এখন আমার কার কাছে কী চাওয়ার আছে
ভুলেই থাকি বস্তুত।
অনেক বেলা আমার গায়ে রৌদ্রছায়া গাঢ় বনে,
অনেক বেলা আমার সঙ্গে কানামাছি খেলতে খেলতে
অস্ত গেলো দিগন্তে।
নানা মাপের জামা কাপড় রইলো পড়ে,
রইলো পড়ে চতুর্দিকে ভাঙাচোরা কত্ত কিছু,
কিন্তু তবু কারও কাছে কোনোদিনই
হাত বাড়িয়ে চক্ষু মুদে চাইনি কিছুই
ভোরে কিংবা দিনান্তে।
এই জগতে প্রথামতো স্বপ্নে কিংবা জাগরণে
অনেক কিছুই চাওয়ার ছিলো,
চাইনি কিছু কক্ষণো।
বরং আমি মনের একা গুপ্ত পথে
অনেক কিছুই দিই বিলিয়ে-
এই যে এমন শূন্য দুপুর, পাবদা মাছের রঙের মতো
শেষ বিকেলের চিহ্ন এবং
নিবিড় রাত্রি, কারো সঙ্গে মেলামেশা, গাঙচিলেরই
ডানার মতো কোমল চিঠি-সকল কিছুই ভিন্নরূপে
দিই ফিরিয়ে অন্তত।
মরুভূমির বালিয়াড়ির নিঝুম বুকে
টকটকে ডাকবাক্সে হঠাৎ দিই বসিয়ে।
চোখের আগে শ্বেত করোটি ওঠলে ভেসে
হইতো বটে শংকিত।
আবার কখন দোদুল্যামান কাকতাড় য়া
শরমিলা এক নারীর কথা শোনায় যেন ফিসফিসিয়ে।
চিলের ডানায় থেকে থেকে বিচ্ছেদেরই ভাষা কাঁপে;
চিলের কাছে, দুপুর বেলার ছাদের কাছে
গোরস্তানের শিরশিরে সব ঘাসের কাছে
কথা রাখি গচ্ছিত।
গভীর কোনো দুঃখ পেলে, পাতায় পাতায়
ঝরনাতলার নুড়ির বুকে, কাতরা কাতরা পানি এবং
মৃতের নেভা চোখের ভিতর প্রবেশ করার
যাই তো পেয়ে সম্মতি!
স্বপ্ন দিয়ে দুঃখ মুছি কেমন আমি ছন্নছাড়া,
দুঃখ তবু বুকের ভিতর
একলা একলা বেড়ে ওঠে; হৃদয় জুড়ে
ফুঁসতে থাকে অতৃপ্তি।
নিজের কাছে নিজেই দোষী হই যখনি,
খুব ভিতরের শরমিন্দা সেই ব্যক্তিটাকে
কাঁদাই আমি বারে বারে। মিথ্যে কতো প্রতিমাকে
সময় আমার বিলি করি, গুলিয়ে ফেলি
সত্য এবং অসত্যে।
আমার মনের নিচের কোঠায় যেজন থাকে খুব একাকী,
স্বয়ং ভুখা-ফাকা থেকে খাদ্য বিলায় অন্যজনে,
যেজন খাদের কিনার ঘেঁষে হাঁটছে শুধু
সেই তো আমার প্রতিযোগী,
রুক্ষবেশী সন্ন্যসী।
কিন্তু তুমি নির্ভাবনায় হাত ধরে তার বসতে পারো,
বসতে পারো পাহাড় চূড়ায়,
খাদের ধারে খোলমেলা, চোরাবালির অনেক কাছে
বসতে পারো একান্তে।