ঋগ্বেদ ১০।০৯৬

ঋগ্বেদ ১০।০৯৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯৬
ইন্দ্রের ঘোটকদ্বয় দেবতা। বহ্ম দেবতা

১। হে ইন্দ্র! এই মহাযজ্ঞে তোমার দুই ঘোটককে স্তব করিয়াছি। তুমি শত্রুহিংসাকারী, তুমি প্রকৃষ্টরূপে মত্ত অর্থাৎ উৎসাহযুক্ত হও, ইহা প্রার্থনা করি। তুমি হরিৎবর্ণ অশ্বযোগে আসিয়া ঘৃতের ন্যায় চমৎকার জল বর্ষণ কর, তুমি উজ্জ্বলরূপী, তোমার নিকট আমার স্তুতিবাক্য সকল গমন করুক।

২। তোমরা ইন্দ্রকে যজ্ঞের দিকে ডাকিয়াছ, দেবায়তন অর্থাৎ যজ্ঞগৃহের দিকে ইন্দ্রের দুই ঘোটককে চালাইয়া আনিয়াছ, তোমরা ইন্দ্রের বলবীৰ্য্য ঘোটকসমেত স্তব কর, দেখ, যেমন গাভীগণ দুগ্ধ দেয়, তদ্রুপ ইন্দ্রকে হরিতবর্ণ সোমরসের যারা আপ্যায়িত করা হইতেছে।

৩। ইহার যে লৌহনির্মিত বজ্র, তাহা হরিৎবর্ণ; তাহা বিলক্ষণ শত্রু সংহার করে, তাহা দুই হস্তে ধৃত হয়। ইন্দ্র নিজে ধনবান্, সুগঠন হনুবিশিষ্ট, এবং বাণ দ্বারা সক্রোধে শত্ৰু সংহার করেন। হরিৎ মূর্তিসোমরসদ্বারা ইন্দ্রকে অভিষিক্ত করা হইল।

৪। আকাশে সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল বজ্র ধৃত হইল। সে যেন আপন বেগে সমস্ত দিক ব্যাপ্ত করিল, সুগঠন হনুবিশিষ্ট সোমরস পানকারী ইন্দ্র লৌহময় বজ্রদ্বারা বৃত্রকে নিধন করিবার সময় অপরিসীম দীপ্তি প্রাপ্ত হইলেন।

৫। হে উজ্জলকেশধারী ইন্দ্র! পূর্বকালের যজমানেরা তোমাকে স্তব করিত, তুমি যজ্ঞে আসিতে। তুমি উজ্জ্বল হও। হে উজ্জ্বলরূপী! তোমার সর্ব প্রকার অন্ন প্রশংসার যোগ্য, নিরূপম ও উজ্জ্বল।

৬। স্তবযোগ্য বজ্রধারী ইন্দ্র যখন সোমরস পানের আমোদে প্রবৃত্ত হয়েন, তখন দুই উজ্জ্বল ঘোটক রথে যোজিত হইয়া তাহাকে বহন করে। উজ্জ্বল ইন্দ্রের জন্য অনেক বার সোমরস নিষ্পীড়িত হয় এবংহরিৎবর্ণ সোমরস সংস্থাপিত হইয়া থাকে।

৭। অবিচলিত ইন্দ্রের জন্য যথেষ্ট সোমরস রাখা হইয়াছে, সেই সোমরস ইন্দ্রের ঘোটককে যজ্ঞের দিকে ত্বরাযুক্ত করিতেছে। হরিতবর্ণ ঘোটকেরা তাঁহার যে রথকে যুদ্ধে লইয়া যায়, সেই রথ এই রমণীয়সোমযাগে আসিয়া অধিষ্ঠিত হইয়াছে।

৮। ইন্দ্রের শ্মশ্রু উজ্জ্বল, কেশ উজ্জ্বল, তিনি লৌহের ন্যায় দৃঢ়কায়, তিনি সোমপায়ী, শীঘ্র শীঘ্র সোমপান করিয়া শরীর স্ফীত করেন। যজ্ঞই তাহার সম্পত্তিস্বরূপ, হরিৎবর্ণ ঘোটকেরা তাঁহাকে যজ্ঞে লইয়াযায়। তিনি দুই ঘোটকে আরোহণপূর্বক সকল দুর্গতি দূর করিয়া দিন।

৯। তাহার দুই উজ্জ্বল চক্ষু দ্রুবা নামক যজ্ঞপাত্রের মত যজ্ঞের উপর নিক্ষিপ্ত হইল। তিনি অন্ন ভক্ষণ করিবার জন্য উজ্জ্বল হনুদ্বয় কম্পিত করিতেছেন। পরিষ্কার চমসের মধ্যে যে চমৎকার সোমরস ছিল, তাহা পান করিয়া তিনি আপনার দুই ঘোটকের গাত্র মার্জনা করিতেছেন।

১০। উজ্জল ইন্দ্রের আবাসস্থান দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যেই বিদ্যমান আছে। তিনি অশ্বারূঢ় হইয়া ঘোটকের ন্যায় মহাবেগে যুদ্ধে যান। অতি উৎকৃষ্ট স্তব তাহাকে বর্ণনা করিতেছে। হে উজ্জল ইন্দ্র! তুমি আপনার ক্ষমতাদ্বারা প্রচুর অন্ন দিয়া যাক।

১১। হে ইন্দ্র! তুমি মহিমাদ্বারা দ্যাবাপৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া নিত্য নূতন চমৎকার স্তব পাইয়া থাক। হে অসুর! গাভীগণের উৎকৃষ্ট স্থান উজ্জ্বল সুৰ্য্যের নিকট প্রকাশ কর। উত্তম গোষ্ঠ দেখাও।

১২। হে উজ্জল সুগঠন হনুবিশিষ্ট ইন্দ্র! ঘোটকগণ তোমার রথে যোজিত হইয়া তোমাকে মনুষ্যের যজ্ঞে আনয়ন করুক। তোমার জন্য যে মধুর সোমরস প্রস্তুত হইয়াছে, তাহা পান কর। দশ অঙ্গুলির যেসোম প্রস্তুত হইয়া যজ্ঞের উপকরণস্বরূপ হয়, যুদ্ধের সময় তাহা পান করিতে ইচ্ছা কর।

১৩। হে অশ্ববিশিষ্ট ইন্দ্র! প্রথমে যে সোম প্রস্তুত হইয়াছিল, তাহাত পান করিয়াছ। এক্ষণে যাহা প্রস্তুত হইয়াছে, তাহা কেবল তোমারই জন্য । হে ইন্দ্র! এই মধুযুক্ত সোম আস্বাদন কর। হে প্রচুর বৃষ্টিকারী!তোমার উদর আর্দ্র কর।