাঁধ ঝাঁকালো।
তুমি সত্যিই ওর প্রেমে পড়েছো, ক্রিস্টিন রেডফার্ন বললো।
ক্রিস্টিন, ও বোকামি করো না, আমি ওর সঙ্গে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলিনি।
মিথ্যে কথা।
প্রতিটি সুন্দরী মেয়েকে ঘিরে আমাকে সন্দেহ করা ছাড়ো, দোহাই তোমার। ক্রিস্টিন বললো, ও মেয়ে একটা সুন্দরী নয়। ও, ও একটা নষ্ট মেয়েছেলে। প্যাট্রিক ও আমার ক্ষতি করবে। চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই, আমার কথা শোনো। এসব ছেড়ে দাও।
প্যাট্রিক রেডফার্নের বিদ্রোহী ভাব চিবুকে ফুটে উঠল। তাকে বয়সের তুলনায় অনেক তরুণ দেখালো। প্রতিবাদের সুরে বলে উঠলো, ক্রিস্টিন একটু ভেবে চিন্তে কথা বলে। এ নিয়ে আর ঝগড়া করো না।
ঝগড়া তো করছি না আমি। সুস্থ-স্বাভাবিকের মতো আচরণ করো, এসো হোটেলে ফিরে যাওয়া যাক, উঠে দাঁড়ালো প্যাট্রিক। ক্রিস্টিন রেডফার্নও উঠে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ নীরব থেকে, আচ্ছা চলো, ও বললো।
কুঠুরীতে বসে গভীর দুঃখে মাথা নাড়লেন এরকুল পোয়ারো। কেউ হয়তো সাধারণ ভদ্রতাবোধেই এই ব্যক্তিগত কথাবার্তার শ্রবণ-সীমার বাইরে নিজেকে সরিয়ে নিতেন। এরকুল পোয়ারো তা নয়, এ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ বিবেকহীন।
তার বন্ধু হেস্টিংসের কাছে ব্যাখ্যা করছিলেন পরে কোনো একদিন। এই ঘটনার সঙ্গে কোনো খুনের প্রশ্ন জড়িয়ে ছিল।
অবাক চোখে চেয়ে দেখে বলছেন হেস্টিংস, তখন তো খুনটা হয়নি। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এরকুল পোয়ারো, বললেন, না হয়নি। কিন্তু বন্ধু সেই মুহূর্তেই আমি তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছিলাম।
তুমি রুখলে না কেন তাহলে। এরকুল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলছিলো..এই কথাটা তিনি একবার মিশরেও বলেছিলেন, মানুষ খুন করার জন্য সে যদি বদ্ধপরিকর হয় তাকে বাধা দেওয়া নেহাৎ সহজ কাজ নয়। তিনি কখনো দোষারোপ করেননি পরবর্তী ঘটনার জন্য। অনিবার্য ছিলো তার মতে খুনটা।