ঋগ্বেদ ১০।০৫৬

ঋগ্বেদ ১০।০৫৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৫৬
বিশ্বদেবগণ দেবতা। বৃহদুকথ ঋষি(১)।

১। এই অগ্নি তোমার এক অংশ, আর এই বায়ু তোমার এক অংশ, তোমার তৃতীয় জ্যোতির্ময় আত্মা স্বরূপ অংশ। এই তিন অংশদ্বারা তুমি অগ্নি ও বায়ু ও সূৰ্য্য মধ্যে প্রবেশ কর। তোমার শরীরের প্রবেশ কালে তুমি কল্যাণমূর্তি ধারণ কর এবং দেবতাদিগের সেই সৰ্বশ্রেষ্ঠ পিতাস্বরূপ সূর্যের ভূবনে তুমি প্রিয় হও।

২। হে বাজিন! (পুত্রের নাম)। পৃথিবী তোমার শরীর গ্রহণ করিতেছেন, তিনি আমাদিগের প্রীতিজনক হউন, তোমারও কল্যাণ করুন। তুমি স্থানভ্রষ্ট না হইয়া জ্যোতিঃ ধারণ করবার জন্য দেবতাদিগের সহিত এবং আকাশের সূর্যের সহিততোমার আত্মাকে মিলাইয়া দাও।

৩। হে পুত্র! তুমি: বিলক্ষণ বলে বলী ও সুশ্রী ছিলে। যেরূপ উত্তম স্তব করিয়াছিলে, তদ্রুপ উত্তম স্বর্গে যাও (২)। উত্তম ধর্মের অনুষ্ঠান করিয়াছ, তাহার উত্তম ফল প্রাপ্ত হও। উত্তম দেবতা ও উত্তম সুৰ্যের সহিত একীভূত হও।

৪। আমাদিগের পিতৃপুরুষগণ দেবতার মত মহিমার অধিকারী হইয়াছেন। তাহারা দেবত্ব প্রাপ্ত হইয়া দেবতাদিগের সহিত ক্রিয়া কলাপ করিয়াছেন। ষে সকল জ্যোতির্ময় পদার্থ দীপ্তি পাইয়া থাকে, তাহারা উহাদিগের সহিত একীভূত হইয়াছেন, তাঁহার দেবতাদিগের শরীর মধ্যে প্রবেশ করিয়াছেন (৩)।

৫। তাহারা নিজ ক্ষমতা বলে সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ড বিচরণ করিয়াছেন (৪) যে সকল প্রাচীন ভুবনে কেহ যায় নাই, তাহারা তথায় গিয়াছেন। তাঁহার নিজ শরীর দ্বারা সমস্ত ভুবন আয়ত্ত করিয়াছেন। প্রজাবর্গের প্রতি নানা প্রকারে নিজ প্রভাব বিস্তারিত করিয়াছেন।

৬। সূর্য্যের পুত্রস্বরূপ দেবতাবর্গ তৃতীয় কাৰ্য্যদ্বারা স্বৰ্গবিৎ ও অসুর সূর্যকে দুই প্রকারে সংস্থাপন করিলেন, (অর্থাৎ তাহার উদয়ের মূৰ্ত্তি আর তাহার অস্তগমনের মূর্তি)। অপিচ আমার পিতৃ পুরুষগণ সন্তান উৎপাদনপূর্বক সন্ততিদিগের শরীরে পৈতৃক বল সংস্থাপন করিলেন এবং চিরস্থায়ী বংশ রাখিয়া গেলেন।

৭। যেরূপ লোক, নৌকাযোগে জল পার হয়, যেরূপ স্থলপথে পৃথিবীর ভিন্ন দিক অতিক্রম করে, যেরূপ স্বস্তিদ্বারা বিপদ হইতে উদ্ধার হয়, তদ্রুপ বৃহদুকথ ঋষি নিজ ক্ষমতাবলে আপন মৃত পুত্রকে অগ্নি প্রভৃতি পার্থিব পদার্থে ও সূৰ্য্য প্রভৃতি দূরবর্তী পদার্থে একীভূত করিয়া দিলেন।

————

(১) ঋষি আপন মৃতপুত্রের সম্বন্ধে এই সূক্ত রচনা করিয়াছেন।

(২) পুণ্যকর্মের ফল উত্তম স্বর্গলাভ, তাহা প্রকাশ হইতেছে।

(৩) পূণ্যাত্মা পূর্বপুরুষগণ দেবত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন।

(৪) তাঁহারা অখিলব্রহ্মাণ্ড ভ্রমণ করিয়াছেন।