ভীতিচিহ্নগুলি মুছে যাচ্ছে একে একে সুমসৃণ।
ব্যক্তিগত বাড়ির দেয়াল
বস্ত্রালয়, মনোহারি দোকান, স্টেশন, ছাত্রাবাস
ইত্যাদির ক্ষত সেরে যাচ্ছে। করোটির
অক্ষি কোটরের মতো গর্ত
পায় নব্য পলেস্তারা; শহরে ও গ্রামে
ভীতিচিহ্নগুলি মুছে যাচ্ছে একে একে সুমসৃণ।
আবার ইলেকট্রিক পোলে কী ব্যাকুল শ্রমে কাক
নিবিড় জমাচ্ছে খুড়কুটো, কাক-বউ
ডিম দেবে বলে। পুনরায়
জেলের ফাটক ভেঙে বুকের রবীন্দ্রনাথ উদার পথিক
বাংলাময় রৌদ্রালোকে আর খোলা হাওয়ায় হাওয়ায়,
ঐ তো সৌম্য তিনি জ্যোতির্ময় দেয়ালে দেয়ালে।
বহুদিন পর বারান্দায় শূন্য টিয়ের খাঁচাটা
দিয়েছি ঝুলিয়ে
অভ্যাসবশত,
একটি সবুজ পাখি দাঁড়ে এসে ফের বসবে বলে।
ভীতিচিহ্নগুলি মুছে যাচ্ছে একে একে সুমসৃণ;
অথচ আমার বুক, মগজের কোষ
শিরা-উপশিরা
এখনও তো সন্ত্রাসের প্রজা। পেয়ারা গাছের নিচে
মুরগিগুলি হঠাৎ উৎকর্ণ হয়, যেন অন্তরালে ভয়বহ
শব্দে ধমক সুপ্রকট, দূরে খড়ের গাদায় খরগোশ
কম্পমান; রৌদ্রস্নাত পাখির বুকের রোম তীব্র শিহরিত
ইস্পাতি স্পর্শের আশঙ্কায়।
গাছের সজীব পাতাগুলি,
ভদ্র পাতাগুলি
দুঃস্বপ্নের ভস্ম-ওড়া প্রখর শ্মশানে
মনসার মতো আগুনের লকলকে জিভ দেখে
ক্রমাগত কুঁকড়ে যেতে থাকে।
হঠাৎ জানালা থেকে একটি রোমশ হাত ঘরে
ঢুকে পড়ে, বিচূর্ণিত গেরস্থালি। জামবাটি বুড়ো
নাবিকের ফিচেল করোটি হয়ে নৃত্যপর উদোম মেঝেতে।
প্রভুভক্ত কুকুরের মতিভ্রম, অকস্মাৎ আমার গলায়
তার রক্তখেকো দাঁত বসে যায়। আমার ছেলেটা
তার অনুজের মাথা কেটে হো হো হেসে ওঠে, সন্তানের রক্ত
নিজের জঠরে কেলিপরায়ণ! একটি যুবতী, উন্মাদিনী,
ঘাসের মৌসুমী ফুল চিবুচ্ছে কেবল, নাকে তার
লাভাস্রোত। সহোদরা বিষম ঝুলছে কড়িকাঠে। একজন
লোলচর্ম বৃদ্ধ মারহাবা বলে তার নকল সফেদ দাঁতে
কুটি কুটি কাটছেন কিশোরীর মাই। আমার সমস্ত ঘর
চাপ চাপ বরফে আকণ্ঠ ঢাকা, মুর্দাফরাশের
গান ভাসমান সবখানে।
রেখেছি কাকতাড় য়া দিকে দিকে মনের জমিনে,
তবুও ভয়ের প্রেত যাচ্ছে না আমাকে ছেড়ে। রোজ
বেলাশেষে ক্লান্ত লাগে, ক্লান্ত লাগে, ক্লান্ত লাগে; ভয়,
হিস্ হিস্ ভয়
দারুণ হাইড্র্যা ভয় এই
কণ্টকিত সত্তা জুড়ে রয় সারাক্ষণ। তবে কি ধবলী
গোখুরে উড়িয়ে ধুলো, রঙিন বাজিয়ে ঘণ্টা যাবে না গোহালে?