ঋগ্বেদ ১০।০৮১

ঋগ্বেদ ১০।০৮১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৮১
বিশ্বকর্মা দেবতা। বিশ্বকর্মা ঋষি(১)।

১। আমাদিগের পিতা সেই যে ঋষি, যিনি বিশ্বভুবনে হোম করিতে বসিয়াছিলেন, তিনি অভিলাষসহকারে ধনের কামনা করিয়া প্রথমাগত ব্যক্তিদিগকে আচ্ছাদনপূর্বক পশ্চাদগতদিগের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিলেন।

২। সৃষ্টিকালে তাহার অধিষ্ঠান, অর্থাৎ আশ্রয়স্থলে কি ছিল? কোন স্থান হইতে কিরূপে তিনি সৃষ্টি কাৰ্য্য আরম্ভ করিলেন? সেই বিশ্বকৰ্ম্মা, বিশ্বদর্শনকারী দেব কোন স্থানে থাকিয়া পৃথিবী নিৰ্মাণপূর্বক প্রকান্ড আকাশকে উপরে বিস্তারিত করিয়া দিলেন?।

৩। সেই এক প্রভু, তাহার সকল দিকে চক্ষু, সকল দিকে মুখ, সকল দিকে হস্ত, সকল দিকে পদ(২), ইনি দুই হস্তে এবং বিবিধ পক্ষ সঞ্চালনপূর্বক নিৰ্ব্বাণ করেন, তাহাতে বৃহৎ দ্যুলোক ও ভূলোক রচনা হয়।

৪। সে কোন্ বন? কোন্ বৃক্ষের কাষ্ঠ? যাহা হইতে দ্যুলোক ও ভূলোক গঠন করা হইয়াছে? হে বিদ্বানগণ! তোমরা একবার আপন আপন মনে জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ, দেখ তিনি কিসের উপর দাড়াইয়াব্ৰহ্মাণ্ড ধারণ করেন(৩)?।

৫। হে বিশ্বকৰ্ম্মা! হে যজ্ঞভাগগ্রাহী! তোমার যে সকল উত্তম ও মধ্যম ও নিম্নবর্তী ধাম আছে, যজ্ঞের সময় সেগুলি আমাদিগকে বলিয়া দাও। তুমি নিজে নিজের যজ্ঞ করিয়া নিজ শরীর পুষ্টি কর।

৬। হে বিশ্বকর্মা! কি পৃথিবীতে, কি স্বর্গে, তুমি নিজে নিজে যজ্ঞ করিয়া নিজ শরীর পুষ্টি কর। চতুর্দিকের তাবৎ লোক নির্বোধ। ইন্দ্র আমাদিগের প্রেরণকৰ্ত্তা হউন, অর্থাৎ বুদ্ধিস্ফূর্তি করিয়া দিন।

৭। অদ্য এই যজ্ঞে সেই বিশ্বকর্মাকে রক্ষার জন্য ডাকিতেছি, তিনি বাচস্পতি, অর্থাৎ বাক্যের অধিপতি, মন তাহাতে সংলগ্ন হয়, তিনি সকল কল্যাণের উৎপত্তিস্থান, তাহার কাৰ্যমাত্রই চমৎকার, তিনি আমাদিগের তাবৎ যজ্ঞ স্বীকারপূর্বক আমাদিগকে রক্ষা করুন।

————

(১) আমরা পূর্বেই বলিয়াআছি দশম মন্ডলের অনেক সূক্ত ঋগ্বেদের অনযান্য অংশের পর রচিত হইয়াছে। ঋগ্বেদের অনযান্য অংশে আমরা স্থানে স্থানে এক পরমেশ্বরের অনুভব দেখিতে পাইয়াছি। দশম মন্ডলের অনেক সূক্তে আমরা সেই অনুভবের পূর্ণ বিকাশ দেখিতে পাই। (ঋষিগণ প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন কাৰ্য্য ও ক্ষমতা ও সৌন্দর্য্যকেই ভিন্ন ভিন্ন দেব বিবেচনা করিয়া স্তুতি করিয়াছেন, এক্ষণে তাঁহারা সেই কার্যসমূহের একমাত্র নিয়ন্তা পরমেশ্বরের অনুভব করিতে সক্ষম হইয়াছেন। ৮১ ও ৮২ সুক্ত সেই বিশ্বের নিয়ন্তাকে বিশ্বকৰ্ম্মা নাম দিয়া অভিহিত করা হইয়াছে।) সায়ণ বলেন, ৮১ সূক্তের প্রথম ঋকে প্রলয়ের পর নতুন সৃষ্টির উল্লেখ আছে, কিন্তু আমরা পূর্বেই বলিয়াছি, প্রলয় প্রভৃতি পৌরাণিক গল্প ঋগ্বেদের অপরিচিত। প্রকৃতির কার্যের স্তুতি হইতে প্রকৃতির ঈশ্বরের অনুভব এই ঋগ্বেদের ধর্ম।)

(২) এগুলি উপমা মাত্র। ইহাদ্বারা সৃষ্টিকর্তার অপরিমিত দর্শনশক্তি, কাৰ্য্যশক্তি গতি প্রভৃতিমাত্ৰ প্রকটিত হইতেছে।

(৩) অর্থাৎ কোনও নির্মাণের উপকরণ, বা অবলম্বনই ছিলনা। শূন্য হইতে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বভুবন সৃষ্টি করিয়াছেন।