একটি প্রস্থান, তার অনুষঙ্গ

বিশ্বের নানান দৃশ্যে চোখ রেখে, খণ্ড খণ্ড ঘটনাকে নাগর দোলার
লাল নীল ঘোড়া ভেবে কিছুদিন আমার নিজস্ব জগতের
আনাচে কানাচে তুমি উড়িয়ে আঁচল
অকস্মাৎ একদিন হলে অন্তর্হিতা আর আমি
রইলাম পড়ে শূন্য নিশীথের বিজন পার্কের মতো নিঃস্ব।
আমার বিদ্বেষ, ঘৃণা, অভিমান, গনগনে ক্রোধে, এমনকি ভালোবাসা
কিছুই পারে নি ধরে রাখতে তোমাকে।

আমার গণ্ডিতে কোনো লতাপাতা ছিল না কোথাও-বুঝি তাই
গুল্মের ক্রন্দন পথ করেনিকো রোধ।
ছিল না হরিণ তাই আঁচল করে নি আকর্ষণ কেউ, শুধু
দরজা জানালাগুলি হাহাকার হলো আর আসবাবপত্রের বার্ণিশ
কেমন নিষ্প্রভ মনে হয়েছিল তোমার প্রস্থানে।

যেন আমি চোরাবালি, সেখানে পা দিলে
ভীষণ তলিয়ে যাবে ভেবে তুমি
স্থির ভূভাগের দিকে প্রাণপণে পালালে সুদূরে।
যেন আমি মহামারী-বিধ্বস্ত শহর-
হাওয়াকে নিশ্বাসযোগ্য করবার ছলে
পালালে অনেক দূরে, একবারও প্রেতায়িত শহরের দিকে
তাকালে না ফিরে, আমি রইলাম পড়ে। চৌরাস্তায়
অসংখ্য শিশুর মতো কোলাহল করে
আলোমালা উঠলো না দুলে, আমার সত্তাকে ঘিরে
বাজলো না জ্যোৎস্নারাতে সুনীল গিটার।
যেন আমি বদ্ধ কালা, কোনোদিন শুনি নি বেহালা
কিংবা অর্গানের সুর। দেখলাম ডালির ঘড়ির বিগলিত
প্রবাহ গড়িয়ে যায় আমার সতৃষ্ণ অস্তিত্বের নগ্নতায়।
শৌখিন চায়ের সেট নও তুমি, কৌচ নও, নও ফুলদানি,
ছবি নও ফ্রেমে আঁটা, আলমারি-কবলিত কাঠের নর্তকী নও কোনো-
প্রত্যহ বাসায় ফিরে দেখবো রয়েছে সবকিছু যথাস্থানে!

এখনো তোমাকে চাই যেমন ব্যাকুল স্বরে দুর্ভিক্ষের দেশে
আর্ত জনসাধারণ চায় শুধু শস্যের সম্ভার।
কী যেন পাখির মতো গেল উড়ে মাথার ওপর-
আমি ওকে ছেলেবেলা ভেবে অন্তরঙ্গ স্বরে কাছে
ডাকলাম হাত নেড়ে; অজস্র টিয়ের কলরবে
হারালো আমার কণ্ঠস্বর।
সেও তো দিলো না ধরা আমার একান্ত প্রিয় স্মরণ বিলাসে।
আমি বুড়ো ক্লাউনের মতো পরিত্যক্ত, এবং তুষারে ঢাকা।
নিষ্পত্র গাছের মতো গীতার্ত, নিঃসঙ্গ-শুয়ে আছি
শূন্যতায় কোনোমতে ঠেকিয়ে চিবুক অতীতের স্তূপে আর
কেবলি পড়ছে মনে, কিছুতেই তোমাকে আমার করে রাখতে পারি নি।