ঋগ্বেদ ১০।০৪৮

ঋগ্বেদ ১০।০৪৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৪৮
ইন্দ্র দেবতা। ইন্দ্র ঋষি।

১। (ইন্দ্র কহিতেছেন)-আমি সম্পত্তিসমুহের প্রধান অধীশ্বর হইয়াছি। আমি চিরকালই সকল সম্পত্তি জয় করিয়া লই। প্রাণিগণ পিতার ন্যায় আমাকে ডাকিয়া থাকে। যে দাতা, আমি তাহাকে ভোগের সামগ্রী দিয়া থাকি।

২। আমি অথৰ্ব্বা ঋষির বক্ষস্থল রোধ করিয়াছিলাম। আমি বৃত্তের নিকট গাভী সমস্ত কাড়িয়া ত্রিতকে দিয়াছিলাম। আমি দস্যুদিগের সম্পত্তি কাড়িয়া লইয়া ছিলাম। আমি দধীচের নিকট এবং মাতরিশ্বার নিকট গাভী সমস্ত তাড়াইয়া লইয়া গিয়াছিলাম।

৩। আমার জন্য ত্বষ্টা লৌহময় বস্ত্ৰ নিৰ্মাণ করিয়া দিয়াছেন, দেবতারা আমার জন্য কার্য নিরূপণ করিয়া দিয়াছেন। আমার সৈন্যগণ সূর্যের সৈন্যের ন্যায় দুর্ধর্ষ, যে যাহা কিছু করিয়াছে, বা যাহা ভবিষ্যতে করিবে, সকলেইআমার উপর নির্ভর করে।

৪। যখন কেহ স্তবের সহিত সোমরস দিয়া আমাকে পরিতুষ্ট করে, তখন আমি দাতাব্যক্তিকে সহস্রাধিক গোঁ, অশ্ব, মনুষ্য ও পশু বাণ দ্বারা জয় করিয়া দিই এবং অস্ত্রশস্ত্র শাণিত করি।

৫। কেহ কখন কোন সম্পত্তি আমার নিকট জয় করিয়া লইতে পারে নাই, মৃত্যুর নিকট কখন আমি নত হই নাই। হে পুরুবংশীয়গণ! তোমরা সোমরস প্রস্তুত করিয়া যাহা ইচ্ছা আমার নিকট যাচ্ঞা কর। দেখিও আমার বন্ধুত্ব যেন কখন তোমরা হারাইও না (১)।

৬। এই যে সকল শত্রু, যাহারা প্রবল নিশ্বাস ত্যাগ করিতে করিতে দুই দুই জন করিয়া অস্ত্রধারী ইন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করিবার জন্য প্রস্তুত হইয়াছিল, যাহারা স্পৰ্দ্ধাপূর্বক আমাকে আহ্বান করিতেছিল, আমি ইন্দ্র, কঠোরবাক্য উচ্চারণপূর্বক তাহাদিগকে এমন প্রমাণ করিলাম যে, তাহারা নিধন হইল। তাহারা নত হইল, আমি নত হইবার নহি।

৭। যদি একজন আসে, তাহাকেও আমি পরাভব করি; যদি দুই জন আসে, তাহাদিগকে ও পরাভব করি; তিন জন আসিয়াই বা আমার কি করিতে পারে? যেরূপ কৃষক ধান্য মর্দন করিবার সময় পুরাতন ধান্যস্তম্ভ অনায়াসেই মর্দন করে, আমিও তদ্রুপ যত শত্রু আসুক না কেন অনায়াসে নিধন করি। ইন্দ্র যাহাদের প্রতি বিমুখ, সেই সমস্ত শত্ৰু কি আমাকে নিন্দা, অর্থাৎ পরাভব করিতে পারে?।

৮। আমিই গুঙ্গুদিগের দেশে প্রজাবর্গের মধ্যে অতিথিগুর পুত্রকে স্থাপন করিয়াছি, তিনি তাহাদিগের শত্ৰু সংহার করিতেছেন, বিপদ নিবারণ করিতেছেন এবং মুর্তিমান্ ভক্ষ্যভোজ্যের ন্যায় তাহাদিগকে পালন করিতেছেন। সেই সময়ে পর্ণয় এবং করন্ধ নামক শত্রুদ্বয়কে বধ করা হইয়াছিল এবং বৃত্রের সহিত যে তমুল যুদ্ধ হয়, তাহাতে আমার নাম বিখ্যাত হইয়াছিল।

৯। আমাকে যে নমস্কার করে, সে সকলেরই আশ্রয় স্থানস্বরূপ হয়, সে অন্নবান্ ও ভোগবান্ হয়, তোমরা তাহার সহিত বন্ধুত্ব কর এবং গোধন গ্রহণ কর, এই দুই কাৰ্য্য তোমাদিগের তাহার নিকট সম্পন্ন হইবে। সেই ব্যক্তির যুদ্ধ উপস্থিত হইলে আমি নিজেই তাহার পক্ষে উজ্জল অস্ত্র ধারণ করি, আমার প্রসাদে সে ব্যক্তি সকলের নিকট প্রশংসাভাজন হয়, সকলে তাহাকে স্তব করে।

১০। দৃষ্ট হইল যে দুই জনের মধ্যে একজন সোমযাগ করিতেছে। পালন কৰ্ত্তা ইন্দ্র তাহার পক্ষে বজ্র ধারণপূর্বক তাহাকে শ্রীবৃদ্ধিসম্পন্ন করলেন। আর তাহার যে শত্রু সেই তীক্ষ্ণতেজা সোমাযাগকারী ব্যক্তির সহিত যুদ্ধ করিতে উদ্যত হইল, সে অন্ধকার মধ্যে আবদ্ধ হইয়া রহিল।

১১। আদিত্যগণ, বসুগণ, রুদ্রগণ, ইহারা সকলেই দেবতা; আমিও দেবতা। অতএব আমি তাহাদিগের স্থান উৎখাত করি না, তাহারা আমাকে এই উদ্দেশে নিৰ্মাণ করিয়াছেন, যে আমি চমৎকার অন্ন উৎপাদন করিব। সেই নিমিত্তই আমাকে কেহ পরাজয় বা হিংসা করিতে পারে না, কেহ আমার সম্মুখে অগ্রসর হইতে পারে না।

————

(১) ইন্দ্রকেই এই সূক্তের ঋষি বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে, বোধ হয় পুরুবংশীয়দিগের কোন স্তোতাদ্বারা এই সূক্ত রচিত।