ঋগ্বেদ ০৯।১০১

ঋগ্বেদ ০৯।১০১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ১০১
পবমান সোম দেবতা। অন্দিণ্ড, যযাতি, নহুষ, মনু ও প্রজাপতি ঋষিগণ।

১। হে বন্ধুগণ! পূর্বে যে সমস্ত অন্ন জয় করিয়া আনা হইয়াছে, তৎসহকারে ব্যবহার করিবার জন্য হর্ষ কর, সোমরস প্রস্তুত করা হইয়াছে। ঐ দেখ, দীর্ঘ জিহ্বা সঞ্চালন করিতে করিতে কুকুর আসিতেছে, উহাকে তাড়াইয়াদিও।

২। সেই সোম, যিনি যজ্ঞকর্মে নিতান্ত উপযোগী, যিনি ঘোটকের ন্যায় পবিত্রধারার আকারে ক্ষরিত হইতেছেন।

৩। তিনি দুর্ধর্ষ, তিনিই যজ্ঞ; অধ্যক্ষগণ বিবিধ স্তুতিবাক্য উচ্চারণ করিতে করিতে প্রস্তরসহকারে নিষ্পীড়নপূর্বক তাহাকে চালাইয়া দিতেছে।

৪। এই সমস্ত সোমরস প্রস্তুত করা হইয়াছে, পবিত্রের উপর দিয়া ইহারা ক্ষরিত হইয়াছে, ইহাদের তুল্য মধুর বা আনন্দকর কিছুই নাই। হে সোমরস সকল! তোমরা যে মত্ততা উৎপাদন করিবে, তাহা দেবতাদিগের নিকট উপস্থিত হউক।

৫। দেবতারা স্তব করিলেন, সোম ইন্দ্রের জন্য ক্ষরিতেছেন; ইনি ব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি, নিজ তেজে প্রভুত্ব করেন, ইনি যজ্ঞের কামনা করিতেছেন।

৬। দিন দিন সোম সহস্রধারায় ক্ষরিতেছেন, ইনি সমুদ্রবৎ, ইহা হইতে বাক্যের স্ফূৰ্ত্তি হয়, ইনি ধনের অধিপতি এবং ইন্দ্রের বন্ধু।

৭। ইনিই পূষা, ইনিই ধন, ইনিই ভগ নামক দেবতা, ইনিই শোধিত হইয়া যাইতেছেন, ইনি সমস্ত বিশ্বভুবনের অধিপতি, ইনিই পৃ্থিবী ও আকাশকে পরস্পর পৃথক্ করিয়া দিয়াছেন।

৮। স্তুতিসমূহ যেন পরস্পর স্পর্ধা করিয়া ইহাকে উত্তমরূপে স্তব করিল। উজ্জ্বল সোমরসগুলি ক্ষরিত হইতে হইতে পথ করিয়া লইলেন।

৯। হে সোম! তোমার সেই রস ঢালিয়া দেও, যাহা অতি তীব্র, অতি চমৎকার, যাহা পঞ্চ জনপদের মনুষ্যের উপকারে আইসে এবং যাহা পান করিয়া আমরা ধন লাভ করিতে পারি।

১০। এই দেখ সোমরসগুলি ক্ষরিত হইতেছে, ইহারা উজ্জ্বল, ইহাদের তুল্য আমাদিগের পথ প্রদর্শক আর কেহ নাই, ইহারা নিষ্পীড়নকালে সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল, ইহারা নিৰ্ম্মল, ইহাদিগের বিষয় ভাবিতেও আনন্দ আছে, ইহারা সকলই অবগত আছে।

১১। প্রস্তরের আঘাতে চৈতন্যযুক্ত হইয়া ইহারা সশব্দে গোচৰ্ম্মের উপর ঝরিতেছে, ধন কোথায় আছে, তাহা ইহারা জানে, ইহাদিগের ঐ যে মধুর শব্দ, তাহাই আমাদিগের অন্ন।

১২। ইহারা শোধিত হইয়াছে, ইহারা বিজ্ঞ, ইহারা দধির সহিত মিশ্রিত হইয়া সূর্যের ন্যায় সুদৃশ্য হইয়াছে, ইহারা চলিতেছে, কিন্তু ঘৃতের সংসর্গ ত্যাগ করে না।

১৩। যখন এই অন্নরূপী সোম প্রস্তুত হয়েন, কোন ব্যক্তি যেন তাহাকে নীরব না করে। অর্থাৎ কেহ যেন তাহার সশব্দ নিষ্পীড়নের বাধা না দেয়। যেরূপ ভৃগু বংশীয়েরা মখ নামক ব্যক্তির প্রাণ বধ করিয়াছিল, তদ্রুপ এই যজ্ঞ বিঘ্নকর্তা কুকুরকে নিধন কর(১)।

১৪। আমাদিগের আত্মীয় এই সোম পবিত্রের উপর তেমনিভাবে অঙ্গ সংস্থাপন করিতেছেন, যেরূপ কোন বালক তাহাকে ধারণ করিবার নিমিত্ত উদ্যত পিতা মাতার হস্তের উপর ঝাপিয়া পড়ে। যেরূপ উপপতি প্রণয়িণীর প্রতি, কিংবা যেরূপ বর কন্যার প্রতি যায়, তদ্রুপ ইনি নিজ আধারভূত কলসে যাইবার জন্য অগ্রসর হইতেছেন।

১৫। তিনি বীর, তাহার কার্যে বিশেষ নৈপুণ্য আছে, তিনি স্তম্ভের ন্যায় স্বর্গ ও পৃথিবী ধারণ করিয়াছেন। যেরূপ যজ্ঞকর্তা নিজ গৃহে যান, তদ্রুপ তিনি কলসে যাইতেছেন।

১৬। মেষের লোমের ভিতর দিয়া সোম গোচৰ্ম্মের উপর ঝরিতেছেন, রস বর্ষণ এবং শব্দ করিতে করিতে ইনি উজ্জল মূর্তিতে ইন্দ্রের ভবনে চলিলেন।

————

(১) মূলে “শ্বানং অরাধসং” আছে।