১. হলিউডের নাইট ক্লাব

হাউস অব ডেথ

হলিউডের অভিজাত একটা নাইট ক্লাবের সামনে একজন পায়চারি করছে। এখানে মদ, খাবার দাবারের দাম খুবই বেশী।

এখানে নর্তকী কাউকে শয্যাসঙ্গিনী করতে পারলে মানুষ বর্তে যায়। দেখা করে প্রথমে স্তোতবাক্য দিয়ে শুরু, পরে ফুল উপহার এবং মন-মেজাজ ভালো থাকলে অপরপক্ষ রাজী হয়ে যায়। তবে সচেতনভাবে বিপদ এড়িয়ে চলে তারা।

যাক এসব কথা। লোকটির পরণে নিখুঁত ইভনিং স্যুট, চকচকে জুতো, দামী ঘড়ি। বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেছে।

নাইট ক্লাবের সামনে পায়চারী করতে করতে সহসা ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসে টাল খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল প্রায়। দেখলেই বোঝা যায় মদ খেয়ে চুর হয়ে আছে।

লোকটি এলোমেলো পায়ে বড় রাস্তার দিকে এগোতে থাকলো। কিছু দূরে একটি লোক দাঁড়িয়েছিল। হঠাত্র সে দেখলো একটি গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে মাতাল লোকটির দিকে এগিয়ে আসছে। সে তাড়াতাড়ি হ্যাঁচকা টানে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচালো। প্যাকার্ড গাড়ির চালক অশ্লীল ভাষায় কিছু বলে একই গতিতে বেরিয়ে গেল।

মাতাল লোকটি নিশ্চিত বিপদের আকস্মিকতায় কিছুটা হুঁশ ফিরে পেয়েছে।

 মাতাল লোকটি ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আমার গাড়ি আছে, তাতে চেপে বাড়ি যাবো।

কিন্তু অপর লোকটি বলল, না না, এ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না, বিপদ ঘটতে পারে।

মাতাল লোকটি বলল, তোমাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ বলে তো একটা কথা আছে, চলো তোমাকে মদ খাওয়াবো।

লোকটি ভাবে, মাতাল লোকটি বেশ বড়লোক হবে, পোশাক-আশাক সে কথা বলে দিচ্ছে। দেখা যাক, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

মাতাল লোকটি তাকে জিগ্যেস করে, তা তোমার নামটা কি?

-ন্যাশ। গ্লিন ন্যাশ।

ন্যাশ সামনে দাঁড়ানো গাড়িটার দিকে তাকাল।রোলস-টা দামী বটে। স্টিয়ারিং হুইলে চোখ পড়ে। ওখানে লাগানো লাইসেন্সে মালিকের নাম লেখা আছে। সে থাকে হলিউডে, ঠিকানাটাও আছে।

মিঃ আর্ল ডেস্টার।

২৫৬, হিল ক্রেসুট অ্যাভেনিউ।

এদিকে ডেসটার নরম গদীতে গা এলিয়ে নাক ডাকা শুরু করেছে। ন্যাশ রাস্তার নাম, বাড়ির নম্বর মিলিয়ে নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে হাজির হয়।

–মিঃ ডেসটার, উঠুন বাড়ি এসে গেছে। ন্যাশ ওকে ধাক্কা মেরে বলে, সদর দরজা বন্ধ।

–ও সরি, বলে পকেট হাতড়ে ন্যাশের দিকে চাবিটা এগিয়ে দেয়।

ন্যাশ সদর খোলে। তারপর ডেসটারকে বৈঠকখানার দিকে নিয়ে গেল। ডেসটার আবার হুইস্কি খেতে চায় আর ন্যাশকেও এক পেগ নিতে বলে। নাছোড়বান্দা ডেসটারকে শেষপর্যন্ত হুইস্কি দিল আর নিজেও নিল। ন্যাশকে ডেসটার জিগ্যেস করল, সে কি করে?

–বিজ্ঞাপনের দালাল বলতে পারেন। কমিশনের কাজ।

–কত কমিশন পাও?

সপ্তাহে কোন ঠিক নেই। সময় ভালো গেলে সপ্তাহে কুড়ি ডলার পাই।

–এটা কিন্তু অন্যায়, ওতে কারুর চলে নাকি?

–হ্যাঁ, বড্ড কষ্টে আছি। একটা কোথাও ভালো কাজ পেলে বেঁচে যেতাম।

–ডেসটার তাকে ড্রাইভারের কাজ দিতে চায়। ন্যাশ আপত্তি জানায় না। সপ্তাহে পঞ্চাশ ডলার দেওয়া হবে ঠিক হল। সঙ্গে থাকা-খাওয়া ফ্রি। ঘরের টুকিটাকি আরো কিছু কাজ করতে হবে। ন্যাশ তার সঙ্গে আরো কথা বলে জানলো যে, লরেন্স বলে তার একজন ড্রাইভার ছিল। সে পালিয়েছে, কিছু চুরি-টুরি করেনি।

হঠাৎ ন্যাশ একজন মহিলার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। হলিউড মাপকাঠিতে ঠিক সুন্দরী পর্যায়ে তাকে ফেলা যায় না। বয়স বছর বাইশ হবে। দুধে আলতা গায়ের রং, সবুজ চোখ। স্লিম ফিগার।

ডেসটার জানালো সে তার স্ত্রী। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, এর নাম ন্যাশ। আজ থেকে ও আমাদের ড্রাইভার। আজ ও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে।

হেলেনের মুখের ভাব দেখে মনে হল, তার আগমনে সে অপ্রসন্ন।

ন্যাশের মনে হল, ডেসটার কোনরকম বিপদে জড়িয়ে পড়েনি তো? এবং সে বিপদ হেলেনের তরফ থেকে আসছে না তো? এখানে ড্রাইভারের চাকরি নেওয়া মানে চব্বিশ ঘন্টা ঘুরঘুর করতে হবে ঐ হেলেনের পাশে।

ন্যাশের বয়স ছাব্বিশ সাতাশ হবে। পেটানো স্বাস্থ্য, চওড়া কাঁধ, গায়েরং রং তামাটে।

ন্যাশ ডেসটারের দিকে ফিরে বলে, মিঃ ডেসটার, চাকরিটা পেয়ে খুশী হলাম ধন্যবাদ।

–তুমি গ্যারেজে গাড়ি তুলে, গ্যারেজের উপরে একটা ঘর আছে, ওখানে শুয়ে পড়ো।

–ঠিক আছে, গুডনাইট।

 –গুডনাইট!

ন্যাশ ঘরের বাইরে পা বাড়াতেই হেলেন চেঁচিয়ে বলে ডেসটারকে, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি আবার ড্রাইভার রাখলে? কদিন পরে বুঝবে।

–ডার্লিং, তুমি মিথ্যে রাগ করছে। দেখবে সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।

–আর ঠিক হয়েছে! বলে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সে নিজে তো ডুবতে বসেছেই এবং অপরকেও ডোবাবে।

হেলেনের মাথায় নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খায়। সে খাটে এসে বসে। রাগে উত্তেজনায় এখন তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে ন্যাশের ওপর। আসার আর জায়গা পেল না। এরপর ছুটে পালাবার পথ পাবে না।

সে পায়চারি করতে থাকে। ঘুম তার মাথায় উঠেছে।

ওদিকে ন্যাশ ডেসটারের দেওয়া চাবিটা দিয়ে গ্যারেজের দরজা খোলে। হেলেনের ওপর রাগে তার সারা শরীর জ্বলছে, মাথা টিপটিপ করছে।

গ্যারেজের আকার মন্দ নয়। তিনটে গাড়ি রয়েছে। লোহার একটা আলমারীতে টুকিটাকি কিছু যন্ত্রপাতি আছে।

ন্যাশের প্রথম নজর যায় ক্যাডিলাকটার দিকে। টু-সিটার গাড়ি। ঝকঝকে নতুন।

এরপর ন্যাশ তাকালো বুইক টার দিকে। এটা ততটা নতুন নয়।

 ন্যাশ রোল-টাকে জায়গামতো ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

শোবার ঘরটা তেমন পরিষ্কার নয়। কোণায় কোণায় নোংরা জমে আছে। যাক্, এখন তার একটু শোওয়া দরকার।

ন্যাশের বেরিলর কথা মনে পড়ল। বেরিল ওর বন্ধু। সে ওর ওখানে থাকতো। চাকরি-বাকরি মন্দ করে না। ছোট্ট একটা অ্যাপর্টমেন্টে থাকে। ইদানিং সে এসে জুটেছিল।

বেরি এই চাকরির কথা শুনলে খুশী হবে। একটা ফোন করতে পারলে ভালো হতো। কাল কালেই সে বেরিয়ে সুখবরটা দেবে।

ন্যাশ শোবার বন্দোবস্ত করে। ঘরটা ছোট হলেও মন্দ নয়। একটা আলনায় কিছু জামা-কাপড় ঝুলছে। হয়তো আগের ড্রাইভারের হবে। কেমন যেন একটা সন্দেহ জাগছে।

ন্যাশ ভাবে ঐ ড্রাইভারের খোঁজ তাকে করতেই হবে। জানতেই হবে তার আসল ঘটনা। ন্যাশ আরো ভাবে, হেলেন কি শুধু খরচের কথা ভেবেই তাকে ড্রাইভারী করতে দিতে চায় না? কিন্তু যাদের এত পয়সা..নাকি এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে? বাড়িতে কি কোন ঝি-চাকর নেই? হয়তো কাল ভোরে আসবে। তাদের কাছ থেকে খবর পাওয়া যাবে। এবার সে শোবার জন্য তৈরী হচ্ছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। সে ভেজানো দরজা খুলে দেখলো হেলেন।

-আপনাকে একটা অপ্রিয় কথা বলবো। তা শুনতে আপনার হয়তো খারাপ লাগবে, তবু না বলে পারছি না। হেলেন বলল, আমাদের ড্রাইভারের কোন দরকার নেই।

দরকার নেই?

–না।

–কিন্তু মিঃ আর্ল ডেসটার…।

–ওর কথা বাদ দিন, ও একটা মানুষ নাকি? আমি বলছি, আমাদের ড্রাইভারের কোন প্রয়োজন নেই।

–ম্যাডাম, আপনার হুকুম আমি মানতে পারছি না।

–তুমি জানো না, আমাদের টাকা-পয়সা কিছু নেই। সব ধারে চলছে।

 –সে কি। কথাটা আমি মানতে পারছি না।

–দু-সপ্তাহ বাদে আর্ল-এর চাকরী থাকবে না। পাওনাদারদের দাবী মেটাতে এ বাড়ি পর্যন্ত বিক্রী করতে হবে। তাহলেই আমাদের দেনাটা আন্দাজ করতে পারছো?

–আপনি হয়তো ঠিক জানেন না, তাহলে মিঃ ডেসটার আমাকে অ্যাপয়েন্ট করতেন না।

-এটা তোমার কোন পারমানেন্ট চাকরী নয়। যে কোন মুহূর্তে চলে যেতে বলা হতে পারে। আমি তাই বলছি।

-ম্যাডাম আপনার হুকুম আমি মানতে পারছি না। বৃথা ভয় দেখাবার চেষ্টা করবেন না। ডেসটার ছাড়া আমি কারুর কথা শুনতে নারাজ।

–আগের ড্রাইভার মাইনে না পেয়ে চলে গেছে।

–কিন্তু মিঃ ডেসটার বলেছেন ও পালিয়েছে।

-মাইনে না পেয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কথা শেষ করে হেলেন কোমরে গুঁজে রাখা একশো ডলারের একটা নোট ন্যাশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই টাকাটা নাও, তোমার বখশিস, তুমি আমার স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়েছে।

–মাপ করবেন, আমি নিতে পারবো না। আপনি আমাকে তাড়াবেন বলে এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। এসব আগে জানলে আমি মিঃ ডেসটারকে বাঁচাবার চেষ্টা করতাম না।

তার মানে?

–মানেটা কি আপনার কাছে স্পষ্ট নয়? যাক, ছাড়ুন ওসব, আমার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে গেছে। আপনি দয়া করে এ ঘর থেকে চলে যান, আমার ঘরে এত রাতে আপনাকে কেউ দেখলে আপনার মান-ইজ্জত সব যাবে।

-ঠিক আছে, আমি দেখে নেবো, বলে হেলেন চলে গেল।

হেলেন চলে যেতে ন্যাশ ভাবে, এখন থেকে তাকে হেলেন-এর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। তার সঙ্গে মেপে কথা বলতে হবে আর ওর গতিবিধির উপর নজর রাখতে হবে।

চোখে-মুখে জল দিয়ে ন্যাশ শুয়ে পড়ল। পরক্ষণেই কখন সে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরের দিন একটু দেরীতে ঘুম ভাঙায় ন্যাশ তাড়াতাড়ি কিচেনে চায়ের ব্যবস্থা করতে গেল।

হঠাৎ হেলেন ঘরে ঢুকে ঝাঁপিয়ে বলল, তুমি কিচেনে কেন? কে তোমাকে এখানে ঢুকতে বলেছে?

মিঃ ডেসটার আমাকে এ অধিকার দিয়েছেন। উনি আমার মনিব।

 –রাখো তোমার মনিবের কথা! এ বাড়িতে আমি যা বলছি তাই হবে।

–আপনার কথা আমি শুনলাম, তবে মানতে পারবো না। বলে ন্যাশ কিচেন ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ফেরার পথে ফোন দেখতে পেয়ে তার বেরিলকে ফোন করার কথা মনে পড়ল। চারদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ নেই। ডায়াল করল।

-হ্যালো, বেরিল ফোন ধরেছে।

–আমি ন্যাশ বলছি।

–বল, বল। কাল থেকে একেবারে বেপাত্তা কেন? এরকম তো কোনদিন করিস না।

–একটা কাজ পেয়েছি। এখানে কতদিন থাকতে হবে জানি না। হেলেনের ব্যাপারটা খুলে বলল। তারপর বলল, কিন্তু এখানে এসে মহা ফাঁপরে পড়েছি। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।

–তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে, ও একজন সংঘাতিক মেয়েছেলে। আচ্ছা, ও কি স্বামীসঙ্গ পায় না?

-মনে হয় না।

–কোন বয়ফ্রেণ্ড আছে কিনা খোঁজখবর নে।

–ঠিক আছে, যখন যেমন ঘটবে তোকে জানাবো। এখন ছাড়ছি।

ন্যাশ আস্তে আস্তে ঘরে গিয়ে ঢুকল। ওর নজরে পড়ল একটা ছোট টেবিলের ওপর জামাকাপড় উঁই করে চাপা পড়ে আছে একটা ফোন।

একটু পরে ফোনটা বেজে উঠল।

হেলেন ফোনে তার কাছ থেকে জানতে চাইল সে চলে যেতে রাজী আছে কিনা।

 ন্যাশ জানালো, সম্ভব হচ্ছে না।

হেলেন ঝপাৎ করে রিসিভারটা নামিয়ে রাখে।

ন্যাশ ভাবতে লাগল, দুর্ঘটনাটা ঘটেনি বলে কি এখন হেলেনের সমস্ত রাগ তার ওপর গিয়ে পড়েছে?

-প্যাকার্ড-গাড়িটার নম্বর বা ড্রাইভারের মুখ সে স্পষ্ট মনে করতে পারল না।

ন্যাশ এরপর আলনার জামাকাপড়ের পকেটগুলো পরীক্ষা করল। বাজে কিছু কাগজপত্র পেল, কোন ঠিকানা পেল না। সে নিশ্চিত হল, ওগুলো আগের ড্রাইবারের।

ন্যাশ মনে মনে ঠিক করে নেয়, সে পাশের বাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপ জমাবে। তার সঙ্গে এ ড্রাইভারের নিশ্চয়ই দোস্তি থাকতে পারে, সেই সঙ্গে পেয়ে যেতে পারে ঠিকানাটাও। এরপর ডেসটার ফোন করে ন্যাশকে জানালে তাকে এগারোটা নাগাদ স্টুডিওতে পৌঁছে দিতে হবে আর চারটের সময় তুলে নিতে হবে। তারপর ঘরের কোন কাজ না থাকলে ন্যাশের ছুটি।

ন্যাশ বাড়তি কোন কথা না বলে থ্যাঙ্ক ইউ স্যার বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল।

হেলেন যাতে সাবধান হয়ে যেতে না পারে তার জন্য ন্যাশ ডেসটারকে হেলেনের কথা কিছু জানাল না।

তারপর নির্দিষ্ট সময়ে ন্যাশ ডেসটারকে প্যাসিফিক স্টুডিও-তে আনতে গেল। ডেসটার নামকরা পরিচালক ছিল একসময়ে, এখন বাতিল হয়ে গেছে।

এরপর ন্যাশ পাঁচটা নাগাদ বাড়ি ফিরে এসে কোন কাজ আছে কিনা জানতে হেলেনের ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ায়।

দরজায় টোকা মেরে সে বলে, আসতে পারি?

-কাম ইন, হেলেন বলল।

 ন্যাশ ঘরে ঢুকে দেখল হেলেন ছোট্ট প্যান্ট আর ব্রেসিয়ার পরে আয়নার সামনে বসে প্রসাধন করছে। ন্যাশ ঘরে আসতে সে কয়েক সেকেণ্ড একনাগাড়ে তাকে দেখতে লাগল। অনেক ছলাকলা জানে। তার মনের মধ্যে একটা দাবান্ডল ধিকিধিকি করে অনেকদিন ধরেই জ্বলছে।

ন্যাশেরও শরীরের পারদ ক্রমশ চড়ছে। কিন্তু সে নিজেকে সংযত করে বলল, ম্যাডাম, এখন কি কোন কাজ আছে?

–না, কাজ নেই, হেলেন ন্যাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

–তাহলে আমি যাই?

–না থাকবে। আমি বড় নিঃসঙ্গ বোধ করছি।

ন্যাশ ভাবে, হেলেন ভাঙবে তবু মচকাবে না। সে দাঁড়িয়ে থাকে। হেলেন তাকে বসতে বলে, সে হেলেনের বিছানায় বসে পড়ল।

–তোমার আন্তরিকতায় আমি খুশী হয়েছি, তোমাকে তাড়াতে চেয়েছি, তাও তুমি যাওনি, তোমাকে আমার প্রয়োজন, হেলেন বলে।

–আমাকে? বিস্ময়ের সঙ্গে ন্যাশ জিগ্যেস করে।

–মিঃ ডেসটার সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ও আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। কি দিতে পেরেছে ও আমাকে? আমারও তো যৌবন বলে একটা জিনিষ আছে, বলে হেলেন ন্যাশের দিকে এগিয়ে আসে।

ন্যাশ কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। হেলেন এগিয়ে এসে ন্যাশকে তপ্ত বুকের মাঝে টেনে নিয়ে বেশ কয়েকটা চুমু খেল এবং তাকে ভীষণভাবে আদর করতে থাকে।

ন্যাশ এখন কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। কোনরকমে হেলেনের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। ঘরের বাইরে থেকে সে শুনতে পেলো হেলেন তার যৌবনের উপেক্ষা সহ্য করতে না পেরে কাঁদছে।

ন্যাশ ভাবে, হেলেন কী তাহলে সত্যিই ভালো? ভালো না হলে কেউ নিজেকে এভাবে বিলিয়ে দিতে পারে? সংযত হয়ে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় পড়ে কাঁদতে পারতো না।

ন্যাশ ইন্টারকমের জন্যে অপেক্ষা করছিল। হয়তো হেলেন কোথাও বের হলে তার ডাক পড়বে। কিন্তু না, এলো না। এখন তার আর কোন কাজ নেই।

এই সুযোগে আগের ড্রাইভার লরেন্সের খোঁজ পেতে হবে। লরেন্স হেলেনের সবকিছু না জানলেও, এ ব্যাপারে বাড়ির কাজের লোক কাজে আসবে।

কিন্তু বাড়ির বাইরে যেতে গেলে তাকে সবকিছু দেখে সাবধানে বেরোতে হবে। তার আগে ড্রাইভারের মুখ খোলানোর জন্য একটা ছোট মদের বোতল সরাতে হবে।

ন্যাশ সারা বাড়ি, হেলেনর ঘর, বাথরুম সবকিছু দেখে নিল। হেলেনকে কোথাও দেখা গেল না। এবার সে বারে ঢুকে ছোট একটা মদের বোতল জামার ভেতরে ঢুকিয়ে নিল।

যাক, এবার ন্যাশ বাড়ি থেকে বের হয়ে বাঁ পাশের বাড়িটার কাছে এসে দাঁড়ায়। পাশের বাড়িটা একজন ব্যারিস্টারের। দোতলা, সুন্দর বাড়ি। ন্যাশ লোহার গেটের ভেতরে তাকিয়ে দেখতে পেল লনে একজন মাঝ বয়েসী মালী কাজ করছে।

ন্যাশ মালীর কাছে এগিয়ে তার নাম জিগ্যেস করল, সে জানাল তার নাম এনড্রুজ।

–ঐ বাড়ির ড্রাইভার লরেন্সকে তুমি চেনো?

–হ্যাঁ। ওকে তো কদিন ধরে দেখছি না।

–আচ্ছা, ও চাকরি ছাড়বে বলে কিছু বলেছিল?

 উঁহু, হঠাৎই ওকে দেখছি না। বেশ ভালো লোক। কোন ঝামেলার মধ্যে সে থাকতো না।

–এ বাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দাওনা।

–সে এখন সাহেবের চেম্বারে গেছে।–ফিরতে রাত হবে। তুমি বরং একটু রাত করে এসে, দেখা পাবে।

-দেখি সময় পাই কিনা, বলে ন্যাশ বেরিয়ে এসে দক্ষিণের ফ্ল্যাট বাড়িটার কাছে এসে দাঁড়ায়।

ন্যাশ একটা গাড়ির ভেতর ড্রাইভারকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেল। ড্রাইভারের বছর পঞ্চাশ বয়স।

প্রাথমিক আলাপ সেরে ন্যাশ জানতে পারলো ঐ ড্রাইভার বছর চারেক কাজ করছে এখানে।

এবার ন্যাশ তার দিকে মদের বোতলটা এগিয়ে দিল। সে ছিপি খুলে খানিকটা মদ গলায় ঢেলে দিল। ড্রাইভার খুব খুশী।

–আমার আগের ড্রাইভার চাকরি ছেড়ে দিল কেন? ন্যাশ প্রশ্ন করল।

–ও চলে গেছে, তা তো জানি না।

–তুমি ওর বাড়ি চেনো? আমায় নিয়ে যাবে?

 দুজনের ঠিক হল, সন্ধ্যের পর সাড়ে সাতটা নাগাদ সামনের কফি হাউসে ড্রাইভারের সঙ্গে ন্যাশ দেখা করবে।

বাড়ি ফেরার আগে ন্যাশ মদের বোতলটা ঝোঁপের মধ্যে ফেলে দিল।

 ন্যাশ এবার বেরিলকে ফোন করল।

-হ্যালো, আমি ন্যাশ।

–তোর কথা ভাবছিলাম, কেমন আছিস।

-ভাল না, মনে হয় বিপদে জড়িয়ে পড়তে পারি। শোন, আমার এক ইনস্যুরেন্স এজেন্টের সঙ্গে আলাপ আছে। সে বছরে বহু টাকার কাজ করে আর ডেসটারকে চেনে। এ বাড়িটা ডেসটারের।

–জানি। বাড়ির কোন উইল আছে? ভবিষ্যৎ সম্পত্তির মালিক কে হবে? আর ইনস্যুরেন্সের নমিনি কে?

–সম্ভবত হেলেন।

–এটা কি তোর বন্ধু বলেছে?

–ও অনুমান করেছে।

–ওর অনুমানটা মিথ্যে।

–হঠাৎ তুই একথা বললি কেন?

–পরে তোকে সব বলবো। এখন রাখছি।

 পরে ন্যাশ নির্দিষ্ট কফিবারে গিয়ে ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করে।

তারপর ড্রাইভার তাকে লরেন্সের বাড়িতে সাহেবের গাড়ি করেই পৌঁছে দেয়। ড্রাইভার কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে বেরিয়ে যায়।

লরেন্সের বয়স বছর চল্লিশ হবে।

এক কামরার ফ্লাট। ঘরের মেঝেতে ফাটল, দেওয়ালে ছোপ আসবাব বলতে একটা লোহার খাট আর একটা আলনা।

লরেন্স বলে, তুমি কতদিন হল ও বাড়িতে কাজ করছো?

-এই তো কদিন হলো।

–খুব সাবধানে থাকবে।

–এ কথা বলছো কেন? তুমি ওখান থেকে স্বেচ্ছায় এসেছে না পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলে?

–আমি বাধ্য হয়েছিলাম।

–কেন?

–হেলেনের জন্যে।

–কেন ও তোমায় কি করেছিল?

করতে চেষ্টা করেছিল, পারেনি। সাহেবের মদে চুর হয়ে থাকাও ঐ হেলেনের জন্যে। ও একটা শয়তানি।

খুলে বল।

-কদিন চাকরি করার পর হেলেন একদিন আমার ঘরে এসে বলল, আমরা আর ড্রাইভার রাখতে পারছি না, তোমায় চলে যেতে হবে। তার জন্যে তোমায় একশো ডলারের এই নোটটা দিচ্ছি, তুমি ড্রাইভার ভালো, তোমার কাজ জুটে যাবে।

-নোটটা তুমি নিলে?

–না নিইনি, নিলে কপালে হাজতবাস ছিল।

–হেলেন আমাকেও একটা নোট দিতে চেয়েছিল। আমি নিইনি।

–ভাল করেছে। নোটটা আমায় দেবার সময় হেলেন আলপিন দিয়ে ওটা ফুটো করে দিয়েছিল।

–আলপিন দিয়ে কেন?

-একটা বদ উদ্দেশ্য ছিল, প্রথমটা আমি দেখতে পাইনি। পরে নোটের কোণের দিকে আমার চোখ পড়ে। বাণ্ডিল করার জায়গায় থাকলে তবু একটা কথা ছিল। নোটটা আমি পুড়িয়ে ফেলি। পুড়িয়ে ছাইটাও ফেলে দিয়েছি।

–একশো ডলারের নোট পুড়িয় ফেললে? এসবের কারণ কি?

-ওখানকার কাজের লোকটা আমায় বলেছে এবং আমার অনুমানই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।

–কি বলেছে ও?

–আমার ওখান থেকে হেলেন পুলিশে খবর দিয়েছে। বলেছে, ওর একশো ডলারের একটা নোট চুরি গেছে। যথারীতি পুলিশ এল। হেলেনই আমায় দেখিয়ে দিয়েছিল। সত্যি বলতে কি, আমার কাছে নোটের কোন প্রমাণ না থাকলেও আমি বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম। পুলিশ হেলেনকে জিজ্ঞেস করেছিল নোটটা আপনি দেখলে চিনতে পারবেন?

নিশ্চয়ই। হেলেন বলেছিল, ওটা একেবারে চকচকে নোট ছিল। আর নোটের মাথার দিকে পিন দিয়ে ফুটো করা ছিল।

-ওটা কি আপনি করেছিলেন?

–না। নোটটা হাতে পাবার সময়ই আমি ওরকম দেখি।

পুলিশ তখন তন্নতন্ন করে আমার ঘর খুঁজলো, কিন্তু কিছুই পেল না। পুলিশ অফিসার দুঃখিত বলে বিদায় নিল। আমিও আর দেরী না করে পালালাম, কারণ হেলেন তখন রাগে জ্বলতে জ্বলতে আমাকে বলেছিল ঠিক আছে, এর প্রতিশোধ আমি নেব। না পালালে বিপদে পড়তাম।

-ন্যাশ গম্ভীরভাবে সব শুনলো৷ তারপরে বিদায় নিল। বাইরে বেরিয়ে চারদিকটা তাকিয়ে দেখে নিল। ধারে-কাছে কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বাড়ি ফিরে এসে ন্যাশের মনে একরাশ চিন্তা এসে জড়ো হলো।

ন্যাশ মনে মনে ঠিক করল যে, এবার হেলেন শয়তানি করলে সে কিছুতেই সহ্য করবে না। হেলেনকে কোনরকম অন্যায় করতে দেখলে, সে তার মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে।

হঠাৎ ন্যাশের কি মনে হলো গ্যারেজে গিয়ে হাজির হল। গ্যারেজের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে দেখল হেলেনের স্ট্যাডিলক গাড়িটা ওখানে নেই।

বাড়িতে কেউ না থাকায় ন্যাশ সলিকে ফোন করল। সলি তার অফিসের বন্ধু। পুরো নাম জ্যাক সলি।

-হ্যালো, অপরপক্ষের গলা।

–আমি ন্যাশ বলছি।

–খবর কি তোমার?

–আমি মিঃ আর্ল ডেসটারের বাড়িতে ড্রাইভারের চাকরি নিয়েছি। ওর স্ত্রীর নাম হেলেন। বয়স ছাব্বিশের মতন।

-দেখতে কেমন?

–সহজে চোখ ফেরানো যাবে না। তবে হেলেন মোটেই সুবিধের নয়–খল, নিষ্ঠুর। অন্য জাতের মেয়ে।

–তাকে তোমার যৌবন দিয়ে তৃপ্ত করবে।

আমি শুনেছি, হেলেন ওর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। ওর তুলনায় বয়স অনেক কম। ওর পাশে বড় বেমানান লাগে।

-ঠিক আছে, তাহলে তুমিই হয়ে উঠলে নায়ক।

–শোন, গোপনে তোমাকে হেলেন, তার আগের স্বামী এবং মিঃ ডেসটারের সম্বন্ধে খোঁজ নিতে হবে। আর কদিনের মধ্যেই খবরটা তোমাকে জানাতে হবে।

-পারবে। তার জন্যে পারিশ্রমিক?

পাবে। পাঁচশো ডলার দেবো।

–রাজী। তবে একটা শর্ত আছে। এতে অফিসের সঙ্গে কোন সম্পর্ক থাকবে না, টাকাটা পুরো আমাকেই দিতে হবে।

–আমার আপত্তি নেই। ছাড়ছি।

রিসিভার নামিয়ে রাখল ন্যাশ।

এরপর সে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

তারপরের দিন চারটে নাগাদ ন্যাশ গাড়ি নিয়ে স্টুডিওতে গেল। এসময় ডেসটার তাকে আসতে বলেছে।

এরপর নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে ন্যাশ দেখে ডেসটার টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।

হঠাৎ কি খেয়াল হতে ন্যাশ ডেসটারের ড্রয়ার ঘাঁটতে লাগল। প্ল্যাস্টিকের খাপে মোড়া একটা ফোল্ডারের ভেতর সে একটা দলিল পেল। ক্যালিফোর্ণিয়া জাতীয় বীমা কোম্পানীর সাড়ে সাত লাখ ডলারের একটা জীবনবীমা পলিসি। দারুণ ব্যাপার চমকে ওঠার মতো খবর।

ন্যাশ বুঝতে পারে, হেলেন কেন ডেসটারকে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল।

ন্যাশ ভাবলো হেলেন এবার ডেসটারের কোন ক্ষতি করতে চাইলে সেও ছেড়ে দেবে না। সে তক্কেতক্কে থাকবে।

এরপর ন্যাশ ডেসটারকে ডেকে কোনরকমে টানতে টানতে গাড়িতে তুলে বাড়ির পথ ধরলো।

এর মাঝে দুদিন কেটে গেছে। ইতিমধ্যে ন্যাশ সলির অফিসে গিয়েছিল। সলির থেকে সে জেনেছে, হেলেনের আগের স্বামী হেলেনের জ্বালায় তিতিবিরক্ত হয়ে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

ন্যাশ ভাবল, হেলেন যদি তার অজান্তে ডেসটারের ক্ষতি করতে চায় আর সে যদি তা জানতে পারে তাহলে সে হেলেনকে ভয় দেখাবে। হেলেন ভয় পেলে তখন রাজকন্যার সঙ্গে রাজ্যলাভ দুটোই হবে।

ন্যাশের চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল একটা গাড়ির আওয়াজে। সঙ্গে সঙ্গে গ্যারেজে এসে সে দেখল হেলেন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।

ন্যাশ ভাবে এই ফাঁকে ডেসটারের কাছ থেকে কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়া যাবে। এই ভেবে ন্যাশ ডেসটারের ঘরে প্রবেশ করল।

ন্যাশ দেখল ডেসটার বিছানায় শুয়ে একটা পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। তাকে দেখেই সেটা বালিশের তলায় চালান করল ডেসটার।

-স্যার, রাতে আপনি বেরোবেন?

–না।

–তাহলে আমি যাই।

–শোন, মিসেস ডেসটার তোমাকে চলে যেতে বলেছেন?

–হা স্যার, দুবার।

–আমি বললে তবেই যাবে। তুমি এখন এসো। ও হ্যাঁ, কাল সকাল দশটায় আমি বেরুবো। ন্যাশ ফিরে আসে, পরের দিন নির্দিষ্ট সময়ে ডেসটারকে নিয়ে গাড়ি বের করে।

গম্ভীর মুখে ডেসটার বলে, আজ স্টুডিও যাবো না।

–স্টুডিওতে যাবেন না? তাহলে কোথায় যাবেন স্যার?

–এয়ারপোর্টে চল।

–বিস্ময়ের সঙ্গে ন্যাশ বলে, এয়ারপোর্ট? কোথায় যাবেন স্যার?

–সানফ্রান্সিসকো।

 ন্যাশ জানে, বীমা কোম্পানীর হেড অফিস সানফ্রান্সিসকোতে।

ন্যাশ এবার আমতা আমতা করে বলল, স্যার যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা বলতাম।

-না না, বল কি বলবে?

–আমার টাকাপয়সার অবস্থা এখন ভালো নয়। সাহেবের অসুবিধা না হলে…

 ডেসটার পকেট থেকে চেক বের করে তাতে পুরো দু-হাজার ডলার লিখে দিলো। ন্যাশ তো মহা খুশী।

এরপর ডেসটার জানায়, শনিবার থেকে আমি নিজেই বেকার। চাকরি আর জুটছে না। চাকরি গেলেই পাওনাদাররা আমায় ছাড়বে না।

ন্যাশ ভাবে, তাহলে হেলেনের কথাই ঠিক। আর বীমা কোম্পানীর টাকাটা পাবার জন্য হেলেন তার স্বামীকে খতম করে দিতে চাইছে। কিন্তু ন্যাশ তা কিছুতেই হতে দেবে না।

এরপর ন্যাশ ডেসটারকে বিমানবন্দরে ছেড়ে দিয়ে এসে ব্যাঙ্কে চেক ভাঙিয়ে নিজের নামে অন্য ব্যাঙ্কে জমা রাখে।

একসময় সে বাড়ি ফিরে আসে। শুয়ে পড়ে।

 ইন্টারকমটা বেজে ওঠে খানিক বাদে।

–আমি হেলেন বলছি।

–বলুন ম্যাডাম।

–আল আজ রাতে আর বেরুবে না। তাই তুমি আমাকে সন্ধ্যেবেলা পামগ্রোভ ক্লাবে পৌঁছে দেবে।

–কটা নাগাদ?

–ঐ আটটা নাগাদ। তবে তোমার উর্দি পরে যাওয়া চলবে না। রাত একটায় ফিরিয়ে আনবে।

তবে কি পরে যাবো?

–ভদ্র জামাকাপড় পরে যাবে। সে ব্যবস্থা আমি করবো।

হেলেন ঝপাং করে রিসিভার নামিয়ে রাখে। ন্যাশ ভাবে, ডেসটার তাহলে হেলেনকে সানফ্রান্সিসকোর ব্যাপারে কিছু বলেনি? নিশ্চয়ই না।

পামগ্রোভ নাইট ক্লাবে অন্যদিন একাই যায় কখন ফেরে ন্যাশ জানতে পারে না। আবার ড্রাইভারের উর্দি পরতে বারণ করলে, কেন? ওর মাথায় কি দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি মারছে?

দুপুরের পর আবার হেলেনের ফোন এল, সে জানালো ন্যাশের জন্যে সে নতুন পোশাক কিনে এনেছে।

আর পরের দিন ন্যাশ হেলেনের প্রকৃত রূপ জানতে সলির অফিসে গেল।

 সলি তাকে জানায়, হেলেনের প্রথম স্বামীর নাম ছিল হার্বাট ভ্যান টমলিন।

–হেলেন কি ওর স্ত্রী ছিল? ন্যাশ জিগ্যেস করে।

–না রক্ষিতা হিসেবে রেখেছিল।

–আচ্ছা, হেলেন কাজকর্ম কিছু করত?

–হ্যাঁ, ফি ফি-ক্লাবে সিগারেট ফেরি করতো।

–বাঃ, চমৎকার কাজ।

–এরমধ্যে টমলিন বিশ-হাজার ডলারের জীবনবীমা করে। আর ওয়ারিশান করে হেলেনকে।

–উস!

–সবে কিস্তির প্রথম টাকা জমা দিয়েছে, তারপরই জানালা দিয়ে নীচে পড়ে ওর মৃত্যু হল।

–জানালা দিয়ে কিভাবে পড়ে গেল?

–জানালাটা ছিল বড়। তাতে মজবুত গ্রিল ছিল না। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হেলেনই ওকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দিয়েছে তাতেই ও মারা যায়। ছোট কোম্পানী, বেশীদূর এগোতে সাহস পায় না। তবু হেলেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, ঝামেলা এড়াতে ও সাত হাজারেই রাজী হয়ে যায়।

এরপর ন্যাশ সলির কাছে বিদায় নিল।

ওদিকে স্টুডিওতে আজ ডেসটারের শেষ দিন। দরকারী কাগজপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকী শুধু হুইস্কি বোতলগুলো আনা।

বড় স্যুটকেসে বোতলগুলো ভরে গাড়ি করে ন্যাশ ডেসটারকে বাড়ি পৌঁছে দিল।

বাড়িতে প্রবেশ করে ডেসটার ন্যাশকে একটা চিঠি দিয়ে বলে পোস্ট করে দিতে। চিঠিটা তার পকেটেই রয়ে গেছে।

এরপর গাড়ি গ্যারেজে তুলে, পোশাক বদলাতে গিয়ে ন্যাশ দেখে চিঠিটা সে পোস্ট করতে ভুলে গেছে।

তাতে ঠিকানা লেখা রয়েছে–

মিঃ এডুইন বার্নেট,
আইন উপদেষ্টা,
টোয়েনটিথ স্ট্রীট
 লস এঞ্জেলস।

.