স্ক্যাণ্ডাল ইন সোরোন্টো
০১.
সবটা বাজে ভাবে ঘটল শুরুতেই।
প্রায় চার ঘণ্টা দেরী করল পশ্চিমগামী প্লেনখানা। ২০৪ প্যানআম ফ্লাইট ব্যাংকক থেকে আসছে। ইতিমধ্যে প্রায় সন্ধ্যে আটটা নাগাদ ডুরেল জেনেভাতে পৌঁছে গেল।
দেখতে দেখতে গোটা বিমানবন্দর দূরপাল্লার আরোহীদের ভিড়ভাড়াক্কায় ছয়লাপ। অতিথি অভ্যর্থনা আর বিদায় সম্বর্ধনার মধ্যে এক সময় ডুরেল ডিপ্লোম্যাটিক পাশপোর্ট দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, যেখানে অ্যান্টন প্যাসেক অপেক্ষা করছিল।
কে জানে কার জন্যে।
মোটেই এড়াবার ছিল না ব্যাপারটা।
হয়তো প্যাসেকও ডুরেলের মতোই, দুজন দুজনের কাছে অতি বিস্ময়কর প্রাণী।
ডুরেল হাল্কাচালে, জনাকীর্ণ এয়ারটার্মিনালের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে লাগল।
প্রথমে এক কাপ এসপ্রেসো কফি বানাতে বলে পাশের স্টেশনারী কর্নার থেকে কয়েক প্যাকেট আমেরিকান সিগারেট কিনল।
একটিবারের জন্যেও ডুরলে ফিরে তাকিয়ে দেখল না যে প্যাসেক তখনও তার প্রতি নজর রাখছে, কিন্তু অতীব উদাসীন, এবং অতি নিকটে পায়ে পায়ে তাকে প্রায় ধরে ফেলেছে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়।
কিন্তু কেন? কে. জি.ডব্লু-র লোকেরা কি আদৌ তার জন্যে এরায়পোর্টে অপেক্ষা করছে কিংবা অনুসরণ! আশ্চর্য, কিন্তু একটা মিনিটও ডুরেল সেরকম কোন কিছুই ভাবল না, কারণ তাহলে প্যাসেক আরো নিজেকে সতর্ক রাখত।
কেননা, তাকে চিনতে সে ভুল করেনি; যেহেতু তার দুজনই কোন এক সময়ে বহুকাল যাবৎ একই ব্যবসায় লিপ্ত। হঠাৎ, একসময় সে পাবলিক টেলিফোন থেকে বেপরোয়া ডায়াল ঘুরাতে লাগল। একষট্টি একান্ন একষট্টি।
অপেক্ষা করতে লাগল। অপরপক্ষের কোন এক মহিলার কণ্ঠস্বর ভেসে এল।
খানিক এদিক-ওদিক তাকিয়ে ডুরেল বলল, ব্যাংকক থেকে মোড়কটা এখানে এসে পৌঁছে গেছে।
তারপরই খানিক নীরবতা নিঃশ্বাসে হিস হিস তুলল।
স্যাম
ঠিকই ধরেছ–তোমার প্লেন দেরী করেছিল?
এ্যালেন জিজ্ঞেস করল, তুমি কেমন আছ স্যাম? জলদি এসে গেছ?
ডুরেল বলল, ভালো আছি। তুমি কেমন?
সে বলল, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করে বসে আছি। সময় এক্কেবারে নেই। তুমি এসে গেছ স্যাম, তুমি যে আসতে পেরেছ, এযে কি আনন্দ
ডুরেল বলল, তোমার কি মনে হয় এটা একটা ক্রোশ জয়? তোমার কি তাই ধারণা-সে উত্তরে জানাল।
ডুরেল দেখল টেলিফোন ঘরের জানালা বারাবর প্যাসেক হাঁটছে।
ডুরেলের কঠিন চোয়াল সহসা মারাত্মক কঠিন হয়ে উঠল। অতি দ্রুত রিসিভার নামিয়ে রাখতে তৎপর হলো।
এ্যালেন বলল, সেবার জেনেভাতে গিয়েছিলাম, আমাকে তোমরা আশা করোনি, আমি কখনো দেখিনি। অথচ কি মজা।
ডুরেল বলল, প্যাসেক আমার পিছু নিয়েছে।
এ্যালেন বলল, কে? কি বললে?
ডুরেল বলল, মেজর এ্যাণ্টন প্যাসেক। আমস্টারডমে ববি লঙঔমকে যে খুন করেছিল?
মনে পড়ে? সে একজন পাক্কা মাস্টার প্ল্যাস্টার।
এ্যালেন বলল, সে কি তোমাকে দেখেছে?
ঠিক ধরতে পারছি না।
হঠাৎ, অতি দ্রুত টেলিফোন ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য পথ ধরল।
প্যাসেক সেখানে নেই। বুঝতে পারল সে, আপতত কেউই আর অনুসরণ করছে না।
ডুরেস টার্মিনাল রেস্তোরাঁয় ঢুকে আরো কিছু সময় কাটাবার জন্যে অবিরত মেনু উল্টে-পাল্টে দেখতে থাকল। কেননা সময় খরচের জন্যেও একটা খরচ আছে। হ্যাটব্যাকের আয়নায় নিজের চেহারা যেন নতুন করে দেখালো। এ হেন ডুরেল, এখন ওয়েটারের সঙ্গে কিছু কথা বলল। তারপর নিঃশঙ্ক একটা ট্যাক্সির দরজা খুলে ড্রাইভারকে নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলে দিল। হোটেল ডি লা প্যাকস।
ডুরেল এতক্ষণ বাদে ভাবতে পারল সে মুক্ত, পরিপূর্ণ নিঃশ্বাস ফেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে।
ডুরেল একসময় ট্যাক্সি থেকে নেমে সোজা হোটেল ডি লা প্যাকসের প্রথম লবিতে এসে থামল। তারপর আবার কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে অন্য আর-একটা ট্যাক্সি ধরে ডানদিকে মোড় ফিরল। রুস্তা-লার মধ্যপথ ধরে সোজা চলে গেলে গ্র্যাণ্ড থিয়েটার।
এখন, নিজেকে পরিপূর্ণ মুক্ত বোধ করল।
খবর বিনিময়ের প্রধান এবং বিশ্বস্ত জায়গা গ্যালারী চেক হল সিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আর সেই কাজে এ্যালেন একমাত্র সহচর অতি পরিচিত দোসর। আঁকাবাঁকা পথ ধরে ডুরেল এগোতে থাকল। আর কয়েক পা পেরোলেই গ্র্যাণ্ড রু-র। তার খুব কাছেই আর্ট শপ অর্থাৎ শিল্পবিপণী। ডুরেল হাঁফ ফেলল। আর্ট শপের ওপরেই এ্যালেনের কামরা। দোকানের দিকে ডুরেল তাকাল।
কিন্তু, কি আশ্চর্য, এত সাতসকালে, সন্ধ্যে উত্রাল না, অথচ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। কিন্তু হৈ-হল্লার অন্ত নেই। সেই মাতোয়ারা উদ্দীপনার মধ্যে ডুরেল সবুজ কাঠের একটা দরজা বন্ধ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল।
না, সবই ঠিক আছে। একটা সঙ্কেতেই এ্যালেন দরজা খুলে বাইরে এসে হাত বাড়াল।
ওঃ। তোমাকে দেখে যে কি আনন্দ হচ্ছে
তোমাকে দেখে আমারও-প্যাসেক সম্বন্ধে কি ভাবছ?
সব জায়গায় খবর দিয়েছি। দেখি কতদূর কি হয়–যাইহোক তোমাকে এরা যে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে, আমি খুব খুশি হয়েছি
কিন্তু ব্যাপারটা আসলে কি জানো?
কি?
আমি কেবল প্রিন্স সুভানা ফনের আর্থিক মিশনকেই সাহায্য করছিলাম, কিন্তু চেকরা এতই সন্দেহ করছে যার জন্য প্যাসেক এয়ারপোর্টে হত্যে দিয়েছে, আমি তো বুঝতেই পারছি
ডুরেল হেসে বলল, সবাই জানে কিংবা হয়তো আমি ওদের অনেক কিছু জেনে ফেলেছি এই ভয়
ওরা ব্যাংককে তোমাকে কোন উপদেশ দেয়নি।
হ্যাঁ, তারা আমাকে বলেছিল যে ঐরকম কাহিনী কিছু একটা শুনতে পাব।
এ্যালেন জিজ্ঞেস করল, হা ভালো কথা, কনস্যুলেটর মিস্টার হ্যানসন কি ঐ প্লেনেই ছিলেন?
ডুরেল উত্তর দিতে দেরী করল।
এ্যালেন আবার জিজ্ঞেস করল, তুমি কি সাইলাস হ্যানসনকে জানো?
এফ.বি.আই.-য়ের দায়িত্বে–ডুরেল বলল, হ্যাঁ, আমি তাকে জানি।
এ জায়গাটা কেমন? অফিসটা কিসের? এসব তেমন কিছুই জানাইনি। ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে দেখা হলে সব খুলে বলব। একটা কাজ তোমাকে করতেই হবে
এ্যালেনের গলার স্বর কাঁপছিল ডুরেল লক্ষ্য করল। এই ধরনের অকস্মাৎ মর্মাহত এবং পীড়িত বোধের কারণ কি হতে পারে ঠিক ভাবতে পারল না ডুরেল। সে একবার শুধু ডাকল। এ্যালেন
এ্যালেন বলল, আমি সত্যিই, দুঃখিত স্যাম—
কেন? কিসের দুঃখ
জানি না
এই জীবনের কি কোন শেষ নেই–
না, শেষ নেই। চলতে চলতে এ পথ যদি ফুরিয়ে যায় যাক, ক্লান্তি আসে আসুক। জানি একদিন কোন চড়ায় গিয়ে নিশ্চয়ই ঠেকবে, সেদিন সব গ্লানি ধুয়ে মুছে যাবে। কিন্তু এমন বিচলিত হতে তোমাকে তো দেখিনি।
এ্যালেন বলল, আমি ঐসব কাজকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করি। আগে ভাবতাম বুঝি-বা ভালো কাজই করছি। সব কাজেরই প্রয়োজন আছে দুনিয়ায়। কিন্তু এখন সত্যি ঘৃণা করি ডুরেল, তোমার কাছে বলতে লজ্জা নেই। ইলিনসে ফিরে আর পাঁচজন লোকের মতো সহজভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে চাই।
ডুরেল ভাবল, সে একি শুনছে।
বলে চলল নিজের মনেই, ধরো, ববি লঙস্ট্রমের হত্যা, কিংবা জন পিটারকে হংকঙে জলে ডুবিয়ে মারা অথবা ইলিয়ট সিংগারকে লণ্ডনের আণ্ডারগ্রাউণ্ড ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া এ সব কাহিনী শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত স্যাম। ব্যাপারগুলো সহজভাবে নাও স্যাম।
এ্যালেন বলল, বাস্তবিকই ওসব কাজ মেয়েদের জন্য হতে পারে
ডুরেল বলল, এই জাল থেকে তুমি বেরিয়ে আসতে চাইছে। যতদূর মনে পড়ছে সেই সৌভাগ্যবানের নাম জ্যাক ট্যালবট।
এ্যালেন বলল, হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো?
কিন্তু, ব্যাপারটা কি? সে কি ভীষণ উৎপাত শুরু করেছে।
যদি বলি তার চেয়েও খারাপ।
কত খারাপ
যার জন্য তোমাকে আমরা এখানে ডেকে এনেছি–এই সেই লোক যে কিনা প্রিন্স সুভনার পেইন্টিং স্ক্রল চুরি করেছিল, তারপর থেকে জ্যাক উধাও এবং স্ক্রলসও অদৃশ্য
তাই কি
হ্যাঁ, একেবারে নিপাত্তা। সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। অথচ জ্যাক ট্যালবটকে চাইই, চাই। উই হ্যাভ টু ফাইন্ড দোজ পেইন্টিংস এণ্ড উই মাস্ট ফাইন্ড জ্যাক—
এবং ঠোঁটের পর্দা কাঁপল ডুরেলের, এবং–তাকে খুন করতে–কবরের তলা থেকে যেন এ্যালেনের গলার স্বর উঠে এল, এবং তোমাকেই খুন করতে হবে, ডুরেল তোমাকেই, তোমাকেই
.
০২.
তারপর, অনেকক্ষণ কেটে গেল।
সে চুপচাপ বসেছিল। শান্তু, নিরুদ্বেগ। কোলের ওপর দুটো হাত অত্যন্ত স্থির এবং নিটোল পড়ে আছে। সামনে টেস্ট রুম।
ডুরেল ভাবল, এই সেই অ্যালেন, কুড়ি নম্বর এ্যানাপোলিস স্ট্রীটের হেডকোয়ার্টারে কে সেকশনে যার দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যার বয়স মনে হয় এখন ছাব্বিশ। ডুরেল সুমিষ্ট কণ্ঠে ডাকল, এ্যালেন।
এ্যালেন তার দিকে চেয়ে একখণ্ড হাসি দিয়ে ভুলিয়ে দিতে চাইল অতীতের সব জ্বালা। তোমাকে এই পথেই যেতে হবে। ডুরেল বলল, কিন্তু জানি না কিভাবে তুমি চলবে–তুমি ছাড়া যেভাবে আমার জীবন, সময়, আয়ু কেটে গেছে। তেমনিভাবে চলে যাবে–নখ খুঁটে এ্যালেন মুখ তুলে চাইল, কি ঠিক বলছি
জানি না। স্বাভাবিকভাবেই ডুরেল নিজের কাছেই যেন জবাবদিহি করল; আই ডাজ নট এভার সীম টু এণ্ড-আবার একটু থেমে বলল, এর কোথায় শেষ জানি না, সম্ভবত আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এর শেষ নেই
মুখ তুলে তাকাল এ্যালেন।
যাক গে। এখন তোমার জ্যাক ট্যালবটের খবর বলো স্যাম–এ্যালেন বলল, তুমি কি ভাবছো বলো তো আমাকে?
কিছু না। ডুরেল বলল, তুমি তাকে ভালোবাস
এ্যালেন বলল, যথেষ্ট ভালোবাসি।
কি মনে হয় তোমার পেইন্টিং স্ক্রল চুরির সঙ্গে হাত আছে—
হা। আমি বিলক্ষণ মনে করি।
বুঝেছি। তোমার গলায় সেটাই কাটার মতো বিধছে–শুধু তাই নয়। আমি তার ভালো মন্দ সবটাই দেখতে চাই। কতখানি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো জানি না। তবে এটা ঠিকই কর্তব্যের খাতিরে বিপদাপন্ন বন্ধুকে ত্যাগ করতে মোটেই পিছুপা হবে না
নিশ্চয়ই–ডুরেল বলল, হ্যাঁ তা ঠিক
এ্যালেন বলল, মাত্র তিন দিনের মধ্যে ফয়সালা করতেই হবে। সুভানার এটাই ছিল চরম নির্দেশ–অর্থাৎ আলটিমেটাম
সুভানার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সম্বন্ধে তুমি কিছু জানো কি? ডাউন স্ক্রলস। বড়ডো মুশকিলে পড়ে গেছি প্রিন্সের কাছে। খুব সিরিয়াস। সেই সুযোগে এখন চেকরা দারুণ ভূমিকা নিয়েছে। অথচ ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল প্ল্যানিং বোর্ড মনে করছে
কি মনে করছে?
চেকরা চাইনীসদের মুখপাত্র, বাট উই আর নট শিওর, নেগোসিয়েসান চলছে তো চলছেই। আনটিল লস্ট নাইট-আর তখনই কি প্রিন্সের ছবিগুলো ট্যালবট চুরি করে
তাই হবে হয়তো।
আমি বহুদিন শুনেছি ডাউন স্কুলের কথা। ডুরেল বলল, দেয়ার আর ফোর অফ দেম, রাইট? এটা কি ঠিক সিল্ক পেইন্টিংস অন রোলস অ্যাবাউট থ্রী ফিট ওয়াইড অ্যাণ্ড টেন ফিট লঙ
এ্যালেন চুপ করে শুনল।
রিসেন্টলী রোমের মিউজিয়ামে দেখানো হয়েছে?
দ্যাটস রাইট–এ্যালেন এইবার মুখ খুলল, কিন্তু নিশ্চয়ই তুমি সেগুলোকে অল এ্যাট ওয়ান্স দেখনি।
এ্যালেন বলল, দো ওয়্যার ডান বাই এ ওয়াগুরিং বুদ্ধিষ্ট পিলগ্রিম, এ পেইন্টার নেমড় পেঙকা। যে কিনা সারা সাউথ-ইষ্ট এশিয়া হেঁটে বেড়িয়েছিল। রিমার্কেবল চাইনীজ এ্যানসিয়েন্ট আর্ট বড় একটা চোখেই পড়ে না। কমসে কম দাম হবে কোটি ডলার। যতদূর মনে হয় সম্রাট সুর তীর্থ ভ্রমণের সময়কার ভেরিয়াস সিনসিনারী প্রতীক হিসেবেই ফিরে পেতে চায় ওর যথাযথ মূল্য। প্রিন্স সুভানার ওগুলো বার্থ রাইট। যাইহোক। কেন রোমে গিয়েছিল?
যতদূর ধারণা কালচারাল ইন্টারচেঞ্জড। আর্ট গ্যালারীতে মাত্র দুসপ্তাহ হৈ-হৈ ব্যাপার।
তারপর ওগুলো কি রোমেই চুরি যায়?
প্রিন্স স্ক্রলগুলো জেনেভা থেকে দেশে নিয়ে যাবার ঠিক করে। টিন খনির আলোচনা শেষ করে সব কথা পাকা। জ্যাক এর মধ্যে কিভাবে যে হাতসাফাই করলে। আমাদের কাছেই ব্যাগটা ছিল। প্রিন্স জ্যাককে সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করত বলে রোম থেকে জেনেভা হোটেলে ওঠে আর একেবারে হাওয়া হয়ে গেল সেখান থেকে। এমন নিদারুণ বিশ্বাসঘাতকতা
ডুরেল বলল, আর এ্যান্টন প্যাসেক। তার সম্পর্কে কিছু ভেবেছ কি?
ডুরেল মনে মনে বলল, হ্যাঁ এটা প্যানেকেরও কাজ হতে পারে। টিন খনির আলোচনায় আমাদের সঙ্গে সুভানার সম্পর্কটা নষ্ট করে দেবার জন্য স্ক্রল সমেত জ্যাককে কে.জি.ইউ-র লোকেরা গায়েব করেও তো দিতে পারে। যাতে করে আমেরিকানদের ওপর সব দোষটাই পড়ে–
এরকম কথা আমিও ভাবছি–এ্যালেন চুপ করে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াল।
দেন ইউ আর শিশুর যে জ্যাকই চোর?
সুভানা অন্যরকম দাবী করে। প্রিন্স যে স্যুটে থাকতত জ্যাক সেখানে থেকে একটা প্যাকেট কাগজের বাণ্ডিলের মতো নিয়ে চম্পট দেয়। সুভানার ব্যক্তিগত একজন চাক্ষুষ দেখেছে।
কিন্তু অতখানি খারাপ কাজ কি জ্যাক করবে? তার সবটাই জানো তুমি। আর ভালোবাসতে।
এ্যালেন বলল, আসলে ট্যালবট জ্যাক দারুণ বেপরোয়া। তার কাজ সারা দুনিয়া জুড়ে ঘুরে বেড়ানো, এদিকে ইঞ্জিনীয়ারিং-এ চোস্ত। পেইন্টিংগুলো চুরি হবার পর স্বভাবতই প্রিন্স এখন আমেরিকানদের ওপর চটে গেছে ইনক্লডিং নরামকো টিম। আর এতে তো প্যাসেক খুশী হবেই-কিন্তু তাকে এয়ারপোর্টে দেখে খুব একটা খুশী বলে মনে হলো না–ডুরেল বলল।
এ্যালেন বলল, যাক্ সে সব কথা। এখন তোমার একমাত্র কাজ হবে তিনদিনের মধ্যে যেমনভাবে হোক জ্যাককে খুঁজে বের করে প্রিন্সের মামলাটি সব পৌঁছে দিতেই হবে।
চেয়ার ছেড়ে ডুরেল উঠে দাঁড়াল। এর মধ্যে যদি সময় থাকে আমি একবার যাব জ্যাক ট্যালবটের কামরায়। তোমার কাছে ঠিকানা আছে?
আমি আগেই জানিয়ে দিয়েছি
তোমার কাছে কোন চাবি আছে কি?
সে সেখানে নেই। তার কারণ খবর ক্যনস্যুলেট রাখে না। কেবল তার প্যাডে একটা ঠিকানা পাওয়া গেছে। ভিলা-ডেল-সল। লাউসেন রোড, জেনেভা, নর্থ পয়েন্ট। ইটালীর একজন বিজনেস ম্যাগনেট। বিরাট চাই। নাম হল- কাউন্ট বার্নাডো এ্যাপোলিও–
এ্যালেন বলল, বিখ্যাত শিল্প-সংগ্রাহক।
ডুরেল বলল, এই অঞ্চলটাকে এ্যাপোলিও কি ভিলা-ডেল-সল বলে বেড়াত।
হ্যানসন ব্যাপারটা বলতে পারবে?
প্রিন্স সুভানার সঙ্গে পেইন্টিং স্ক্রল চুরির কথাটা নিয়ে শিগগির ফয়সালা হওয়া উচিত।
আগে প্যাসেক সম্পর্কে ভাবতে হবে। কারণ জ্যাককে সেই হয়তো খুন করেছে।
এলেন বলল, পেপার স্ক্রলটা ফেরৎ পাবার জন্য হয়তো উগ্র হয়তো ব্যবহার সুভানা করতে পারেন। সাবধানে কথা বলবে। দেখ জ্যাক যে চোর এ ধারণাটা পাল্টানো চাইই–তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করব।
.
০৩.
তখন প্রায় রাত নটা।
অনেকক্ষণ হয়ে গেল চিত্রশালা থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারপর সারারাত মনে মনে ভাবল টংটনে একটা কেবল করলে কেমন হয়। সে কি সাফ সাফ জানিয়ে দেবে। সে তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করছে।
অবশেষে ডুরেল এগিয়ে গেল গ্র্যাণ্ড রুর দিকে। হঠাৎ মনে হলো তাকে কে যেন অনুসরণ করছে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ডুরেল সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রালের কাছে থামল।
থমকে দাঁড়াল অনুসরণকারী ছায়ামূর্তি। ডুরেল বুঝতে পারল বিপদ আসন্ন। নিরিবিলি আরো একটা জায়গায় পা দিতেই সে অদ্ভুতভাবে পেছন দিক থেকে একটা প্রচণ্ড ঘুষি ঘুরিয়ে মারল। তারপর একটা নির্জন জায়গায় শরীরটাকে টেনে এনে আরো কয়েক ঘা ঘুষি মারল। অপরপক্ষ রক্তাক্ত ঠোঁট ফাঁক করে কি যেন বলল, কমেট
কে বলেছে আমার পিছু নিতে? দেখি তোমার পাশপোর্ট এখানে আসার তোমার কোন এক্তিয়ারই নেই, এই বলে সে আরো কয়েকটা রদ্দা মারল ঘাড়ে, গর্দানে।
আমায় রেহাই দিন মঁসিয়ে ডুরেল।
এবার বলো তো কবে থেকে আমার পিছু নেবার কাজে লেগেছ।
আপনি এখানে আসার ঘণ্টা কয়েক আগে থেকে।
তখন চলন্ত একটা ট্যাক্সি থামিয়ে হোটেলে ডি লা প্যাকসে দ্রুত পৌঁছে গেল।
অস্ত্র পায়ে প্রিন্স সুভানা ঘরের মধ্যে পায়চারী করছিলো। বললেন, মঁসিয়ে ডুরেল, আমরা আমেরিকান অফিসিয়ালদের ওপর এতই নির্ভরশীল যে এখন অবশ্যি অধের্য হয়ে পড়েছি
প্রিন্স বললেন, দেখুন, তিন দিন পরে দেশে ফেরবার আগে যেমনভাবেই হোক, আমার পৈতৃক ছবিগুলোর একটা ব্যবস্থা করুন। আশাকরি স্বীকার করবেন এগুলো ট্যালবটই চুরি করেছিল। আমি আর এখন অন্য কোন কথা শুনতে চাই না।
ডুরেল বলল, আপনি কি নিশ্চিত ট্যালবটই সম্পূর্ণ দায়ী?
সুভানা বললে, আমাদের কাছে তো তেলরঙের ছবিগুলোর আর্থিক মূল্যের চেয়েও ধর্মীয় মূল্য অনেক বেশী। আর জ্যাককে শুধু এ ব্যাপারে নয়, মাইনিং লীজের ব্যাপারেও বিশ্বাস করেছিলাম আমেরিকান শিল্পপতিদের প্রতিনিধি হিসেবেই।
ডুরেল সেই মুহূর্তে জিজ্ঞেস করল, তা হলে সব আমেরিকানদেরই আপনি ট্যালবটের মতো একজন চোর বলে ভাবেন?
সুভানা বললেন, অনেক কিছু মূল্যবান জিনিষের বদলেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। ডুরেল জানাল, আপনার ভৃত্যের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।
কি লাভ। তার সঙ্গে কথা বলে।
হঠাৎ দ্বাররক্ষী এসে খবর দিল একজন জনৈক ভদ্রলোক দেখা করতে এসেছেন।
প্যাসেক মুহূর্তের মধ্যে একদম ভেতরের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
ঠিক এই মুহূর্তে প্যাসেককে এইখানে দেখে ডুরেল চমকে উঠল। প্যাসেক চাতুরীপূর্ণ চাউনির ফাঁকে মৃদু হাসল।
প্যাসেক বলল, ডুরেল এটা কিন্তু নিরপেক্ষ অঞ্চল। যা হোক, কি মনে করে এখানে–জানতে চাইল ডুরেল।
ব্যবসা।
কিসের ব্যবসা।
খনিসংক্রান্ত এগ্রিমেন্ট আর কি।
প্যাসেক, মস্কোতে কে.জি.ইউ ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাকা গোয়েন্দা ডুরেলকে বাইরে ডেকে এনে আলোচনা আমন্ত্রণ জানাল। দুজনে এসে থামল একটা অজানা সেতুর কাছে।
ট্যালবটকে খুঁজে পেলে। তোমাদেরই একজন লোক এমনি করে তোমাদের ভরাডুবি করল?
ডুরেল বলল, তার বিরুদ্ধে আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই।
প্যাসেক বলল, তোমাদের অতি বিশ্বস্ত অনুচর, বন্ধু, সেই আবার যা নয় তাই বলে বেড়াচ্ছে। প্রিন্স যার ফলে প্রত্যেকটা আমেরিকানদের ওপরে দারুণ চটে গেছেন
ডুরেল বলল, বছর কয়েক আগে আমস্টারডামে ছিলাম।
প্যাসেক বলল, বুঝেছি, তুমি রবার্ট লঙস্ট্রমের কথা বলতে চাইছ
ডুরেল বলল, সে আমার খুবই বন্ধু ছিল।
আমাদের ইচ্ছের বাইরে ওর মৃত্যুটা ঘটে যায়।
ট্যালবট এখন কোথায়?
যতদূর মনে হয় তার পাত্তা এখানকার ত্রিসীমানায় পাওয়া যাবে না। আর তোমাকেও আদেশ করছি এখনই জেনেভা পরিত্যাগ করতে। প্যারিস যেতে আমি তোমায় সাবধান করছি। যেখানে খুশী যাও কিন্তু জেনেভায় থেকো না।
.
০৪.
ডুরেল তারপর অন্য পথ ধরে পাবলিক টেলিফোন থেকে হ্যানসনকে খবর দিল।
হ্যানসন বলল, কি ব্যাপার?
ডুরেল বলল, এ্যালেনকে ফোন করলাম। কেউ ধরল না।
ঠিক আছে। তোমার কাছে আমি যাচ্ছি। কোথায় আছ এখন? নির্দিষ্ট একটা জায়গার নাম করে ডুরেল সেখানে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে লাগল। যথারীতি একসময় হ্যানসন এসে পৌঁছতে তারা দুজন স্মিক্সিথভিল পাড়ি দিল।
ডুয়েল বলল, চলো তার আগে ট্যালবটের কামরাটা সার্চ করি
হ্যানসন বলল, আমি তন্নতন্ন করে দেখেছি। কোন হদিস নেই। এখন বুঝতে পারছি ও সব কাজই করতে পারে টাকার জন্যে।
ডুরেল বলল, টাকাই যদি তার একমাত্র লক্ষ হয় তাহলে সে শুধুমাত্র ঐ পেইন্টিং চুরি করবে কেন বুঝছি না।
ডুরেল বলল, আমার ধারণা ফ্রান্সিস এ্যাপোলিও এর মধ্যে জড়িত আছে। এ্যালেন একটা ঠিকানা দিয়েছিল ভিলা-ডেল-সলের। যেটা নিঃসন্দেহ কাউন্ট এ্যাপোলিওর।
ডুরেল অবশেষে রুসেন্ট পিয়েরে ফিরে এলো। ডুরেল কিছুক্ষণের মধ্যেই নিঃশব্দে এ্যালেনের বাড়িতে ঢুকল কিছুক্ষণ আগে যে কেউ এসে এখানে তোলপাড় করে গেছে তার চিহ্ন প্রভূত বিদ্যামান।
রক্তাক্ত শয্যার পাশে মেহগনি কাঠের ডেস্ক ভেঙেচুরে খানখান।
হ্যানসন একটা হলঘর পেরিয়ে মাঝখান বারবার সেই বিছানার কাছে গিয়ে দেখল একটা বাদামী স্কার্ট আর রক্তাক্ত ব্লাউজের পাশে ২৮কোল্টের হাতীর দাঁতের বাঁটযুক্ত ছোট একটা বন্দুক নিঝুম ঘুমিয়ে রয়েছে যেন।
ডুরেল বছর তিন আগে এই রমণীর আগ্নেয়াস্ত্রটি এ্যালেনের কাছে দেখেছিল। তারপর ডুরেল মাথানীচু করে বেডরুমের দিকে এগিয়ে চলল।
.
০৫.
তথন এ্যালেন প্রায় মৃত্যুমুখে। দেওয়াল, ডেস্ক, বিছানা সর্বত্র রক্তের ফোঁটা ফোঁটা দাগ বর্তমান ইতস্ততঃ ছড়ানো। অতীব ক্ষীণ শব্দ তুলে সে ডাকল, স্যাম–
ডুরেল বলল, এ্যালেন আমি ভীষণ দুঃখিত, আমার আসতে খুব দেরী হয়ে গেল-এই নারকীয় কাজ কে করেছে আমাকে বলো।
স্যাম-সে বলার চেষ্টা করল, পারল না।
বলো, বলল, এ্যালেন।
অসহায় বোধ করে ডুরেল বলল, তবে কি প্যাসেক–
না।
তবে কি জ্যাক ট্যালবট—
এ্যালেন চুপ করে থাকাতে ডুরেল বুঝতে পারল কোথায় যেন ফল্গুধারা বয়ে যাচ্ছে অবিরত, যা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ডুরেল বলল, এখানে জ্যাক ফিরে এসেছে। জেনেভায় সারা দিন ছিল। স্ক্রলগুলো কি তার কাছেই আছে?
এ্যালেন বলল, হা হা। আমি ক্লান্ত স্যাম—
ডুরেল বলল, এ্যালেন তুমি ভাল হয়ে যাবে।
না। আর মিথ্যে বলল না স্যাম
ডুরেল বলল, কতক্ষণ এভাবে পড়ে আছো?
আধঘণ্টা হবে। আমি এমন কাজকে চিরকালই ঘৃণা করতাম স্যাম–আমার ভেতরটা এক্কেবারে এখন ফতুর হয়ে গেছে।
তা ঠিক–ডুরেল বলল, জ্যাক পেশাদার খুনে
এ্যালেন জবাবে বলল, তার থেকেও জঘন্য। প্যাসেকের চামচা
তোমাকে বলতে আমার বাধা নেই স্যাম। আমার লাইফ ইনসিওর করা আছে।
ইনসিওর!
স্যাম, সব কিছুই জ্যাক জানত। এ্যালেন বলল, অর্থাৎ আমার সবকিছু, সব কাজকর্ম গোপনীয়তা
তাছাড়া আর কিছু। সে আর কি মধু পেতে চেয়েছিল?
জানি না। হঠাৎ মিডল য়ুরোপের ফ্রীমন্ট নাবিকশ্রেণীর বাজে লোক নিয়ে বন্যজন্তুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর
কতজন তারা সঙ্গে ছিল?
জনা চারেক হবে।
ডুরেল বলল, ফ্ৰীমন্ট ক্রুর লোকেরা তো কে সেকসনের লোক?
আর কোন কথা বলতে পারলো না এলেন।
অদূরে টেলিফোন বেজে উঠল।
মনে হয় প্যাসেক–
না। হ্যানসন জানাল। বাইরে আমি আমাদের লোকদের প্রয়োজনবোধে ফোন করতে বলেছিলাম
ডুরেলের হাত থেকে হ্যানসন রিসিভার টেনে কানের কাছে ধরল। এবং বলল, অপরপক্ষকে রোম এবং নেপলসের জন্য ২৩০০ সুইস এয়ারলাইন্সের দুটো টিকিট কাটতে।
কার ফোন? দানিয়েল?
হা। এতক্ষণে জ্যাক ২৩০০ এয়ার ফ্লাইট ধরে রোমে চলে গেছে।
হঠাৎ এ্যালেন বলে উঠল, দেখ স্যাম ওকে মেরে ফেল না। আমার অনুরোধ।
তারপর এ্যালেনের মৃত্যু ঘটে।
.
০৬.
হ্যানসন বলল, স্যাম, এ্যালেন আমার বড় প্রিয় ছিল।
বাজে কথা ভাল লাগে না। ডাক্তার এসে গেলে তার কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে সকারের ব্যবস্থা করো।
মুহূর্তে তার কাজে তৎপর হয়ে উঠল ডুরেল। এ বাড়ির সঙ্গে যাতে কে.জি ইউর লোকেরা আর কোন যোগাযোগ না করতে পারে এটাই এখন ডুরেলের দুরন্ত দুর্ভাবনা ভয়ানক কাজ করতে শুরু করল। ওপর তলায় গিয়ে ডুরেল দ্রুত রেডিওসেটগুলো ভেঙে চুরমার করে দিল।
তারপর শ্লথ পায়ে নীচে নেমে এলো।
সী জিজ্ঞাসা করল, যে প্লেনটা একটার সময় রোমে যায় আমরা কি ওটাই ধরব?
ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই। আমরা তার আগে একবার ভিলা-ডেল-সল যাব।
ওরা দুজন তখন লাল গাড়ির গতিপথ জেনেভার উত্তর দিকে ঘুরিয়ে দিতে হাইওয়ের পথে স্পীড তুলল। একটাই মাত্র এখন উদ্দেশ্য। যেভাবে তোক ট্যালবটকে পাকড়াও করে স্ক্রলগুলো উদ্ধার করতেই হবে। এবং প্যাসেকের খপ্পর থেকে তাকে চিরদিনের মতো মুক্ত করতে হবে।
একসময় অপরিচিত একটা জায়গায় হানসান সী গাড়ি থামল। মিস্টার ডুরেল, ঐ যে দূরে এ্যাপোলিওর বাগানবাড়ি।
ডুরেল বলল, এখানে কেউ আছে বলে তো মনে হয় না। নিঃসঙ্গ প্রাসাদপুরী।
হ্যানসন বলল, কেউ না কেউ নিশ্চয়ই আছে।
কি করে বুঝলে?
ট্যালবটের কাছে খুব সম্প্রতি এ বাড়ির টেলিফোন নম্বর পাওয়া গেছে।
আর দেরী নয়। ভেতরে ঢোকা যাক।
ডুরের বলল, না! একজনকে বাইরে থাকা দরকার। বরং আমি ভেতরে যাই।
মোরামের পথ ঘুরে ডুরেল বাগানের উল্টোদিকে বাড়াল।
খানিক দূরে দোতলায় ব্যালকনির তলায় নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে একখানা ওপেন সীডান চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে কেউ নেই।
অথচ কাঁচের ভেতর থেকে কড়া তামাক পাতার পোড়া গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে আছে। বারান্দার ঈশান কোণের দিক থেকে মনে হলো একটুখানি আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে।
আরো একটা সতর্কতা অবলম্বন করে ডুরেল এগোতে থাকল।
ডুরেল আরো কিছুটা ঘুরপাক দিয়ে উঠতেই সী হঠাৎ পেছন থেকে লাফ মেরে বলল, ঘাবড়ে যেও না। এফ. বি. আই-এর লোক সামনে। টেক ইট ইজি। আস্তে আস্তে ডুরেল মেহগনি কাঠের দরজা ঘেঁষে দাঁড়াল।
ভেতরে একটা পায়ের পাতার ধ্বনি চৌকাঠ ছুঁয়ে গেল।
আরো একটু সামনের দিকে ডুরেল এগোলো।
আরো একটু এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই বড় হলঘরের পেছন দিকের লোহার দরজাটা প্রচণ্ড ঝড়ের তাণ্ডবে যেন খুলে গেল।
আর সেই তীব্র ধ্বংসের মুখে মরিয়া বেগে হিংস্র পাশবিক চাউনি নিয়ে একটা দৈত্যাকৃতি লোক এগোতে থাকল ডুরেলের দিকে।
এমন একটা ঘটনা নিশ্চয়ই ঘটে যাবে যার জন্য সে সবসময় প্রস্তুত
সে একটা ধারালো অস্ত্র ডুরেলের দিকে ছুঁড়ে মারবার উপক্রম করল। ডুরেল তৎক্ষণাৎ দ্রুত নিজেকে পেছন দিকে সরিয়ে বলল, ওভাবে ছুরি চালাতে নেই। আমি পুলিশের লোক নই।
হঠাৎ লোকটি ইস্পাতের ফলাটা ছুঁড়ে মারতেই ডুরেলের মোটা কোটের হাতা ছুঁয়ে কিছুটা কেটে বেরিয়ে গেল। তারপর লোকটা ছুটতে শুরু করল। ডুরেলও পেছন পেছন ধাওয়া করল। এবং হ্যানসনের কাছে পৌঁছতে নির্দেশ দিল। আর নিজের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরল। তার ময়লা ধূসরিত ঘেঁড়া পকেট হাতড়ে কাগজপত্র বার করল সাইলাস।
প্রথমটা একখণ্ড ইতালীয় পাশপোর্ট, তারপর বর্ডার স্লীপ, ফ্রেঞ্চ বডার দিয়ে যাবার একটা স্ট্যাম্প। আর গতকালকার সুইজারল্যাণ্ড প্রবেশ পথের একটা তারিখ। সে নাম পড়লো ব্রুনো বেলারিও। বাস করে ফিলিবেশে দ্বীপে। যদিও দ্বীপটা এ্যাপেলিওর একটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এদিকে কেন যে ব্যাটা মরতে এসেছিল। সী পকেটের ভেতরে থেকে আরো একটা এনভেলাপ করল। তাতে ছিল ত্রিশ হাজার লিরা। আর খামের ওপরে হোটেল সেন্টসীয় ছাপা মারা পাবেশেপী ১৪২ নেপলস।
এখানে ওখানে জিনিসপত্তর উল্টোপাল্টে, হাজার খোঁজাখুঁজি করে, আলমারীর মাথায়, খাটের তলায়, কিচেনে, সিঁড়ির ঘুরুনী ঘরের কোণে–কোথাও চিহ্ন পাওয়া গেল না স্ক্রল পেইন্টিংগুলোর।
তবে এটা ঠিক, কোন মহিলা এখানে দু-একদিনের জন্য রাতবিরেত কাটিয়ে গেছে সে কি এ্যাপোলিওর স্ত্রী? না অন্য কেউ, কেননা হ্যাঁঙারে ঝুলছে কিশোরী মেয়ের খাটো স্কার্ট। না কোন ভুল নেই। এখানে জ্যাক নিশ্চয়ই সিক্ত লালা ঝরিয়ে গেছে।
বুনো কি পাহারা দিতে পাঠিয়েছিল এ্যাপোলিওর প্রেরিত স্ত্রী অবৈধ প্রণয়লিপ্সার লীলাক্ষেত্রেকে। তার উত্তর আপাতত পাওয়া সম্ভব নয়।
যাইহোক, আর দেরী না করে নীচে নামল দুজন। নীচে নেমে দেখল লোকটির কোন হৃদস্পন্দন হচ্ছে না।
সাবাস, হ্যানসনের মার জব্বর মার।
সাবাস, সাবাস হ্যানসন, সাবাস।
.
০৭.
হ্যানসন হতবাক।
ডুরেল বলল, ব্যাপার কি?
সত্যি মরে গেল ব্রুনোটা?
ডুরেল বলল, অনেক খবর বার করা যেত ব্যাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে।
তা, ঠিক
পুলিশের কাছে খবর যাবার আগে, এক্ষুনি ব্রুনোর ডেডবডি প্যাকেট করে ফেল। তারপর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আবার পৌঁছে যাব রোমে। জ্যাকুমেলার ওখানেই সব খবর পেয়ে যাব। ট্যালবট সম্পর্কে হুঁশিয়ার। হঠাৎ ভয়াল হয়ে উঠল সীর চোখ দুটো।
শুধু এইটুকু জেনে রাখ আমরা ইটালীর এমন এক ব্যক্তির ব্যপারে জড়িয়ে আছে যার নাম কাউন্ট এ্যাপোলিও। সবার আগে এখন এয়ারপোর্টে চলল। যদি হঠাৎ মহিয়সী ফ্রান্সিসকার সঙ্গে মোলাকাৎ হয়ে যায়, খুব ভালো হয়।
.
০৮.
ঠিক সেইসময়, ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ে ফ্রান্সিসকা যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠল।
সীজার এখনো বিছানায়, মাদকীয় অশালীনতা ঢাকতে সকালের রোদ ততখানি বিচলিত নয় বোঝা গেল। তিনি বার্নাড এ্যপোলিওর সঙ্গে কি পাশবিক মজাটাই না করেছেন।
ফ্রান্সী স্মিথ—
সীজার, ও নামে আমাকে ডাকবেন না।
অস্ফুট রব তুলল সীজার, কী?
তখনো আবার সেই একই গলায় বলল, আগে ঠিক নামে ডাকো আমায়। আর তা না হলে উত্তর না।
সীজার বলল, সত্যি। আমাকে ভীষণ ভালোলাগায় তোমার ভেতরের অভিজাত মেজাজটা। এসো কাছে এসো, একবার
আমাকে আবার তুমি আর কিছু করতে বলল না। দ্যাখো খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। জেনেভাতে তোমার যা ইচ্ছা তাই করছো। ট্যালবটকেও ঘোল খাইয়েছ। আমার ভাই ব্রুনো কি টেলিফোন করেছিল?
জানি না। তাকেই জিজ্ঞেস করো। আমি এখন যাব
সীজার আর বাধা দিল না।
তোমার কি ধরনের স্বামী এ্যাপোলিও? তোমার স্বামীর চরম শত্রুর সঙ্গে রাত কাটালে বিছানায়–তার থেকেও বড় কথা তুমি কি তাকে খুন করতে চাও?
সীজার বলল, না। আমার কোন দিনই সে ইচ্ছে নেই–তার কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে উঠল। ফ্রান্সিসকা বাস্তবিকই বারবণিতা। কিন্তু বার্নার্ড এ্যাপোলিওর কাছে এসে অবদমিত মনের সব সংশয় অন্যভাবে ঘটে গেল। এ্যাপোলিও তাকে হাত ধরে অন্য রাস্তায় পৌঁছে দিল। ধনে মানে সবচেয়ে উঁচুস্তরের সেই মানুষ যার আদি এবং অস্তে কোন সংখ্যা নেই। দ্যাখো। সেই যে ব্রুনো গেল আর কোন পাত্তা নেই। একবার তোমাকে সেন্টসীতে যেতেই হবে–
আমাকে?
আমার ভাবনা হচ্ছে শুধু ব্রুনোর জন্য। তুমি কি ঠিক জানো, জেনেভা থেকে স্ক্রলগুলো হোটেলের ঠিকানায় পাঠিয়েছিল।
হ্যাঁ, ফ্রান্সি বলল। ট্যালবট ওগুলো আমাকে দেবার পর আমি নিজে ব্রুনোর সঙ্গে জেনেভা পোস্টঅফিস থেকে ওগুলো পোস্ট করি। সবই ঠিক ছিল, ব্রুনো ভুল করে রশিদটা ভিলাতে কোথায় যে রাখলো আর খুঁজে পেল না। সেইজন্যেই তো বুনো ওখানে গেছে। আমরা এমন কিছু রাখিনি যাতে আমেরিকানদের সুবিধে হয়। আমি ওকে জুতোর মধ্যে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু যতদূর মনে হচ্ছে সে বেডরুমের টেবিলের ওপরই রেখেছিল এবং তাড়াহুড়োতে ফেলে রেখে এসেছে। সীজার বলল, নিশ্চয়ই পেইন্টিংগুলো সেন্টসীতে আছে। সাবধান আমরিকানরা ভীষণ কড়া নজর রাখছে। ওরা ট্যালবটকেই খুঁজছে। যদি ট্যালবটকে ধরতে পারে তাহলে তোমাকেও জানাবে আর আমাকে তো বটেই। সুতরাং আর দেরী নয়। এক্ষুনি মানে মানে বেরিয়ে পড়ো। ছবিগুলো চাইই-চাই।