হৃদয় ডাগর সূর্যোদয় নিয়ে মাঝে-মাঝে করি উচ্চারণ
কত কাজে স্বরচিত শ্লোক, সুর হয়, কারও মানে না বারণ,
চৈতন্যে নক্ষত্র ফোটে, রক্তে জাগে দ্বীপ, গুঞ্জরিত;
চোখে মুঞ্জরিত
নানান মন্তাজ অতীতের। তখন যে কণ্ঠস্বরে
সূর্যাস্তের রঙ লেগে যায়, অকস্মাৎ চরাচরে
বিষাদের অমা
নামে আর প্রতিটি শ্লোকের অন্তরালে থাকে জমা
রাত্রিময় চোখের জলজ কণা, যেন অণুবিশ্ব,
কখনও পড়লে ঝরে হয়ে যাবো নিঃস্ব।
কোন অবেলায় আমি এসেছি এখানে,
যখন শৌর্যও ঠিক শৌর্যও নয়, মহিমার অস্তরাগে শুধু ভুল গানে
মেতে বসে থাকি রুক্ষ একাকী চাতালে?
কখনও সে কোন প্রেত দেয় হাতছানি, নামি স্বকীয় পাতালে।
এ কেমন নায়ক আমার আজ, হায়,
অক্ষরবৃত্তের ডাকে আসে, দ্বন্দ্বদীর্ণ শীর্ণকায়,
জয়ের পরেও গেয়ে চলে শোকগাথা ঘুরে ফিরে!
বুঝি সে জন্মেছে একা বিষাদেরই তীরে।
ভার্জিলের ধূসর সৈকত আর আমার তটরেখা
বহু যুগ পরে গোধূলিতে একই লগ্নে যায় দেখা।
পাথরে ঘষেও ঠোঁট পারি না ফোটাতে কোনো ফুল
কিংবা একরত্তি ঘাস এবং বিপুল
অমাবস্যা এলে ব্যেপে চতুষ্পার্শ্বে, বানাবো যে জ্যোৎস্না এক কণা,
অনায়ত্ত সেই কলা, করি শুধু প্রস্তাবনা,
সিদ্ধান্ত হারায় পথ বারবার। এ আমি কোথায়
অস্পষ্ট দাঁড়িয়ে আছি ক্লান্ত, নিঃসঙ্গ, মাইলপোস্টহীনতায়?
জনাকীর্ণ পথে হেঁটে গেলে ঠিক
আমাকেই দুঃখ বলে নেবে চিনে এমনকি উদাস পথিক।
জীবন করছে ফেরি সর্বদাই ভালোবাসা, বিরহ ইত্যাদি শব্দমালা,
সম্প্রতি অভিধা লুপ্ত তার আর কান ঝালাপালা
হচ্ছে দিনরাত
অর্থহীন চ্যাঁচানিতে। তবে কি বেবুন সকলেই?
সম্মুখে বাড়িয়ে হাত
মিত্রতার দিকে অকস্মাৎ থেমে যেতে হয় মধ্যপথে, অসহায়,
কাউকে না দেখে, তবু আমার আপন নিরালায়
নিবেদিত আমি শিশু, পুরুষ রমণী
সূর্যোদয় সূর্যাস্তের কাছে আর আমার ধমনী
তরঙ্গিত ক্ষণে ক্ষণে মৃদু কণ্ঠস্বর শুনে। অথচ অনেকে
এভাবে তাকায় যেন আমি চোর অথবা ভিক্ষুক। মুখ ঢেকে
লুকিয়ে বেড়াই তাই, বস্তুত অজ্ঞাতবাসে কাটে
কাল আর অন্তহীন বাসনার পুশিদা পশম হাটে
নেয়া দায়, সারাক্ষণ রোদ্দুরে ছায়ায় শুধু প্রশ্ন করে মন-
এ অদ্ভুত নিরালোকে তোমার অজ্ঞাতবাস ফুরাবে কখন?
এখন আমার অন্তর্গত আছে একজন কেউ,
যে আমার দিকে আর্ত চোখে তাকালেই কী-যে ঢেউ
ওঠে অস্তিত্বের মূলে এবং তখন
দ্বৈতের টানাপোড়েনে অনেক বন্ধন
ক্রমশ শিথিল হয়, কী গুপ্ত প্লাবনে ভেসে যায় সব ঠাঁই,
আমিও নিঃসীম ক্ষোভে, অভিমানে বারবার একা হয়ে যাই।