পাঁজরের হাড় বের হওয়া
দেয়ালটা ঝুঁকে পড়েছিল সামনের দিকে
বুড়ো মানুষের মতো
কিন্তু বড় তাজ্জবের ব্যাপার, এতদিনেও
মুখ থুবরে পড়ে যায়নি
নোনাধরা, শ্যাওলার জামা-পরা সেই দেয়াল।
তবে সত্যি বলতে কী,
এই এখন-পড়ি তখন-পড়ি দেয়ালটার দিকে
চোখ পড়লেই
আমার ভারি ভয় হতো।
কতদিন ভেবেছি কালবৈশাখী এক লহমায়
ওর ঘাড় মটকে দেবে, অথবা
লাগাতার বৃষ্টির ঝাপটায় হবে সে কুপোকাৎ।
কিন্তু ঝড়বাদল কখনো কখনো
খুব শক্ত সমর্থ
কোনো কোনো দেয়ালকে উপড়ে ফেললেও,
সেই কুঁজো দেয়ালটা
দিব্যি মাথা উঁচু ক’রে এতকাল দাঁড়িয়ে ছিল
গোয়ার গোবিন্দের ধরনে।
দেয়ালটার টিকে থাকার এই একরোখা
লড়াইয়ে এক ধরনের সৌন্দর্য
আমি প্রত্যক্ষ করেছি। ওকে আমার মনে হতো
সেই যোদ্ধার মতো, যে প্রতিপক্ষের
দৃষ্টি-অন্ধ-করা গোলাবর্ষণের ভেতরেও
দাঁড়িয়ে থাকে অটল।
কিন্তু শেষ অব্দি জব্দ হতে হলো, ওকে, হঠাৎ
এক সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টির বর্শায়
ভীষণ জখম হয়ে সে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল
সদর রাস্তায়।
দেয়ালের এই হালত দেখে
আমার মনের ভেতরে নেমে এল একটা নিঝুম ছায়া,
যেমন আসে আপনজনের বিয়োগে আর দেখলাম
রাত্রিবেলা দেওয়ালের পুঞ্জ পুঞ্জ শোকের মতো
ধ্বংসস্তূপের ওপর খিলখিলিয়ে
হাসছে ছমছমে জ্যোৎস্না।