জলের এমনই রীতি, কখনও সে শান্ত অতিশয়
নদীতে, পুকুরে, হ্রদে, কৃশ ফ্লাস্কে অথবা বোতলে।
কখনও সে ঝরনা হয়ে ঝরে, নুড়ি ধোয় ঝিরিঝিরি,
নামি সিঁড়ি বেয়ে, পড়ে বৃষ্টির লীলায় খোলা ছাদে
লাল বারান্দায়, তরুণীর গালে, পিঠাছাওয়া চুলে ।
ট্যাপ থেকে বয় জলধারা, আমরা আঁজলা ভরে
নিই তুলে, অতিবর্ষণের পর চকিতে ভাসলে গলি, কেউ
শিস দিয়ে ঘরে ফেরে, পাতিহাঁস জলকণাগুলি
পালকে গ্রহণ করে আনন্দিত অতিথির মতো,
কখনও-বা কাগজের নৌকা পথে ভাসায় বালক,
নানা নক্শা আঁকে ফের চঞ্চল আঙুলে নিরিবিলি।
জলের এমনই রীতি, অথচ হঠাৎ কী-যে হয়!
যেন লক্ষ লক্ষ রাগী মোষ চতুর্ধারে আসে তেড়ে,
আসে আদিগন্ত ব্যেপে, তখন সে প্রবল প্লাবন।
বুঝি-বা ফেলবে মুছে স্বেচ্ছাচারী জগৎ সংসার,
নিমেষে খেলার বেলা হয়ে যায় দারুণ করাল বেলা।
শোকার্ত দাঁড়িয়ে থাকি জলমগ্ন ঘরের উদাম
নম্র চালে, বৃষ্টি বিদ্ধ, রৌদ্র দগ্ধ, নিরুপায় বন্দি
শীর্ণ কৃষকের সঙ্গে সর্বক্ষণ উদ্ধাররহিত।
দিনান্ত বেলায় ভাসি আমি নিঃসঙ্গ জেলের সাথে বিরূপ পাথারে,
ভাসি নৌকার গলুই ধরে, হাত
ক্রমশ অবশ হয়ে আসে; ভাসি তবু শুধু ভাসি,
ধূসর বৃদ্ধের সাথে এক পাতে ছিঁড়ি শুকনো রুটি,
অনাথ শিশুর সাথে কাঁদি শূন্য থালা হাতে ঘুরি
আশ্রয় শিবিরে, হায়, উন্মাদের স্মৃতির মতন
এবং ভেলায় থাকি পড়ে লখিন্দর, একা, বেহুলাবিহীন।
আমার নিষ্প্রভ চোখ ঠুকরে খায় ক্ষুধাতুর কাক
আমার শীতল দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায় মেঘনার
চরে চরে পানিডোবা ধানক্ষেতে হাওড়ে হাওড়ে
শহরে রিলিফ ক্যাম্পে, ভীষণ জলজ খাঁ খাঁ গ্রামে।
জেগে থাকে বাংলাদেশে কান্নাময় চোখের মতন।