ঋগ্বেদ ১০।০৯০

ঋগ্বেদ ১০।০৯০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯০
পুরুষ দেবতা। নারায়ণ ঋষি।

১। পুরুষের সহস্র মস্তক, সহস্ৰ চক্ষু ও সহস্র চরণ। তিনি পৃথিবীকে সর্বত্র ব্যাপ্ত করিয়া দশ অঙ্গুলি পরিমাণ অতিরিক্ত হইয়া অবস্থিত থাকেন (১)।

২। যাহা হইয়াছে, অথবা যাহা হইবেক, সকলই সেই পুরুষ। তিনি অমরত্বলাভে অধিকারী হয়েন, কেন না, তিনি অন্নদ্বারা অতিরোহণ করেন।

৩। তাহার এতাদৃশ মহিমা, তিনি কিন্তু ইহা অপেক্ষাও বৃহত্তর। বিশ্বজীবসমুহ তাহার একপদ মাত্র, আকাশে অমর অংশ তাঁহার তিন পাদ।

৪। পুরুষ আপনার তিন পাদ (বা অংশ) লইয়া উপরে উঠিলেন। তাঁহার চতুর্থ অংশ এই স্থানে রহিল। তিনি তদনন্তর ভোজনকারী ও ভোজনরহিত (চেতন ও অচেতন) তাবৎ বস্তুতে ব্যাপ্ত হইলেন।

৫। তাহা হইতে বিরাট জন্সিলেন, এবং বিরাট হইতে সেই পুরুষ জন্মিলেন। তিনি জন্মগ্রহণপূর্বক পশ্চাদ্ভাগে ও পুরোভাগে পৃথিবীকে অতিক্রম করিলেন।

৬। যখন পুরুষকে হব্যরূপে গ্রহণ করিয়া দেবতারা যজ্ঞ আরম্ভ করিলেন, তখন বসন্ত ঘৃত হইল, গ্রীষ্ম কাষ্ঠ হইল, শরৎ হব্য হইল।

৭। যিনি সকলের অগ্রে জন্মিয়াছিলেন, সেই পুরুষকে যজ্ঞীয় পশুস্বরূপে সেই বহ্নিতে পূজা দেওয়া হইল। দেবতারাও সাধ্যবর্গ এবং ঋষিগণ উহা দ্বারা যজ্ঞ করিলেন।

৮। সেই সৰ্ব্ব হোমযুক্ত যজ্ঞ হইতে দধি ও ঘৃত উৎপন্ন হইল। তিনি সেই বায়ব্য পশু নিৰ্মাণ করিলেন, তাহারা বন্য এবং গ্রাম্য।

৯। সেই সৰ্ব্ব হোমসম্বলিত যজ্ঞ হইতে ঋক্ ও সামসমূহ উৎপন্ন হইল, ছন্দ সকল তথা হইতে আবির্ভূত হইল, যজুও তাহা হইতে জন্ম গ্রহণ করিল (২)।

১০। ঘোটকগণ এবং অন্যান্য দন্ত পঙক্তিদ্বয়ধারী পশুগণ জন্মিল। তাহা হইতে গাভীগণ ও ছাগ ও মেষগণ জন্মিল।

১১। পুরুষকে খণ্ড খণ্ড করা হইল, কয় খণ্ড করা হইয়াছিল? ইহার মুখ কি হইল, দুই হস্ত, দুই উরু, দুই চরণ, কি হইল?।

১২। ইহার মুখ ব্রাহ্মণ হইল, দুই বাহু রাজন্য হইল; যাহা উরু ছিল, তাহা বৈশ্য হইল, দুই চরণ হইতে শূদ্র হইল (৩)।

১৩। মন হইতে চন্দ্র হইলেন, চক্ষু হইতে সূৰ্য্য, মুখ হইতে ইন্দ্র ও অগ্নি, প্রাণ হইতে বায়ু।

১৪। নাভি হইতে আকাশ, মস্তক হইতে স্বৰ্গ, দুই চরণ হইতে ভূমি, কর্ণ হইতে দিক ও ভুবন সকল নির্মাণ করা হইল।

১৫। দেবতারা যজ্ঞ সম্পাদন কালে পুরুষস্বরূপ পশুকে যখন বন্ধন করিলেন, তখন সাতটী পরিধি অর্থাৎ বেদী নির্মাণ করা হইল, এবং তিনসপ্ত সংখ্যক যজ্ঞকাষ্ঠ হইল (৪)।

১৬। দেবতারা যজ্ঞদ্বারা যজ্ঞ সম্পাদন করিলেন, উহাই সর্ব প্রথম ধৰ্ম্মানুষ্ঠান। যে স্বর্গলোকে প্রধান প্রধান দেবতা ও সাধ্যেরা আছেন, মহিমান্বিত দেবতাবর্গ সেই স্বর্গধাম প্রতিষ্ঠা করিলেন।

————

১) এই প্রসিদ্ধ সূক্তকে পুরুষক্ত কহে। ঈশ্বর কেবল এক, এই বিশ্বভুবন তাঁহারই অন্তর্গত, এই বিশ্বাস এই সূক্তে প্রকটিত হয়। ইহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে রচিত।

(২) এই সূক্তটি কত আধুনিক, তাহা এই ঋকের দ্বারা কতক প্রকাশ হইতেছে। ইহার রচনাকালে ঋক, সাম ও যজুরদের মন্ত্রগুলি পৃথক পৃথক করা হইয়াছে।

(৩) ঋগ্বেদ রচনা কালের অনেক পর এই অংশ রচিত হইয়া ঋগ্বেদের ভিতর প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে, তাঁহার সন্দেহ নাই। ঋগ্বেদের অন্য কোনও অংশে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র এই চারি জাতির উল্লেখ নাই, এই শব্দগুলি কোন স্থানে শ্রেণী বিশেষ বুঝাইবার জন্য ব্যবহৃত হয় নাই। ঋগ্বেদ রচনা কালে আর্য্যদিগের মধ্যে জাতি বিভাগ ছিলনা। ঋগ্বেদে এই কুপ্রথার একটি প্রমান সৃষ্টি করিবার জন্য এই অংশ প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে। ব্যাকরণবিৎ পণ্ডিতগণ প্রমাণ করিয়াছেন যে এই পুরুষ সূক্তের ভাষাও বৈদিক ভাষা নহে। অপেক্ষাকৃত আধুনিক সংস্কৃত।  

(৪) বিশ্বজগতের নিয়ন্তাকে বলিস্বরুপ অর্পণ করা, এ অনুভবটি ঋগ্বেদের সময়ের নহে, ঋগ্বেদে আর কোথাও পাওয়া যায় না, ইহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক সময়ের অনুভব। “It was evidently produced at a period when the ceremonial of sacrifice was largely developed. Penetrated with a sense of the sanctity and efficacy of the rite, and familiar with all its details, the priestly poet to whom we owe this hymn has thought it no profanity torepresent the supreme Purushia himself as forming the victim.”- Muir’s Sanskrit Texts, vol. V (1884), p. 373.