এই যে আমি এলাম, এর কোনো তাৎপর্য কি
হীরের মতো
জ্বল জ্বল করবে আজকের অমাবস্যায়?
ক্রোশ ক্রোশ পথ পাড়ি দিয়ে,
সত্তায় নিয়ে অনেক গ্রীষ্ম আর শীতের নখচিহ্ন
এসেছি তোমার ঘরে এবং
আমার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সারা ঘরে
ধুলো আর লতাগুল্মের গন্ধ,
নদীর তোলপাড়,
অজস্র পাখির ডানার ঝাপ্ট
আর অপরাহ্নের নিস্তেজ আলোর ঝিকিমিকি।
ভালো করে তাকাও আমার দিকে।
তোমার চোখ আমার অস্তিত্বে চুমো খেলে
আমার যৌবনের দিনগুলি
গুণীর তানের মতো বেজে উঠবে নিমেষে
আমার বুকের ভেতর,
দুলে উঠবে এক হাজার এক রাত্রির
অতুলনীয় ঝাড়লন্ঠন।
এখন আমি বসবো নাকি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবো-
মনস্থির করতে পারছিনা।
মুহূর্তগুলি আমার হৃৎপন্ডকে খুঁচিয়ে
রক্তাক্ত করছে, যেমন
একজন কাঁকড়ার মুখিয়ে-থাকা দাঁড়া ক্রমাগত
খোঁচায় আমার কবিতাকে।
এবং আমার মাথায় এখন শৈশবের
হংসযুগলের মৃত্যু, একজন উন্মাদের বাদামি দাড়ি,
অবনীন্দ্রনাথের কাটুম কুটুম,
হরিণের চিত্রল যৌবন, বাৎসায়নের কামসূত্র,
বুদ্ধের উপবাসী মুর্তি, আমার
মরহুম পিতার ফটোগ্রাফ, রসেটির সনেট,
মদেলিয়ানীর শায়িত মহিলা,
রাশিয়ার নাছোড় তুষারে আটকে-পড়া
নাৎসী বাহিনী আর অ্যানি ফ্রাঙ্কের ডায়েরি
কেবল তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
আমরা দুউ’জন দু’টি শরীরের ভিন্নতা
অতিক্রম করতে চাইছি
চুম্বনে, আলিঙ্গনে, উথালপাতাল সঙ্গমে।
অথচ কিছুতেই আমি
তোমার প্রকৃত নাগাল পাচ্ছি না।
তাহলে কি ব্যর্থ আমার এই আসা?
আমার প্রশ্নকে স্তব্ধতায় মুড়ে রেখে তুমি
হাই তুললে, সুইচ অন করে দিলে ক্যাসেট প্লেয়ারের।
ভরাট গলার গায়কের কণ্ঠস্বরকে
ধারণ করল তোমার ঘর, সিগারেটের ধোঁয়া
পেঁচিয়ে উঠলো স্মৃতির মতো, জটিল চিন্তার মতো।
দু’পা এগিয়ে গেলাম ঘরের বাইরে,
বিদায়ের প্রতি উদাসীন তুমি আরো বেশী
স্তব্ধতার সরোবরে ডুবসাঁতার কাটলে-
অথচ তুমিই আমাকে ডেকেছিলে।