ঋগ্বেদ ১০।০৬৯

ঋগ্বেদ ১০।০৬৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৬৯
অগ্নি দেবতা। সুমিত্র ঋষি।

১। বধ্রিঅশ্ব (সুমিত্রের পিতা] যে অগ্নি স্থাপিত করিয়াছেন, তাহার মূর্তি গুলি অতি সুন্দর, তাহার স্থাপনাও চমংকার এবং আগমনও রমণীয়। সুমিত্র নামক ব্যক্তিগণ যখন সৰ্ব্ব সমক্ষে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করেন, অল্প ঘৃতাহুতি প্রাপ্ত হইয়া উদ্দীপ্ত হয়ে তাহাকে সকলে স্তব করিতে থাকে।

২। বধ্রি অশ্বের অগ্নি ঘৃতদ্বারাই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হন, ঘৃতই তাহার আহার, ঘৃতই তাহাকে স্নিগ্ধ করে। ঘৃতাহুতি প্রাপ্ত হইয়াতিনি বিশিষ্টরূপে বিস্তারী হইলেন। ঘৃত ঢালিয়া দেওয়াতে সূর্যের ন্যায় দীপ্তি পাইতেছেন।

৩। হে অগ্নি! যেমন মনু তোমার মূর্তি উজ্জল করিয়াছিলেন, তদ্রুপ আমিও তোমাকে প্রজ্বলিত করিতেছি। আমার এই কাৰ্য্য সংপ্রতি করা হইয়াছে। অতএব তুমি ধনবান হইয়া দীপ্যমান হও, আমাদিগের স্তুতিবাক্য গ্রহণ কর, শত্রুসৈন্য বিদীর্ণ কর, এই স্থানে অন্ন স্থাপন কর।

৪। যে তোমাকে বধ্রি অশ্ব প্রথমে স্তব করিয়া প্রজ্জ্বলিত করিয়াছেন, সেই তুমি আমাদিগের গৃহ ও দেহ রক্ষা কর; তুমিই এই যাহা কিছু দিয়াছ, আমার সেই দান সমস্ত রক্ষা কর।

৫। হে বধ্রি অশ্বের অগ্নি! দীপ্যমান হও; রক্ষাকর্তা হও, লোক দিগকে যে হিংসা করে, সে যেন তোমাকে পরাভব না করে। বীরের ন্যায় দুর্ধর্ষ এবং শত্রু পাতনকারী হও। আমি সুমিত্র, বধ্রি অশ্বের অগ্নিস্তব রচনা করিলাম।

৬। হে অগ্নি! পৰ্ব্বতের যে সকল উত্তম উত্তম জঙ্গম ধন, তাহা তুমি দাসদিগের নিকট জয় করিয়া আৰ্যদিগকে দিয়াছ (১), তুমি দুর্ধর্ষ বীরের ন্যায় শত্রু নিপাত কর; যাহারা যুদ্ধ করিতে আসে, তাহাদিগের প্রতি অগ্রসর হও।

৭। এই অগ্নি দীর্ঘতন্তু, অর্থাৎ ইহার বংশ অতি বিস্তারিত, ইনি প্রধান দাতা, ইনি সহস্রস্থান আচ্ছাদন করেন, শতসংখ্যক পথ দিয়া গমন করেন, ইনি উজ্জল দীপ্তিশালীদিগের মধ্যেও দীপ্তিশালী, প্রধান পুরোহিতগণ ইহাকে অলঙ্কৃত করিতেছেন। হে অগ্নি! দেবভক্ত সুমিত্রবংশীয়দিগের ভবনে দীপ্যমান থাক।

৮। হে জাতবেদা অগ্নি! তোমার গাভীকে বড় সুখে দোহন করা যায়। তাহার দোহনে কোন বাধা কিছু নাই। সে অমনোযোগী হইয়া অমৃত দোহন করিয়া দেয়। দেবভক্ত সুমিত্রবংশীয় প্রধান ব্যক্তিগণ দক্ষিণাসম্পন্ন হইয়া তোমাকে প্রজ্জ্বলিত করিতেছে।

৯। হে বধ্রি অশ্বের অগ্নি! হে জাতবেদা! মরণরহিত দেবতারাই নিজে তোমার মহিমা ব্যাখ্যা করিয়াছেন। যখন মনুষ্যগণ মহিমার বিষয় জিজ্ঞাসা করিতে গিয়াছিলেন, তখন তাহারা সকলি কহিয়াছেন। তোমার সম্মানকারী ব্যক্তিদিগের সহিত একত্র হইয়া তুমি জয়ী হইয়াছ।

১০। হে অগ্নি! যেমন পিতা পুত্রকে ক্রোড়ে ধারণ করিয়া লালন করে, তদ্রুপ বধ্রি তোমার পরিচৰ্য্যা করিয়াছেন। হে যুবা অগ্নি! ইহার নিকট কাষ্ঠ প্রাপ্ত হইয়া তুমি পূর্বতন সকল হিংসককে নষ্ট করিয়াছ।

১১। বধ্রি অশ্বের অগ্নি সোমরস প্রস্তুতকারী ব্যক্তিদিগের সহিত একত্র হইয়া শত্ৰুদিগকে চিরকালেই জয় করিয়াআসিতেছেন। হে বিচিত্র ও কিরণধারী অগ্নি! তুমি হিংসককে বিশেষ মনোযোগের সহিত দগ্ধ করিয়াছ। যাহাদিগের অত্যন্ত বুদ্ধি হইয়াছিল, তাহাদিগকে অগ্নি বিদীর্ণ করিয়াছেন।

১২। বধ্রি অশ্বের এই যে অগ্নি, ইনি শত্রুনিধনকারী চিরকাল প্রজ্জ্বলিত আছেন, নমস্কারবাক্য ইহার প্রতি প্রয়োগ করিতে হইবে। হে বধ্রি অশ্বের অগ্নি! যাহারা আমাদিগের অনাত্মীয়, কিংবা যাহারা স্পর্ধাপূর্বক আমাদিগের বিরুদ্ধাচরণ করে, তুমি তাহাদিগের সম্মুখীন হও।

————

(১) আর্য্য ও দাসের উল্লেখ।