ইদানীং চা-খানায় বসে থাকি অনেকক্ষণ।
রাজা উজির মেরে, ইয়ার্কি করে
ইয়ার বক্সিরা উঠে যাবার পরও সামনে শূন্য কাপ নিয়ে
বসে থাকি নড়বড়ে চেয়ারে। দেখি ঝাঁকা মুটে যাচ্ছে
হনহনিয়ে সতেজ
সব্জির বোঝা বয়ে, রেডিওতে বাজে সস্তা ফিল্মি গান
এবং লজ্ঝড় ঘোড়ার গাড়ি রাস্তায়
মোড় নেয় ইতিহাস ছিটোতে ছিটোতে। স্বপ্নের
খোয়ারিতে কখনো কখনো সূর্যাস্ত দেখে
বনেদি বংশের-গৌরব-লুপ্তির কথা মনে পড়ে,
মনে পড়ে সত্যজিৎ রায়ের জাগর শটে
নবাব ওয়াজেদ আলী শাহের গোধূলি রঙিন মুখ।
এবং আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না
আমার ছা-পোষা পেরেশান জনক আর
বেকার ভায়ের মুখ, আমার হাড়ি-ঠেলা মায়ের
উনুনের ছাইয়ের মতো স্বপ্নচূর্ণ,
অত্যন্ত দ্রুত বেড়ে-ওঠা বোনের সাধ আহলাদের ছাঁটাই;
মনের ভেতর বারংবার গুমরে ওঠে
লাঞ্ছিত মধ্যবিত্ত মনের বিলাপ।
তোমাকেও ভোলা অসম্ভব, সুচেতা। একদা তোমার
মাধুর্যে ভরে উঠেছিল আমার হৃদয়।
তুমি বলেছিলে, ভালোবাসি এবং
তোমার সেই উচ্চারণের মধ্যে পেয়েছিলাম বিশ্রাম।
অনেক ঝড়ঝাপ্টার পর রোদে পিঠ দিয়ে
জেলে যেমন তার জাল সারায় গভীর অভিনিবেশে,
তেমনি আমি আমার ছেঁড়া ছঁড়া
ভাবনাগুলিকে জোড়া দিই, ভাবি এ এমন এক সময়,
যখন অবিশ্বাসের ফণিমনসায়
ছেয়ে গ্যাছে সবার জীবনযাপন, মেধা ও মনন।
আমি আর আমার হাতকে বিশ্বাস করতে পারছি না,
বিশ্বাস করিনা নিজের চোখ ও নিশ্বাসকে!
নিজের শরীরের চেয়ে দেয়ালের ছায়াকে
মনে হয় অধিকতর সত্য।
শুধু তোমার প্রেম এবং আমার কবিতাকে
মুক্ত রাখতে পেরেছিলাম
অবিশ্বাসের রাহুগ্রাস থেকে। কিন্তু আজকাল
চা-খানায় নড়বড়ে চেয়ারে বসে
সামনে শূন্য পেয়ালা নিয়ে মনে হয়-
মেয়ে, সরকারি প্রেসনোটের মতো মিথ্যা তোমার প্রেম।