পাতালে বিশেষ স্বাদ আছে ভেবে আমরা সদলবলে খুব
সবুজ হিল্লোল তুলে চতুর দিয়েছি ডুব। উদ্ভিদ-জড়ানো
শরীর নিজের নয়, মণি অক্ষি-গোলকের আশে পাশে নেই-
এমন অনেক উচাটন অনুভব
হয়তো পাতালে পেয়ে বসে।
বরাবর ছিল সাধ পাতালে নামার। ডুবুরির কাছে কোনো
শিখিনি কৌশল কিংবা ব্যাঙের পায়ের অনুকরণে পাদুকা
ছিল না প্রস্তুত তবু মিহি নীল ভেদ করে পৌঁছেছি পাতালে।
কে জানতো এত কালি, ঝুলের ঝালর
ছিল? ছিলো অতিকায় এমন জলজ মাকড়সা? তাল তাল
জমাট মসৃণ
ব্লিচিং গুঁড়োর মতো হাড়গোড়, অবিরাম জল-ধোয়া বেনামি করোটি
গাছপালা হয়ে সাজিয়েছে
কেমন রোরুদ্যমান অনাদি উদ্যান।
গান নেই কোনো দিকে, অথচ গানের মতো কিছু যায় শোনা
অলৌকিক ফিসফিসানির ঐক্যতান। পাখিগুলি
অনেক আগেই গেছে হু-হু ডাল ছেড়ে।
কতো মাছ ভাসমান চুলের সুনন্দ জালে আসে,
করে খুনসুটি আর মনে হয়, দূর-দূরান্তরে
প্রবাল রঙের কিছু বিকল্প হরিণ চরে, হিসি করে স্বপ্নের খামারে।
কখনো বা তলোয়ার মাছ কিংবা হাঙরের উথা-পাথাল
আলোড়ন পারিনি সামাল দিতে, খেয়েছি দাঁতকপাটি শুধু।
সুহৃদ অনেক ছিল, আপাতত নেই কেউ নিকটে কি দূরে।
পাতাল নির্জন বড়ো, সুনসান বিদেশ-বিভুঁই,
দরজা জানালা নেই, পাতাল অতল ব্যক্তিগত।
এমন নিঃসঙ্গতায় কাঁকড়ার আনন্দ অপার-
সমুদ্রের ধু-ধু ফ্লোরে ঘোরে ইতস্তত, কিঞ্চিৎ বাতিকগ্রস্ত
বায়ুসেবী ভদ্রলোক যেন। ভুলেও ঈর্ষায় ওকে
কখনো করি না বিদ্ধ, তাই মৎস্যশোভন সাঁতারে
ভেসে উঠে ফুসফুসে হাওয়া নিতে চাই।
পাতালে আমাকে রোখে কিছু স্বর করুণ বিলাপে
অনুনয়ে, কখনো বা ঝাঁঝালো ধিক্কারে।
বলে, সব অসুখ সারিয়ে দেবে জলের আদরে।
ভালো অতলতা, ভালো সুনীল ভ্রমণ মাঝে-মাঝে,
ভালো সেই কম্পমান জলের অপেরা,
অসম্ভব সেখানে বানিয়ে তোলা আশ্রয়-গম্বজ।
অবুঝ সঙ্গীরা যদি শূয়োরের মায়াবী খোঁয়াড়ে
পচে তবে পাতকিনী মোহিনীর সুরের কুহক
কী করে পাড়াবে ঘুম? কী করে লুকোবো মুখ বিভ্রম-ঝরানো,
বিবেক-ডোবানো সেই স্পর্ধিত সবুজ স্তনমূলে?
সুশ্রী জলপুরী থাক জলের ভিতরে,
দুহাতে প্রবল ঠেলে ঢেউ-ফণা ফিরবো ডাঙায়।
এখনো ডাঙায় নির্ভরতা? ফুসফুসে চাই হাওয়া?
এখানে থাকবো এই সুঠাম ডাঙায়, আমি পাতালে যাবো না।
পাতাল নির্জন বড়ো, সুনসান বিদেশ-বিভুঁই।
এখানে বসত করে স্বতোজ্জ্বল ভালোবাসা। হৃদয়ের নিভৃত সোনালি
ঝাঁপি খুলে দিলে ভালোবাসা মুখ তোলে কী এক বাঁশির সুরে লীলায়িত
অথচ নেপথ্যে শুনি, “ভালোবাসা তোকে দুধকলা দিয়ে পুষে
দেখেছিতো তুই ছোবলের কথা পারিসনে ভুলতে কখনো।