ঋগ্বেদ ১০।০৪৪

ঋগ্বেদ ১০।০৪৪
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৪৪
ইন্দ্র দেবতা। কৃষ্ণ ঋষি।

১। যে ইন্দ্র দেখতে স্থূলকায়, অথচ যিনি আপনার বিপুল ও দুর্ধর্ষ বলের দ্বারা আর সমস্ত বলশালী পদার্থকে হীনবল করিয়া দেন, সেই ধনাধিপতি ইন্দ্র রথে আরোহণপূর্বক আমোদ করিবার জন্য আগমন করুন।

২। হে নরপতি ইন্দ্র! তোমার রথ সুগঠন, তোমার রথের দুই অশ্ব সুশিক্ষিত, তোমার হস্তে বজ্র রহিয়াছে; হে প্রভু! এই মুর্তিধারণপূর্বক শীঘ্র সরল পথ দিয়া নিম্নে আগমন কর। তোমার পানের নিমিত্ত সোমরস প্রস্তুত আছে, তাহা তোমাকে পান করাইয়া তোমার বল আরও আমরা বাড়াইয়া দিব।

৩। যে ইন্দ্র আর সকল নায়কের নায়ক, যাহার হস্তে বজ্র আছে, যিনি বিপক্ষদিগকে দুর্বল করিয়া দেন, যিনি দুর্ধর্ষ, যাঁহার ক্রোধ কখন বৃথা যায় না, তাহাকে তাহার বহনকারী দুর্ধর্ষ ঘোটকগণ সকলে মিলিত হইয়াআমাদিগের নিকট বহন করিয়া আনুক।

৪। হে ইন্দ্র! যে সোমরস শরীরকে পালন অর্থাৎ শারীরিক পুষ্টি বিধান করে, যাহা কলসের মধ্যে সম্মিলিত হইয়া আছে, যাহা বলকে সংধারিত করে, তুমি সেই সোমরস আপন উদরে সেচন কর। আমার বল বৃদ্ধি করিয়াদাও, আমাদিগকে তোমার আত্মীয় করিয়া লও, কারণ তুমি বুদ্ধিমাদিগের শ্রীবৃদ্ধি সম্পাদনকারী প্রভুস্বরূপ হইতেছ।

৫। হে ইন্দ্র! সম্পত্তি সমস্ত আমার নিকট আগমন করুক, কারণ আমি স্তব করিতেছি। আমি সোম সঞ্চয়পূৰ্ব্বক উত্তম উত্তম কামনা সিদ্ধ করিবার নিমিত্ত যজ্ঞের আয়োজন করিয়াছি, তুমি এস। তুমি সকলেরই অধিপতি। এই কুশে উপবেশন কর। তোমার পানের জন্য যে সোম পাত্র সকল সজ্জিত রহিয়াছে, কাহারও সাধ্য নাই, যে সে গুলি বলপূৰ্ব্বক গ্রহণ করিয়া পান করে।

৬। যাঁহারা পূৰ্ব্বকাল হইত যজ্ঞে দেবতাদিগের নিমন্ত্রণ করিতেন, তাঁহারা অতি মহৎ মহৎ কাৰ্য্য সম্পাদপূৰ্ব্বক সকলে স্বতন্ত্রভাবে সদগতি লাভ করিয়াছেন। কিন্তু যাহার যজ্ঞরূপ নৌকা আরোহণ করিতে পারে নাই, তাহারা কুকর্মান্বিত, তাহারা ঋণী রহিল, অর্থাৎ অঋণী হইতে পারে নাই এবং সেই অবস্থাতেই নিম্নগামী হইল।

৭। ইদানীন্তনকালে, যাহারা সে প্রকার দুৰ্ম্মতি, তাহারও তদ্রূপ অধোগামী হউক। তাহাদিগের রথে দুষ্ট অশ্ব যোজনা করা হইয়াছে, অর্থাৎ তাহাদিগের কি গতি হইবে, কিছুই স্থিরতা নাই। যাহারা পূর্বাবধি যজ্ঞাদি উপলক্ষে দান করিয়া থাকে, তাহারা এতাদৃশ ধামে উপনীত হয় যথায় অতি চমৎকার নানাবিধ ভোগের সামগ্রী প্রস্তুত আছে।

৮। ইন্দ্র যখন সোমপান করিয়া মত্ত হয়েন, তখন তিনি সর্বত্রসঞ্চারী কম্পান্বিত মেঘদিগকে সুস্থির করেন, গগন ক্রন্দন অর্থাৎ শব্দ করিয়া উঠে, তিনি আকাশকে আন্দোলিত করেন। যে দ্যাবা ও পৃথিবী পরস্পর সংলগ্ন হইয়া আছে, তাহাদিগকে তিনি সেই অবস্থায় সঞ্চারণ করেন এবং বিবিধ স্তব উচ্চারণ করেন।

৯। হে ধনশালী ইন্দ্র! তোমার নিমিত্ত এই এক সুগঠিত অঙ্কুশ আমি হস্তে ধারণ করিয়া আছি । ইহাদ্বারা তুমি খূরপুট বিক্ষেপকারীদিগকে অর্থাৎ হস্তীদিগকে দণ্ড করতঃ বশীভূত কর। এই যে সোমযাগ হইতেছে, ইহাতে তুমি আসিয়া স্থান গ্রহণ কর। দেখিও যেন এই সোমযাগে আমরা সৌভাগ্যশালী হই।

১০। ১১।  পূৰ্ব্ব সূক্তের দশম ও একাদশ ঋকের সহিত অভিন্ন।