যখন তোমার কথা ভাবি

যখন তোমার কথা ভাবি,
হৃদয়ে মাধবীকুঞ্জলতা
লাস্যময়ী হয় অচিরাৎ।
যখন তোমার কথা ভাবি,
একটি নদীর
জলজ আদর পেয়ে যাই।

ডালে ডালে নিষ্কলুষ প্রগল্‌ভ পলাশ,
হাওয়া নম্র, লেডি হ্যামিল্টন। শৈশবের,
কৈশোরের সীমাছেঁড়া থোকা থোকা আমের বউল
মঞ্জরিত আদিগন্ত বাগানবাড়িতে। পুলিশের
শাদা হাত ভাস্কর্যর মধুর; পথচারী,
ভিখিরি, কেরানি, ছাত্র অথবা মজুর
সবাই স্বজন।
শহুরে বাগানে বসন্তের ফুল্ল টেলিগ্রাম। পাখি
বারান্দার বার-এ তীব্র রৌদ্র করে পান। ত্রিজগৎ
লাল বল, আমি ব্যগ্র বালক সতৃষ্ণ চোখে মেলে
রাখি হস্তমুদ্রা।
আমার শরীর মেঘ, টলটলে জল
অথবা বাতাস।
যখন তোমার কথা ভাবি,
ব্যাপ্ত আমি শহরের আনাচে-কানাচে।
আমার পায়ের নিচে, দু’তিন মাইল নিচে ব্যাংক,
বীমা কোম্পানির
মৃত্যুগন্ধময়
নিরক্ত দপ্তর
সিনেমা দোকানপাট, ডিআইটির চুড়ো
রঙিন সাইনবোর্ড ছাওয়া পথঘাট,
উদ্বাস্তুর ডেরা,
দ্রুত ধাবমান যান, এভিনিউ, এরোড্রাম, পোর্ট
আর রাজহাঁসের মতন ইস্টিমার।

পড়শী নদীর তুলে-ধরা আর্শিতে ভাসলে মুখ,
ফুলের গোপন অন্তঃস্থলে দুটি চোখ
দেখতে পাওয়া কিংবা
সূর্যোদয়ে নির্জন টিলায় বক্ষচূড়া, তোমাকেই ভাবা।

যখন তোমার কথা ভাবি,
রাখাল বাজায় বাঁশি সনাতন বটের ছায়ায়
সুরে ঝলসিত
বেহেস্তি প্রহর। কারখানার
ধোঁয়াচ্ছন্ন ভেঁপু
ফোটায় ছুটির ফুল কালিঝুলিময়
কর্মিষ্ঠ সংসারে।

চাইনে রাজার বাড়ি, ঝুলন্ত উদ্যান। দিগ্বিজয়ে,
অশ্বমেধে লাভ নেই, আমি
মাথা উঁচু করে ঘণ্টার সোনালি ধ্বনি
শুনতে শুনতে
পাখিদের সঙ্গে কথাচ্ছলে
প্রায় দেহহীন
শহরের প্রস্ফুটিত হৃদয়ে সটান চলে যাবো।
যখন তোমার কথা ভাবি,
জনাকীর্ণ বাস দিব্যি ফাঁকা মনে হয়,
রেশনের দোকানের সুদীর্ঘ লাইন
নিমেষে ফুরিয়ে যায়, ডাকঘর থেকে
সহজেই রঙিন টিকিট নিয়ে ফিরে আসে ঘরে।
যখন তোমার কথা ভাবি,
অলৌকিক একটি ঘরের
চাবি এসে যায় হাতে, উড়ন্ত সোনালি।
যখন তোমার কথা ভাবি,
পাথর, শেকড়, ডালপালা, খড়কুটো, পুরনো কবর,
হাড়গোড়, পোড়া কাঠ ইত্যাদি কবিতা হয়ে যায়-
পুষ্পিত ল্যাবরেটরি, চৈতন্যমথিত ত্র্যালকেমি।