ঋগ্বেদ ১০।০৭৩

ঋগ্বেদ ১০।০৭৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৭৩
মরুৎ দেবতা। গৌরিবীতি ঋষি।

১। যখন ইন্দ্রের গর্ভধারিণী মাতা বীর ইন্দ্রকে প্রসব করিলেন,তখন মরুৎগণ এই বলিয়া ইন্দ্রকে সংবর্ধনা করিলেন যে, তুমি বল প্রকাশ ও যুদ্ধ করিবার জন্য জন্মিয়াছ, তুমি বীর, উৎসাহযুক্ত, তেজস্বী ও অত্যন্ত অভিমানী।

২। শত্ৰুসংহারকারী মরুৎগণের সৈন্য ইন্দ্রকে রক্ষা করিবার জন্য উপবেশন করিলেন। তাহারা বিস্তর স্তবের দ্বারা ইন্দ্রকে সংবর্ধনা করিল, গাভীগণ যেমন বিশাল গোষ্ঠের মধ্যে আচ্ছাদিত থাকে, তদ্রুপ গর্ভ, অর্থাৎ বৃষ্টিবারি সকল বিশ্বব্যাপী অন্ধকারের মধ্য হইতে নির্গত হইল।

৩। তুমি যে চরণে গমন কর, তাহা অতি মহৎ। তুমি যেখান দিয়া গেলে, সেই স্থানে অন্নসমূহ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইল। হে ইন্দ্র! তুমি এক সহস্র বৃককে মুখে ধারণ করিতে পার, অশ্বিদ্বয়কে ফিরাইতে পার।

৪। তোমার যুদ্ধে যাইবার ত্বরা থাকিলেও যজ্ঞে গমন কর। অশ্বিদ্বয়ের সহিত বন্ধুত্ব ধারণ কর। হে ইন্দ্র! প্রচুর পরিমাণ ধন আনিয়া দাও। হে বীর অশ্বিদ্বয়! ধনসমূহ দান করুন।

৫। যজ্ঞ উপলক্ষে আহলাদিত হইয়া ইন্দ্র নিজ মিত্র গতিশীল মরুৎগণের সহিত যজমানকে অর্থ দেন। তিনি যজমানের জন্য দস্যুর ছল ও কপটতা সমস্ত ধ্বংস করিলেন। তিনি বৃষ্টিবারি সেক করিলেন, ক্লেশকর অন্ধকার সমস্ত নষ্ট করিলেন।

৬। শত্রুগণ ইহার নিকট তুল্য নামধারী, অর্থাৎ ইনি সকলকেই ধ্বংস করেন। উষার শকট যেরূপ ধ্বংস করিয়াছিলেন, সেইরূপ ইন্দ্র শত্রু ধ্বংস করেন। উৎসাহযুক্ত ও মহাবল পরাক্রান্ত বন্ধুস্বরূপ মরুৎগণের সহিত ইনি বিপক্ষের উত্তম উত্তম আবাস স্থান ধবংস করিলেন।

৭। যজ্ঞানুষ্ঠানোদ্যোত নমুচিকে তুমি বধ করিয়াছ। দাসজাতীয়কে ঋষির নিকট নিস্তেজ করিয়া দিয়াছ। তুমি মনুকে সুবিস্তীর্ণ পথ সকল প্রস্তুত করিয়া দিয়াছ, সেগুলি দেবলোকে যাইবার অতি সরল পথ হইয়াছে (১)।

৮। তুমি এই বিশ্বজগৎ তেজে পরিপূর্ণ কর। তে ইন্দ্র! তুমি প্রভু, হস্তে বস্ত্র ধারণ কর। দেবতারা তোমার পশ্চাৎ যজ্ঞভাগ প্রাপ্ত হইয়া আনন্দিত হয়েন; তুমি মেঘদিগকে অধোমুখ করিয়া দাও, অর্থাৎ জল ঢালাইয়া দেওয়াও।

৯। জলের মধ্যে ইহার যে চক্র সংস্থাপিত আছে, সেই চক্র যেন ইহার জন্য মধু ছেদন করিয়া দেয়। হে ইন্দ্র! তুমি তৃণ লতাদির মধ্যে যে দুগ্ধ সংস্থাপন করিয়াছ, তাহা গাভীদিগের আপীন হইতে অত্যন্ত শুভ্র মূর্তিতে নির্গত হয়।

১০। কেহ কহে, ইন্দ্রের উৎপত্তি অশ্ব হইতে। কিন্তু আমি জ্ঞান করি, তাহার উৎপত্তি তেজঃ হইতে। ইনি ক্রোধ হইতে উৎপন্ন হইয়া শত্রুর অট্টালিকার উপর দাড়াইয়াছেন। ইন্দ্র কোথা হইতে জন্মিয়াছেন তাহা তিনিই জানেন।

১১। সুন্দর পক্ষধারী কতকগুলি পক্ষী ইন্দ্রের নিকট উপস্থিত হইল, অর্থাৎ যজ্ঞাভিলাষী কতক গুলি ঋষিই সেই পক্ষী, ইন্দ্রের নিকট তাহাদিগের প্রার্থনা ছিল। তাহারা প্রার্থনা করিলেন, হে ইন্দ্র! অন্ধকার দূর কর, চক্ষু আলোকে পূর্ণ কর; আমরা যেন পাশবদ্ধ আছি, আমাদিগকে মোচন করিয়া দেও।

————

(১) এই ঋকে দাসজাতিদিগের উল্লেখ আছে এবং মনুষ্যের দেবত্ব লাভের উল্লেখ আছে।