ঋগ্বেদ ১০।০৪৯

ঋগ্বেদ ১০।০৪৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৪৯
বৈকুন্ঠইন্দ্র ঋষি। তিনিই দেবতা।

১। স্তবকারী ব্যক্তিকে আমি চমৎকার সম্পত্তি দান করি। আমি যজ্ঞানুষ্ঠানের পদ্ধতি করিয়া দিয়াছি, উহাতে আমারই ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। আমি যজ্ঞ কর্তাব্যক্তির উৎসাহদাতা হইয়া থাকি; আর যাহারা যজ্ঞ না করে, তাহাদিগকে সকল যুদ্ধেই পরাভব করি।

২। স্বর্গের দেবতারা এবং ভূচর ও জলচর জন্তুরা আমাকে ইন্দ্র এই নাম দিয়াছে। আমার দুই তেজস্বী ঘোটক আছে, তাহারা অদ্ভুত লীলাবিশিষ্ট এবং গতিবেগবান। আমি অন্ন উপার্জনের জন্য দুর্ধর্ষ বজ্র ধারণ করি।

৩। আমি কবি নামক ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য অৎক নামক ব্যক্তিকে প্রহারের দ্বারা বধ করিয়াছি। আমি রক্ষণোপযোগী নানাকাৰ্য্য সাধন করিয়া কুৎস নামক ব্যক্তিকে রক্ষা করিয়াছি। আমি শুষ্ণ নামক ব্যক্তি বধের জন্য বজ্র ধারণ করিয়াছিলাম। আমি দস্যুজাতিকে “আৰ্য্য” এই নাম হইতে বঞ্চিত রাখিয়াছি (১)।

৪। কুৎস বেতসু নামক প্রদেশ কামনা করিয়াছিল, আমি উহার পিতার ন্যায় বেতসু প্রদেশ উহার বশীভূত করিয়া দিলাম এবং তুগ্র ও স্মদিভ এই দুই ব্যক্তিকে কুৎসের বশীভূত করিয়া দিলাম। আমার প্রসাদেই যজ্ঞ কর্তা ব্যক্তি শ্রীবৃদ্ধি সম্পন্ন হয়। আমি পুত্রের ন্যায় তাহাকে প্রিয়বস্তু প্ৰদান করি, তাহাতে সে দুর্ধর্ষ হইয়া উঠে।

৫। যৎকালে শ্রুতর্বা আমার শরণাগত হইল এবং স্তব করিতে লাগিল, আমি মৃগয় নামক ব্যক্তিকে তাহার বশীভূত করিয়া দিলাম। আমি বেশকে আয়ুর বশীভূত করিয়া দিয়াছি, আমি ষটগৃভিকে সব্যের বশীভূত করিয়াদিয়াছি।

৬। আমি সেই ইন্দ্র, যেমন বৃত্রের হন্তা হইয়া বৃত্রকে নিধন করিয়াছিলাম, সেরূপ দাসজাতীয় নববাস্তু ও বৃহদ্রথ নামক দুই ব্যক্তিকে ভয় করিয়াছি (২)। সেই সময়ে ঐ দুই শত্রু বৃদ্ধি ও বিস্তার প্রাপ্ত হইতেছিল, আমি তাহাদিগের পশ্চাৎ সংলগ্ন হইয়া সূৰ্য্যলোক সমুজ্জ্বলিত এই ভুবনের বহির্ভূত করিয়া দিলাম।

৭। আমার যে শীঘ্রগামী ঘোটক গুলি আছে, তাহারা আমাকে বহন করে, আমি সেই বহনে সূর্যের চতুর্দিকে বিচরণ করি। যখন মনুষ্য সোম প্রস্তুত করিয়া শোধন করিবার জন্য আমাকে অনুরোধ করে, আমি তখন দাসজাতীয় ব্যক্তিকে প্রহার করিয়া দ্বিখণ্ড করি, ঐ দশার জন্যই সে জন্মিয়াছে।

৮। আমি সপ্ত শত্ৰুপুরী ধ্বংস করিয়াছি। যে যত বড় বন্ধন কর্তা হউক, আমি তাহা অপেক্ষাও অধিক বন্ধনকর্তা। তুৰ্ব্বস ও যদু এই দুই ব্যক্তিকে আমি বলবান্ বলিয়া খ্যাত্যাপন্ন করিয়াছি। আমি অন্যান্য ব্যক্তিকেও বলে বলী করিয়াছি। নবনবতি নগরকে আমি বিনষ্ট করিয়াছি।

৯। আমি জল বর্ষণ করিয়া থাকি, যে সপ্তসিন্ধু দ্রবময় মূর্তিতে পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়, আমিই তাহাদিগকে স্ব স্ব স্থানে রাখিয়া দিয়াছি। আমার সকল কাৰ্য্যই শুভকর, আমিই জল বিতরণ করিয়া থাকি। আমি যুদ্ধ করিয়াযজ্ঞ কর্তাব্যক্তির জন্য পথ পরিষ্কার করিয়া দিয়াছি।

১০। গাভীর দেহে আমি এতাদৃশ বস্তু রাখিয়া দিয়াছি, যাহা দেবত্বষ্টা রচনা করিতে পারেন নাই। অর্থাৎ গাভীগণের আপীনমধ্যে মধু অপেক্ষাও মধুরতর অতি চমৎকার পরিষ্কার দুগ্ধ উৎপাদন করিয়া দিয়াছি। সেই আপীন নদীর ন্যায় দুগ্ধ বহন করে। তাহা সোমের সহিত মিশ্রিত হইলে উহাকে অতি চমৎকার করিয়া তুলে।

১১। (পরোক্তিতে কহিতেছেন)—এইরূপে ইন্দ্ৰ আপন প্রভাবে দেবমনুষ্যদিগকে সৌভাগ্য সম্পন্ন করেন, তাহারই ধন আছে, তাহার ধনই যথার্থ। হে ইন্দ্ৰ! হে ঘোটকবিশিষ্ট! হে বিবিধ কাৰ্যকারী! তোমার কাৰ্য্য তোমার নিজের আয়ত্ত। দেবমনুষ্যগণ ব্যস্তসমস্ত হইয়া তোমার সেই সমস্ত কার্যের স্তব করিতেছেন।

————

(১) আৰ্য্য এবং অনার্য্যদিগের উলেখ।

(২) অনাৰ্য্য শত্ৰুদিগের মধ্যে দুইজন প্রসিদ্ধ যোদ্ধা। নিম্ন ঋকেও দস্যুদিগের উল্লেখ আছে।