তাদেরও একান্ত ব্যক্তিগত
পরিচয় ছিল কোনোদিন রৌদ্রময়, জ্যোৎস্নামাখা।
বুঝিবা তাদের একজন অস্তিত্বের
সব তন্ত্রী বাজিয়ে বাজিয়ে
তন্ময় গাইতো গান কারো ওষ্ঠের, স্তনাভার;
অন্যজন সঙ্গোপনে ভরে তুলেছিল
সাতটি সুনীল খাতা রাশি রাশি গন্তব্যবিহীন
জবুথবু পক্ষাগাতগ্রস্ত পদ্যে, কেউ কতিপয়
স্বপ্ন এঁকেছিল
আপন চৌকাঠে,
ঘরের দেয়ালে আর বিবর্ণ মেঝেতে কিছু লোকজ মটিফে,
কোনো কোনো স্বপ্নে ছিল মিশরীয় ধাঁচ।
মেজাজ তিরিক্ষি ছিল কারো, প্রায়শই
দেখা যেতো তাকে বিবাদের ঘূর্ণিপাকে;
কারো রক্তে ছিল ফেরেশতার ছায়া, কেউ সারাক্ষণ
ভাবতো দ্বীপের কথা, যার তটে-দেখতো সে স্বপ্নময়তায়-
পড়ে আছে জলকন্যা, তীরবিদ্ধ, মৃতা।
একজন দপ্তরের টেবিলকে ইথাকা ঠাউরে নিয়ে খুব
ক্লান্ত হ’য়ে দেখতো অদূরে
উদ্যানের পাশে শুয়ে একটি কুকুর, ক্রমাগত হচ্ছে বুড়ো।
কখনো মৃত্যুকে ওরা আপ্যায়ন করেনি এবং
নৃপতির মতো ছুটে গেছে বারবার মরণের মৃগয়ায়।
স্মৃতিতে পলাশ ছিল, ছিল সাঁকো, বাগানে বেড়া,
ওষ্ঠের আর্দ্রতা আর অক্ষরের বিভা। একজন ত্র্যানাটমি
পড়ে করোটির ব্যাখ্যা খুঁজেছিল, জেনে নিতে চেয়েছিল
করোটি কখনো সত্য ধারণ করতে পারে কিনা
সাবলীলভাবে।
সত্যের আঁজলা থেকে জল খাবে বলে অপরাহ্নে
ধুলায় গড়িয়েছিল হুহু তার নিজেরই করোটি।
মরণের করতলে ওরা, তবু জীবনের পাশাপাশি দীপ্র থেকে যায়।
কখনো হাওয়ায় ভেসে আসে কিছু কণ্ঠস্বর, যেন
কবেকার গ্রামোফোন বাজে বকুল বিছানো পথে।
নিউজপ্রিণ্টের স্তূপ থেকে স্বপ্ন উঠে এসে স্তব্ধ
মধ্যরাতে পতাকার মতো কাঁপে প্রধান সড়কে,
নগরবাসীকে ডেকে নিয়ে যায় পার্কে, নদীতীরে,
নিউজপ্রিণ্টের মধ্যে ঢেলে দেয় বসন্তের রঙ।
সভার শরীর থেকে কিছু
উদাসীন একাকী শরীর,
মালা, ফটোগ্রাফ আর শ্যামল নস্টালজিয়া কেমন অলক্ষ্যে ঝরে যায়।
তাদের নামের
ওপরে সূর্যের চুমু ঝরে, পড়ে নক্ষত্রের ছায়া,
বাংলাদেশ গান গায় তাদের অক্ষয় শোণিতের।