০১. চিন্তিত দেখাচ্ছে ডিনসমেডকে

এস ও এস (এরকুল পোয়ারো)

০১.

কদিন ধরেই একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে ডিনসমেডকে। সে ভেবে ভেবে যেন সঠিক পথের সন্ধান পাচ্ছে না। কিন্তু কদিনের মধ্যে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এইভাবে ঠিক ভালো লাগে না। অথচ আগেই কথাটা আবার সুসানকে বলতে চায় না। তবে সে ব্যাপারটা স্থির করে তবেই স্ত্রীকে জানাবে।

চিন্তিত হয়ে প্রায় সাতটায় ডিনসমেড বাড়ি ফিরল। শীতের সময় ঠান্ডাটা বেশ উপাদেয়। শীতের শুরুটা বেশ মনোরম। তারপর বাড়ি ফিরে যদি ফায়ার প্লেসের সামনে এক কাপ গরম কফি নিয়ে বসা যায় তাহলে তো কথাই নেই।

অবশ্য অন্যদিন ডিনসমেড আটটা; সাড়ে আটটায় বাড়ি ফেরে। তিনতলা বাড়িটায় তার। অ্যাপার্টমেন্টটা দোতলায়। ডিনসমেড সিঁড়ি বেয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টটার কাছে দাঁড়ায়। বাড়িটা তিন বছরের পুরোনো।

তা বছর দশেক ডিনসমেড এ অঞ্চলে আছে। ভাড়া একটু বেশি হলেও শহরের একদম কাছে বলেই এই অ্যাপার্টমেন্টটা তার দেখামাত্র পছন্দ হয়েছিল। আশেপাশে সবকিছু পাওয়া যায়। তখন তার সংসারটা ছোটো আর ব্যাবসাও উন্নতির পথে জোরকদমে এগোচ্ছে। তারপর সংসারও বাড়ল আর সহসা ব্যবসায় ভাটা নেমে এলো, এবং এখনও তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

হঠাৎ একটা গাড়ির ব্রেক কষার শব্দে ডিনসমেড সম্বিৎ ফিরে পায়। তারপর সে একটু চমকে উঠে কলিং বেল পুশ করে।

সুসান ডিনারের তদারক করছিল। কলিং বেলের শব্দে ন্যাপকিনে হাত মুছে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।

দরজা খুলে অবাক হয়ে সুসান বলে, আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরলে?

–হ্যাঁ, চলে এলাম। অফিসে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না।

এসে ভালোই করেছ।

–একটু কফি কর তো।

করছি।

তারপর কফির কাপ হাতে নিয়ে সুসান বলে, এই ঘণ্টাখানেক আগে রজার আবার এসেছিল।

এসে কি বলল?

–বলল, তুমি যদি দয়া করে তার সঙ্গে একটু কথা বলো তাহলে সে খুশী হবে।

–খুশী হবে? বিনয়ের অবতার। কথার মারপ্যাঁচ বোঝে না।

–ভাবটা তাই দেখাচ্ছে।

–দেখবে ও এখুনি আমায় আবার ফোন করবে।

–তুমি কীসে বুঝলে? স্বামীর হাতে কফির কাপটা দেয়।

–ইদানিং ও আমার আসা যাওয়ার ওপর নজর রাখে।

 ডিনসমেড কফিটা তখনো শেষ করেনি টেলিফোনটা ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজে উঠলো।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও ডিনসমেড রিসিভারটা তুলে, হ্যালো।

–হ্যালো, ডিনসমেড, এখন আপনাকে ফোন করে বিরক্ত করছি না তো?

–আদৌ নয়।

–ধন্যবাদ, আমার ব্যাপারটা একটু চিন্তা করলেন?

–হ্যাঁ, অন্য বাড়ির চেষ্টায় আছি।

সুসান ইঙ্গিতে জানায় যে, এখানে যে ভাড়ায় আছে অন্য কোনো জায়গায় সেই ভাড়ায় বাড়ি পাওয়া যাবে না। ডিনসমেড মাথা নেড়ে সুসানকে হাসতে বারণ করে।

-তা অবশ্য ঠিক। তবু আমার কথাটা ভেবে দেখবেন।

–হ্যাঁ, আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।

–কিন্তু তেমন তো কোনো গরজ দেখছি না।

–আমি দালালকে পর্যন্ত বলেছি সেও আমায় অপেক্ষা করতে বলেছে।

–ও, তা আপনি কার সঙ্গে কথা বলেছেন?

–পিটারের সঙ্গে। আপনি তাকে চেনেন নাকি?

–চিনি বই কি। ঠিক আছে কিন্তু আমি ওকে বলতে চাইনি।

–কেন? বললে ভালো হবে মনে হয়।

–তাহলে আমার কাছেও দালালি চাইবে তবু বলব।

–এই করেই তো ওদের চলে।

–আমার ছেলে মাস চারেকের মধ্যেই এসে পড়বে বলেই আপনাকে একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। একতলার সব দোকানদারকে বলতে তার ফল হাতেনাতেই পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই তারা নেই নেই করে উঠেছে। ওদিকে আমার ছেলের আসার সময় হয়ে গেছে। সে তো পাঁচ সাত মাস থাকবেই। এই কমাসের জন্য ব্যবস্থা করতে পারছি না। অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া অবশ্য সমস্যার ব্যাপার।

–আমার ক্ষেত্রেও একই কথা।

–বুঝি। গুড নাইট।

–গুড নাইট।

.

০২.

 বন্ধু রবার্টের বাড়ি যাবার জন্য ডিনসমেড সকালের দিকেই বেরিয়ে পড়ল। আধঘণ্টার মধ্যে ডিনসমেড একটা দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। এরই একটা অ্যাপার্টমেন্টে রবার্ট থাকে।

স্কুলের গণ্ডি তারা একসঙ্গেই পেরিয়েছে। তারপর একজন যায় সাহিত্য আর অন্যজন বিজ্ঞানের দিকে। রবার্ট বরাবরই পড়াশোনায় ভালো থাকার জন্য দুজনের মধ্যে রেষারেষি ছিল।

এখন মিঃ রবার্ট একটা ব্যাঙ্কে উচ্চপদস্থ অফিসার। তিরিশ বছর বয়সে বিয়ে করে সে সুখেই ছিল। তাদের একটা কন্যাসন্তান জন্মায়, ফুলের মতো সুন্দর মেয়ে পেয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খুব খুশী। ছুটিছাটায় দুজনেই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এত সুখ আর সইল না। কারণ তার স্ত্রী হঠাৎ স্ট্রোকে মারা যায়।

স্ত্রীর খবরটা অফিসে বসে পেয়ে যখন রবার্ট সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ফেরে তখন সব শেষ।

ডিনসমেড খবরটা শুনে ছুটে এসে বন্ধুকে সান্ত্বনা দিয়ে, তার স্ত্রীর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেছে। আর শিশুকন্যার ভার তুলে দিয়েছে সুসানের হাতে।

মাসখানেক বাদে ডিনসমেড বাড়ি নিয়ে এখানে এসেছে। ওখানে মেয়ে ভালোই আছে।

বাবা মেয়েকে পেয়ে খুশী হতে পারল না কারণ মেয়েই মাকে দূরে পাঠিয়েছে। এখন মেয়েই তার কাল।

রবার্ট একথা বিশ্বাস করে না। মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে। আবার কী খেয়ালে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। কাদলে তাকায় না। তখন জোন্স মেয়েকে সামলায়। সাহেবের হাবভাব না বুঝে একটু দেখে সে চলে যায়। মেয়ে বায়না করে বাবার কাছে যাবে বলে। মেয়েকে সামলাতে পারে না। আপনি অথবা মিসেস ডিনসমেডকে পাঠিয়ে দেন, মেয়েকে আদর ও খেলনা, খাবার নিয়ে আসতে।

ডিনসমেড যেতে একটা কারণে, সে হল মিস জুলিয়েট। তার প্রতি তার একটা দুর্বলতা ছিল। আবার রবার্টের স্ত্রী লিজা, বন্ধুর স্ত্রীর প্রতি আনুগত্যও বলা চলে।

মেয়ে আর জোন্স-এর দারুণ ভাব হয়েছে। একে অপরকে ছাড়া চলে না।

দরজার বেল টিপতেই জোন্স এসে দরজা খুলে বলে, গুড মর্নিং।

চল্লিশ বছরের জোন্স, মজবুত স্বাস্থ্য, এবাড়িতে বছর দুই কাজ করছে। এখানেই নাকি প্রথম কাজ করছে।

ফিসফিসিয়ে ওঠে জোন্স, স্যার, আপনি সাহেবকে একটু বুঝিয়ে বলবেন। আপনাকে সাহেবকে রাজী করাতেই হরে।

–আমার চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না।

–আমার কথা যেন আবার বলবেন না।

–শোন, মিস জুলিয়েটের খবর কী?

–উনি নিয়মিত পড়াতে আসছেন।

–ভালো, আচ্ছা দুজনে কেমন গল্পগুজব করছে?

–বেশি নয়।

 –বেশি নয়! এটা তো ঠিক না। আমি তো অনেক কিছু আশা করেছিলাম।

-স্যার আমিও তাই, তবে বেশ নিরাশ হয়ে পড়েছি। সাহেব যেন একটু গম্ভীর হয়ে গেছে। একটু হেসে কথাও বলে না। মেমসাহেব চলে গিয়েই যত বিপদ বাঁধিয়েছে।

–তা ঠিকই। আর মিস জুলিয়েট?

 –সে কিছুটা সহজ। হাসিমুখে জোন্স বলে, কিন্তু স্যার, আমি..

.–কিন্তু আবার কি?

 –আমি আপনার উপরই…।

–সে তো আমি আছিই কিন্তু জানো তো মেয়েদের হাতে অনেক গোপন অস্ত্র আছে।

–তবু আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে স্যার।

–দেখা যাক কী করা যায়।

এদিকে মেয়ে হাজির। তাকে নিয়ে যাবার আগে জোন্স বলে–আপনি এগিয়ে যান স্যার।

 অ্যাপার্টমেন্টের প্রথমে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় মোটা কার্পেট দিয়ে ঘেরা, সম্ভবত ইজিপসিয়ান।

তারপরই বৈঠকখানায় বেশ কিছু চেয়ার, দু-একটা ল্যান্ডস্কেপ। যা দৃষ্টি কেড়ে নেবার পক্ষে যথেষ্ট।

একটু পরেই রবার্ট এলো–পুরুষালী চেহারা, ছফুট উচ্চতা, চল্লিশের নিচে বয়স।

–তা ডিনসমেড খবর কী?

—ভালো, তুমি কেমন আছো?

ভালো আছি। রবার্টের যেন উদাস ভাব।

 –আমার তা মনে হয় না।

–তা না হবার কারণ কী?

–কারণ তো আছে নিশ্চয় বন্ধু, ভালো আছি কথাটা জোর দিয়ে বলতে পারলে না। কথাটার মাঝে যেন একটা…

–উঁহু ঠিকভাবেই বলেছি।

 –মিথ্যে কথা আমি বলছি না। ভালো কথাটার মাঝে যেন একটা বিষাদের সুর ঝরে পড়ছে।

–বিষাদের? কিসে বুঝলে?

–ফ্যামিলিম্যানের চোখে অনেক কিছুই ধরা পড়ে যায়।

 –ও। রবার্ট এই বলেই চুপ করে থাকে। কী বলবে বুঝতে পারে না।

–হ্যাঁ, ভালো কথা। মেয়ে তো একটু একটু করে বড়ো হচ্ছে।

–হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই।

-ওর পড়াশোনার কী ব্যবস্থা করছ?

–ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। জোন্স তো আছে আর একজন টিচার দিয়েছি।

–ছেলে না মেয়ে?

–মেয়ে, কাছেই থাকে।

 –ভালোই করেছ। আমার ছেলে-মেয়ের জন্যও রাখতে হবে। জোগাড় করলে কোত্থেকে?

–আমার অফিসের এক কলিগ জোগাড় করে দিয়েছে। রবার্ট যা ভেবেছিল ঠিক তাই, ডিনসমেড জাল বিছিয়ে দিল।

কলিগ? তা বয়স কত?

–জানি না।

–বেরসিকের মতো কথা বলো না তো।

 –এতে বেরসিকের কী আছে? মেয়েদের বয়স চট করে বোঝা যায় না।

ডিনসমেড নাছোড়বান্দা–না গেলেও আন্দাজেই বলল ওর বয়স কত?

-চব্বিশ পঁচিশ হয়তো হবে।

মিস না মিসেস?

 রবার্ট ডিনসমেডের কথার ধরন বুঝতে পারে। মিস।

–এ মাস থেকে?

–হ্যাঁ, কিন্তু মিসট্রেসের ব্যাপারে হঠাৎ তুমি এত আগ্রহী হয়ে উঠলে কেন?

–একটু আলাপ করার জন্য। তাও তোমার জন্য।

–সে উপকার তোমায় করতে হবে না।

–মেয়েকে নিয়ে রাখার সময় তো সেকথা বলনি।

 –আরে না, কথাটা তুমি অন্যভাবে নিও না।

–না, বলছিলাম কি বিয়ে করো।

–এ বয়সে আর বিয়ে না।

–আজকালকার দিনে পঁয়ত্রিশ চল্লিশ বয়স কী বেশি? এ বয়সে অনেকেই প্রথম জীবন শুরু করে।

–আমার আপত্তি আছে।

–কীসের?

–আমার বিবেকের কাছে।

–কিন্তু কেন সেটাই তো আমি জানতে চাইছি।

–লিজাকে আমি ভুলতে পারছি না।

–কিন্তু রবার্ট লিজা তো আর ফিরবে না। কিন্তু তোমার কামনা বাসনা বলে তো কিছু আছে।

–সত্যি বিশ্বাস করো ওসব আমি ভাবি না।

–কিন্তু মেয়েটার ভবিষ্যৎ বলেও তো একটা জিনিস আছে।

–ওর ব্যাপারে আমার কোনো চিন্তা নেই ও দিব্যি জোন্সের সঙ্গে মেতে উঠেছে।

 –সেটাই সব নয়। ওর বাবা-মায়ের স্নেহ ভালোবাসার প্রয়োজন। যা সবাই চায় এই শিশুকালে।

 –ও আমার কাছে সেটা পায়।

-মোটেই পায় না। তুমি সকালে অফিসে বেরিয়ে যাও ফের সেই রাতে। তখন মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর জেগে থাকলেও সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তোমার পক্ষে মেয়েকে আদর করা সম্ভব না, তখন দরকার হয় নিজের বিশ্রামের।

–কথাটা ভুল নয়।

–তাই আমার কথাটা একটু ভেবে দেখ।

ততক্ষণে জোন্স কফি ও খাবার নিয়ে হাজির। মিঃ ডিনসমেডকে সে ইঙ্গিত করল। ডিনসমেড কফিতে চুমুক দিয়ে বলল

–তখন তুমি বিবেকের কথা বলছিলে না?

–হ্যাঁ।

–কিন্তু তুমি তো লিজাকে ডিভোর্স করে বিয়ে করছ না। লিজা অকালে মারা গেছে বলে তোমার সন্ন্যাসী হয়ে থাকা চলে না কারণ তোমার মেয়ে এখনও শিশু।

–আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু…

–কিন্তু করো না তো।

–আমায় ভাববার একটু সময় দাও।

–এ নিয়ে এ কথা কবার বললে?

–এবার ভেবে ঠিক বলব।

–কিন্তু আমার মন বলছে এবার বলবে তোমার কথা একেবারে ভুলে গেছি।

–এবার তা হবে না।

–না হলেই খুশী হবো। ঠিক আছে উঠি।

.

০৩.

 একেবারে আচমকা ঘটনাটা ঘটল। ডিনসমেড ভাবতেও পারেনি জোন্স অফিসে তাকে ফোন করবে।

-হ্যালো, ডিনসমেড? আমি জোন্স বলছি।

–বলো কী খবর? তোমার সাহেবকে রাজী করাতে পারলে?

–আর রাজী। সাহেব এখন সবকিছুর বাইরে।

–মানে?

–সাহেব আজ দুপুরে ট্রেন থেকে পড়ে গেছে। মিনিট পাঁচেক আগে পুলিশ ঘটনাটা জানিয়ে গেছে।

তারা তোমার সাহেবকে চিনলো কী করে, যে রবার্টই সেই মানুষ?

-সাহেবের পকেটে আইডেনটিটি কার্ড ছিল। উঃ সাহেব নেই ভাবতেও পারছি না। সাহেবকে ওরা মর্গে নিয়ে গেছে।

-জোন্স দয়া করে চুপ করো।

–স্যার, আমি একা মর্গে যেতে পারব না। আপনাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে।

–আমায় মর্গে গিয়ে রবার্টের মৃতদেহ দেখতে অনুরোধ করো না জোন্স।

–কিন্তু স্যার, আমি একা সাহস পাচ্ছি না।

–অগত্যা। এইভাবে আমিও একদিন পুট করে চলে যেতে পারি।

–স্যার ওকথা বলবেন না।

–বলতে তো চাই না। তবু ঘটনাগুলো তো আমাদের ভরসায় বসে না থেকে নিষ্ঠুরভাবে ঘটে যায়।

–আপনি আসছেন তো স্যার?

–হ্যাঁ, বাচ্চাটা কী করছে? তুমি জুলিয়েটকে একবার ফোন করে দাও।

–ও টি.ভি. দেখছে।

–অবোধ শিশু, জানতেও পারল না যে জীবনের শেষ অবলম্বনটুকু ও আজ হারালো।

–আপনি তো আছেন।

–আর আমি। ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে কিছু বলেছে?

–বলেছিল। আমার ঠিক মনে নেই।

–ঠিক আছে আমি আসছি। মিস জুলিয়েটকে খবরটা দিয়ে দাও।

–হ্যালো।

–হ্যালো, ডিনসমেড বলছি।

–বল, আমি সুসান।

–একটা বাজে খবর আছে। রবার্ট মারা গেছে।

–মিঃ রবার্ট? আমি তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না।

–আজ দুপুরে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।

–ওমা সেকি! এমন একটা জলজ্যান্ত মানুষ…তোমায় ঘটনাটা কে বলল?

–জোন্স।

–সত্যিই কী দুর্ঘটনা, না অন্য কিছু?

–হঠাৎ তোমার মনে এমন কথা এল কেন?

–রবার্ট একটা সুস্থ সবল মানুষ। এভাবে

–রবার্ট অসুখে মারা যায়নি। গেছে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে।

–তা হোক, আমার মনে কিন্তু খটকা লাগছে।

–এতে খটকার কী আছে?

–কিন্তু নিউজে তো বলল না?

 –সব ঘটনাই কী নিউজে বলে?

–তা ঠিক। তবু তুমি একটু ভালো করে খোঁজ নাও।

–জানো সুসান, আমার কিন্তু অন্য কথা মনে হচ্ছে। আত্মহত্যা করল না তো?

–না না, তা সে করবে কেন?

–না, ওর মনের অবস্থা তো ভালো ছিল না।

–মানছি, কিন্তু ওর মেয়েকে কে দেখবে?

–জোন্স দেখছে। মেয়েটা কতক্ষণ বা রবার্টকে পেত তাই জোন্সকে আঁকড়ে ধরেছে। দুজনে দুজনকে খুব ভালোবাসে। জোন্স তো মেয়েটার জন্য পাগল। মেয়েটাও জোন্স নেওটা হয়েছে।

–এটা একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। হা, তুমি আত্মহত্যার কথা বলছিলে কেন?

–রবার্ট লিজাকে ভুলতে পারছিল না। হয়তো সেই কারণে।

–তা বলে আত্মহত্যা করবে কেন?….

–আমার মনে হল বলে বললাম। আমি ওকে বহুবার বিয়ের কথা বলে পেয়েছি একই উত্তর। আর বিয়ে নয়। তারপর আনমনে কি সব ভাবত।

–আসলে ও লিজাকে খুব ভালোবাসত। ছুটির দিনে দুটিকে এক জায়গায় দেখা যেতো।

–তা মনে হয় স্ত্রীর শোক সামলাতে না পেরে এমন কাণ্ড করে বসেছে।

 –তোমার কথাটা একেবারে ফেলনা নয়।

–শোন, আমায় মর্গে যেতে হবে। ফিরতে একটু রাত হবে।

–ঠিক আছে, হয়ে গেলেই চলে এসো।

.

-হ্যালো,

–হ্যালো, আমি রবার্টের বাড়ি থেকে জোন্স বলছি। মিস জুলিয়েটকে দিন না।

–ও, একটু ধরো।

–হ্যালো, মিস জুলিয়েট?

-হ্যাঁ। আজ সকালে যেতে পারিনি বলে খুবই লজ্জিত। বাড়িতে কয়েকজন গেস্ট এসে গিয়েছিল। কাল সকালে ঠিক যাবো।

-না না, আমি তার জন্য ফোন করিনি।

–ও বুঝেছি। ছোট্টসোনা বুঝি অভিমান করেছে?

কথাটা যেন জোন্সের গলার কাছে আটকে আছে।

সাহেব নেই।

–কী সব আজে-বাজে কথা বলছ?

আজে-বাজে নয় মেমসাহেব।

–আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তা উনি মারা গেলেন কীসে?

–ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে। মেমসাহেব আপনি দয়া করে মর্গে যেতে পারবেন?

–যাবো।

–এক্ষুনি চলে আসুন।

–আচ্ছা, মিঃ ডিনসমেডকে খবর দিয়েছ? উনি কি বললেন?

–দারুণভাবে মুষড়ে পড়লেন। আপনার মতো উনিও প্রথমটা বিশ্বাস করতে পারেনি।

–কী করে পারবেন? এখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

–এখন ভাবছি মেমসাহেব চলে গিয়ে ভালোই হয়েছে। উনি ছিলেন নরম স্বভাবের। উনি এ শোক সহ্য করতে পারতেন না।

–ঠিকই বলেছ। তা বাচ্চাটা এখন কি করছে?

–এতক্ষণ টি.ভি. দেখছিল। এখন খেলা করছে।

 –এখন তুমি আর মিঃ ডিনসমেড ছাড়া হতভাগা শিশুটার আর কেউ রইল না।

–হ্যাঁ, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আপনি তাহলে তাড়াতাড়ি চলে আসুন।

–ঠিক আছে।

.

০৪.

 রবার্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ। বিমর্ষ জুলিয়েটকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে জোন্সকে রবার্টের বাড়িতে পৌঁছাতে রবার্টের অ্যাপার্টমেন্টে গেলেন।

জোন্স এর মধ্যে একবার ডিনসমেডকে ডেকে গেছে। বিমর্ষ ডিনসমেড সোফায় বসে আছে। পাশের বাড়ি থেকে ঘুমন্ত বাচ্চাকে এনে জোন্স বিছানায় শুইয়ে দিল।

রাত নটা, বাড়ি যাবার জন্য ডিনসমেডের তাড়া নেই। তার বুকটা খালি হয়ে গেছে।

জোন্স কিছু স্যান্ডউইচ ও পানীয় এনেছে। স্যার।

–অ্যাঁ।

–আপনার জন্য একটু হুইস্কি আর…

–হ্যাঁ দাও। রবার্ট আমাকে এইভাবে নিঃসঙ্গ করে চলে গেল।

-সাহেব নেই তা যেন এখনো ভাবতে পারছি না। মনে হচ্ছে এখুনি আসবেন।

ডিনসমেড হুইস্কির গ্লাসটা টেনে নেয়। আর ফিরবেন। তোমার সঙ্গে তার আলাপ তিন বছরের আর আমার সঙ্গে স্কুল জীবন থেকে। কলেজ আলাদা হলেও আমাদের বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি আজ যা ধরিয়ে দিল। বাচ্চাটা এখন কী করছে?

-ঘুমোচ্ছ।

–এরপর মনে হয় ওকে নিয়ে মুশকিলে পড়তে হবে।

 –হ্যাঁ, কিছুটা তো পড়তেই হবে।

ও সমানে সাহেবের কথা জানতে চাইছে।

–সে তো চাইবেই। ওরা যে পরম করুণাময় ঈশ্বরের..ওঃ হ্যাঁ, তা ও কী বলছে?

–বলছে বাবা বাইরে গেছে।

 ডিনসমেড শান্তভাবে পানীয়ে চুমুক দিতে থাকে।

–এরপর বলল, চল আমরা গিয়ে বাবাকে ডেকে আনি।

–এইভাবে কদিন কাটবে মিথ্যে বলে?

–তাই ভাবছি। এই বাড়িটা আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে।

–কি করবে এবার?

–এখান থেকে চলে যাবো।

–কোথায়?

–যে কোনো জায়গায়। এছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না।

–শান্ত হও জোন্স।

-স্যার, আমি আজ সাহেবের অভাব ভালোভাবে টের পাচ্ছি। আর…অল্প বয়সে মা-বাবা মরা এই মেয়েটার দিকে আমি আর তাকাতে পারছি না। উঃ কী ভাগ্যই না এই মেয়ের। এই বাড়িটা এতো নির্জন হয়ে গেছে যে আমায় গিলতে আসছে বলে মনে হচ্ছে।

সবাই ভবিতব্য। ভেবে আর কী করবে?

-ভাবনার হাত থেকে কারো মুক্তি নেই, আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। আমি ঠিক এখান থেকে চলে যাবো।

–কিন্তু একটা জায়গা তো ঠিক করতেই হবে।

–আমায় এখান থেকে চলে যেতেই হবে। আমার গ্রামেই ফিরে যাবো।

 –এখানকার অ্যাপার্টমেন্ট?

 –তা তো ভাবিনি।

—ওসব চিন্তা ভুলে যাও।

–অ্যাপার্টমেন্ট বেচে দেব। ফার্নিচারগুলোও।

–তা নয় হল। কিন্তু মেয়েকে গ্রামে নিয়ে কী করবে?

–ওখানে ওকে মানুষ করবো।

–ওখানে ভালো লেখাপড়া হবে না।

–কেন ওখানে কত ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজে লেখাপড়া করছে না।

 –তা পড়বে না কেন? জোন্স ভুলে যেও না, ও হল রবার্টের মেয়ে। এত উচ্চ বংশের সন্তান।

–ওর জন্য আমি ভালো মাস্টার রাখব।

–তা নয় দিলে। কিন্তু বাড়িতে কে দেখাশোনা করবে?

–কেন আমি।

–আমি সেই দেখাশোনার কথা বলছি না। বাড়িতে ওকে পড়াশোনায় সাহায্য করা দরকার।

–এটা তো ভাবিনি। ঠিক আছে তাহলে ওর জন্য একজন গভর্নেস রেখে দেবো।

 –তাকে তো অনেক মাইনে দিতে হবে।

–আমি উদয়াস্ত খেটে সেই টাকা জোগাড় করবো। সেরা স্কুলে পড়াবো মানে কোনো দিক দিয়েই আমার ত্রুটি থাকবে না।

–মানি। তাছাড়া তুমি বাচ্চাকে ভালোও বাস। তবে আমি বলি কি আমায় দাও ওর ভার।

–না না, সেটা অসম্ভব। ও আপনার কাছে কিছুতে থাকতে পারবে না।

–ঠিক পারবে। লিজা মারা যাবার পর বেশ কিছুদিন তো ও আমার কাছেই ছিল।

–তা ছিল। তখন ও একদম শিশু, এখন বোধশক্তি হয়েছে। পাশের বাড়িতে যে কিছুক্ষণ ছিল তাতেই আমার কথা বলে কেঁদে দিয়েছে।

-বাচ্চারা ওরকম করে। কদিন যেতে না যেতেই আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

–না স্যার, ও আমায় কখনই ভুলবে না।

–আমার কাছে রেখেই দেখ না। আমার ছেলেমেয়ের সঙ্গে ও ভালোই থাকবে। তুমি বিয়ে-থা করোনি সংসারের কোনো বালাই নেই।

-না স্যার, দয়া করে আমায় ও হুকুম করবেন না।

–হুকুম না জোন্স, বন্ধুর প্রতি আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে।

 –তা নিশ্চয়ই আছে।

–আমি এ ব্যাপারে মিস জুলিয়েটের সঙ্গে কথা বলেছি।

–তিনি কী বলেছেন?

তিনি বলেছেন বাচ্চা আমার কাছে রাখাই সব দিক দিয়ে ভালো। তোমার সাথেও তিনি কথা বলবেন।

-ও, আমায় একটু ভাববার সময় দিন।

–ঠিক আছে মন ঠিক করার জন্য দিন কয়েক সময় নাও।

–আপনি আবার আসবেন?

 –এ সপ্তাহে আর হবে না।

–ঠিক আছে।

–অর্থাৎ তোমায় ভাববার জন্য দশদিন সময় দিচ্ছি।

–আপনার অসীম করুণা স্যার।

–তাহলে আজ উঠি।

 –আসুন স্যার।

.

০৫.

 সাড়ে দশটায় ডিনসমেড বাড়ি ফিরে সুসানকে বলল–সব কাজ ভালোভাবে হয়ে গেছে।

-তোমারও খুব ধকল গেছে।

–একটা কথা ভাবছি। তাতে মনে হয় তোমার কোনো আপত্তি নেই। রবার্টের মেয়েকে আমাদের কাছে রাখতে চাই।

-পরের মেয়ের ভার নেবে?

–রবার্টের মেয়ে আমাদের পর হবে কেন? তাছাড়া আমরা না দেখলে কে দেখবে বল?

–তোমার মতই আমার মত।

.

–হ্যালো। আমি কি মিস জুলিয়েটের সঙ্গে কথা বলতে পারি?

–বলছি।

–গুড মর্নিং, আমি ডিনসমেড বলছি।

–গুড মর্নিং, কাল ফিউনারাল থেকে কখন ফিরলেন?

–প্রায় সাড়ে দশটা হয়ে গেছে। শরীর ভালো আছে তবে মন ভালো নেই।

–না থাকবারই কথা। মিঃ রবার্ট শুধু আপনার বন্ধুই ছিলেন না। হিতাকাঙ্ক্ষীও ছিলেন।

–হ্যাঁ, ও আমার ভাইয়ের মতো। কোনো ব্যাপারেই আমাদের মতের অমিল ছিল না।

–হ্যাঁ, মিঃ রবার্টও আমায় মাঝেমধ্যে একথা বলতেন।

–মিস জুলিয়েট, কাল রাতে আপনাকে যে কথাগুলো বলেছিলাম সেই কথাগুলো আমি জোন্সকে বলেছি।

-হ্যাঁ, বাচ্চাটাকে আপনার কাছে রাখলেই বেশি ভালো হবে। তা জোন্স রাজী হয়েছে?

-বোধ হয় না, ও ভাবতে কিছুটা সময় নিয়েছে। কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে তো। সেই জন্যই…

-তবু মেয়ের কথা ভেবে ওকে আপনার কাছে রাখতে দিলেই ভালো। ভবিষ্যৎ বলে তো কিছু আছে। ও নয় প্রতি সপ্তাহে ওকে দেখতে আসবে…

-আপনি ভালো কথা বলেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।

-এতে ধন্যবাদের কী আছে? শিক্ষয়িত্রী হিসাবে ছাত্রীর প্রতি আমারও তো কিছু কর্তব্য আছে।

–নিশ্চয়ই তবে অনেকে তো…এবার আপনাকে একটা অনুরোধ করবো।

–বলুন।

–মানে বাচ্চা আমার কাছে থাকলে আপনাকে একটু কষ্ট করে আমার বাড়িতে যেতে হবে। আপনার বাড়ি থেকে ওটা দূরে তবে আমি চেষ্টা করবো তা পুষিয়ে দেবার।

–তবু মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমায় এটুকু করতেই হবে। আর মেয়ে যখন রবার্টের।

-এবার আমার আর কিছুই বলার নেই। আপনার বন্ধুপ্রীতি দেখে আমি মুগ্ধ। আর আমিও সত্যি কথা বলতে ওকে পড়াতে চাইও।

-এতেই বোঝা যাচ্ছে আপনি বাচ্চাকে সত্যিই ভালোবাসেন।

–মা-বাবা হারা শিশু। তবে একদিকে সৌভাগ্য বলতে হবে। মিঃ রবার্ট আপনার মতো বন্ধু পেয়েছিল। যার থেকে তার মেয়েও বঞ্চিত হবে না।

কাজের চাপে ডিনসমেডের জোন্সের কাছেও যাওয়া হল না। সুসান বলল–কই জোন্সের কাছে গেলে না তো?

-এই সপ্তাহে যাবো। তবে মেয়ে দেবে বলে মনে হয় না।

–একবার চেষ্টা করেই দেখ না। না দিলে কীই বা করবে?

–দেখি আজ যদি যেতে পারি। এর মাঝে তো দশদিন চলে গেছে। তা তুমি যাবে আমার সঙ্গে?

যাবার তো ইচ্ছা আছে কিন্তু বাচ্চা সামলাবে কে? তুমি একাই যাও।

 অগত্যা ডিনসমেড একাই চকলেট, বিস্কুট আর কিছু খেলনা নিয়ে গাড়িতে উঠে রওনা হল রবার্টের বাড়ির উদ্দেশ্যে। দশমিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেল।

নির্দিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ায় ডিনসমেড, দেখে দরজায় তালা। সে ভাবল জোন্স হয়তো বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়েছে একটু বাদেই ফিরবে।

মিনিট দশ পার হয়ে গেছে। ডিনসমেড একটা সিগারেট ধরায়, এইভাবে তিনটে সিগারেট শেষ হয় তবু জোন্সের দেখা নেই।

এক ঘণ্টা পর ডিনসমেডের কেমন একটা সন্দেহ হতে লাগল। তার মনে হতে লাগল বাচ্চাটার কিছু হল কী না; বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল না কী? বাচ্চাটার কিছু হলে তার আফশোসের সীমা থাকবে না।

আরো আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পর একতলায় মিস হেনেসের কাছে আসে। রবার্টই আগে তার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল।

কলিং বেল টিপতেই হেনেস বেরিয়ে আসে।

গুড মর্নিং মিসেস হেনেস।

–গুড মর্নিং মিঃ ডিনসমেড।

–কেমন আছেন বলুন।

–ভালো, আপনি।

চলে যাচ্ছে, জোন্স কোথায় গেছে জানেন? তালা দেওয়া দেখছি।

–জোন্সের কোনো খবর জানেন না?

–না।

-সেকি আমি তো জানি আপনি সব জানেন। জোন্স সেই কথাই বলেছিল। মিঃ হেনেসও তাই জানেন।

–ও কী বলেছে?

–ও চলে যাচ্ছে। কী যেন একটা জায়গায় নাম বলল।

–মিস হেনেস জানেন?

–না। আর জোন্স অ্যাপার্টমেন্ট বেচে চলে গেছে।

কবে? কাকে?

দিনপাঁচেক আগে মিঃ ম্যাকডোনাল্ডকে বেচেছে।

–তিনি কোথায় থাকেন?

–শুনেছি এই শহরেরর উত্তরদিকে থাকেন। ওর মালপত্র এসে গেছে, ফ্যামিলি কাল আসবে।

-কততে বেচেছে?

–চল্লিশ হাজার টাকা।

–মাত্র?

–আমায় তো তাই বলেছে। আমি ভাবছি এসব বেচে দিল অথচ আপনি জানেন না?

–মনে পাপ থাকলে কী অপরকে জানায়? বাচ্চাকে কী করেছে জানেন?

–দেখলাম তো সঙ্গে করে নিয়ে গেল।

–কিন্তু কোথায় নিয়ে গেল, দেশের বাড়িতে?

–তা আমি জানি না। জায়গাটার নাম করতে পারছি না। বলেছে বাচ্চাকে ওখানকার একটা কনভেন্টে ভর্তি করে দেবে। তারপর যা থাকে ওর কপালে।

-ঠিক আছে, চলি।

–আসুন।