সন্ধ্যাও এমন হয় কখনো ভাবি নি কোনোদিন।
আমি একা বড় একা, উপেক্ষিত, ভাবলেশহীন
কাঠের চেয়ারে বসে থাকি এক ভিড়
মানুষের মাঝে; দিনগত কায়ক্লেশ বাড়ে, কখনো নিবিড়
দয়ার্দ্র নক্ষত্রগুচ্ছ খুঁজি, নানা টুকরো কথা, যেন স্বপ্নে বলা
ভেসে আসে। কেউ খুব গলা
চড়ায় না, শিষ্টাচারে মসৃণ সবাই, বলা যায়।
কেউ কেউ আশপাশে খানিক তাকায়,
এবং অনেক দূর থেকে
হঠাৎ তোমাকে দেখি, যেন তুমি নিজেকে রহস্যে ঢেকে
বসে আছো কোনো গ্রিক দেবীর ধরনে
পারিপার্শ্বিকের প্রতি উদাসীন। চক্ষু-তৃষ্ণা বাড়ে, ক্ষণে ক্ষণে,
আমার ব্যাকুল দৃষ্টি তোমার দিকেই যেতে চায়,
যেমন দিনান্তে ক্লান্ত পাখি তার নিজস্ব ডেরায়।
সন্ধ্যা পাপড়ি মেলে সরোদের অলৌকিক
রাগশ্রী আলাপে, চতুর্দিক
আলী আকবরময়। গেরস্তের বাড়িঘর, ইটকাঠ আর
পুঁইমাচা, ফুলকপি, মঞ্চ শামিয়ানা, সারি সারি সুদৃশ্য মোটরকার
চকিতে সরোদবন্দি। মনে হয়, তুমি আর আমি অকস্মাৎ
রুপোর পাতের মতো সরোবরে কাটছি সাঁতার-
তোমার দু’হাত
আমার আপন হাতে খেলা করে, আমি বারংবার
তোমার জলজ ঠোঁটে ঠোঁট রাখি, শুনি হৃৎস্পন্দন
তোমার এবং আমাদের ওষ্ঠের যুগলবন্দি শেষ হলে
সুরে সুরে, ক্ষিপ্র বোলে বোলে
ভেসে যাই দূর পরাবাস্তব নিঃসীম নীলিমায় দীগ্র আমরা দুজন।
কখনো তোমাকে দেখি ছুটে যাচ্ছো, ছুটে যাচ্ছো শুধু
হাওয়ায় উড়ছে চুল, আমি একা ধু ধু
বালির পাহাড়ে পড়ে থাকি; ইচ্ছে হয় তোমার সান্নিধ্যে গিয়ে,
চেনা, আধচেনা মানুষের ভিড়ে হিল্লোল জাগিয়ে
গূঢ় দৈববাণীর মতোই বলে আসি-
ভালোবাসি, আজো তোমাকেই ভালোবাসি।
আমার হয় না বলা, আমার হয়েই বলছেন ঐ যে তিনি,
সাধক সরোদ, বারে বারে, ‘ভালোবাসি’, বলবেন চিরদিনই।