ঋগ্বেদ ১০।০৬৩

ঋগ্বেদ ১০।০৬৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৬৩
পথ্যাস্বস্তি ও বিশ্বদেব দেবতা। গয় ঋষি।

১। যে সকল দেবতা অতি দূরদেশ হইতে আসিয়া মনুষ্যদিগের সহিত বন্ধুত্ব করেন, যাহারা বিবস্বানের পুত্র মনুর সন্তানদিগের অতি সন্তুষ্ট হইয়া তাহাদিগকে আশ্রয় দান করেন; যাহারা নহুষপুত্র যযাতির যজ্ঞে অধিষ্ঠান হয়েন, তাঁহারা আমাদিগের মঙ্গল করুন।

২। হে দেবতাগণ! তোমাদিগের সকল নামই নমস্কার করিবার যোগ্য, বন্দনীয় এবং যজ্ঞে উচ্চারণযোগ্য। যাহারা অদিতির গর্ভে জন্মিয়াছেন, কিংবা জলে, কিংবা পৃথিবী হইতে জন্মিয়াছেন, তাঁহারা সকলে আমার এই আহ্বান শ্রবণ করুন।  

৩। সকলের জননীভূতা পৃথিবী যাহাদিগের জন্য মধুময় দুগ্ধ বহাইয়া দেন, এবং মেঘ সমাকীর্ণ অবিনাশী আকাশ অমূহ ধারণ করেন, সেই সকল অদিতি সন্তান দেবতাদিগকে স্তব কর, তাহাতে মঙ্গল হইবে, তাহাদিগের ক্ষমতা অতি প্রশংসনীয়, তাহার বৃষ্টি আহরণ করেন, তাহাদিগের কাৰ্য অতি সুন্দর।

৪। সেই সকল প্রবল পরাক্রান্ত দেবতা লোকের নিকট পূজা পাইবার জন্য অমরত্বগুণ লাভ করিয়াছেন। তাহারা অনিমেষ নয়নে মনুষ্যদিগকে দর্শন, অর্থাৎ তত্ত্বাবধান করেন। তাহাদিগের রথ জ্যোতির্ময়, তাহাদিগের কাৰ্য্যের বিঘ্ন নাই, তাহার নিষ্পাপ; তাহারা লোকের মঙ্গলের জন্য স্বর্গের উন্নত প্রদেশে বাস করেন।

৫। যাহারা উত্তম শ্রীবৃদ্ধি সম্পন্ন হইয়া উজ্জ্বলমুর্তিতে যজ্ঞে আসিয়াছেন, যারা দুর্ধর্য হইয়া স্বর্গে বাস করেন, সেই সকল প্রধান দেবতাকে নমোবাক্যে এবং সুরচিত স্তবের দ্বারা সেবা কর এবং মঙ্গলের জন্য অদিতিকে সেবা কর।

৬। হে জ্ঞানসম্পন্ন সমস্ত দেবত! তোমরা যতগুলি আছ, তোমরা যে স্তব প্রাপ্ত হইয়া থাক, কে তোমাদিগের জন্য সেইস্তব প্রস্তুত করে? হে বংশ বৃদ্ধিসম্পন্ন দেবতাগণ! যে যজ্ঞ পাপ হইতে ত্রাণপুর্বক কল্যাণ বিতরণ করে, কে তোমাদিগের জন্য সেই যজ্ঞের আয়োজন করে?

৭। মনু অগ্নি প্রজ্বলিত করিয়া শ্রদ্ধাযুক্ত চিত্তে সাতজন হোতা লইয়া যে সকল দেবতার উদ্দেশে অতি উৎকৃষ্ট হোমের দ্রব্য উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই সমস্ত দেবতাগণ আমাদিগকে অভয় দান করুন এবং সুখী করুন, আমাদগের সকল বিষয়েসুবিধা করিয়া দিন এবং কল্যাণ বিতরণ করুন।

৮। যাহাদিগের বুদ্ধি উৎকৃষ্ট এবং জ্ঞান সুন্দর, যাহারা স্থাবর জঙ্গম সমস্ত জগতের অধীশ্বর; হে তাদৃশ দেবতাগণ! এক্ষণে আমাদিগকে অতীত ও ভবিষ্যৎ সকল পাপ হইতে পার কর এবং কল্যাণ বিতরণ কর।

৯। আমরা সকল যজ্ঞে ইন্দ্রকে আহ্বান করিয়া থাকি, তাহাকে আহ্বান করিতে আনন্দ হয়। তাবৎ দেবতবর্গকেও আহ্বান করি, তাহারা পাপ হতে মুক্তি দেন, তাঁহাদিগের কাৰ্য্য সুন্দর, আমরা কল্যাণ ও ধন লাভের জন্য অগ্নি, মিত্র, বরুণ, ভগ, দ্যাবাপৃথিবী ও মরুতগণকে আহ্বান করিয়া থাকি।

১০। আমরা মঙ্গলের জন্য দ্যুলোকস্বরূপ নৌকাতে আরোহণ করিয়া যেন দেবত্ব প্রাপ্ত হই (১)। এই নৌকাতে আরোহণ করলে রক্ষা পাইবার বিষয়ে কোন ভয়ই নাই; ইহা অতি বিস্তীর্ণ; ইহাতে আরোহণ করিলে সুখী হওয়া যায়; ইহার ক্ষয়নাই; ইহার গঠন অতি চমৎকার; ইহার চরিত্র সুন্দর; ইহা নিষ্পাপ ও অবিনাশী।

১১। হে যজ্ঞভাগগ্রাহী তাবৎ দেবতাগণ! আমাদিগকে আশ্রয় দিবে ইহা স্বীকার কর। সাংঘাতিক দুর্গতি হইতে আমাদিগকে ত্রাণ কর। এই সত্যস্বরূপ যজ্ঞের আয়োজন করিয়া তোমাদিগকে আহ্বান করিতেছি। শ্রবণ কর, রক্ষা কর এবং কল্যাণ বিতরণ কর।

১২। হে দেবতাগণ! আমাদিগের রোগ ও সর্বপ্রকার অধৰ্ম্ম বুদ্ধি দূর কর। দান না করিবার বুদ্ধি যেন আমাদিগের না হয়। দুষ্টাশয় ব্যক্তির দুর্বুদ্ধি দূর কর। আমাদিগের শত্রুবর্গকে অতিদুরে লইয়া যাও। আমাদিগকে বিশিষ্ট সুখ ও কল্যাণ দান কর।

১৩। হে অদিতি সন্তান দেবতাগণ! তোমরা যাহাকে উত্তম পথ দেখাইয়া দিয়া সমস্ত পাপ হইতে পার করিয়া কল্যাণে উপনীত কর, এতাদৃশ যে কোন ব্যক্তিই শ্রীবৃদ্ধিশালী হয়, তাহার কোন অনিষ্ট ঘটে না, সে ধৰ্মকৰ্ম্ম অনুষ্ঠান করে এবং তাহার বংশ বৃদ্ধি হয়।

১৪। হে দেবতাগণ! অন্ন লাভের জন্য তোমরা যে রথকে রক্ষা কর; হে মরুৎগণ! যুদ্ধের সময় সঞ্চিত ধন লাভের জন্য তোমরা যে রথকে রক্ষা কর । হে ইন্দ্র! তোমার সেই যে রথ,-যাহা প্রাতঃকালে যুদ্ধে গমন করে, তাহাকে ভজনা করা উচিত, যাহাকে কেহ ধবংস করিতে পারে না, আমরা যেন সেই রথে আরোহণপূর্বক কল্যাণভাগী হই।

১৫। কি সুপথে, কি মরুভূমিতে, আমাদিগের কল্যাণ হউক; জলে, কি যুদ্ধে আমাদিগের কল্যাণ হউক; যে স্থানে সকল অস্ত্রশস্ত্র নিক্ষেপ হইতেছে, এরূপ সৈন্যমধ্যে আমাদিগের কল্য হউক; যথায় পুত্র উৎপন্ন হয়, আমাদিগের সম্বন্ধীয় সেই স্ত্রীযোনিতে কল্যাণ হউক। হে দেবতাগণ! ধন লাভের জন্য আমাদিগের মঙ্গল বিধান কর।

১৬। যে পৃথিবী পথে গমন কালে মঙ্গল করিয়া থাকেন; যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ধনে পরিপূর্ণ; যিনি রমণীয় যজ্ঞ স্থানে উপস্থিত আছেন; তিনি কি গৃহে, কি অরণ্যে আমাদিগকে রক্ষা করুন; দেবতারা তাহাকে রক্ষা করুন, আমরা যেন সুখে তাহাতে বাস করি।

১৭। হে সমস্ত অদিতিসন্তানগণ! হে অদিতি! ধ্যানপরায়ণ প্লুতি তনয় গয় এইরূপে তোমাদিগকে সংবর্ধনা করিলেন। অমরদিগের প্রসাদে মনুষ্যগণ প্রভুত্ব প্রাপ্ত হয়। তাবৎ দেবতাগণকে গয় স্তব করিলেন।

————

(১) দেবত্ব প্রাপ্তির কথা।