বাজারে বাজারে ঘুরে বলতাম কথা, নানা কথা।
শুনতো অনেকে, অনেকে আবার অমনোযোগী।
‘সংসারে দেবে কি মন, না কি আজীবন শব্দের পায়রা
উড়িয়ে শুধু ঘুরবে পথেঘাটে?’
আমার মনের গুপ্ত পথে রাখেননি পদযুগ
বেয়াড়া গৃহিণী। কী লাভ কেবল তাকে দোষী করে?
সমাজের হর্তাকর্তা কিংবা শিরোমণি, তারাও সত্যের শাঁস
পায়নি খুঁজে আমার কথায়-তাই তো ওরা
আমার হাতে দিয়েছে বিষপাত্র আর
বলেছে আকণ্ঠ তুমি সত্য শুষে নাও!
ছুতোর হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু আমার ভিতরে
অন্যজন দিনরাত্রি নগ্ন পায়ে হাঁটে।
রক্তপিপাসু পাথরে কাঁটায়
বুক পেতে দেয়, বয় ক্রূশকাঠ, সয় পাঁচমিশেলি গঞ্জনা
শহরে ও গ্রামে-গঞ্জে। আমার নিজস্ব বিশ্বাসের
পুরুষ্ট বীজ দারুণ খরায় ক্ষেতে-প্রান্তরে ছড়াতে গিয়ে
হলাম বিরাগভাজন ওদের,
আমাকে করল ক্রুশবিদ্ধ ওরা, আমার রক্তের
স্রোত, দেখলাম, যাচ্ছে বয়ে শতাব্দী শতাব্দী ধরে।
তখনও আমার বাঁচতে পারাটা কঠিন ছিলো না।
আমার ধারণা পাল্টে ফেললেই অথবা চুপচাপ থাকলেই
সহজ হতো বেঁচে-বর্তে থাকা আর প্রমোদে ঢেলে মন
সকল উজ্জ্বল পুঁথি পুড়িয়ে আমিও দীর্ঘজীবী
হতে পারতাম। আমার জ্ঞানের জন্যে আমাকে
ডাইনীর মতো ওরা পুড়িয়ে মেরেছে কী প্রবল ঘৃণায়, আক্রোশে।
মুক্তি শব্দটিকে আমি প্রেমিকের মতো উচ্চারণ
করতাম আর মুক্তি আমার শিরায় শিরায়
বোদলেয়ারের কবিতার মতো উঠতো নেচে মুহূর্তে মুহূর্তে।
কত চোরা পথে বনে জঙ্গলে ছুটেছি আমি
মানুষের মুক্তির জন্যেই।
যখন আম বিশ্ব জুড়ে ফেলেছি মহাছায়া,
তখনই জঙ্গলে আমি নিহত হলাম।
আমার বুকে বুলেট প্রিয় মুক্তি এই শব্দটিকে
লিখে দিলো আরো গাঢ় আরো উজ্জ্বল অক্ষরে।
আমি আর হাতে
নেবো না তুলে বিষপাত্র,
কস্মিনকালেও আর কোনো গলগোথায় যাবো না।
চতুর্দিকে জ্বলুক শত অগ্নিকুণ্ড,
আমি পুড়ে মরবো না।
আমাকে কখনও কেউ আর কোনো কুটিল জঙ্গলে
পারবে না বুলেটের ইস্পাতী বৃষ্টিতে,
ছিন্নভিন্ন করতে।
আমার মুক্তি ধূলায় ধূলায়, ঘাসে ঘাসে।