ঋগ্বেদ ১০।০৬৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৬৭
বৃহস্পতি দেবতা। অযাস্য ঋষি।
১। আমাদিগের পিতা এই সপ্ত শীর্ষকযুক্ত মহৎ স্তব রচনা করিয়াছেন। সত্য হইতে ইহার উৎপত্তি। তাবৎ লোকের হিতকারী, অযাস্য ঋষি ইন্দ্রের প্রশংসা করিতে কহিতে চতুর্থ একটা স্তব সৃষ্টি করিয়াছেন (১)।
২। অঙ্গিরার বংশধরেরা যজ্ঞের সুন্দর স্থানে যাইতে মনস্থ করিল। তাহারা সত্যবাদী, তাহাদিগের মনের ভাব সরল, তাহারা স্বর্গের পুত্র, মহাবলে বলী, তাহারা বুদ্ধিমান ব্যক্তির ন্যায় আচরণ করিয়া থাকে।
৩। বৃহস্পতির সহায়গণ হংসের ন্যায় কোলাহল করিতে লাগিল, তাহাদিগের সাহায্যে তিনি প্রস্তরময় দ্বার খুলিয়াদিলেন। অভ্যন্তরে রুদ্ধ গাভীগণ চীৎকার করিয়া উঠিল। তিনি উৎকৃষ্টরূপে স্তব ও উচ্চৈঃস্বরে গান করিয়া উঠিলেন।
৪। গাভীগণ নিম্নের দিকে একটা দ্বারের দ্বারা এবং উপরের দিকে দুইটা দ্বারের দ্বারা অধর্মের আলয় স্বরূপ সেই গুহা মধ্যে রুদ্ধ ছিল। বৃহস্পতি অন্ধকারের মধ্যে আলোক লইয়া যাইতে ইচ্ছা করিয়া তিনটী দ্বার খুলিয়া দিলেন এবং গাভীগণকে নিষ্কাশিত করিলেন।
৫। তিনি রাত্রে নিভৃতভাবে শয়নপূর্বক পুরীর পশ্চাৎভাগ বিদীর্ণ করিলেন এবং সমুদ্রতুল্য সেই গুহার তিনটা দ্বারই খুলিয়া দিলেন। প্রাতঃকালে তিনি পূজনীয় সূৰ্য্য, আর গাভী একসঙ্গে দর্শন পাইলেন, তখন তিনি মেঘের ন্যায় বীরহুঙ্কার ছাড়িতে ছিলেন।
৬। যে বল গাভী রুদ্ধ করিয়াছিল, তাহাকে ইন্দ্র আপনার হুঙ্কাররবেই ছেদন করিলেন। এইরূপে ছেদন করিলেন, যেন তাহার প্রতি অস্ত্রই প্রয়োগ করিয়াছেন। ঘৰ্মাক্ত কলেবর বন্ধুদিগের সহিত সোমপান ইচ্ছা করিয়া, তিনি পণিকে কাদাইলেন, তাহার গাভী কাড়িয়া লইলেন।
৭। তিনিই সত্যবাদী, দীপ্তিমান, ধনদানকারী সহায়দাগের সহিত গাভীরোধকারী বলকে বিদীর্ণ করিলেন। আর ব্ৰহ্মণস্পতি বিপুলমূর্তি, বদান্য, ঘর্মাক্ত কলেবর দেবাদিগের সহিত সেই গোধন অধিকার করিলেন।
৮। তারা এইক্ষণে গাভীর অধিকারী হইয়া সরল চিন্তে স্তুতিবাক্যদ্বারা গোপতি দেবতাকে ধন্যবাদ করিল। পরস্পর সাহায্যকারী নিজ সহায়দিগের সহিত বৃহস্পতি গাভীগণকে বাহির করিয়া আনিলেন।
৯। যখন সেই বৃহস্পতি যজ্ঞে আসিয়া সিংহনাদ করেন, তখন যেন আমরা, সেই জয়ী, দাতাবীরপুরুষ, বৃহস্পতিকে সকল যুদ্ধে সকল বীরজন সমাগমস্থলে উত্তম উত্তম প্রশংসাবচনের দ্বারা সংবর্ধনা করি এবং অভিনন্দন করি।
১০। যখন সেই বৃহস্পতি নানাবিধ অন্নদান করিলেন, যখন আকাশ পথ দিয়া তিনি পরমধামে গমন করিলেন, তখন বুদ্ধিমানগণ সেই বদান্য বৃহস্পতি নানা প্রকারে সংবর্ধনা করিতে লাগিলেন, তাহা করতে করতে তাহাদিগের মূৰ্ত্তি জ্যোতির্ময় হইল।
১১। অন্নলাভের জন্য আমার যে প্রার্থনা, তাহাকে সফল কর, আমি ভক্তই আছি, আমাকে নিজ আশ্রয় দান করিয়া রক্ষা কর। তাবৎ শক্ত পরাজিত ও দূর হউক। বিশ্বব্যাপিনী দ্যাবাপৃথিবী আমাদের এই বাক্য শ্রবণ করুন।
১২। ইন্দ্র অতিবৃহৎ একজলপূর্ণ মেঘের মস্তক বিদীর্ণ করিলেন। অহি, অর্থাৎ বৃত্রকে বধ করিলেন, সপ্ত সিন্ধু বহাইয়াদিলেন। হে দ্যাবাপৃথিবী! দেবতাদিগের সহিত আমাদিগকে রক্ষা কর।
————
(১) এই সূক্তের সায়ণের ব্যাখ্যা অত্যন্ত কষ্ট কল্পনা বোধ হয়।