একটু আগে ঘাসজমির শিশিরকে
জীবনানন্দের কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছিলাম
এবং কথা বলছিলাম পেয়ারা গাছের
পাতাগুলোর সঙ্গে। সবুজ পত্রালি বলল,
‘তোমার কবিতা শুনতে চাই আমরা’। বিব্রত আমি
পাতাগুলোকে কোনোমতে
নিরস্ত করে কোকিলকে ডেকে আনলাম অনুপম
আবৃত্তির আসর বসানোর জন্যে।
কোকিলের কুহুধ্বনি দীঘির মাছগুলোকে প্রবল
আলোড়িত করল, কয়েকটি পাব্দা
দীঘির ধারে উঠে আসতে চাইল। এমন সময়
ঘাসজমির শিশির দু’পায়ে মুক্তোর মতো ছড়িয়ে সে এলো
আমার কাছে। তাকে দেখেই
লতাগুল্ম, মৌমাছি, যুবতী পদ্ম, একটি কি দু’টি
ঘাসফড়িং কোরাস গাওয়ার উদ্দেশ্যে
চঞ্চল হয়ে ওঠে। অভিভূত আমি চেয়ে থাকি হঠাৎ
অতিথির সৌন্দর্যের দিকে। এমন কাউকেই
এর আগে দেখিনি। তার সৌন্দর্যে নিজেকে বিছিয়ে দিলাম।
জিগ্যেস করি ওকে, ‘তুমি কি দেবী, না কি অপ্সরা কোনো?
কী তোমার ধর্ম? গোত্রই বা কী?’ ফুল গাছে
হাত রেখে সে বলে, ‘ধর্ম কিংবা গোত্র আমার বিবেচনা নয়।
আমি দেবী অথবা অপ্সরা কিছুই নই’। তবু আমার প্রশ্ন-
‘তবে কি কুহকিনী তুমি, যে ভীষণ নির্জন পথে মানুষকে
মতিচ্ছন্নতায় ডোবায়’।
‘না, মানবী আমি, সে বলে তার অনিন্দ্য কণ্ঠস্বর
চরাচরে কোমল ছড়িয়ে, মধ্যরাতের
স্তব্ধতায় উচ্চারণ করি, ‘মানবী বলেই তোমাকে
এমন উথাল পাথাল ভালোবাসি’।
এই বাক্য উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই
একটি উল্লুক মাথা তুলল
গাছপালার আড়াল থেকে। ডেকে আনলো
ওর গোত্রের কাউকে কাউকে উদ্ভট এক প্রেস কনফারেন্সে!
আমার নতুন পাণ্ডুলিপি
ওদের বিষ্ঠায় ফেলে খিস্তি খেউড়ের গুদাম
অনর্গল করল। আমি সেই জ্যোতির্ময়ী মানবীকে
ওদের দাঁত-নখরের হিংস্রতা থেকে
আড়ালে সরিয়ে তার মুখচুম্বন করলাম। আমার
উৎপীড়িত পাণ্ডুলিপি উঠে এলো তার হাতে ভালোবাসা হয়ে।
শিশির, রাধাচূড়া গাছের পাতা, কোকিল,
দীঘির কেলিপরায়ণ মাছ, সপ্তর্ষিমণ্ডল রাতের তৃতীয় প্রহরে
জীবন এবং প্রেমের আবৃত্তির আসরের
আয়োজন করল সিএ সুন্দরীতমা এবং আমার উদ্দেশে।
আমি ওদের মনোভঙ্গিতে মুগ্ধতার
ডালপালা দেখে প্রত্যেকের জন্যে সাজালাম নৈবেদ্য।
১১.১০.৯৪