৫৯. অশ্বত্থামার সহিত অর্জ্জুনের যুদ্ধ

৫৯তম অধ্যায়

অশ্বত্থামার সহিত অর্জ্জুনের যুদ্ধ

বৈশম্পয়ন কহিলেন, মহারাজ! অনন্তর অশ্বত্থামা বাণবৃষ্টি করিতে করিতে মহাবীর অর্জ্জুনের নিকট সমুপস্থিত হইলেন। অর্জ্জুন প্ৰচণ্ড বাত্যার [প্রবল বায়ু—ঝড়] ন্যায় অশ্বত্থামাকে সমীপবর্তী দেখিয়া অনবরত শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন। পরে তাঁহাদিগের ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। বোধ হইল যেন, পুনরায় দেবাসুর-সংগ্রাম সমুপস্থিত। নভোমণ্ডল শরজালে আচ্ছন্ন হইয়া উঠিল; দিনকর আর দৃষ্টিগোচর হয় না। বায়ুসঞ্চার একেবারে রুদ্ধ হইয়া গেল; দহ্যমান বংশের ন্যায় অনবরত চটচটা-শব্দ সমুত্থিত হইতে লাগিল। ইত্যবসরে অর্জ্জুন অশ্বত্থামার অশ্বগণকে সাতিশয় প্রহার করিলে অশ্বসকল প্রহারবলে একান্ত বিমোহিত হইয়া কোন দিকে গমন করিবে কিছুই নির্ণয় করিতে পারিল না।

অনন্তর মহাবল-পরাক্রান্ত অশ্বত্থামা সুযোগক্রমে ক্ষুরধার ক্ষুরপ্র দ্বারা গাণ্ডীবের মৌর্ব্বী [ধনুকের ছিলা] ছেদন করিলেন। দেবগণ এই অদ্ভুত কাৰ্য্য সন্দর্শন করিয়া তাঁহার ভূয়সী প্রশংসা করিতে লাগিলেন। এদিকে দ্রোণ, ভীষ্ম, কর্ণ ও কৃপাচাৰ্য্য, ইঁহারাও বারংবার অশ্বত্থামার সাধুবাদ করিতে লাগিলেন। পরে অশ্বত্থামা রুচির [প্ৰদীপ্ত] শরাসন আকর্ষণ করিয়া পার্থের হৃদয়ে শরাঘাত করিলে পর, তিনি উচ্চৈঃস্বরে হাস্য করিয়া বলবীৰ্য্য সহকারে গাণ্ডীবে অভিনব জ্যা-রোপণ করিলেন এবং যাদৃশ যূথপতি হস্তী অপর মত্ত-মাতঙ্গের সহিত যুদ্ধ করিয়া থাকে, তদ্রূপ তিনি গাণ্ডীব শরাসন আকর্ষণপূর্ব্বক অশ্বত্থামার সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলেন; উভয়ের ঘোরতর যুদ্ধ হইতে লাগিল। কৌরবগণ বিস্ময় বিস্ফারিতলোচনে সেই লোমহর্ষণ সংগ্রাম সন্দর্শন করিতে লাগিলেন। তাঁহারা পরস্পর প্রজ্বলিত পন্নগের ন্যায় শরপ্রয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন। অশ্বত্থামা অর্জ্জুনকে লক্ষ্য করিয়া অনবরত শরক্ষেপ করাতে অতি শীঘ্রই তাঁহার শরীক্ষয় হইল; কিন্তু মহাবীর অর্জ্জুনের তূণীরদ্বয় অক্ষয়, সুতরাং কোনক্রমেই তাঁহার শরক্ষয় হইল না। এই নিমিত্ত তিনি অশ্বত্থামা অপেক্ষা সমধিক উৎকর্ষ লাভ করিলেন এবং রণস্থলে আচলের ন্যায় নির্ভীকচিত্তে অবস্থান করিতে লাগিলেন।

অনন্তর সূৰ্য্যকুমার কর্ণ উৎকৃষ্ট কামুক আকর্ষণ-পূর্ব্বক অর্জ্জুনের প্রতি শরবৃষ্টি করিতে লাগিলেন। রণস্থলে সহসা হাহাকারিশব্দ উত্থিত হইল। অর্জ্জুন তখন ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করিবামাত্র কর্ণকে সমরাঙ্গণে অবতীর্ণ দেখিয়া ক্ৰোধে একান্ত অধীর হইয়া উঠিলেন এবং জিঘাংসাপরবশ হইয়া আকেকর [ভ্রুকুটিকুটিল]-নেত্ৰে তাঁহাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। ইত্যবসরে কৌরবাধিকৃত পুরুষেরা সত্বর অশ্বত্থামার বহুসংখ্যক শরআহরণ করিল। অর্জ্জুন রোষকষায়িতলোচনে কর্ণের প্রতি ধাবমান হইয়া দ্বৈরথ-যুদ্ধের অভিলাষে তাহাকে কহিলেন।