নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

তোমাকে লেখা আমার প্রথম চিঠি

প্রিয়তমা প্রতিমা আমার,
আমাদের পরিচয়ের যাপিত অনেক
রৌদ্রছায়ার দিকে তাকিয়ে মনে হলো, তোমাকে
আজো কোনো চিঠি লিখিনি।
প্রয়োজন কি অনুভব করিনি কখনো লেখার টেবিলে
প্যাড মেলে রেখে অথবা
বিছানায় শুয়ে তারার স্রোতে চোখ পেতে?
পথ চলতে গিয়ে মনে কি হয়নি
এক্ষুণি বাড়ি ফিরে তোমার উদ্দেশে
হৃদয়ের আভা ছড়িয়ে অক্ষরের শরীরে সাজাই
অনেক কথার শোভাযাত্রা?

টেলিফোন আমার চিঠির পথ আগলে
দাঁড়িয়েছে বার বার। তুমি টেলিফোনে কত না
বসন্ত দিনের সৌরভ, শারদ আকাশের
স্বচ্ছ নীলিমা, শ্রাবণের বৃষ্টিমুখর দুপুর আর
জ্যোৎস্নারাতের স্বর্ণচাঁপাময় স্তব্ধতা
রচনা করেছ আমার কানে। আমি মুগ্ধতার মেঘে
ভেসে বেড়িয়েছি প্রহরে প্রহরে। তোমার কণ্ঠস্বর
চুম্বন করেছে আমাকে, বানিয়েছে আমার জন্যে শূন্যের মাঝার
এক প্রশান্ত বিশ্রামের ঘর। তোমার পরিশীলিত উচ্চারণ
আমাকে পৌঁছে দিয়েছে ভালোবাসার তীর্থে।

তোমার স্বপ্নিল টেলিফোন বলেছে এসো,
আমার দীঘল চুলের প্রশান্ত থেকে শান্তির ছায়া চেয়ে নাও;
এসো, আমার ঠোঁট থেকে স্বর্গীয় সুধা নাও ওষ্ঠ পেতে,
এসো, আমার দু’চোখ থেকে সন্ধ্যার পাখির নীড়ে ফেরার
তারা ঝলসিত আনন্দ চেয়ে নাও। তোমার টেলিফোন
আমার হৃদয়ের দিগন্ত জুড়ে সৃষ্টি করেছে হরিৎ শোভা।

হে সুন্দরীতমা, বাক্‌শিল্পী তুমি, কণ্ঠস্বরের
মাধুর্য মিশিয়ে নিত্য পাঠাও কথার সওগাত। ইথারে
ইথারে তরঙ্গিত আমাদের হৃদয়ের ধ্বনি। তোমাকে
আবারো আলিঙ্গন করি, আবারো তোমার
চোখে, বুকে মুখে স্তনে চুম্বনের তারা ফোটাই স্মৃতিতে।
তোমার চুল নিয়ে আঙুলে জড়ানো, তোমার পায়ের
আঙুলের সলজ্জ মৃদু হাসি, লজ্জার কোমল ছায়ায় মদির দুপুরে
তোমার নীরব শুয়ে থাকা আমাকে
স্মরণ করিয়ে দেয় টেলিফোনের অলৌকিক কণ্ঠস্বর।
ভুলে যাই তোমাকে চিঠি লেখার কথা।

তোমার কাছেও অবান্তর হয়ে যায় পত্ররচনা;
কিন্তু আমি চাই, আমাদের দু’জনের অন্তর্গত কথারা
অক্ষরের স্পর্শ পাক, যেমন আমার সত্তার প্রতিটি মুকুল
ফুল হয়ে উঠতে চায় তোমাকে স্পর্শ করার ব্যাকুলতায়।
এজন্যেই তোমাকে লেখা আমার এই প্রথম চিঠি উদাসীন
হাটে বিলিয়ে দিলাম তোমার বিনা অনুমতিতে।
আমার এই কাণ্ডজ্ঞানহীনতাকে,
মিনতি আমার, তিরস্কারের ওপারে রেখো, প্রিয়তমা প্রতিমা আমার।
আমার একটি কথা রাখবে তুমি? ভাদ্রের বিকেলের
ডাকেই তোমার হস্তাক্ষরের অপরূপ গান শুনতে চাই।
ভালোবাসা। একান্ত তোমারই
কবি।
২২.৮.৯৪