ঋগ্বেদ ১০।০৮২

ঋগ্বেদ ১০।০৮২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৮২
ঋষি ও দেবতা পূর্ববৎ।

১। সেই সুধীর পিতা উত্তমরূপে দৃষ্টি করিয়া, মনে মনে আলোচনা করিয়া জলাকৃতি পরস্পর সম্মিলিত এই দ্যাবাপৃথিবী সৃষ্টি করিলেন(১)। যখন ইহার চতুঃসীমা ক্রমশ দূর হইয়া উঠিল, তখন দ্যুলোক ও ভূলোক পৃথক হইয়া গেল।

২। যিনি বিশ্বকৰ্ম্মা, তাহার মন বৃহৎ, তিনি নিজে বৃহৎ, তিনি নির্মাণ করেন, ধারণ করেন, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, এবং সকল অবলোকন করেন, সপ্তঋষির পরবর্তী যে স্থান, তথায় তিনি একাকী আছেন, বিদ্বানগণ এইরূপ কহেন; সেই বিদ্বানগণের অভিলাষ সকল অন্নদ্বারা পরিপূর্ণ হয়।

৩। যিনি আমাদিগের জন্মদাতা পিতা, যিনি বিধাতা, যিনি বিশ্বভুবনের সকল ধাম অবগত আছেন, যিনি একমাত্র, অথচ সকল দেবের নাম ধারণ করেন(২), অন্য তাবৎ ভুবনের লোকে তাহার বিষয়েজিজ্ঞাসাযুক্ত হয়।

৪। স্থাবরজঙ্গমস্বরূপ এই বিশ্বভুবন গঠন হইলে পর, যে সকল ঋষি এই সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করিয়াছিলেন, সেই প্রাচীন ঋষিগণ প্রভূত স্তব করিতে করিতে অনেক ধন ব্যয় করিয়া যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন।

৫। যাহা দ্যুলোকের অপর পারে, যাহা এই পৃথিবী অতিক্রম করিয়া বিদ্যমান আছে, যাহা অসুর দেবগণকে(৩) অতিক্রম করিয়া আছে, জনগণ এমন কোন্ গর্ভ ধারণ করিয়াছিলেন, যাহার মধ্যে তাবৎ দেবতা অনুভূত থাকিয়া পরস্পরকে এক স্থানে মিলিত দেখিতেছে?।

৬। সেই অজাত পুরুষের নাভিদেশে যে সৃষ্টি সংস্থাপিত হইয়াছিল, তাহাতে সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ড অবস্থিত আছে, ইহাই জলগণ আপন গর্তস্বরূপ ধারণ করিয়াছিল, ইহার মধ্যেই দেবতারা পরস্পর সাক্ষাৎ করেন।

৭। যিনি ইহা সৃষ্টি করিয়াছেন, তাঁহাকে তোমরা বুঝিতে পার না, তোমাদিগের অনুকরণ তাহা বুঝিবার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় নাই। কুজ্ঝটিকাতে আচ্ছন্ন হইয়া লোকে নানা প্রকার জল্পনা করে (৪), তাহারা আপন প্রাণের তৃপ্তির জন্য আহারাদি করে এবং স্তব স্তুতি উচ্চারণ করতঃ বিচরণ করে।

————

(১) বিশ্বভুবন প্রথমে জলাকৃতি ছিল, এ কথা অন্যান্য ধর্মশাস্ত্রে যেরূপ দেখা যায়, বেদেও সেইরূপ দেখা যায়। ঋগ্বেদের রচনাকালে নীল আকাশকে জলীয় বলিয়া অনুমান করা হইত, তাঁহা হইতেই বোধ হয়, এই কথা উৎপন্ন হইয়াছে।

(২) ভিন্ন ভিন্ন দেবগণ কেবল এক ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন নাম মাত্র, তাহা এই ঋকের ঋষি অনুভব করিয়াছেন।

(৩) মুলে “দেবেভিঃ অসুরৈঃ” আছে। সায়ন দেবগণ ও অসুরগণ এইরূপ অর্থ করিয়াছেন।

(৪) সৃষ্টির ও সৃষ্টিকর্তার কথা আলোচনা করুয়া ঋগ্বেদের ঋষি চারিসহস্র বছর পূর্বে যাহা বলিয়া গিয়াছেন, অদ্য সতয জগতের ধীশক্তিসম্পন্ন পন্ডিতগণ সেই কথাই বলিতেছেন, মনুষ্যেরা তাঁহাকে বুঝিতে পারে না, কুজ্ঝটিকাতে আচ্ছন্ন হইয়া লোকে নানা প্রকার জল্পনা করে।