৫২. ভীষ্মকর্ত্তৃক অজ্ঞাতবাসসময়গণনা

৫২তম অধ্যায়

ভীষ্মকর্ত্তৃক অজ্ঞাতবাসসময়গণনা

ভীষ্ম কহিলেন, “মহারাজ! কলা, কাষ্ঠ, মুহুর্ত্ত, দিন, পক্ষ, মাস, গ্রহ, নক্ষত্র, ঋতু ও সংবৎসর লইয়া একটি কালচক্র হয়। উহাদিগের কালাতিরেক ও জ্যোতিষ্কমণ্ডলের ব্যতিক্রমবশতঃ প্রতি পঞ্চম বর্ষে দুই মাস করিয়া বৃদ্ধি হয়। এইরূপে তাহাদিগের ত্ৰয়োদশ বৎসর সম্পূর্ণ হইয়া পঞ্চম মাস ও ছয় দিবস অধিক হইয়াছে। তাহারা যাহা যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল, তৎসমুদয় অবিকল অনুষ্ঠিত হইয়াছে জানিয়া অর্জ্জুন সমাগত হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। মহাত্মা পাণ্ডবেরা পরমধার্ম্মিক, বিশেষতঃ যুধিষ্ঠির তাঁহাদিগের রাজা; অতএব তাঁহারা কি নিমিত্ত ধর্ম্মের নিকট অপরাধী হইবে? পাণ্ডবেরা কৃতী ও লোভবিহীন। তাঁহারা অধৰ্মাচরণ দ্বারা রাজ্যলাভের অভিলাষ করে না। তাঁহারা ধর্ম্মপাশে বদ্ধ আছে বলিয়া ক্ষত্ৰিয়ব্ৰত হইতে বিচলিত হয় নাই; নতুবা সেই সময়েই আপনাদিগের অসাধারণ বলবীৰ্য্য প্রকাশ করিত। তাঁহারা অনায়াসে মৃত্যুমুখে গমন করিতে পারে, তথাপি কদাচ অনৃত [অসত্য-মিথ্যা] পথে পদার্পণ করে না। পাণ্ডবগণের স্বভাবই এইরূপ যে, ইন্দ্র কর্ত্তৃক রক্ষিত হইলেও যথাযোগ্য সময়ে আপনাদিগের প্রাপ্য বিষয় পরিত্যাগ করে না।

এক্ষণে আমাদিগকে অদ্বিতীয় বীর অর্জ্জুনের সহিত যুদ্ধ করিতে হইবে; অতএব শীঘ্ৰ যুদ্ধোপযোগী সাধুগণাচরিত কল্যাণকর বিধির অনুষ্ঠান কর। হে রাজেন্দ্র! যুদ্ধে সিদ্ধিলাভের অবশ্যম্ভাবিত্ব কদাপি নয়নগোচর হয় নাই। জয় বা পরাজয় অবশ্যই হইয়া থাকে; তন্নিমিত্ত চিন্তিত হইবার বিষয় কি? ধনঞ্জয় আগতপ্ৰায়; এক্ষণে সত্বর যুদ্ধোচিত অথবা ধর্ম্মসম্মত কর্ম্মে প্রবৃত্ত হও।”

ভীষ্মের ব্যূহরচনা

দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “পিতামহ! আমি কদাচ পাণ্ডবদিগকে রাজ্য প্রদান করিব না; আপনি অবিলম্বে যুদ্ধের আয়োজন করুন।’

ভীষ্ম কহিলেন, “হে কুরুনন্দন! যাহাতে তোমাদিগের শ্ৰেয়োলাভ হয়, ঈদৃশ উপদেশ প্রদান করা আমার অবশ্য কর্ত্তব্য; যদি শ্রদ্ধা হয়, তাহা হইলে আমার অভিপ্ৰায় শ্রবণ কর। তুমি এই সকল সৈন্যকে চতুর্থাংশে বিভক্ত করিয়া তাহার একাংশ সমভিব্যাহারে নগরে প্রস্থান কর; অপর এক ভাগ গোধন লইয়া গমন করুক; পরে কৃপ, কর্ণ, দ্রোণ, অশ্বত্থামা ও আমি, আমরা সকলে অবশিষ্ট দুই অংশ সমভিব্যাহারে দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ ধনঞ্জয়ের সহিত যুদ্ধ করিব। যেমন বেলাভূমি উচ্ছলিত বারিনিধিকে নিবারণ করে, তদ্রূপ যদি বিরাটরাজ অথবা স্বয়ং ইন্দ্র আগমন করেন, তথাপি আজি আমি তাহাদিগকে নিরারণ করিব সন্দেহ নাই।”

মহাত্মা ভীষ্মের বাক্য কাহারও অনভিমত হইল না। কুরুরাজ দুৰ্য্যোধন তন্নির্দ্দিষ্ট সমুদয় কাৰ্য্য সম্পাদন করিলেন। ভীষ্ম প্রথমতঃ দুৰ্য্যোধন, তৎপরে গোধন-সকল প্রেরণপূর্ব্বক সৈন্যগণকে ব্যবস্থাপিত পূর্ব্বক ব্যূহরচনায় প্রবৃত্ত হইয়া কহিলেন, “আচাৰ্য্য! আপনি মধ্যস্থানে অবস্থিতি করুন; অশ্বত্থামা বামপার্শ্ব ও কৃপাচাৰ্য্য দক্ষিণ-পার্শ্ব রক্ষা করিবেন। সূতপুত্ৰ কৰ্ণ অগ্রসর হইবেন এবং আমি সকলের পশ্চাদ্ভাগে থাকিয়া সর্ব্বতোভাবে রক্ষা করিব।”