একটি গোলাপ যখন তার ডাগরতা নিয়ে
বাঙময় হয়ে ওঠে,
আমার চোখে তখন আলিঙ্গনাভিলাষী
বাহুর মতো পথ, গোধূলিরঞ্জিত দিগন্ত,
কয়েকটি অলৌকিক কলরবহীন বছর,
একটি মুখের অলকাতিলক,
কাংক্ষিত টেলিফোন নম্বর, আমার জন্মদিনের
পোশাক, সিগারেটের ধোঁয়া আর
আধুনিক কবির বই আর
অস্পষ্ট কতিপয় ঘোড়া, স্বপ্নে-দেখা সোনার ঘড়া।
একটি সিল্ক-কোমল গোলাপ যখন তার ডাগরতা নিয়ে
বাঙময় হয়ে ওঠে,
আমার মনে পড়ে রিলকের মৃত্যুর কথা, মনে পড়ে
বহু দূরের আজ পাড়াগাঁয়ে
আমার আব্বার কবরের কালো মাটিতে
হল্দে পাখির রঙের মতো এক বিকেলে
একটা গোলাপ অর্পণ করেছিলাম।
আমার চোখে পানি ছিল না এক ফোঁটা, অথচ
ফুলের কান্নায়
ভিজে গিয়েছিল আমার অস্তিত্ব
আজো সেই কান্নার স্মৃতি আমার ভেতর
হাহাকার।
আমার টেবিলের গোলাপটিকে
ক্রমশ শুকিয়ে যেতে দেখলে হঠাৎ মনে পড়ে যায়,
আমার সময় বেশী নেই। প্রায়শ
একটা স্বপ্ন দেখি আমি-
আমার গলা ফুঁড়ে রক্ত বেরুচ্ছে ঝলক ঝলক,
আমি সেই রক্ত এবং ডাগর গোলাপের
তুলনায় মেতে পরখ করছি
কার রঙ কতটা গাঢ়। এবং সেই স্বপ্ন গ্লাশের মতো
ভেঙে গেলে বেশী করে মনে পড়ে
আমার সময় কত কম।
স্বপ্ন যত ভয়ঙ্করই হোক, শেষ অব্দি স্বপ্নেই বাজে
পরিত্রাণের সুর;
আমার প্রতিটি স্বপ্ন ক্ষোদিত অদৃশ্য পোড়ামাটিতে।
আমার টেবিলের গোলাপটি
যখন পাপড়ি ঝরাতে থাকে, তখন আমি
চৌচির মাঠে উবু-হয়ে-বসে-থাকা কৃষক,
বেতফলের স্বাদে ভরপুর কিশোরী,
নতুন চরে পড়ে-থাকা লাঠিয়ালের ভেজা শরীর,
পালকির পর্দা সরিয়ে-তাকানো নতুন বউ,
অন্ধকারে জেলে ডিঙির ছিপছিপে গতি দেখতে পাই
এবং দেখি
চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে ফুটে থাকে একটি রক্তগোলাপ।