নিম্নোক্ত কাব্যগ্রন্থগুলি সাজানো হয়নি

শাস্তি দাবি করে

কখনো এমন সময় আসে,
কিছুই
ভাবা যায় না। সাতটি ময়ূর
পেখম মেলে
নাচে, তিনটি ঘোড়া ছুটতে
থাকে
সবুজ ঘাসের শিশির ঝরিয়ে,
পাঁচটি দোয়েল শিস বাজিয়ে
নিসর্গকে
সঙ্গীতময় ক’রে তোলে,
অথচ আমি
বন্ধ্যা সময়ের মুখোমুখি
ব’সে থাকি ভাবনাহীন।
একখণ্ড পাথরের মতো
আমার অবস্থান। কে আমাকে
নীরেট পাথরের স্তব্ধতায় ঢেকে
রাখে?

হঠাৎ কখন যে পাথর ফুঁড়ে
জাগে ফোয়ারা
আমি আমার চতুর্দিকে দেখি
জ্যোতির্ময় এক বলয়,
যেখানে
মুনীর চৌধুরীর হস্তধৃত তীক্ষ্ণ
কলম,
শহীদুল্লাহ কায়সারের স্মিত
ঠোঁট,
আলীম চৌধুরীর একজোড়া
চোখ,
ফজলে রাব্বির হৃৎপিণ্ড,
গোবিন্দ দেবের নির্মোহ উদার
বাহু,
জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার
বুদ্ধিদীপ্ত ললাট
আনোয়ার পাশার নাক
আলতাফ মাহমুদের সুরাশ্রয়ী
কণ্ঠ
এক বৃত্তে ঘুরতে ঘুরতে
বিজয়োৎসব হ’য়ে যায়।

আমরা এই উৎসবে আনন্দিত
হ’তে হ’তে
বেদনার্ত হ’য়ে যাই আর
কিছু লোক
উৎকট ভঙ্গিতে হাসতে থাকে
শ্লেষের তুবড়ি ছুটিয়ে
ওদের মুখ থেকে গলগলিয়ে
বেরিয়ে আসে
বহু বছরের রক্ত। আকাশের
নক্ষত্র, ঝোপের
জোনাকি, নদীর ঢেউ,
ক্ষেতের ফসল
পায়ে-চলা পথ, কৃষকের
কুটির, জেলের ডিঙি
গণকবরের ঘাস একযোগে
ওদের বিচার দাবি করে
বিচার দাবি করে,
শাস্তি দাবি করে;
চরম শাস্তি দাবি করে।

যারা উদাসীন, নীরব তাদের
উদ্দেশে
নিসর্গ এবং জনবসতির
ধিক্কার ছাড়া কিছু নেই,
কিছু নেই,
কিছু নেই।
১৫.১২.৯৩