কবিতা হে প্রিয় আকৈশোর সহচরী,
হে আমার স্বপ্নের প্যাগোডা,
বাংলাদেশে ঘরে ঘরে যত পাত শূন্য পড়ে আছে,
তুমি কি পারবে তাতে জুঁই ফুলের মতন ভাত
নিয়ত ছিটিয়ে দিতে? খরায় পুড়ছে
যে-ক্ষেত ভীষণ দাউ দাউ, পারবে কি
ফোটাতে সেখানে
ফসলের ডাগর যৌবন? যারা ধুলায় গড়ায়
অত্যন্ত শৈশবে আর ক্ষুধার কামড়ে
হঠাৎ কামড়ে ধরে মায়ের উজাড় স্তন, তাদের পিপাসা
মেটানোর ধারা বইয়ে দেবে কি তুমি
কোনো ইন্দ্রজালে? চকচকে আশ্চর্য সোনালি,
তাকে ফের গহন নদীতে নিয়ে যেতে পারো কিনা
দেখি, দেখি হে আমার স্বপ্নের প্যাগোডা।
সেসব বেকার যুবা পথে-বিপথে ঘুরছে শুধু
ধুধু প্রান্তরের হরিণের
পেছনে পেছনে,
তাদের তদ্বিরহীন দরখাস্তে পারবে কি লিখে দিতে
মঞ্জুর নামক
অভীষ্ট মঞ্জল শব্দ? অথবা এখন যারা বানে
যাচ্ছে ভেসে চাল-চুলোসহ গরু-ছাগলের সঙ্গে,
নিমেষে, তাদের পারবে কি তুলে নিতে
মায়াবী হেলিকপ্টারে?
কবিতা হে প্রিয় আকৈশোর সহচরী,
হে আমার স্বপ্নের প্যাগোডা,
তুমি কি এখন অন্ধ তন্বীর মতন
দিনের আলোয় কিংবা অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে পথ হাঁটো?
হুইল চেয়ারে বসে একজন মুক্তিযোদ্ধা তাকিয়ে আছেন
সুর্যাস্তের দিকে, তুমি তাকে
দেখতে পাছো না? আজ উদারনৈতিক
মানবতা মৃত; তুমি কালো ব্যাজ পরে
পারবে কি যেতে ঠিক পথ চিনে সে শবযাত্রায়?
এও কি সম্ভব-শরণার্থী শিবিরের শত শত
বিবর্ণ তাঁবুর ক্ষত চকিতে সারিয়ে দিচ্ছো তুমি?
নির্বাসিত যারা, তারা তোমারই কোদালে কাটা পথে
ফিরে যাচ্ছে অনেক বছর পরে দলে দলে নিজ বাসভূমে…
এও কি সম্ভব? হে কবিতা আকৈশোর সহচরী,
পারবে কি তুমি
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল হয়ে দীপহাতে প্রতিরাতে
আর্তের শিবিরে ঘুরেঘুরে জীবন কাটিয়ে দিতে?
নাকি তুমি শীয়ামিজ বেড়ালের মতো
কুড়াবে আদর চোখ বুজে অতিশয় সম্পন্ন ড্রইংরুমে
কোনো রূপসীর কোলে অথবা শৌখিল লতা হয়ে
দুলবে দেয়ালে কারো কারো,
কেমন নিরীহ ফণা-তোলা, যেমন সাজানো থাকে মানিল্প্যাণ্ট।
-ম্যানিলা, ৮.১১.৮২