ঋগ্বেদ ১০।০৯৩

ঋগ্বেদ ১০।০৯৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯৩
বিশ্বদেব দেবতা। তাম্ব ঋষি।

১। হে দ্যাবাপৃথিবি! আপনরা বিলক্ষণ বিস্তারিত হউন। আপনারা বৃহন্মূৰ্ত্তি হইয়া নারীর ন্যায় আমাদিগের গৃহে আগমন করুন। সেই সকল সুবিদিত কাৰ্য্যদ্বারা আমাদিগকে শত্রু হইতে রক্ষা করুন, এই সকল কাৰ্য্য দ্বারা উত্তাপের সময় রক্ষা করুন।

২। যিনি বিশিষ্টরূপ অধ্যয়ন করিয়া উৎকৃষ্ট বস্তুদ্বারা দেবতাদিগের মনোরঞ্জন করেন, সেই ব্যক্তিরই প্রকৃতরূপে সকল যজ্ঞ দেবতাদিগের সেবা করা হয়।

৩। দেবতারা সকলের প্রভু; তাহাদিগের দান অতি মহৎ। তাহারা সকলে সর্ব প্রকার বলে বলী। তাহারা সকলে যজ্ঞের সময় যজ্ঞভাগ প্রাপ্ত হয়েন।

৪। অৰ্য্যমা ও মিত্র ও সর্বত্রগামী বরুণ এবং যে রুদ্রকে স্তব করিলে মনুষ্যগণের সুখ লাভ হয় তিনি ও মরুৎগণ এবং ভগ, ইহারা অমৃতের রাজা, স্তবের যোগ্য এবং পুষ্টিবিধানকর্তা।

৫। যখন অহির্বুধ্ন্য জলের সহিত একত্র হইয়া উপবেশন করেন। তখন সূৰ্য্য ও চন্দ্ৰ একত্র উপবেশনপূর্বক দিবারাত্র জল স্বরূপ ধন বর্ষণ করেন।

৬। কল্যাণের অধিপতি অশ্বি নামক সেই দুই দেব এবং মিত্র ও বরুণ নিজ তেজের দ্বারা আমাদিগকে রক্ষা করুন। তাহাদের রক্ষিত ব্যক্তিগণ বিস্তর ধন প্রাপ্ত হয়, মরুভুমি তুল্য দুরবস্থা হইতে পরিত্রাণ পায়।

৭। আমরা স্তব করিতেছি, রুদ্রপুত্র বায়ুগণ, অশ্বিদ্বয়, সকল দেবতা, রথারূঢ় ভগ, বলবান্ ঋভু, ঋভুক্ষা এবং সর্বত্রগামী ইন্দ্র, এই সকল সৰ্বজ্ঞ দেবতা রক্ষা করুন।

৮। ইন্দ্র, ঋতু, অর্থাৎ বৃদ্ধি পাইতেছেন; হে ইন্দ্র! যখন তুমি বেগবান্ ঘোটক যোজনা কর, তখন যজ্ঞকর্তাব্যক্তির আনন্দ বৃদ্ধি পায়। সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে যে সোম পান হয়, তাহা অসামান্য। তাঁহার উদ্দেশে যে যজ্ঞানুষ্ঠান হয়, উহা মানুষের উপযুক্ত নহে, উহা পৃথক্ প্রকারের যজ্ঞ।

৯। হে দেব সবিতা! এই রূপ কর, আমাদিগকে যেন লজ্জিত হইতে না হয়। এই নিমিত্ত তোমাকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদিগের গৃহে স্তব করা হইয়া থাকে, ইন্দ্র আমাদিগের বলস্বরূপ; তিনি এই সকল ব্যক্তির যজ্ঞে আসিবার জন্য আপনার উজ্জ্বল রথ চক্রে যেন বায়ূগণকে যোজনা করিলেন, অর্থাৎ মহাবেগে আগমন করিলেন।

১০। হে দ্যাবাপৃথিবী! আমাদিগের পুত্রদিগকে প্রভূত অন্ন দান কর, সেই অন্ন যেন তাবৎ লোকের পক্ষে পর্যাপ্ত হয় যেন তাহা বলকর হয়, যেন তাহা ধন লাভের জন্য এবং বিপদ হইতে পরিত্রাণ পাইবার জন্য উপ যোগী হয়।

১১। হে ইন্দ্র! তুমি যখন আমাদিগের নিকট আসিতে ইচ্ছা কর, তখন স্তবকারী এই ব্যক্তি যেখানেই কেন থাকুক না, ইহাকে যজ্ঞ করবার সময় রক্ষা কর। হে ধনদাতা! তোমাকে যাহারা স্নেহ করে, তাহাদিগের সংবাদ লও।

১২। আমার এই বিস্তৃত স্তব দীপ্তির সহিত সূর্যের উদ্দেশে যাইতেছে ও মনুষ্যদিগের শ্রীবৃদ্ধি করিতেছে। যেরূপ ছুতার অশ্বে আকর্ষণ করিবার উপযুক্ত দৃঢ়তর রথ নির্মাণ করে। ইহাকে আমি তেমনিভাবে রচনা করিয়াছি।

১৩। যাহাদিগের নিকট ধন কামনা করি, তাহাদিগের উদ্দেশে এই সুবর্ণ ময়, অর্থাৎ অতি উৎকৃষ্ট স্তব পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করিতেছি। যেরূপ যুদ্ধের সৈন্য গণ পুনঃ পুনঃ অগ্রসর হয়, অথবা ঘটীচক্র শ্রেণীবদ্ধ হইয়া অগ্রপশ্চাৎভাবে উঠিতে থাকে, আমার স্তবগুলিও তদ্রুপ(১)।

১৪। যে সকল দেবতা পঞ্চশত রপে ঘোটক যোজনা করিয়া পথে গমন করেন, (অর্থাৎ যজ্ঞে যাইবার জন্য), তাহাদিগের বর্ণনাযুক্ত স্তব আমি দুঃশীম ও পৃথবান ও বেন ও অসুর রাম এই সকল ধনাঢ্য রাজার নিকট পাঠ করিয়াছি।

১৫। এই স্থানে তাম্ব ও পার্থ্য ও মায়ব এই কয়েক জন ঋষি সপ্তসপ্ততি গাভী তৎক্ষণাৎ প্রার্থনা করিলেন।

————

(১) এক খানি চক্রের পরিধিতে অনেক গুলি ঘটি সংযোজিত থাকে, কূপের মধ্যে সেই চক্র ঘূর্ণিত হইয়া ক্রমাণ্বয়ে ঘটী গুলি জলে পূর্ণ হইতে থাকে। ইহাকে ঘটিচক্র কহে। এরূপ যটিচক্র অদ্যাপি ব্যবহৃত হয়, আমি উত্তর পশ্চিম প্রদেশে ও রাজস্থানে দেখিয়াছি।