০১. আর পাঁচটা বিকেলের মতো

দি ক্লকস (এরকুল পোয়ারো)

আর পাঁচটা বিকেলের মতোই ছিলো সেপ্টেম্বর মাসের ন তারিখের বিকালটা। ওদিন ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষেই আগে থেকে কোনোরকম ধারণা করা সম্ভব ছিলো না।

শুধু মাত্র ব্যতিক্রম সাতচল্লিশ নম্বর ক্রিসেন্ট উইলিব্রাহামের মিসেস প্যাকার। তিনি কোনো ঘটনা ঘটার আগে সতর্ক করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। মিসেস প্যাকার আসন্ন কোনো অমঙ্গলের ব্যাপারটা প্রায় অনেকটাই বলতে পারতেন। কিন্তু সাতচল্লিশ আর উনিশ নম্বরের মধ্যে এত বেশি ফারাক এবং ঘটনার সঙ্গে এত কম জড়িত যে তার পক্ষে আগে থেকে ভাবাটা অপ্রয়োজনের মনে হলো।

ক্যাভেনডিস সেক্রেটারিয়াল অ্যান্ড টাইপ রাইটিং ব্যয়োর প্রিন্সিপাল মিসেস কে. মার্টিনডেলের কাছে আজকের দিনটা বড়োই একঘেয়ে লাগছিলো। ন তারিখের দুটো পঁয়ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত দিনটা ছিলো আর পাঁচটা দিনের মতোই, একেবারে সাদামাটা। ঠিক দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিটে মিসেস মার্টিনডেল ইন্টারকমের বেলটা টিপলেন। এডিনা বেল বাইরের ওদিকে বসেছিলো। মিসেস মার্টিনডেল বললেন, এডিনা শীলা ওয়েবকে কাজে পাঠিয়ে দাও।

এডিনা বেল বললেন, এখনো ফেরেনি। তিনি বললেন যে, ও ফিরলে পাঠিয়ে দিও।

 এডিনা টাইপ করছিলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দরজা খুলে গেলো। শীলা ভেতরে ঢুকলো। সামান্য হাসছিলো ও। এডিনা বলে উঠলো, স্যাণ্ডিক্যাট তোমাকে ডাকছিলো।

শীলা বললো, কি ভাগ্য, এইদিনই আমার দেরি হয়ে গেলো।

মিসেস মার্টিনডেলের বছর চল্লিশেক বয়স, বিবর্ণ কালচে চুল আর ক্রিশ্চান নাম ক্যাথরিনের জন্য ওর নামই স্যাণ্ডিক্যাট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তুমি দেরিতে ফিরছো মিস ওয়েব।

সে বললো সে দুঃখিত, সে একটা ট্রাফিক জ্যামে আটকে গিয়েছিলো। তিনি শীলাকে বললেন যে, মিস এক্স নামে এক ভদ্রমহিলা ফোন করেছিলেন। ঠিক তিনটে নাগাদ। তিনি একজন ফটোগ্রাফার চান। বিশেষ করে তার কথাই বলেছেন। সে আগে কখনো কাজ করেছে। কিনা জিজ্ঞাসা করলো।

শীলা ওয়েবকে বললেন মার্টিনডেল, ভদ্রমহিলার ঠিকানা হলো উনিশ নম্বর উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট।

শীলা ওয়েব তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। বললো, ওখানে আগে কখনো গিয়েছি বলে তো মনে করতে পারছি না।

তিনি বললেন, তিনটের সময় তুমি সহজেই ম্যানেজ করতে পারবে। বিকালে কি তোমার আর কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?

কনুই-এর কাছে রাখা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকটার দিকে তাকালেন। প্রফেসর পাড়ি, কারফিউ হোটেল। ঠিক পাঁচটার সময়। ঐ সময়ের আগে তোমার ফেরা উচিত। আর যদি একান্তই না পারো তাহলে আমি জ্যানটকে পাঠিয়ে দেবো। তিনি ইশারা করে জ্যানটকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। সে খানিক পরে দ্রুতবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট অট্টালিকা ছিলো বিদঘুঁটে ধরনের। ১৮৮০ সালে জনৈক ভিক্টোরিনার স্থপতি এটি তৈরি করেছিলেন। এটি দুটো বাড়ি মিশিয়ে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকার ধরনের। বাগান দুটো পাশাপাশি করা। বাড়িগুলোর নম্বর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাড়িগুলোর মধ্যে শৈল্পিক আভাস পাওয়া যায়। বাইরের দিকটায় কোনোরকম আধুনিকতার ছবি পড়েছে কিনা সন্দেহ।

উনিশ নম্বর বাড়িটার ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছুই ছিলো না। নিখুঁতভাবে পর্দা দিয়ে ঘেরা।

শীলা ওয়েব সদরের গেট খুলে দরজা পর্যন্ত ধীরে ধীরে হেঁটে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে বাজালো বেলটা। তারপর সে হাতল ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ছোটো হলঘরটার ডান দিকের দরজাটা সামান্য খোলা ছিলো। সেখানে গিয়ে টোকা মেরে ভেতরে ঢুকে পড়লো।

সারা ঘরে যা সবচেয়ে লক্ষণীয় তা হলো ঘড়ির প্রাচুর্য। দেওয়ালে কয়েকটা বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি। গ্রান্ডফাদার ক্লক, ফায়ার প্লেসে ড্রেয়ডেন চীনা ঘড়ি, ডেস্কের ওপরে রুপোর ক্যাথেজ ঘড়ি। এছাড়া একটা ছোটো শৌখিন ঘড়ি ফায়ার প্লেসের আর একদিকে রাখা। টেবিলের ওপরে একটা ঘড়ি। এই ঘড়িটার এক কোণে সোনার জলে রোজমেরী নামটা লেখা।

শীলা মাথার উপর একটা শব্দে চমকে উঠলো। দেওয়ালে কাঠের খোদাই করা ঘড়ি, যেটায় বিকট আওয়াজ হচ্ছিল। সে সোফার পাশ দিয়ে সামনের দিকে এগোলো। সামনের দিকে তাকালো। মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে একটা দেহ পড়েছিলো। লোকটার চোখদুটো অর্ধেক খোলা অবস্থায়, চোখের দৃষ্টি একেবারে প্রাণহীন। পরনে কালচে ধূসর রঙের একটা কোট। সামনের দিকে ভিজে একটা কালো দাগ। কিছুক্ষণ পর লোকটিকে দেখে থাকায় তার গা স্পর্শ করলো। ভীষণ ঠান্ডা এরপর ভিজে ঐ দাগটা স্পর্শ করে হাতটা দ্রুত সরিয়ে নিলো। একটা অজানা আতঙ্কে নিজের আঙুলের দিকে তাকালো।

হঠাৎ গেট খোলার শব্দ হলো। সে জানালার দিকে তাকালো। একজন মহিলা দরজা খুলে ভেতের ঢুকলেন। মহিলার ঢেউখেলানো চুল, কপাল থেকে পিছন দিকে টেনে আঁচড়ানো। চোখদুটো বড়ো বড়ো চমৎকার নীল রঙের। নিস্পৃহভাবে তিনি সামনের দিকে তাকালেন, মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলেন যে এখানে কি সে-ই আছে?

শীলা বললো যে, আমি আছি। মহিলাটা সোফার দিকে যেতেই শীলা বললো, এগোবে না। একজন লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এখানে। আপনি ওর ওপরে পড়ে যাবেন।

মহিলাটি শীলার কথায় এবার থমকে গেলেন।

.

কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

নয়ই সেপ্টেম্বর, দুটো বেচে উনষাট নাগাদ উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট ধরে আমি পশ্চিম দিক বরাবর এগোচ্ছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি তিনি আমাকে একরকম গোলকধাঁধার মধ্যেই ফেলে দিয়েছিলেন।

তিনি ৬১ নম্বর ঠিকানা খুঁজে বের করতে চাইছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলেন কি? উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট শেষ হয়ে গেছে। সামনের পথ রোধ করে অ্যালবনি রোড দাঁড়ালো। এরপর তিনি পেছন দিকে ঘুরে দেখলেন দক্ষিণ দিক বরাবর একটা বাড়িও নেই। লম্বা একটা দেওয়াল বরাবর চলে গেছে, দেওয়ালের ঠিক পেছনের দিকে আধুনিক ফ্ল্যাটের ব্লকগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে ঢোকার জন্য নিশ্চয়ই অন্য কোনো রাস্তা আছে, কোনো আশাই দেখতে পেলাম না।

ঠিক ১৯ নম্বরের কাছে গিয়ে আমাকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হলো। দেখলাম ১৯ নম্বরের দরজাটা খুলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে একটা যুবতী বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। তারপর চিৎকার করতে করতে রাস্তার দিকে উধ্বশ্বাসে এগোতে আরম্ভ করলো। ঠিক তখনই গেট দিয়ে বেরিয়ে আসার মুখেই সজোরে ধাক্কা লাগলো আমার সঙ্গে। এরকম আচমকা ধাক্কায় আমি একরকম ছিটকে পড়েই যাচ্ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে দুটো হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো মেয়েটি। মেয়েটিকে স্থির হতে বললাম। মেয়েটি স্থির হয়ে তখনও পর্যন্ত আমাকে আঁকড়ে ছিলো। চিৎকারটা অবশ্য থেমে গেছে। কিন্তু তখনও ওর কণ্ঠ দিয়ে একটা অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে আসছিলো বারবার, আমি এবারে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।

সে বললো, ওখানে একটা লোক মেঝের ওপর পড়েছিলো। সে মারা গেছে। ঐ বয়স্ক মহিলাটি লোকটার ঘাড়ের ওপর প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।

যুবতী বললো, তার ধারণা মহিলাটি অন্ধ। সে বললো, যে তার হাতে ঐ মহিলাটির রক্ত লেগেছে।

তাই তো কথাটা বলে তিনি তার কোটের দাগটার দিকে তাকালেন। ওর হাতের রক্ত তার বুকের থেকে। আমি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম। তারপর বললাম, যে, তুমি আমাকে ভেতরে নিয়ে চলো, দেখাও আমাকে।

সে ভীষণভাবে কাঁপছিলো। সেই অবস্থাতেই বলে উঠলো, না না, আমি পারবো না। আমি ভেতরে কিছুতেই যাবো না।

আমি বললাম যে, তুমি এখানে বসো। বলে, আমি একটা ফুটপাথের রেলিং-এ হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলাম। তুমি এখানে থাকো। যতক্ষণ না আমি ফিরে আসি, তুমি কোথাও যেন যেও না। মেয়েটি বললো, সে ঠিক আছে। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বাড়িটার দিকে এগোতে আরম্ভ করলাম। কিছুটা এগিয়েই হলঘরের মধ্যে প্রবেশ করে কয়েক মুহূর্তে ইতস্তত করলাম।

বাঁ-দিকের দরজা দিয়ে তাকালাম। সামনে একটা ফাঁকা ডাইনিং রুম। বসার ঘরে ঢুকতে একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হলো। যার ধূসর রঙের চুল। আমার পায়ের শব্দ শুনে বললেন, কে আপনি?

সেই মহিলাটি অন্ধ, আমি তাকে বললাম, একজন অল্পবয়সী মেয়ে দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে বললো, যে এখানে নাকি একজন ভদ্রলোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।

আসলে ভদ্রমহিলা যেরকম শান্তভাবে বসেছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল না ঘরে খুন হয়েছে। ভদ্রমহিলা বললেন, সোফার পেছনে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।

আমি সোফার পেছনে এগিয়ে গেলাম। লোকটির দেহের সামনের দিকে রক্তের চিহ্ন। ভদ্রমহিলা বলতে পারলেন না, কে খুনটা করেছে। আমি বললাম, তাহলে টেলিফোন করা উচিত পুলিশকে।

ভদ্রমহিলা বললেন, যে তার বাড়ি এটা, এখানে কোনো ফোন নেই। তিনি বললেন, তিনি যখন শপিং করে ঘরে ফিরেছেন, তখন মনে হলো দরজার গায়ে একটা চেয়ারে একটা ব্যাগ ঝুলছে। তিনি তারপর ঘরের ভেতরে ঢুকলেন।

তার বুঝতে অসুবিধা হলো না, ঘরে কেউ একজন রয়েছে। তখন তিনি কেউ ঘরে আছে কিনা জানতে চাইলেন। কার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ হচ্ছিল, সেদিক লক্ষ্য করে এগোতে লাগলেন। চিৎকারটা কানে এলো। তখন শব্দ এলো যে, সামনে এগোবেন না তাহলে মৃতদেহের উপর পড়ে যাবেন। এরপর খানিকটা অবাক হলেন। সে সময় কেউ দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। তখন তিনি খুব সাবধানে যাতায়াত করলেন যতক্ষণ না তার পায়ে বাধা ঠেকলো।

তারপর তিনি হাঁটু মুড়ে বসলেন, বুঝলেন কার হাত একেবারে ঠান্ডা। বিন্দুমাত্র নাড়ির স্পন্দন শোনা যায় না।

তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর তিনি উঠে পড়লেন। এখানে চলে এলেন। বসে একভাবে অপেক্ষা করতে লাগলেন। তার অনুমান কেউ না কেউ এখানে একসময় আসবেই। শেষপর্যন্ত ঐ অল্পবয়সী মেয়েটি মহিলার অদ্ভুত স্থৈর্য দেখে অবাক হলো। মহিলাকে লোকটির নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন যে, তিনি কলিন ল্যাম্ব।

ভদ্রমহিলা বললেন যে, রাস্তায় একটা বুথ আছে। সেখান থেকে পুলিশকে ফোন করা যাক। ভদ্রমহিলা চুপ থেকে বললেন, মেয়েটাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসুন।

ভদ্রমহিলা রান্না করে স্বপাকে খান। তার নাম মিমিসেন্ট পেবমার্স। কলিন মেয়েটিকে ধরে বাইরে থেকে ভেতরে নিয়ে এলো। এরপর সে ফোন করার জন্য বাইরে এলো।

.

০১.

 ক্রাউডিয়ান পুলিশ স্টেশন। একটা আধো ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শোনা গেলো–আমি কি ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেলের সঙ্গে দেখা করতে পারি।

ওপ্রান্তের কণ্ঠস্বর সতর্কভাবে বললো–তিনি ঠিক জানেন না তিনি এখানে আছে কিনা। আপনি কে?

ওকে বলুন আমার নাম কলিন ল্যাম্ব।

ফোনের ওপার থেকে হার্ড ক্যাসেল বললেন–তুমি কোথা থেকে কথা বলছে। তিনি বললেন, এখন বলতে ক্রাউডিয়ান, তার চেয়ে সূক্ষ্মভাবে অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে একজন ভদ্রলোক মৃত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছে। তার ধারণা আধ ঘন্টা আগে ভদ্রলোককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে একটি মেয়ে, সে তাকে দেখতে পায়। মিমিসেন্ট পেবমার্স নামে একজন অন্ধ ভদ্রমহিলার বাড়িতে খুনটা হয়েছে। মেয়েটি দেখে বাইরে এসে ভয়ে কাঁপছিলো। ভদ্রমহিলা অন্ধ হওয়ার জন্য বুঝতে পারেননি সামনে কেউ পড়ে আছে।

তিনি বললেন, ওখানে তার জন্য অপেক্ষা করা হোক।

.

০২.

 উনিশ নম্বর বাড়িতে পুলিশের পক্ষ থেকে শেষপর্যন্ত প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। পুরো টিমটাতে একজন পুলিশ সার্জেন, একজন পুলিশ ফটোগ্রাফার আর একজন ফিংগারপ্রিন্ট নেবার লোক ছিলো।

সবশেষে এলেন ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ডক্যাসেল। ভদ্রলোকের গড়ন অনেকটা লম্বাটে ধরনের। ভাবলেশহীন মুখ, চোখের ওপর ভুরু দুটো প্রকট। দেখতে বেশ সুশ্রী। কাজটা সঠিকভাবে এগোচ্ছে দেখে তিনি খুশী হলেন মনে মনে।

এবার তিনি মৃতদেহটার কাছে গিয়ে সেটা ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। তারপর সার্জেনের সঙ্গে গোটা কয়েক কথা বললেন। শেষে ডাইনিং রুমে হাজির হলেন। সেখানে ওরা তিনজন বসেছিলো। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল তার নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি মিস পেবমার্সকে মোটামুটি চিনতেই। অবশ্য পেশাগত ব্যাপারে দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়নি। হার্ড ক্যাসেল সেই ভদ্রমহিলার সম্পর্কে জানেন, তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য যে সব স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এইরকম একজন সচেতন শিক্ষিকার সাজানো গোছানো ছিমছাম ঘরে একজন ব্যক্তি খুন হয়ে আছে ব্যাপারটা কিরকম অদ্ভুত ধরনের, অনেকটা অবাস্তব।

হার্ড ক্যাসেলের কথায় পেবমার্স জানালেন এ সম্পর্কে মিস ওয়েব কিছু জানেন, কথাটা বলার পর ডাইনিং রুমে কিচেনের দরজাটা খুলে ওয়েবের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।

শীলা জানালেন তার ঠিকানা চোদ্দো নম্বর পামার টোন রোড। তিনি পেশায় একজন শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট। তিনি মিস মার্টিনডেলের সেক্রেটারিয়াল ব্যুরোতে চাকুরি করেন। তিনি প্রায় দশমাস ওখানে চাকুরি করেছেন। তিনি মিস পেবমার্স যে একজন স্টেনোগ্রাফার চাইছেন এটা শুনে তিনি লাঞ্চ করে ঐ বাড়িতে আসেন। আসলে তিনি বিশেষভাবে তাকেই চাইছিলেন। কেননা তিনি আগে তার কাছে কাজ করেননি। কারণ মিস পেবমার্স এমন একজন মহিলা যাকে চট করে ভুলে যাওয়া অদ্ভুত ব্যাপার।

মিঃ ক্যাসেল বললেন, যাইহোক আপনি ঠিক কটা নাগাদ পৌঁছেছিলেন ওর বাড়িতে। তার জবাবে বললেন, তিনটের আগেই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কেননা ঐ কাকাতুয়া-মার্কা ঘড়িটা!

কথাটা শেষ না করেই চুপ করে গেল ও। তারপর চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেলো ওর। ওয়েব বললেন যে কাকাতুয়া ঘড়িটায় তিনটে বেজেছিলো ঠিকই। কিন্তু অন্য ঘড়িগুলো প্রায় ঘণ্টাখানেক করে ফাস্ট ছিলো। মিঃ ক্যাসেল বললেন, নিশ্চয়ই খুব অদ্ভুত।

বলে সামান্য ভেবে বললো, এবার বলুন তো মিস ওয়েব তিনি কখন মৃতদেহটা লক্ষ্য করেন।

শীলা বললো, আমি সোফাটা ঘুরে আসার পরেই লোকটাকে দেখতে পাই। কি ভয়ঙ্কর! মিস ওয়েব বললেন, তিনি তার আগে ভদ্রলোককে দেখেননি।

তারপর তিনি ভদ্রলোককে ছুঁয়ে দেখেন, তারা গা পুরোপুরি ঠান্ডা, তার রক্ত গায়ে লেগেছিলো। তারপর সেই ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকেছিলেন। উনি হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এলেন।

তিনি ভদ্রমহিলাকে মৃতদেহের কাছে যেতে নিষেধ করলেন। ইনসপেক্টর বললেন যে, ঘরেই ঢুকলেন না। আপনি এসে বেলটা বাজিয়েছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি। সেক্ষেত্রে আপনি ভেতরে ঢুকলেন কেন?

সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়। তাকে ওভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এটা মিস মার্টিনডেল তাকে বলেছিলেন, তিনি বললেন তার মা-বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। তিনি তার এক মাসির কাছে থাকেন। তার নাম মিসেস লাউটন।

ইনসপেক্টর ক্যাসেলের কাছ থেকে বিদায় নেবার পর মিসেস পেবমার্সের ডাক পড়লো। তিনি ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসে পড়লেন। হার্ড ক্যাসেল জানলা বন্ধ করে দেওয়ার পর পেবমার্স জিজ্ঞাসা করলেন ঐ ভদ্রলোক কে? তিনি বললেন ঐ ভদ্রলোক হলেন কলিন ল্যাম্ব। তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় শীলা তার কাছে গিয়ে সাহায্য চান। তিনি ঘরে সবকিছু দেখে পুলিশকে ফোন করেন। যেন একজন মেরিন বায়োলজিস্ট।

মিস পেবমার্স জানালেন তিনি এখানে ১৯৫১ সাল থেকে আছেন। তিনি একজন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। ঘটনাক্রমে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তারপর ব্রেইলের বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োগ করেন, যারা অন্ধ তাদের সাহায্যের জন্য নানাধরনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। অন্ধ আর প্রতিবন্ধী ছেলেদের জন্য যে শিক্ষায়তন আছে সেখানেই তিনি কাজ করেন।

মিস পেবমার্সকে ইনসপেক্টর মৃত ব্যক্তির বর্ণনা পড়ে শোনালেন। ভদ্রলোকের উচ্চতা পাঁচ ফুট আট-দশ ইঞ্চি। বয়স প্রায় ষাট। চোখ দুটো বাদামী। দাড়ি গোঁফ পরিষ্কার করে কামানো। মুখের গড়ন একহারা ধরনের। চোয়ালটা দৃঢ়। পরনে কালচে রঙের ধূসর স্যুট।

মিস পেবমার্স লোকটিকে চিনতে পারলেন না। তার বর্ণনা বেশ সাদামাটা।

মিঃ ক্যাসেল বললেন যে, এমন কোনো ব্যক্তির আসার কথা ছিলো বা কেউ চিঠি দিয়েছিলো। তিনি বললেন না। তিনি বললেন, তিনি ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করে কোনো সেক্রেটারি চাননি। আর তাছাড়া তার কোনো ফোন নেই। মিস শীলা ওয়েবের নাম তিনি শোনেননি। তিনি সকালে অনেক সময় তালা না লাগিয়ে বাইরে যান, তাই সে সময় কেউ ঢুকে পড়া বিচিত্র নয়। সেদিন তাই ঘটেছে। তিনি দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে বাইরে বাজার করতে গিয়েছিলেন। কেননা তার কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন ছিলো। তিনি পোস্টঅফিসে যান, আনাবেনি রোডে। তিনি একটা পার্সেল পোস্ট করেন। কয়েকটা স্ট্যাম্প কেনেন। তারপর কয়েকটা গৃহস্থালীর জিনিস কেনেন। কয়েকটা কাসপার ও সেফটিপিন কেনেন। তিনি গেটের কাছে আসার সময় তার কাকাতুয়া ঘড়িটা তিনবার ডেকে উঠেছিলো।

অন্য ঘড়িগুলোর কথা জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, তার বসার ঘরে অন্য সব ঘড়ি একঘণ্টা করে ফাস্ট করা আছে।

মিস পেবমার্স বললেন, আপনি অন্য ঘড়িগুলো, কি বলতে চাইছেন তিনি বুঝতে পারছেন না। বসার ঘরে আর কোনো ঘড়ি নেই।

.

০৩.

 হার্ড ক্যাসেল চমকে উঠলেন যখন তাকে অন্য ঘড়িগুলোর কথা বলা হলো। তিনি বললেন যে একরকম কোনো ঘড়ি তার ঘরে ছিলো না। তারপর বললেন যে যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে মিস কার্টিনকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। হার্ড ক্যাসেল তাকে পাশের ঘরে আসতে বললেন। মিস পেবমার্স ঐ ঘড়িগুলো নিজে পরীক্ষা করতে চান। তারপর বললেন যে ঘড়িগুলো তো তিনি দেখতে পাবেন না। তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনুভব করতে হবে।

মিস পেবমার্সকে নিয়ে হার্ড ক্যাসেল ওখান থেকে বেরিয়ে এলেন। ওখানের লোক বললো যে স্যার, আমরা প্রায় কাজ শেষ করে এনেছি। মিস পেবমার্স বললেন যে, কাকাতুয়া ঘড়ি আর গ্রান্ডফাদার ঘড়িটা ছাড়া আর কোনো ঘড়ি ওর নেই। হার্ড ক্যাসেল এরপর কিভাবে এগোবেন সে ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চিত হতে পারছেন না। তার দিকে তিনি অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালেন। ভদ্রমহিলা যে খুব অবাক হয়ে গেছেন এটা বুঝতে মিঃ ক্যাসেলের অসুবিধা হলো না। মিস পেবমার্স এটা কিছুই বুঝতে পারেন না।

ইন্সপেক্টর ক্যাসেল ফিং বারপ্রিন্টি বিশেষজ্ঞদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ঘড়িগুলো পরীক্ষা হয়ে গেছে।

একজন বললো, ঘড়ির উপর কোনো ছাপ নেই। থাকা সম্ভব নয়। ওটার ওপর দিকটায় কোনো ছাপ লাগে না। চীনা ঘড়িটার ক্ষেত্রে ঐ একই ব্যাপার। চামড়া আর রুপোর ঘড়িটাতেও কোনো ছাপ পাওয়া যায়নি।

অবশ্য বস্তুগুলোতে স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকতেও পারে। সেখানে অবশ্য ছাপ থাকলেও থাকতে পারে।

হ্যাঁ, ভালো কথা, ওগুলোর কিন্তু কোনোটাতেই দম ছিলো না। প্রত্যেকটি ঘড়িতে একই সময় দেখা যাচ্ছে। সব ঘড়িতেই সাড়ে চারটে।

ঘরের বাকি অংশ থেকে তিন চার সেট ছাপ পাওয়া গেছে। প্রত্যেকটাতেই মহিলার অঙ্গের ছাপ। ভদ্রলোকের পকেটের জিনিসগুলো টেবিলের উপর রাখা আছে।

হার্ড ক্যাসেল টেবিলে গিয়ে দেখলেন ওর মধ্যে একটা নোটের খাম আছে। তাতে কয়েকটা নোট, কিছু খুচরো পয়সা আছে। এছাড়া একটা ছাপাহীন সিল্কের রুমাল আর একবাক্স হজমিগুলি। আর আছে ছাপানো কিছু কার্ড। কার্ডে লেখা ছিলো।

সি. আর. এইচ. কারি
মেট্রোপলিটান অ্যান্ড প্রভিনসিয়াল ইনসিওরেন্স কোং লিমিটেড
 ৭ নং ডেনভার স্ট্রিট, লন্ডন।

মিস পেবমার্সকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তিনি কারো আসার প্রতীক্ষা করছিলেন। এই ইনসিওরেন্সের নাম তিনি শোনেননি।

তিনি কোনোভাবেই কোনো ইনসিওরেন্স করার চিন্তা করেননি। তিনি আগুন আর চুরির জন্য ইনসিওরেন্স কোম্পানি থেকে ইনসিওরেন্স করিয়েছিলেন বটে। ঐ কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চ ওখানে আছে। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ইনসিওরেন্সে করাননি। তার কোনো সংসার বা আত্মীয়স্বজন নেই, তাই তিনি নিজের জীবন-ইনসিওরেন্স করার কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। কারণ ঐ নামের কোনো লোককে তিনি চেনেন না। যিনি খুন হয়েছেন তারই নাম। ভদ্রমহিলা ভদ্রলোককে স্পর্শ করে নিখুঁতভাবে বুঝতে চান লোকটা দেখতে কেমন ছিলো।

মিস পেবমার্স-এর বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস এলো। কাজটা আনন্দদায়ক না হলেও তিনি এই কাজটা করতে রাজী, তিনি লোকটির পাশে বসে চুল, চোখ, নাক, চিবুক পরীক্ষা করলেন। বললেন, না, তিনি নিশ্চিত যে এইরকম কোনো লোককে তিনি চেনেন না বা আগে দেখেননি।

এরপর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হলো। হার্ড ক্যাসেল গার্ডের কাছে এগিয়ে গেলেন। তারপর ফিরে এসে বসলেন মিস পেবমার্সের কাছে, বললেন, আজ আপনার কাছে কোনো অতিথির আসার কথা ছিলো না। এছাড়া আপনি এমন কোনো চিঠি পাননি যে কোনো ইনসিওরেন্স কোম্পানির এজেন্ট আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। এছাড়া কোনো স্টেনো বা টাইপিস্ট তার দরকার ছিল না। তিনি ফোন করে তিনটে নাগাদ ওরকম কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ফোন করেননি। যখন তিনি বেরিয়েছিলেন তখন ঐ ঘরে একটা ঘড়ি ছিলো। ঐ কাকাতুয়া ও গ্র্যান্ডফাদার ঘড়িটা।

পেবমার্স বললেন যে, যদি সম্পূর্ণ সঠিক না হতেন তাহলে ঘড়ি ব্যাপারটাকে জোর দিয়ে বলতে পারতেন না। তার যেহেতু দুটো চোখই নেই সেইজন্য ঘরে কি রইলো বা রইলো না তা লক্ষ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শেষবারের মতো সকালে তিনি যখন ঘর পরিষ্কার করতে যান তখন ঘড়িদুটোর ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। কাজের লোকেরা ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক জিনিস লক্ষ্য করে। সেজন্য আমি ওদের রাখার বদলে নিজের কাজ নিজেই করি।

প্রতিদিনের মতো আজও দশটার সময় আমি আরলবার্গ ইনস্টিটিউটে গেছিলাম। সেখানে ১২-১৫ অবধি ক্লাস করি। তারপর পৌনে একটা নাগাদ রান্না করি। চা তৈরি করি। তারপর বেরিয়ে যাই। তিনি রান্নাঘরে খান। পরে আর তিনি এ ঘরে আসেননি। তাহলে দশটার সময়ে ঘড়িগুলো কেউ এ ঘরে রেখেছে এ সম্পর্কে মিসেস কাটিস বলতে পারবেন।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, ধরে নেওয়া যাক আজ কোনো সময়ে ওগুলো ঘরে নিয়ে এসে রাখা হয়। প্রত্যেকটা ঘড়িতেই কিন্তু সাড়ে চারটে বেজে আছে। এই বিশেষ সময়টা সম্পর্কে মিস পেবমার্সের কোনো ধারণা নেই।

ক্যাসেলের মনে হয় না ঐ মৃত ব্যক্তিটাকে ঘরের মধ্যে আসতে দিয়েছেন পরিচারিকা। একথা তিনি তার কাছ থেকেই জানলেন। ভদ্রলোক সম্যক কোনো একটা কারণেই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কারণটা ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত যে কোনো কারণ হতে পারে। বেলা ১-৩০ থেকে ১-৪৫ টার মধ্যে তাকে ছুরি মেরে খুন করা হয়। দরজা খোলা ছিল বলে তার আসা অসম্ভব নয়।

মিস পেবমার্সকে জিজ্ঞাসা করা হলো মিরিক্যারী এই ঘড়িগুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছে। পেবমার্স বললেন, সেগুলো বয়ে আনার কোনো চিহ্ন নেই। এখন প্রশ্ন হলো, যে এনেছে ঘড়িগুলোকে পকেটে করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া সব ঘড়িতেই সাড়ে-চারটে বেজে ছিলো এ ব্যাপারে আপনার মত কি?

পেবমার্সের ধারণা এটা কোনো উন্মাদের কাজ। মিস পেবমার্সকে, হার্ড ক্যাসেল বললেন যে তিনি ঘড়িগুলো নিয়ে যেতে চান এবং তার বিনিময়ে একটি রসিদ দিতে চান। পেবমার্স বললেন, ওগুলো তার জিনিস নয় সেই বুঝে কাজ করবেন।

ইতিমধ্যে শীলা কলিনের সঙ্গে দরজার দিকে এগোলেন। মাঝপথে দাঁড়িয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, তাহলে চলি। হঠাৎ শীলা বাইরে এসে বললেন, তার গ্লাভসগুলো বাইরে ফেলে এসেছে। শীলা বললেন যে, তিনি একমাত্র জানেন এগুলো কোথায় আছে। শীলা বাড়ির ভেতর ঢুকে গিয়ে ওটি পেল না।

শীলা যখন বাড়ির ভেতর ঢুকতে যাচ্ছে তখন কলিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শীলা চলে গেলো। হার্ড ক্যাসেল অ্যালেনকে বললেন যে তিনি কিছু জায়গায় যেতে চান, তার জন্য কলিনকেও নিয়ে যেতে চান। কলিন যাবার সম্মতি দিলো।

.

০৪.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

আমরা কোথায় যাবো? ডিককে জিজ্ঞাসা করা হলো। ও ড্রাইভারকে বললো, ক্যাভেনডিস সেক্রেটারি অফ ব্যুরো প্যালিস স্ট্রিটে। ডানদিক বরাবর এসপ্ল্যানেডে।

গাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে চারটে সিঁড়ি উঠে তবেই বিল্ডিং-এর সদর দরজা। তারা  দুজন খোলা দরজা দিয়ে ঢুকলেন। ঢুকেই ডান দিকে একটা দরজা। একপাশে লেখা আছে, দয়া করে আসুন।

ঘরটা বেশ বড়ো, তিনজন টাইপিস্ট পাশাপাশি বসে টাইপ করছিলো। একজন মহিলাকে বললো, মিস মার্টিডেলকে চাই। তার ঘরে যখন যাওয়া হলো তখন ডিক একটা কার্ড বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলেন। তার চোখ বিরক্তি ও বিস্ময়ে কুঁচকে গেলো।

মিস মার্টিনডেল-এর ডেস্কের ঠিক ওপরেই দেওয়ালে ফটোগ্রাম টাঙানো একজন আরিয়ান অলিবার যিনি রহস্য উপন্যাসের লেখক, আর একজন গ্যারি গ্রেসজন যিনি থ্রিলার রাইটার। ওর পাশে সিরিয়ম হর্গের ফটোগ্রাফ। এছাড়া একজন টাকওয়ালা লোকের ছবিও আছে। পুরুষগুলোর বেশির ভাগেরই মুখের পার্থক্য আর পরনের পোশাক এক।

তিনি বললেন তার কাছে শীলা ওয়েব নামে একটি মেয়ে কাজ করে। সে এখন নেই। দুপুরবেলা একটা বিশেষ কাজে গেছে। এসপ্ল্যোনেড থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ কারলো হোটেলে ও একটা বিশেষ কাজে যাবে। বছরখানেক ধরে সে এখানে কাজ করছে। ও এই কাজের আগে কিছু কাজ করতো কিনা তা ওর ফাইল দেখে জানা যাবে। তবে মনে হয় লন্ডনের কোনো ব্যবসায়িক সংস্থায় কাজ করতো। ওর টাইপ একেবারে নিখুঁত, ওর পারিবারিক ব্যাপার তিনি জানেন না। তবে ও নাকি এক মাসির কাছে থাকে। তিনি বললেন যে মিস পেবমার্সের কাছে সে গেছে। তিনি একজন শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট জানা মহিলা চান। তিনি ফোন করে জানতে চান কোন মহিলাটি দরকার। তিনি দুটো বাজতে দশ নাগাদ ফোন করেছিলেন। তিনি অবশ্য প্যাডে সেটা নোট করে নিয়েছেন।

তিনি প্যাডের পাতা উল্টে বললেন, উনপঞ্চাশ মিনিট। তিনি তার গলা চেনেন না। তবে তিনি ফোনে তার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাকে জানানো হলো যে মিস পেবমার্স ফোনের কথা অস্বীকার করেছেন। মিস মার্টিনডেল বললেন, সত্যিই ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত।

তিনি বললেন, তার ফোন এসেছিলো কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন ফোনটা কে করেছিলো। মিস মার্টিনডেল এই রসিকতার কোনো অর্থ খুঁজে পেলেন না। আসলে শীলা ওয়েবকে চাওয়ার একটা কারণ ছিলো। কারণ শীলা ওয়েব বললেন যে, তিনি ওর কাছে কাজ করেছেন।

ইনসপেক্টর বললেন যে, সে অনেক জায়গায় কাজ করে তবে সে এই জায়গায় কাজ করেছে। তো নিশ্চিত নয়।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা উনিশ নম্বর উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে গিয়ে পৌঁছেছিলো। তারপর সোজা ওর বাড়িতে ঢুকে বসার ঘরে গিয়ে বসেছিলো। সেখানে গিয়ে ও যে মৃতদেহ দেখে, এটা শুনে মার্টিনডেল ভয় পেয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না।

ক্যাসেল বলে উঠলো, মিস মার্টিনডেল, কারী নামটা শুনে আপনার কিছু মনে হচ্ছে? মি. আর, এইচ. কারী।

ক্যাসেল বললেন, উনি মেট্রোপলিটন এ্যান্ড প্রভিন্সিয়াল ইনসিওরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত।

ইনসপেক্টর বললেন, তার দুদিকেই অংশ, একদিকে মিস পেবমার্স আপনাকে ফোনে শীলাকে চেয়েছিলো। আর অন্যদিকে মিস পেবমার্স ব্যাপারটা অস্বীকার করেছেন। শীলা তারপর গিয়েছিলো ওখানে। সেখানেই সে একজন মৃত ব্যক্তিকে আবিষ্কার করে। কিছু বুঝতে পারলেন।

মার্টিনডেল বললেন, তার ব্যাবসা ভালোই চলছে। প্রথমটায় ছোটোখাটো ভাবে আরম্ভ করেছিলাম। তারপর বাড়িয়েছি। এখন আমার এখানে আটজন মেয়ে কর্মচারী আছে। ওরা সবসময়েই কাজে ব্যস্ত।

দেওয়ালে টাঙানো লেখকদের ছবিগুলো দেখছে হার্ড ক্যাসেল। মিস মার্টিনডেল বললেন, শুরুতে আমি লেখকদেরই বিশেষজ্ঞ ছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই বিখ্যাত থ্রিলার লেখক গ্যারি জনসনের নাম শুনেছেন। শেষে ওর অনুমোদন পেয়ে আমি এখানে এই সংস্থা তৈরি করি। যে কোনো প্রয়োজনীয় রিসার্চে আমি ওদের সাহায্য করি। যেমন আইন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি, পুলিশি নিময়কানুন কিংবা বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের তথ্যাবলী এরকম নানা ধরনের ব্যাপার আছে। লেখকেরা বিদেশে কোথাও তাদের উপন্যাস রাখতে চাইলে আমরা ওদের প্রয়োজনীয় নাম ঠিকানা প্রভৃতি দিয়ে দিই।

মিস মাটিনডেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম জনাতিনেক টাইপিস্ট মহিলা যাবার জন্য তখন প্রস্তুত হচ্ছে। সবাই জিনিসপত্র গুছোতে ব্যস্ত। এডনা নিজের জুতো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। করুণ স্বরে পাশের মহিলাটিকে বললো এডনা, মাত্র কয়েকমাস হলো জুতোটা কিনেছি। আর এর মধ্যেই দ্যাখো হিলটা বেরিয়ে এসেছে। এতে দামী জুতো।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো আবার, আর ঐ কাছের দোকানের সামনে যতসব বিশ্রী গর্ত, গর্তে পড়েই আমার জুতোর এই হাল। এখন কি করে আমি বাড়ি যাবো বুঝতে পারছি না।

রিসেপসনিস্ট এডনার মুখটা খুব করুণ দেখাচ্ছিল। ঠিক তখনই আমরা ওদের কাছাকাছি গিয়ে হাজির হলাম। আমি এবার হার্ড ক্যাসেলের দিকে তাকিয়ে বললাম, তাহলে ডিক তোমার সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও শীলা ওয়েবের কাহিনীটা পুরোপুরি সত্যের দিকে বাঁক নিয়েছে।

হার্ড ক্যাসেল জবাবে বললো, ঠিক আছে, তুমি জিতেছে।

.

০৫.

 মিসেস মার্টিনের মুখটা কেমন কঠিন ধরনের। একমনে বাসনগুলো ধুয়ে যাচ্ছিল ও। ইতিমধ্যে অ্যানি এসে জানালো একটা পুলিশের জীপ এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির সামনেই। দুজন পুলিশ অফিসার নেমে এদিকেই আসছে। কথাটা শোনামাত্রই ভুরু কুঁচকে মার্টিন তাকালো অ্যানির দিকে। অ্যানি বারান্দায় এসে খুলে দিলো দরজাটা। সামনে দুজন অফিসার। অপেক্ষাকৃত লম্বাটে চেহারার অফিসারটি বললেন, তুমিই মার্টিন। মার্টিন জবাবে বললে, হ্যাঁ। ইনসপেক্টর বললেন যে, তিনি তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। মার্টিন-এর ছেলে এরনির সামনে কথা বলা হচ্ছিল।

মার্টিন বললো যে, অন্ধ মহিলাটি খুব সুন্দরভাবে কাজকর্ম করেন। দেখে বোঝা যায় না যে উনি অন্ধ। ওখানে তিনি দশটা নাগাদ যান, ফেরেন ১২ নাগাদ। কোনো কোনো দিন কাজকর্ম থাকলে একটু দেরি হয়ে যায়। ভদ্রলোকের মৃতদেহ সম্পর্কে তাকে জানানো হলে সে বলে যে, খুন-টুনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। সে বললো, আজ সকালে কেউ মিস পেবমার্সের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। তবে সে হলে সেরকম কোনো লোককে ঘরে ঢুকতে দিতো না। কারীর নাম শুনে তিনি বললেন, এটা ভারতীয় নাম কিন্তু তা নয়। মৃতদেহটি প্রথম একটা যুবতী–একটা কোম্পানির স্টেনো-টাইপিস্ট, ওকে কাজের জন্য ডাকা হয়েছিল, সেজন্য ওর মিস পেবমার্সের বাড়িতে আসা–আবিষ্কার করে। এটা ক্যাসেল তাকে জানালেন।

মার্টিন বলতে লাগলো, বসার ঘরে দুটো ঘড়ি একটা কাকাতুয়া ধ্বনি ও একটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক আছে। যদি আর একটা থাকতো তাহলে তার চোখে নিশ্চয়ই পড়তো। সে বললো যে, পৌনে বারোটা নাগাদ বাড়িতে ফিরেছেন। সাধারণতঃ মিস পেবমার্স বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে বাড়ি ফেরেন। মাঝে মাঝে সময়টা একটু বেশি হয়ে যায়। সে বললো, তিনি ওখানে যাবার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলেন। সে বললো, তার খুব অদ্ভুত লাগছে যে, কিভাবে ঘড়িগুলো এখানে এলো, মাস চারেক আগে মিস পেবমার্স নীলামে তৈরি চুলের কার্পেট পেয়েছিলেন। খুবই ভালো অবস্থা ছিলো তার। তিনি তাকে বলেন, সেটা খুব সস্তায় পেয়েছিলো। কয়েকটা মফঃস্বলের কার্পেট পেয়েছিলেন তার সঙ্গে সেগুলো ছিলো তুণের মতো। এরপর ইনসপেক্টর বিদায় নিলেন।

.

০৬.

 কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি

ওখান থেকে আমরা বেরিয়ে একটা রেস্তরাঁয় গেলাম। শেষে ডিক ক্যাসেল আমার দিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

হার্ড ক্যাসেল তাকে বললো, পরের মাসেই তো লারকিন-এর শুনানী। বেশ অদ্ভুতভাবে এতদিন ধরে ও দুনম্বরী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলো। তুমি নিশ্চয়ই কাউকে সন্দেহ করতে।

সে বললো, লারকিন অফিস থেকে কাগজপত্র সরিয়ে নিতো। তারপর সেগুলোর ছবি তুলে নেওয়া হতো। এরপর সেইদিনেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুব সাবধানে ঐ কাগজপত্র আগের জায়গায় রেখে দেওয়া হত। সংগঠন ছিলো বেশ ভালো। লারকিন যখন সেখানে কোট ঝুলিয়ে রাখতো, ঠিক তারই পাশে একই রকমের দেখতে এটা কোট পাল্টে নেওয়া হত। বেশ পরিকল্পনা মাফিকই নিয়মিত ঘটনাটা ঘটানো হতো। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কারো বুদ্ধি কাজ করতো।

লারকিন কোথাও কিভাবে পাওনাগণ্ডা পেতো তা তিনি জানেন। ওরা তাদের হেড-কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ছক তৈরি করত। ওখানে পৌঁছবার একটা সূত্র আছে। অর্থ রোজগার করার জন্য এটা করতো।

হার্ড ক্যাসেলের কথায় সে বললো, লারকিনকে ধরার আগেই অনেক মূল্যবান খবরাখবর এইভাবে পাচার করে দিয়েছিলো, সে কারণে ওকে তারা আরো কিছু পাচার করার সুযোগ দিয়েছিল।

আমি বললাম ওকে, লোকে যেরকম এটাকে রোমাঞ্চকর কাজকর্ম ভাবে, তা মোটেই নয়। এখন আর কোনো রোমান্স নয়। আমরা সবাই পরস্পরের গোপন ব্যাপার জানি। এমন কি আমাদের এজেন্টও দেখা যায় অনেক সময় বিরুদ্ধ পক্ষেরও এজেন্ট বটে। এর বিপরীতও বটে। এ ধরনের বিপজ্জনক এজেন্টরা অনেক সময় ভাবনার কারণ হয়ে ওঠে। সেকারণে এখন গোপনে চক্রান্ত করে কোনো ফল পাওয়া যায় না। ডিক বললো, তুমি কেন এখনও পোর্ট লিবিউরিতে ঘুরে বেড়াচ্ছো আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ক্রাডিয়াল তো পোর্ট লিবিউরির থেকে দশ মাইলের বেশি দূর।

তারা যাদের পেছনে ঘুরছে তারা ক্রিসেন্টে রয়েছে। ওখানে ক্রিসেন্ট মুন বলে একটা রেস্তরাঁ ছিলো। সে কারণে পোর্ট লিবিউরি থেকে আরম্ভ করা হলো।

ডিক সগর্বে বলে ওর দিকে তাকালো, ভালো নয়। একটা ছোটো ব্যাপার আমাকে চমকে দিয়েছিলো। কথাটা বলে আমি আমার ওয়ালেটটা বের করলাম। ওর ভেতর থেকে একটুকরো চিরকুট বের করলাম তারপরে। হোটেলে ব্যবহৃত একটুকরো কাগজ ওটা। তাতে একটা স্কেচ অংশ। হার্ড ক্যাসেলের হাত দিয়ে বললাম, হ্যাঁন বিউরি নামে এক যুবকের ওয়ালেট ছিলো না। লারকিনের মামলায় হ্যাঁন বিউরি অনেক কাজ করেছিলো। যুবক বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ও লন্ডনে গাড়ি চাপা পড়ে। গাড়িটার নম্বর কেউ লক্ষ্য করেনি। এই স্কেচটার অর্থ কি তা আমি জানি না। কারণ হ্যান বিউরি গুরুত্বপূর্ণ না হলে স্কেচটা করতো না। কোনো একটা ভাবনা নিশ্চয়ই ওর মনে এসেছিলো। কিংবা কিছু শুনেছিলো অথবা দেখেছিলো! একষট্টি আর ওর নিচেশব্দটা লেখা। তার তলায় একটা মুন অথবা ক্রিসেন্ট। এর কি কোনো যোগ আছে; হ্যাঁন বিউরির দায়িত্বটা সে নিয়েছে। সে নিশ্চিত একটা কিছু আছে যা আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি এখনও জানি না একষট্টি সংখ্যার মানে কি কিংবা ঐ এম-এর অর্থ। তারপর বললাম, আমি পোর্ট লিবিউরিকে মাঝখানে রেখে তার বাইরে বৃত্তাকারে কাজ করে চলেছি। এই হলো ব্যাপার। এখানে মাত্র একটা ক্রিসেন্ট আছে। সেটা হলো উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট। আমি সেজন্যই ঐ একষট্টি নম্বরটা খুঁজে বের করার জন্য ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম যা ভেবেছি তা সত্যি কিনা। কিন্তু ঐ জায়গাটা শেষপর্যন্ত খুঁজেই পেলাম না।

কলিনকে বলা হলো, আগামীকাল উনিশ নম্বর দুদিকের দুটো বাড়িতে অনুসন্ধান করবো। বাড়ির কেউ উনিশ নম্বরে ঢুকতে দেখেছে কিনা তা-ও জিজ্ঞেস করে দেখবো। উনিশ নম্বরের একেবারে পেছনের বাড়িটাও এর সঙ্গে থাকবে। এই বাড়িটার যার সঙ্গে বাগান যুক্ত। তার ধারণা ঐ বাগানটা ঐ উনিশ নম্বরের পেছনটায় হবে। যদি চাও তবে তোমাকে আমি সঙ্গে নিতে পারি।

ল্যাম্বকে বলা হলো, তিনি তোমার সার্জেন্ট হবে। তুমি শর্টহ্যান্ড নোট নিও। পরের দিন নটা নাগাদ আমি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হবো।

কদিন পর ডিক বললো যে, ঘড়িগুলোর মধ্যে চামড়ার ট্রাভেলিং ক্লক যেটায় রোজমেরী লেখা আছে। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত।

ডিক বললেন, অনেকেই ভীষণ বোকা ধরনের, তাদের মধ্যে আমি একজন। ঘড়িগুলো কাল বসার ঘরেই ছিলো। আমি মিস পেবমার্সকে ছুঁয়ে দেখতে বলেছিলাম। যদি ঘড়িগুলো তার পরিচিত হয়। অবশ্য উনি চিনতে পারেননি, এরপর পুলিশের লোকেরা এসে পৌঁছেছিলো লাশটা নেবার জন্য। ব্যাপারটা দেখাশোনা করার জন্য তিনি গেটের কাছে গেলেন। তারপর আবার ভেতরে গিয়ে ঐ মিস পেবার্স-এর থেকে ঘড়ি আনতে চেয়েছেন। ভদ্রমহিলা বললো, যেহেতু ঘড়িগুলো তার নয় সেহেতু রসিদ নেবার কোনো প্রয়োজন নেই। এর পর তিনি তার কাছে গেলেন। তার সঙ্গী এডওয়ার্ডকে ঘড়ি নিয়ে আসতে বলা হলে সে ঐ কাকাতুয়া ঘড়ি, গ্র্যান্ডফাদার ক্লকটা ছাড়া ওখান থেকে তিনটি ঘড়ি আনে। প্রকৃতপক্ষে চারটি ঘড়ির কথাই উল্লেখ করা উচিত ছিল। কাজটা করতে বেশি সময় লাগেনি। মানে আমি বলতে চাইছি, মিস পেবমার্সও এটা করে থাকতে পারেন। আমি চলে আসার পরেই উনি ঘড়ি দুটো নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছিলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, জানতে চাইলাম, এটা সে করবে কেন। এই বলে আমি বললাম, মেয়েটি তার গ্লাভস নিতে ভেতরে যেতে চাইছিলো সে-ই একমাত্র জানে কোথায় সে তার গ্লাভস রাখে। সম্ভবত সে ভেতর থেকে মেয়েটার গ্লাভস তার ব্যাগে পুরে এনেছিলো।

হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, মেয়েটির প্রেমে তুমি পড়েছে, নারীরা যে কোনো পুরুষকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, এখন শুধু তোমাকে ওকে নিরাপত্তা দেওয়াটা বন্ধ করতে হবে। তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছো ঐ মেয়েটি খুনের সঙ্গে জড়িত।

তিনি কাজ করার সময়ে কি দেখেছি তা শুনলে তুমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাবে। আমি গম্ভীর হয়ে বললাম। জীবনে আমি দেশ বিদেশের লোকেদের সঙ্গে অনেক চমকপ্রদ কাজ করেছি। আমি নারীর প্রলোভন থেকে মুক্ত।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা ওয়েব সম্ভবত তোমার ধরনের মানুষ। হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা যাতে সন্দেহ না হয় সেই জন্য সে মৃতদেহের কাছে গেছিলো। মৃতদেহটা পেবমার্সের বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে। তাই ঐ দুজনকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না।

আমি বললাম যে, ঐ ঘরে আমি গেছিলাম। তিনটে বাজার পর গেছিলাম। কারী সম্পর্কে ক্যাসেল কিছু জানেন না। হার্ড ক্যাসেল নিস্পৃহভাবে ওর কোনো অস্তিত্ব নেই। আসলে এইরকম কোনো ব্যক্তি নেই।

ঠিক আছে। মেট্রোপলিটন ইনসিওরেন্স কোম্পানি থেকে কি জেনেছো। কেননা ওরকম নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। এমন কি কারী যে ডেনভার স্ট্রিটে থাকে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। অতএব সাত নম্বর কি অন্য কোনো নম্বরের অস্তিত্বের কথা বলাই বাহুল্য। ক্যাসেল বললো, লোকটা ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। এ ভাবেই বিভিন্ন বাড়িতে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছে। এরপর প্রতারণা করা খুব সোজা। ওর আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। দেখতে হবে লোকটার কোনো রেকর্ড আছে কিনা। যদি তাই হবে তবে তা হবে আমাদের অনুসন্ধানের পক্ষে বড়ো একটা পদক্ষেপ। যদি তা না হয় তাহলে ব্যাপারটা জটিল হবে।

ওর ইনকোয়েস্ট গত পরশু হবে। মেডিক্যাল সাক্ষ্যে দেখা যাচ্ছে কোনো ফল কাটার ছুরি দিয়ে সে হাত চিরেছে। ভদ্রমহিলা সত্যি অন্ধ। তিনি নর্থ কান্ট্রি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন কিন্তু ১৬ বছর আগে দৃষ্টি হারিয়ে বেলপদ্ধতি শিক্ষা করে আরলবার্গের চাকরি নেন। তারা প্রতিবেশীদের জেরা করতে চান।

উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট হলো একটি অভিজাত এলাকা। ঐ বেলা একটার সময় কেউ লক্ষ্য করেনি। ক্যাসেল বললেন, আঠারো নম্বর বাড়িতে থাকেন মিঃ ওয়াটারহাউস। ভদ্রলোক গেসমহোর্ক এন্ড সুট্যেম জ্যন কোম্পানির ম্যানেজিং ক্লার্ক। ওর বোন ওকে সামলায়। কুড়ি নম্বরে এক মহিলা বেড়াল নিয়ে থাকে।

.

০৭.

 আঠারো নম্বর উইলিব্রিহাম ক্রিসেন্ট। মিঃ ওয়াটারহাউস অনেকটা নিশ্চিতভাবে বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন। হঠাৎ বোনকে বললেন যে তুমি যে-সঠিক এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত?

ভদ্রমহিলা সামান্য বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি কি বলতে চাইছ আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না জেমস!

এবাভে মিঃ ওয়াটারহাউস বোনের দিকে জবাবদিহির মতো তাকালেন। মিঃ ওয়েটারহাউস এবার সলিসিটারের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। ওর মাথার চুল ধূসর। এদিকে ওর বোন মিস ওয়াটারহাউস কিছুটা লম্বাটে ধরনের কৃশকায় চেহারার। অন্যের বোকামি দেখতে তিনি একটু বেশি মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বোন মনে করেন তার দাদা খুন হতে পারে। ওর দাদা বলে উঠলেন যে, খুনী বাড়ি থেকে রোজ একটা করে শিকার বেছে নেয়। মিঃ ওয়াটারহাউস বললেন, এডিথ তুমি এমন কথা বলছে। মিস ওয়াটারহাউস দাদার দিকে তাকিয়ে দৃঢ়স্বরে বলে উঠলেন, আমার দেখতে ইচ্ছে করছে, কোনো একজন এখানে এসে আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে।

মিঃ ওয়াটারহাউসের কাছে বোনের কথাটা তেমন একটা মনে হলো না। তিনি ভাবলেন স্বয়ং যদি খুনের শিকারের কথা ভাবলেন তাহলে বোনকে নিশ্চয়ই বাছতেন না। এডিথ বললেন, এখন খুন নিয়ে নানা ধরনের গুজব চলছে। এডিথ অবশ্য কোনোদিনই গুজবে কান দেয় না। তবু ব্যাপারটা উপভোগ করতে ছাড়লেন না। তিনি বললেন, এই ভদ্রলোক নাকি আরলবার্গ ইনস্টিটিউশনের ট্রেজারার কিংবা ট্রাকি। এই সংক্রান্ত ব্যাপারেই হিসাবনিকাশের ব্যাপারে কিসব গোলমাল হয়েছিলো। সে ব্যাপারেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভদ্রলোক এসেছিলেন মিঃ পেবমার্সের কাছে।

মিঃ ওয়াটারহাউস মানতে চান না, তিনি বললেন, একটুকরো তার ওর গলায় জড়িয়ে দিয়ে ওকে শ্বাসরোধ করে মেরেছেন, ভদ্রলোক মোটেই সতর্ক ছিলেন না। আর কেই-বা একজন অন্ধ নিরীহ মহিলার সঙ্গে কথা বলতে অতশত ভাবে। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, ব্যাপারটা আমি কিভাবে করছি। তার ধারণা তিনি একজন চমৎকার স্বভাবের মহিলা। ওকে গোঁড়া আর অসংযমী বলে মনে হয় না। শিক্ষা ছাড়াও জেনে রাখো পাশাপাশি আরো অনেক ব্যাপার থাকতে পারে। উনি যে স্কুলে পড়ান সেই স্কুলটা দেখতে অদ্ভুত। এই তো মিসেস হেড বলছিলেন ওর ছেলে সুসাম নাকি বলেছে ওদের নতুন ক্লাসরুমটা একেবারেই পছন্দ নয়। জানলাগুলো দিয়ে নাকি বাইরে একেবারে তাকানো যায় না। সেইজন্য নাকি লেখাপড়ায় একেবারে মন বসে না। মিঃ ওয়াটারহাউস গলফের জিনিসপত্র যে ব্যাগে রাখা ছিলো সেখানে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটা খেলার লাঠি বের করলেন। তারপর সেটাকে সদর দরজার সামনে সুপরিকল্পিতভাবে রেখে দিলেন। তিনি বললেন যে, জেমস ভীষণ বোকা। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সব সময় তৈরি থাকা ভালো।

এসব করে যখন শোবার ঘরে হাজির হলেন মিস ওয়াটারহাউস, ঠিক তখনই মিসেস হেড হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন ওপরে। বললেন, শোনো দুজন ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। ভদ্রলোক হলেও ওরা পুলিশের লোক। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল তাকে জেরা করবেন।

মিসেস হেড মিস ওয়াটারহাউসকে নিচে যেতে বললেন। মিস ওয়াটারহাউস বললেন, ঠিক আছে। আমি নিচে যাচ্ছি। মিসেস হেড এবারে বলে উঠলেন, তার মনে হয় ওরা তোমাকে পেবমার্সের কথা জিজ্ঞাসা করবেন। নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন এই মহিলার আচরণে তুমি কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছে কিনা। ওদের ধারণা মাঝে মাঝে কারো আচরণে কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। অবশ্য ধীরে ধীরে নাকি ব্যাপারটা আরো বেড়ে যেতে থাকে।

হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন কেন আমি এসেছি? নিশ্চয় শুনেছেন গতকাল আপনার পাশের বাড়িতে কি ঘটেছে?

তিনি বললেন পাশের বাড়িতে কেউ খুন হলে সেটি সাধারণত নজরে না এসে যায় না। অবশ্য আগেই জনাদুয়েক সাংবাদিক এসেছিলেন আমার কাছে। তাদের তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। হার্ড ক্যাসলে বললেন, তিনি ঠিক করেছেন। ঐসব সংবাদিকরা সব জায়গাতেই গর্ত করে পথ করে নিতে পছন্দ করে। অবশ্য আপনি যে এসব মোকাবিলা করার ব্যাপারে সক্ষম তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য তিনি যদি সত্যিই কিছু দেখে থাকেন তাহলে তা আমাদের কাছে আলোকপাত করলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, খুনটা দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে করা হয়েছিল। ওয়াটারহাউস বললেন, তিনি এখানেই ছিলেন। খুন ঠিক কে করেছে আজকে খবরের কাগজে এটা এখনও জানতে পারেনি। হার্ড ক্যাসেল জানালনে, মিস পেবমার্স আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ঐসময় তিনি কারো আসার প্রত্যাশায় ছিলেন না। আর ভদ্রলোক সম্পর্কে ওর কোনোরকম ধারণাই নেই।

তিনি বললেন, অবশ্য এ ব্যাপারে ওর পক্ষে নিশ্চিত করে কিছু বলা অসম্ভব। কারণ উনি তো চোখে দেখতে পান না।

ভদ্রলোকের ছবি তাকে দেখানো হলে তিনি বললেন যে, এই ভদ্রলোককে তিনি আগে দেখেননি। তবে ভদ্রলোককে দেখলে বেশ সম্মানীয় বলা যায়।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, মৃত্যু যেন একটা শান্তিপূর্ণ ব্যাপার। আমার মনে হয় না কি হতে চলেছে, সে সম্পর্কে ভদ্রলোকের কোনোরকম ধারণা ছিলো। মিস ওয়াটারহাউসকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, তিনি সেদিনের কথা যদি মনে করতে পারেন যে, তিনি বাইরে বা বাগানে গেছিলেন কিনা।

উনি একটু ভেবে বললেন, একটা বাজার মিনিট দশেক আগে তিনি বাগান থেকে ফিরে আসেন। তার ধারণা পেবমার্স তখন বাড়ি ফিরেছিলেন। কারণ তিনি দরজা খোলার আওয়াজ শুনেছিলেন। তখনই ওনার স্কুল ছুটির সময়।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, ওর নিজের বিবৃতি অনুযায়ী মিস পেবমার্স দেড়টা নাগাদ আবার বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আর তিনটের সময়, তিনি বললেন যে, তাকে তিনি গেট দিয়ে যেতে দেখেছেন। মিস ওয়াটারহাউস বললেন, হার্ড ক্যাসেল ঠিক বুঝতে পারলাম না মিস। আপনি একটু আগে বললেন উনি গেট দিয়ে…।

তিনি বললেন তিনি বসার ঘরে ছিলেন ওখান থেকে রাস্তা ভালোই দেখা যায়। জানলার সামনে বসার ঘরে বসে চেয়ার নিয়ে টাইমস পড়ছিলাম। ওটার পাতা ওলটাবার সময় দেখা যায় পেকমার্স গেট দিয়ে ঢুকেছেন।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, এটুকু শুধু বুঝলাম যে, মিস পেবমার্স শপিং করতে আর পোস্টঅফিসে যাবার জন্য বাইরে যাচ্ছিলেন। ওগুলোয় যেতে হলে ক্রিসেন্ট ধরে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। সে সম্পর্কে অবশ্য আমারও একটা ধারণা ছিল। তিনি বললেন, কোনো সময় মিস পেবমার্স বেরিয়ে গেছিলেন আর কোনোদিকেই বা গেছিলেন। সে ব্যাপারটা একেবারেই মনে নেই। তিনি বললেন, প্রতিবেশীর ওপরে কোনোভাবে নজর রাখার অভ্যাস আমার নেই। তিনি তার নিজের ব্যাপার নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আচ্ছা পেবমার্স কি আপনার সদরের গেট দিয়ে বেরিয়ে টেলিফোন করতে যাচ্ছিলেন, ওখানেই তো পাবলিক ফোন আছে।

হ্যাঁ, তেরো নম্বরের উল্টোদিকে। মিস ওয়াটারহাউস বললেন ঐ লোকটিকে তিনি দেখেননি। দেড়টা থেকে তিনটে পর্যন্ত প্রথমে তিনি টাইমস-এর ক্রসওয়ার্ড পাজল নিয়ে সময় কাটান। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে যান। লাঞ্চের বাসনপত্র পরিষ্কার করতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে, মিস ওয়াটারহাউস ইনসপেক্টরের দিকে তাকিয়ে বললেন (একটু ভেবে নিয়ে)। তারপর তিনি চিঠি লেখেন। তারপর বিলের টাকা দেবার জন্য কয়েকটা চেক কাটি। এরপর গিয়ে হাজির হই ওপরে। এরপর সম্ভবত শোবার ঘর থেকে পাশের বাড়ির একটা গোলমালের শব্দ আমার কানে আসে। তিনি মেয়ের আর্তনাদ শুনেছিলেন। সে কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে জানলার কাছে হাজির হয়েছিলেন। তার চোখে পড়ে গেটের কাছে একজোড়া যুবক-যুবতী পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আছে। তার মনে হচ্ছিল যুবকটি কোনো ব্যাপার নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে তর্ক করছে। তারপর ঐ যুবকটি মেয়েটিকে গেটের পার্কের কাছে বসিয়ে দিলো। তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকে গেলো বাড়ির ভেতরে, মিস পেবমার্সকে তিনি দেখতে চাইতেন না যদি না মেয়েটির চিৎকার তিনি দেখতেন। তিনি এসব ব্যাপারে তেমন একটা নজর দেন না। যখন পুলিশের গাড়ি এসে পৌঁছালো তখন ভাবলেন অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে।

এই ঘটনা দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর ঘুরে হাজির হলেন পেছনের বাগানের দিকে। ওখান থেকে কিছু নজরে এলো না। যখন ওখান থেকে সামনের দিকে এগোন তখন দেখলেন যে ছোটোখাটো একটা ভিড় জমেছে। তার খুবই অদ্ভুত লাগছিলো।

গম্ভীরভাবে হার্ড ক্যাসেল বললেন, আর উল্লেখযোগ্য বলার কিছু নেই?

তিনি বললেন, নেই। সাম্প্রতিক তিনি ইনসিওরেন্সের ব্যাপারে বললেন তারা দুজনে মিউঁচুয়াল হেলথ অ্যাসিওরেন্স সোসাইটি থেকে ইনসিওরেন্স করিয়েছে। তিনি কারী নামটা জানেন না। তিনি মনে করেন, তার প্রকৃত নাম ওটা নয়।

অবশ্য প্রমাণ ছাড়া এটা বলা যায় না। তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। তার ভাই এসম্পর্কে কিছু জানে না। ও সাধারণত লক্ষ্য করে কিছু সেখানে। সেদিন সে লাঞ্চ করতে আসেনি। তার ছেড়ে দেওয়া হলো। দরজার কাছে একটা গলফ ছিলো। সেটা হাতে করে একবার তুলে দেখলো কলিন ল্যাম্ব। সেটা ভারী ছিলো। তাকে বললেন যে কোনো ঘটনার জন্য তিনি কেন প্রস্তুত, তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না, এটা এখানে কি করে এলো। কথাটা শেষ করে তিনি কলিন ল্যাম্বের হাত থেকে ওটা নিয়ে ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলেন।

হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, এইরকম মহিলার সঙ্গে তোষামুদ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তা সঠিক নাও হতে পারে। মিস পেবমার্স পোস্টঅফিস আর শপিং-এ যাবার জন্য বেরিয়ে ছিলেন। তবে বেরিয়ে ডান দিকের বদলে বাঁ দিকে গেছিলেন। আর টেলিফোনের ব্যাপারটা। মিস মার্টিনডেলের কথা অনুযায়ী দুটো বাজতে দশে করা হয়েছিলো। তিনি বললেন, মিস পেবমার্স কেন ফোন করেন তা ভাবাটা অর্থহীন। তিনি যদি ফোন করেন তাহলে তিনি মেয়েটিকে ওখানে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। খুনী যদি অন্য কেউ হয় তাহলে কেন সে মিস পেবমার্সকে জড়াতে চাইছে। তিনি এখন এ পর্যন্ত কিছু জানেন না। যদি মিস মার্টিনডেল ওকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন তাহলে উনি অবশ্য বলতে পারতেন কণ্ঠস্বরটা মিস পেবমার্সের কিনা। ১৮ নম্বর বাড়ি থেকে এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। দেখা যাক ২০ নম্বর থেকে তেমন কিছু পাওযা যায় কিনা।

.

০৮.

 উইলিব্রাহামের ২০ নম্বর বাড়িটার নাম ডায়না লজ। বাইরে থেকে কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য গেটের ভেতর থেকে রীতিমতো একটা লম্বা তার জড়ানো আছে। এই বাড়িটার একটা দুর্গন্ধ যুক্ত পরিবেশ। রঙটা বেশ উজ্জ্বল। কোনো বেল নেই। একটা হাতল ছিলো তা টানা হলে ভেতর থেকে একটা অল্প ঘণ্টা বাজার শব্দ কানে এলো ওর।

খানিক পর বছর তিরিশের আগেকার মতো চুল বাঁধা, গলায় মাফলার জড়ানো মিসেস হেমিং এসে দাঁড়ালেন। ইনসপেক্টর লক্ষ্য করলেন গলায় রাখা মাফলার আসলে একটা বেড়াল। এরপর আরো গোটাতিনেক বেড়াল বেরিয়ে এলো।

অনেক বেড়াল নিয়ে ঘরে থাকেন হেমিং। মিসেস হেমিং বললেন যে, তার গোপন করার কিছু নেই। তার পাশের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, তার দৃষ্টি পোষ বেড়ালের দিকে। তিনি বললেন, তিনি দোকানপাট তাড়াতাড়ি করে নেন। আসলে বেড়ালদের দেখাশোনা করার জন্য এটা করেন তিনি। তিনি সামনের জানলা দিয়ে তাকাননি। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে তিনি বাগানে যান। আসলে তিনি তার প্রিয় বেড়ালকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বাগান দিয়ে গিয়ে ও একটা গাছের ওপরে উঠে গেছিল।

তার বাগানে দেখতে গেলে হার্ড ক্যাসেল দেখলেন এই বাগানের ঝোঁপঝাড় দিয়ে পেবমার্স, বাগান কোনো কিছু দেখা সম্ভব নয়। এদিকে কোনো প্রতিবেশী নেই। মিসেস হেমিং বললেন, উনিশ নম্বর বাড়ির কথা আপনি বললেন না? আপনার ধারণা বাড়িটায় মাত্র একজনই থাকে। অন্ধ মহিলা। তিনি বললেন যে, ভদ্রলোক খুন হবার জন্য এসেছিলেন ব্যাপারটা সত্যিই বড়ো অদ্ভুত।

.

০৯.

 ওরা উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট ধরে গাড়িটা নিয়ে যাচ্ছিলেন। কালব্রাম রোডে এসে তারা পৌঁছলেন। তবে আজকের কাগজে যতটুকু পড়লাম তাতেই আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এখন নানা গুজব রটছে। এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কিন্তু তার স্ত্রী বেজায় ঘাবড়ে গেছে। তার একটাই চিন্তা যে, একজন জলজ্যান্ত খুনী অবাধে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মিঃ জসুব্ল্যাণ্ড নানারকম গুজবের কথা বললেন। মিঃ ব্ল্যাণ্ড বললেন, ভদ্রলোকের কাছে একটা কার্ড আর ঠিকানা পাওয়া গেছে।

মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে ছবি দেখানো হলো। তিনি বললেন এই ছবিটা অত্যন্ত সাধারণ। তিনি একে কোনোদিন দেখেননি। কারণ মনে রাখার মতো মুখ হলে তো সহজেই মনে পড়তো।

একষট্টি নম্বর বাড়িটা আসলে মিসেস হেমিং-এর বাড়ির পেছন দিকে পড়ে। ঐ বাড়িটার একটা অংশ ২০ নম্বর ছুঁয়ে আছে। এতে অবশ্য তুমি তোমার মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে দেখতে পাবার একটা সুযোগ পাবে।

সামান্য হেসে কলিন বললেন, তোমার মিঃ ব্ল্যাণ্ড যে একজন ধনী ব্যক্তি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যদি তা না হত তাহলে এরকম মারাত্মক বোধ ওর থাকতো না। হার্ড ক্যাসেল বেল বাজিয়েছেন। কলিন ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, সকালেই ঠিক এই সময়টাতে ওকে তুমি পাবে বলে আশা করতে পারো।

ঠিক তখন একটা ট্রাভেলারস ভ্যান এসে দাঁড়ালো। সামনেই গ্যারেজ। তাতে গাড়ি ঢুকলো। ভেতর থেকে মিঃ ব্ল্যাণ্ড এলেন। তিনি নিজেই বললেন, নিশ্চয়ই ঐ উনিশ নম্বর বাড়িটার ব্যাপারে এসেছেন? আমার বাগানেরই সংলগ্ন ঐ বাড়িটা। তবে একমাত্র ওপর তলার জানলা দিয়ে ছাড়া প্রকৃতই ও বাড়ির ভেতরে কিছু দেখা যায় না। সব মিলিয়ে বেশ অদ্ভুত ব্যাপার।

মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে বলা হয় ভদ্রলোকের ছবিটা তার মারা যাবার আগে ভোলা হয়েছিল। হঠাৎ ভেতরের দিকে দরজা খুলে মিঃ ব্ল্যাণ্ডের স্ত্রী এলেন। হার্ড ক্যাসেল তাকালেন ওর দিকে। তিনি দেখতে অনেকটা অ্যানিমিয়া রোগীর মতো। সঙ্গে সঙ্গে আরো একজনের কথা আপনভাবে তার মনে এলো। তিনি বললেন, তার শরীর ভালো নয় বলে তার স্বামী তাকে গুরুগম্ভীর বিষয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। একটুতেই তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার মনে হয় আপনারা খুন হয়ে যাওয়া লোকের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি ছবি দেখতে চান। ইনসপেক্টর ছবি দিলে তিনি তা দেখে বললেন, এটাকে কি শাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, তাকে ছুরি মারা হয়েছে শুনে তারা খুব ভয় পেলেন।

তিনি এর আগে কখনো তাকে দেখেননি। তার স্বামীরও ওই লোকটির সম্পর্কে কিছু জানা নেই। মিস পেবমার্সের সঙ্গে লোকটির কোনো আত্মীয়তা ছিলো না। মিস পেবমার্সের কাছে লোকটি একেবারে অপরিচিত।

তিনি পেবমার্সকে প্রতিবেশী হিসেবে চেনেন। উনি বাগানের ব্যাপারে আমার স্বামীকে প্রায়ই কিছু উপদেশ কিংবা পরামর্শ দেন।

ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল মিঃ ব্ল্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি তিনি বা তার স্ত্রী গতকাল বাগানে গিয়ে থাকেন, বাগান থেকে গুলি করার কোনো ঘটনা গতকাল কোনোভাবে আপনাদের নজরে পড়ে থাকে দুপুরবেলা, তিনি কিছু শোনেননি। প্রাসঙ্গিক সময়টা বেলা দেড়টা থেকে তিনটের মধ্যে। ঐ সময়টা ভ্যালেরী ও মিঃ ব্ল্যাণ্ড এখানেই ছিলেন। তখন আমরা লাঞ্চও করেছিলাম। তাদের ডাইনিং রুমে রাস্তার ধারে। সুতরাং বাগানের কোনো কিছু দেখা বা শোনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

তারা সাধারণত দেড়টার মধ্যে লাঞ্চ করেন। ব্লাণ্ড বললেন, না যাই না। তিনি বললেন তার স্ত্রী সবসময় লাঞ্চের পর বিশ্রাম নিতে যায়। আর তেমন যদি কোনো জরুরী কাজ না থাকে তাহলে চেয়ারে বসে একটু ঝিমিয়ে নিই। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছি পৌনে তিনটে নাগাদ। তবে তার আগে একবার ও বাগানে দাঁড়িয়েছে।

মিঃ ব্ল্যাণ্ড বললেন বছরখানেক আগে তার স্ত্রী তার কাকার সূত্রে কিছু অর্থের অধিকারী হয়েছিলেন। তবে কাকাকে ও বছর কুড়ি দেখেনি এটাই বিস্ময়ের ব্যাপার। যাইহোক আপনাকে বলতে অসুবিধা নেই এ ব্যাপারটাই আমাদের অনেকটা বদলে দিয়েছিলো। তার ফলে আমরা নিজেরাই সক্ষম হয়েছিলাম। পরে অবশ্য ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপার মাথায় এলো। আমি জোর দিয়েই বলতে পারি। তখন আমাদের বাইরে যেতে খুবই ভালো লাগতো। তারপর বলতে কি এমনিতেই আমি ভ্রমণপ্রিয়। তবে ইংল্যান্ডের বাইরে যাওয়াটা তেমন ভালো লাগত না আমার। এখানে আমাদের সব বন্ধুই আছে। আর আমার বোনও এখানে থাকে। এখানকার প্রত্যেকেই আমাদের চেনা। বিদেশে গেলেই তো আমরা অন্য কারোর কাছে আগন্তুক।

.

১০.

 উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টের বাষট্টি নম্বর বাড়ি। এই বাড়ির বাসিন্দা র‍্যামসে। রান্নাঘরের ওদিক থেকে বেশ আওয়াজ আসছিল।

বিল আর ট্রেড দুজন রান্না করার চেষ্টা করছিলো। মিসেস র‍্যামসে কাজের শেষে তাদের সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য বললেন। তারা নিজেদের মধ্যে হৈ-হট্টগোল করলো। তিনি ওদের দুজনকে জোর করে বের করে দিলেন, তারপর ঘরটা বন্ধ করে দিলেন। তারপর এগোতে এগোতে ভাবলেন হঠাৎ একজন মহিলা সাংবাদিকের কথা আপনভাবে মনে পড়লো। বিল ও ট্রেন্ড আগামী পরশুদিন স্কুলে ফিরে যাবে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহ আগে তিনি ওদের আসার ব্যাপারে কি খুশীই না হতেন। প্রথম দিন আনতে তিনি স্টেশনে গেছিলেন। সেই দিনগুলোর কথা আর বিশ্বাস হতে চাইছে না। ওরা চলে যাবার পর তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত। গাদাখানেক খাবার আর তৈরি করতে হবে না। ওরা দুজনেই যে চমৎকার সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তার।

ভাবনার মাঝখানে একটা আওয়াজ হলো। তার এগারো বছরের ছেলে বিল দৌড়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকলো। বললো যে, একজন ডিটেকটিভ এখানে এসেছে। বিল বললো, মিস পেবমার্সের বাড়িতে খুনের ব্যাপারে তারা জানতে চান।

হার্ড ক্যাসেল তার দুই ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, তোমাদের এখানে থাকার দরকার নেই। কিন্তু ছেলেদুটোর মধ্যে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ওরাও সব শুনবে বলে জেদ ধরে বসে রইলো। শেষে একেবারে বাধ্য হয়ে তাদের জোর করে ঘর থেকে বের করে দিলেন। মিসেস র‍্যামসে এবারে বললেন, দেখুন আমি ক্রিসেন্টের ওদিকটার কোনো লোককেই চিনি না।

হার্ড ক্যাসেল পকেট থেকে ছবি বার করে তার হাতে দিলেন। বললেন, এই ভদ্রলোককে আগে কখনো দেখেছেন কিনা। তিনি বললেন, সম্ভবত দেখিনি। র‍্যামসে বললেন, ছুটির দিনগুলোতে একেবারে সময় থাকে না। তাকে বলা হলো হার্ড ক্যাসেল র‍্যামসের ছেলেদুটির সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। তার মতে অনেক সময় বাচ্চারা অনেক কিছু লক্ষ্য করে যা বুড়োরা করে না।

মিসেস র‍্যামসে মিসেস হেমিংকে চেনেন। তার প্রতি একটা অভিযোগ আছে, উনি মাঝে মাঝে বেড়ালদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন। তিনি জানালেন তার ছেলেরা চলে গেলে তিনি অলসভাবে সময় কাটাবেন।

কলিন ল্যাম্ব নোট নিতে নিতে বললেন, ঐ বাইরের মহিলা অতিথিদের মধ্যে একজন আপনার এখানেই থাকে। উন্যার–এই নামেই ডাকে ওকে সবাই। এখানে এসে ইংরেজি শেখার বদলে গান গাইবে, তাই তো।

র‍্যামসে বললেন, তার স্বামী সুইডেন চলে গেছেন। তিনি একজন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার। তার স্বামী কবে ফিরবেন তা বলা শক্ত।

বিল আর ট্রেড হলঘরে অপেক্ষা করছিলো। হার্ড ক্যাসেলের প্রস্তাবে ওরা রাজি হলো। ওরা বাগানের দিকে এগোতে লাগলো। বাগানে গাছগুলোর কিছুটা এলোমেলো ভাবেই কাটা। বাগানের একেবারে শেষে ন্যাসপাতির গাছ। একটা চমৎকার আপেল ছিলো তাতে। ট্রেড আপেল ও ন্যাসপাতির মাঝখানটা আঙুল দিয়ে দেখালো। সেখান দিয়ে মিস পেবমার্সের বাড়িটা দেখা যায়।

ইনসপেক্টর বললেন, তার ধারণা ওপরের জানলা থেকে দেখা যায়। তারা বললো, ঠিক বলেছেন আপনি। যদি কাল আমরা ওপরে যেতাম আর তাকাতাম তাহলে আমরা একটা কিছু নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম। আমরা সিনেমায় গেছিলোম। বিল ও ট্রেড জানালো মিস পেরমার্স অন্ধ। তাদেরকে একবার তিনি বল ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। ন্যাসপাতি গাছে জলের পাইপ দেখে কলিন অনুমান করলেন ছেলেদুটি হেমিং-এর বেড়ালের গায়ে জল দেয়। কলিন বললেন, তোমরা ওর বেড়ার ভেতর দিয়ে ঢুকেছে তারা তা মানলো না। তিনি বললেন, যেভাবেই হোক মাঝে মাঝে ওরা বেড়া দিয়ে ঢোকে। মিস পেবমার্সের বাগানে যাও। ওখান থেকে ঝোঁপঝাড় এগিয়ে মিসেস হেমিং-এর বাগান। ওখানে তারের বেড়ায় গর্ত আছে।

বিল ট্রেডকে বললেন, তখনই চুপ করে থাকতে বলেছিলাম। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, তারা সিনেমা থেকে ফিরে এসে ঘটনা শুনেছিলো। তিনি বাজী রেখে বলতে পারেন যে তখন তারা জায়গাটা খুব সাবধানে ঘুরে দেখে নেয়। তাই তো।

হার্ড ক্যাসেল বললেন, তারা যদি কিছু খুঁজে পেয়ে থাকে সেটা দেখাতে। ট্রেড ছুটে গিয়ে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে দেখালো। রুমালে পরপর কয়েকটা গিট দেওয়া আছে। তিনি রুমালের গিটগুলো খুললেন। দুটি ছেলে তখন দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রুমালের ভেতরের জিনিসগুলো হলো কাপের একটা হাতল, চিনামাটির কোনো জিনিসের একটা টুকরো, জং ধরা একটা কাটা চামচ, একটা কয়েন, একটা কাচির অর্ধেক অংশ, একটুকরো কাঁচ আর কাপড় শুকোনোর ক্লিপ।

ইনসপেক্টর কাঁচের টুকরো নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখছিলো। এবং সেটা তিনি নিলেন। কলিন কয়েনটা দেখছিলো। ট্রেডের কাছ থেকে কলিন কয়েনটা নিলো। তাদের দুজনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে এই কথাটা যেন কারো কাছে বলা না হয়।