ঋগ্বেদ ১০।০৮৬

ঋগ্বেদ ১০।০৮৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৮৬
ইন্দ্র, প্রভৃতি দেবতা। ইন্দ্র, প্রভৃতিই ঋষি।

১। সোম প্রস্তুত করিবার জন্য তাহাদিগকে ইন্দ্র বিদায় দিলেন । কিন্তু তাহারা ইন্দ্রকে স্তব করিল না। আমার সখা, অর্থাৎ আমার পুত্র বৃষাকপি সেই সোম পানে মত্ত হইল, হৃষ্টপুষ্টদিগের মধ্যে প্রধান হইল। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

২। হে ইন্দ্র! তুমি বৃষাকপিকে দেখিয়া অত্যন্ত ক্ষুন্ন হইয়া প্রতিগমন করিতেছ। অথচ আর কুত্রাপি সোমপান করিতে পাইতেছ না। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৩। হে ইন্দ্র! তুমি যে ধনস্বামী দাতাব্যক্তির ন্যায় হরিদবর্ণ মৃগমুৰ্ত্তিধারী এই বৃষাকপিকে পুষ্টিকর বিবিধ সামগ্ৰী অৰ্পণ করিতেছ, এই বৃষাকপি তোমার কি উপকার করিয়াছে? ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৪। হে ইন্দ্র! তোমার প্রেমাস্পদী যে এই বৃষাকপিকে তুমি রক্ষা করিতেছ, বরাহ অনুসরণকারী কুকুর ইহার কর্ণে দংশন করিয়াছে। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৫। আমি উত্তম উত্তম সামগ্রী পৃথক পৃথক্ সাজাইয়া রাখিয়াছিলাম, এই বৃষাকপি সকলই নষ্ট করিয়া দিল। আমার ইচ্ছা যে, ইহার মস্তক ছেদন করি, এই দুষ্টাশয়ের প্রতি ভদ্রতা করিতে পারি না। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৬। (ইন্দ্রাণী কহিতেছেন)-কোনও নারীই আমা অপেক্ষা অঙ্গ সৌষ্ঠববতী নহে, কোনও নারীই আমা অপেক্ষা বিলাসগতি জানে না, কোন নারীই আমা অপেক্ষা প্রকৃষ্টরূপে স্বামীর নিকট সহবাস করিতে, অথবা প্রণয়বশে আলিঙ্গন করিতে জানে না। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৭। (বৃষাকপি কহিতেছে)-হে মাতঃ! তুমি উত্তম পতি পাইয়াছ। তোমার অঙ্গ ও উরু ও মন্তক যেমন আবশ্যক তেমনিই হইবেক। পতি সংসর্গে আনন্দলাভ করিয়া থাক। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৮। (ইন্দ্র কহিতেছেন) -হে ইন্দ্রাণী! তোমার বাহু, ঘন, কেশ, কপাল ও অঙ্গুলি গুলি অতি সুন্দর। তুমি বীরের পত্নী হইয়া বৃষাকপিকে কেন দ্বেষ করিতেছ। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

৯। (ইন্দ্রাণী কহিতেছেন)-এই হিংস্রক বৃষাকপি আমাকে যেন পতি পুত্রবিহীনার ন্যায় জ্ঞান করিতেছে। কিন্তু আমি পতিপুত্রবতী ও ইন্দ্রের পত্নী। মরুৎগণ আমার সহায় । ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১০। যখন একত্রে হোম হয়, বা যুদ্ধ হয়, পতিপুত্রবতী ইন্দ্রাণী তথায় গমন করেন। তিনি যজ্ঞের বিধানকর্ত্রী, তাঁহাকে সকলে পূজা করে। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১১। এই সকল নারীর মধ্যে আমি ইন্দ্রাণীকে সৌভাগ্যবতী বলিয়া শুনিয়াছি। তাহার পতিকে অন্যান্য ব্যক্তির মত জরাগ্রস্ত হইয়া মরিতে হয় না। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১২। হে ইন্দ্রাণী! আমার বন্ধু বৃষাকপি ব্যতিরেকে প্রীতিলাভ করি না। সেই বৃষাকপিরই সরস হোমদ্রব্য দেবতাদিগের নিকটে যাইতেছে। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৩। হে বৃষাকপিবনিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্তা এবং আমার সুন্দরী পুত্রবধূ। তোমার বৃষদিগকে ইন্দ্র ভক্ষণ করুন (১), তোমার অতি চমৎকার, অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ করুন। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৪। আমার জন্য পঞ্চদশ এমন কি বিংশ বৃষ পাক করিয়া দেয় (২), আমি খাইয়া শরীরের স্থূলতা সম্পাদন করি, আমার উদরের দুই পার্শ্ব পূর্ণ হয়। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৫। হে ইন্দ্র! তোমার ভক্ত তোমার জন্য যে দধিমন্থ পূজা দেয়, উহা প্রস্তুত হইবার সময় যূথ মধ্যে গর্জনকারী বৃষের ন্যায় শব্দ করিতে থাকে। ঐ মন্থ তোমার হৃদয়কে সুখী করুক। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৬। যাহার উরুদ্বয়ের মধ্যে পুরুষাঙ্গ লম্বমানভাবে থাকে, সে সমর্থ হয় । উপবেশন করিলে যাহার লোমাবৃত পুরুষাঙ্গ বল প্রকাশ করিয়া উঠে, সেই সমর্থ হয়। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৭। উপবেশনকালে যাহার লোমাবৃত পুরুষাঙ্গ বল প্রকাশ করিয়া উঠে, সে সমর্থ হয় না। যাহার উরুদ্বয়ের মধ্যে পুরুষাঙ্গ লম্বমানভাবে থাকে, সেই পারে। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৮। হে ইন্দ্র! এই বৃষাকপি পরধন গ্রহণকারী ব্যক্তিকে বধ করুক, সে খড়গ ও সূনা ও অভিনব পশুহত্যা স্থান ও দাহকাষ্ঠপূর্ণ একখানি শকট প্রাপ্ত হউক। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

১৯। এই আমি চতুর্দিক নিরীক্ষণ করিতে করিতে আসতেছি। দাস জাতি ও আর্যজাতি অম্বেষণ করিতেছি। যাহারা যজ্ঞান্ন পাক করে, অথবা সোমরস প্রস্তুত করে, তাহাদিগের নিকট সোম পান করিতেছি(৩)। সুবুদ্ধিকে, তাহা আমি নিরূপণ করিয়াছি। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

২০। মরুদেশ, আর ছেদন করিবার উপযুক্ত অরণ্যপ্রদেশ, এ উভয়ের কত যোজনই বা অন্তর? হে বৃষাকপি! নিকটবর্তী লোকায়ে নিকটে আশ্রয় গ্রহণ কর। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

২১। হে বৃষাকপি! পুনৰ্ব্বার এস। তোমার নিমিত্ত উত্তম উত্তম যজ্ঞ, ভাগ প্রস্তুত করিতেছি। এই যে নিদ্রাবিলাসী সূৰ্য্যদেব, ইনি যেমন অস্তধামে গমন করেন, তুমিও তেমনি গৃহমধ্যে আগমন কর । ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

২২। হে বৃষাকপি! হে ইন্দ্র! তোমরা উর্ধাভিমুখ হইয়া গৃহে গমন করিলে, সেই বহুভোজী হরিণ কোথায় গেল? লোকদিগের সেই শোভা সম্পাদক কোথায়? ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।

২৩। পর্শু নামে মানবী এককালে বিংশতি সন্তান প্রসব করিল। যাহার উদর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল, হে বাণ! তাহার মঙ্গল হউক। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ (৪)।

————

(১) এখানে বৃষ ভক্ষণের কথা পাওয়া যায়।

(২) এখানেও ১৫ কি ২০ বৃষ পাক করিবার কথা পাওয়া যায়।

(৩) দাস অর্থাৎ অনার্য্যদিগের মধ্যেও অনেকে আর্য্যধর্ম অবলম্বন করিয়া যজ্ঞাদি করিত, এই ঋক হইতে প্রকাশ হয়।

(৪) বৃষাকপির প্রকাশ একটি দুরূহ অংশ। যদি এরূপ জ্ঞান করা যায়, যে বৃষাকপি এক জাতীয় বানর, একদা ঐ বানর কোন যজমানের যজ্ঞসামগ্রী উচ্ছিষ্ট করিয়া নষ্ট করিয়াছিল। যজমান এরূপ কল্পনা করিল, যে ঐ বানর ইন্দ্রের পুত্র, সেই নিমিত্ত ইন্দ্র উহার ধৃষ্টতা নিবারণ করিলেন না। কবি সেই কল্পনার উপর ইন্দ্রের উক্তি ও ইন্দ্রাণীর কথা, ইত্যাদি রচনা করিলেন। এই প্রকার জ্ঞান করিলে বৃষাকপি সূক্তের প্রায় সর্বাশে ব্যাখ্যাত হয়। এ সূক্তটি বোধ হয় অপেক্ষাকৃত আধুনিক।