ঋগ্বেদ ১০।০৬৮

ঋগ্বেদ ১০।০৬৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৬৮
ঋষি ও দেবতা পূর্ববৎ।

১। যেরূপ জলসেচনকারী কৃষকগণ পক্ষীদিগকে শস্য ক্ষেত্র হইতে তাড়াইয়া দিবার সময় কোলাহল করে(১), অথচ যেরূপ মেঘবৃন্দের নির্ঘোষ হয়, অথবা যেমন তরঙ্গবৰ্গ পৰ্বতে অভিঘাত কালে কলরব করে, তদ্রূপ বৃহস্পতির উদ্দেশে প্রশংসা ধ্বনি উচ্চারিত হইতে লাগিল।

২। অঙ্গিরার পুত্র বৃহস্পতি সূৰ্য্যদেবকে গাভীগণের সহিত সংসৃষ্ট করিলেন, অর্থাৎ গুহাবর্তিনী গাভীদিগের নিকট সুর্যের আলোক আনয়ন করিলেন। ভগদেবের ন্যায় তাহার তেজঃ চতুর্দিগব্যাপী হইল। যেমন স্ত্রী পুরুষের বন্ধুবর্গ পতিপত্নী মিলন করাইয়া দেয়, তরূপ তিনি গাভীদিগকে লোকদিগের সহিত মিলিত করিয়া দিলেন। হে বৃহস্পতি! যুদ্ধের সময়যেমন ঘোটকদিগকে ধাবিত করে, তদ্রূপ গাভীদিগকে ধাবিত কর।

৩। যেমন যবের কুশূল (মরাই) হইতে যব বাহির করে(২), তদ্রূপ মুহম্পতি গাভীদিগকে শীঘ্র শীঘ্র পর্বত হইতে বাহির করিলেন। তাহাদিগের গাভী অতি সুন্দর, ক্রমাগত তাহারা চলিতে লাগিল; তাহা দিগের বর্ণ এমনি মনোহর এবং আকৃতি এমনি সুগঠন, যে দেখিলেই লইতে ইচ্ছা হয়।

৪। বৃহস্পতি গাভী উদ্ধার করিয়া যেন সৎকর্মের আকরস্থান মধুবিন্দু সিক্ত করিলেন, অর্থাৎ যজ্ঞানুষ্ঠানের সুবিধা করিয়াদিলেন। তিনি এমনি দীপ্তিযুক্ত হইলেন, যেন সুৰ্য্যদেব আকাশে উল্কা নিক্ষেপ করিতেছেন, তিনি প্রস্তরের আচ্ছাদন হইতে গাভীদিগকে উদ্ধার করিয়া তাহাদিগের খুরপুটের দ্বারা ধরাতল বিদীর্ণ করিয়া দিলেন, যেমন নীচে হইতে জল উঠিবার সময় ধরাতল বিদীর্ণ করে ।

৫। যেমন বায়ু জল হইতে শৈবাল অপসারিত করে,তদ্রুপ বৃহস্পতি আকাশ হইতে অন্ধকার অপসারিত করিলেন। যেমন বায়ু মেঘসমূহকে বিকাশ করিয়া দেয়, তদ্রূপ বৃহস্পতি সুবিবেচনাপূর্বক বলের গোপন স্থান হইতে গাভীদিগকে নিষ্কাশিত করিলেন।

৬। যখন হিংস্র বলের অস্ত্র, বৃহস্পতির অগ্নিতুল্য প্রতপ্ত উজ্জ্বল অস্ত্রের দ্বারা বিদীর্ণ হইয়া গেল, তখন তিনি সেইরূপেগোধন অধিকার করিলেন, যেমন দন্তগণ আহারের দ্রব্য মুখের মধ্যে পরিবেশন করিয়া দিলে জিহ্বা তাহা অধিকার করে। তিনি সেই বহুমূল্য গোধন প্রকাশিত করিলেন।

৭। যখন সেই গোপন স্থান মধ্যে গাভীগণ শব্দ করিতেছিল, তখনই বৃহস্পতি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, তন্মধ্যে গাভী রুদ্ধ আছে। যেমন পক্ষী ডিম্বভঙ্গ করিয়া শাবককে নিষ্কাশিত করে, তদ্রুপ তিনি আপনিই পর্বত মধ্য হইতে গাভীদিগকে তাড়াইয়া আনিলেন।

৮। তিনি দেখিলেন যে, যেমন মৎস্য অল্পজলে থাকিলে ক্লেশ পায়, তদ্রুপ সেই মধুর ন্যায় পরম অভিলষিত গোধন প্রস্তররুদ্ধ হইয়া ক্লেশ পাইতেছে। যেমন কাষ্ঠ হইতে চমস নামক পানপাত্র কুঁদিয়া বাহির করে, তদ্রূপ বৃহস্পতি কোলাহলসহকারে দ্বার উদ্ঘাটন করিয়া সেই গোধন বাহির করিলেন।

৯। তিনি প্রভাত, স্বর্গ, অগ্নি, সকলই পাইলেন, অর্থাৎ গোধনোদ্ধার কাৰ্য্য দ্বারা আবার যেন রাত্রি প্রভাত হইল, অগ্নি যেন প্রজ্বলিত হইল। তিনি সূর্যালোক প্রবেশ করাইয়া গুহামধ্যের অন্ধকার নষ্ট করিলেন। বনে গাভীদিগকে রুদ্ধ করিয়াছিল, বৃহস্পতি সেই গাভী উদ্ধার করিয়া যেন তাহার অস্থি মধ্য হইতে মজ্জা বাহির করিয়া আনিলেন।

১০। যেমন শীতকাল অরণ্যের সকল পত্র অপহরণ করে, তদ্রুপ বলের সকল গাভী বৃহস্পতিকর্তৃক গৃহীত হইল। যাহা কেহ কখন করে নাই, কেহ কখন অনুকরণ করিতে পারিবে না। এইরূপ কাৰ্য্য তিনি করিলেন, তাঁহার এই কাৰ্যদ্বারা পুনৰ্ব্বার সুৰ্য্য চন্দ্রের উদয় হইল।

১১। যেমন পিঙ্গলবর্ণ ঘোটককে বিবিধ ভূষণে সজ্জিত করে, তদ্রুপ পিতাস্বরূপ দেবতাগণ গগনকে নক্ষত্রে সুসজ্জিত করিলেন। তাহারা অন্ধকার রাত্রিতে রাখিয়া দিলেন এবং আলোক দিবসে রাখিয়া দিলেন। বৃহস্পতি পর্বত ভেদ করিয়া গোপন লাভ করিলেন।

১২। যিনি পূর্বতন অনেক ঋক্ রচনা করিয়া গিয়াছেন, যিনি এখন মেঘলোকবাসী হইয়াছেন, সেই বৃহস্পতিকে এই নমস্কার করিলাম। সেই বৃহস্পতি আমাদিগকে গাভী ও ঘোটক ও সস্তান ও ভৃত্য ও অন্ন দান করুন।

————

(১) পক্ষীগণ উক্ত বীজ না খাইয়া যায় এইজন্য কৃষকগণ তাহাদিগকে তাড়াইয়া দেয়।

(২) যবের মরাইয়ের উল্লেখ।