কোজাগরী পূর্ণিমা আজ। রাতের
কাঁধের ওপর দিয়ে একটি বাদামি পাখির ধরনে
উড়ে যাচ্ছি। শ্যামলীর পথের ধারে
একজন বুড়ো সুড়ো লোক ল্যাম্পপোস্ট ঘেঁষে বসে
কী যেন খাচ্ছে মলিন ঠোঙার ভেতর
নোংরা আঙুল ঢুকিয়ে। তার পাশে ঘুর ঘুর
করছে রেওয়ারিশ, বিমর্ষ কুকুর। একটি ধবধবে
মোটরকার যাত্রীহীন দ্রুত চলে যাচ্ছে কোথায়।
এই মুহূর্তে আমি তোমার জ্যোৎস্নাধোয়া ভবনের
খুব কাছে। কী করে কোন্ ইন্দ্রজালের
সৌজন্যে আমি রাতজাগা প্রহরী আর
যমদূতমার্কা কুকুরের সতর্ক নজর এড়িয়ে
সিংদরজা পেরিয়ে সোজাসুজি দোতলায়
তোমার বন্ধ বেডরুমে
প্রবেশ করলাম, বলতে পারব না। রাতদুপুরে
তুমি ভাসমান টল টলে ঘুমের সরোবরে।
তোমার শয্যার পাশে এসে দাঁড়ালাম নিশ্চুপ। বালিশে
ছড়ানো তোমার চুলের ঝর্না। বধির রাত্রি তোমার গ্রীবা, বাহু,
ঠোঁট, স্তন, নাভিমূল আর আশ্চর্য বদ্বীপ
কামুকের মতো ক্রমাগত লেহন করছে। আমি
ঈষৎ ঝুঁকলাম তোমার ওপর। তোমার
কবোষ্ণ, সুগন্ধি নিশ্বাস নিরিবিলি ছুঁয়ে যার আমাকে।
তোমার চারদিকে স্বপ্নেরা প্রজাপতির মতো
উড়ে বেড়াচ্ছে। আমার বাসনার পাপড়িগুলো
ঝরছে তোমার ওপর, তুমি পাশ ফিরে
ডুবে গেলে গভীরতর নিদ্রায়। তোমার
মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে হাসির ঈষৎ আভা। স্বপ্নের
ভেতর আমার কোনো বোকা-বোকা কথা হঠাৎ
মনে পড়েছিল কি তোমার? বেডরুমের
দেয়াল, ড্রেসিং টেবিল, টেলিফোন সেট, টিভি,
ত্র্যালার্ম-দেওয়া ঘড়ি-সবকিছুই মুছে গেল
নিমেষে; শুধু তুমি শুয়ে আছো
মনোরম এক ঝর্নার ধারে। বনদেবীর
সুন্দরী সহচরীরা চামর দুলিয়ে বাতাস করছে তোমাকে।
সেই মুহূর্তে চুমোয় চুমোয় বিহ্বল করে দিতে পারতাম
তোমাকে, জাগিয়ে দিতে পারতাম
প্রবল আকর্ষণে। এসব কিছুই করিনি। আমি
চেয়ে থাকি নিদ্রাতুর তোমার দিকে, বুঝি
চেয়ে থাকব অনন্তকাল। মৌমাছিদের সোনালি
গুঞ্জরণ আমাদের ঘিরে বয়ন করবে স্মৃতির অলৌকিক পাড়।
অকস্মাৎ লুপ্ত ইন্দ্রজাল, আমি মুখ থুবড়ে পড়ি
আবার ঘরের মেঝেতে, গলা ছিঁড়ে বেরোয়
ঝলক ঝলক রক্ত এবং
চোখে লেগে থাকে কতিপয় অবিনশ্বর চিত্রকলা, যা
কখনো অনুবাদ করতে পারব না
কোনো কবিতায়। এই মহিমা-রহিত প্রহরে
কেবলি মৃদু উচ্চারণে
কথা বলব তোমার ঘুমন্ত সত্তার কানে কানে।
২০.১০.৯৪