নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

আমাকে একটি গল্প

আমাকে একটি গল্প বলেছেন স্তব্ধ মধ্যরাতে
স্বপ্নের ভেতর শেখ ফরিদ উদ্দীন
আত্তার প্রগাঢ় কণ্ঠস্বরে, যেন রবারের সুর
ঝরে যায় সুরভিত উদ্যানে। সে গল্প
কেমন অচিন রাগিণীর মতো বাজে আমার সত্তায়-

“একটি ময়ূর ছিল রাজার উদ্যানে
রঙ-বেরঙের পাখি এবং ময়ূর-ময়ূরীর
সঙ্গে ঘুরে ফিরে
দেখতে নিজের কলাপের কত বসন্তবাহার, পাখিদের
গানে প্লুত দিকগুলি হতো আলোর ঝালর
কখনো এবং মাঝে-মাঝে
নিজেও উঠতো ডেকে, হতো নৃত্যপর।

“একদিন রাজাজ্ঞায় তাকে মুড়ে দেয়া হলো কালো
চামড়ার আবরণে আপাদমস্তক। কে না জানে
রাজরাজড়ার শত শত
কাহিনী অদ্ভুত খেয়ালের। চামড়ার
অত্যন্ত সংকীর্ণ কারাগারে পেতো খেতে
শস্যকণা নিয়মিত দু’বেলা। নিজের কলাপের
শোভা গেল ভুলে, ক্রমান্বয়ে উদ্যান, ময়ূরসংঘ,
সবকিছু হলো সে বিস্মৃত।
নাছোড় কুৎসিত চামড়ার অন্তরালে
কাটে তার বেলা আর কখনো সখনো
ফুলের সৌরভ ভেসে এলে
কী এক অজানা আকাঙ্ক্ষার গান হতো মঞ্জরিত
আচ্ছন্ন অস্তিত্বে তার। হঠাৎ শুনলে
কেকাধ্বনি কিংবা কোনো পাখির উদ্যানপ্লাবী গান
কেমন দিব্যতা ছুঁয়ে যেতো তাকে। এরপর কিছু
অন্যকিছু বলেন নি মরমী আত্তার।
এবং সহসা তিনি উঠে দাঁড়ালেন
আমার শিয়র থেকে স্বপ্নের ভেতরে,
কর্কশ খিরকা তাঁর সহজিয়া হাওয়ায় বিলীন
মেঘের ছায়ার মতো। তারপর আমি সে অচিন স্বপ্নস্থিত
ময়ূরের কথা
ভেবেছি অনেক দিন। হতচ্ছাড়া চামড়ার বন্দিদশা থেকে
কখনো পাবে কি মুক্তি সে আবার? এখন ভাবতে ভালো লাগে
কোনো একদিন
আকাঙ্ক্ষার গান তার লুকানো সত্তায়
প্রবল বইয়ে দেবে শক্তির নির্ঝর
এবং পড়বে খসে দেহলগ্ন চামড়ার খাঁচা অকস্মাৎ, পুনরায়
অদৃশ্য কলাপ তার হবে লীলায়িত
গুণীর তানের মতো উদ্যানের সুগন্ধি হাওয়ায়।